মধ্যবিত্ত নিজেদের ফুটানির মাশুল দিচ্ছে এই মাহামারির দুর্যোগে। তাই ঢাকার চাকা আর ঘুরাতে পারছে না গরীবের দল- সামাজিক মাধ্যমের অর্থশাস্ত্র বিশারদগন এমন বয়ান দিচ্ছেন।
.
মাইনষের আদিম স্বভাবের একটা হলো আর্থিক অস্বচ্ছল কাউকে পেলে তাকে পিকদানির মত উপদেশ ফেলার পাত্র মনে করা। দেখা যায় ফেরিঘাটের চান্দাবাজ পারিবারিক অনুষ্ঠানে লেকচার ঝারতে থাকে ফিজিক্সের লেকচারার আত্মিয়র উপর।
.
তো যারা এখন ঢাকা ছাড়তেছেন তারা মূলত চাকরী হারিয়েছেন। নিয়োগকর্তারা তাদেরকে আর টানতে পারতেছেন না বলে। বছরের পর বছর ধরে চলা প্রতিষ্ঠান গুলো জমা করা মুনাফা দিয়ে এই সময়ের ধকল নিতে পারলো না! সাথে এত এত প্রণোদনার পরেও। আর আয়ের উৎস পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার পরেও কামলারা তাদের বেতনের টাকা আরো কেন জমালো না, সে টাকায় ঢাকায় বসে বসে মুরগী কেন পালছেনা তা নিয়ে জ্ঞানীদের আপত্তি!
.
তো এই গরীবের দল যদি ঐ লাইফস্টাইলে না যেত কি ঘটতো! বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে না ঢুকতো, বুফে না খেতো, জামা কাপড় না কিনতো, এপার্টমেন্ট বুকিং না দিতো, দুয়েকটা টূর ট্রাভেলও না করতো তাহলে কি হতো! এই শহরে গুলিস্তানের কাপড় আর মুদি দোকান ছাড়াতো বাকি ব্যবসা সব বসে যেতো। সারা বছরই মহামারি চলতো অর্থনীতিতে। ঢাকা ছাড়ার বিশাল অংশ ঐসব পেশাতেই ছিলো, যেগুলোতে খরচ করাটাকেই বিজ্ঞ অর্থশাস্ত্র বিশারদগন মধ্যবিত্তের অনধিকার চর্চা দাবি করছেন। ওতে যে মধ্যবিত্বের ঝাঁক ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতোই না। সবাই গ্রামে বসে রয়েল বেঙ্গল ছাগল পালতো। যেহেতু ঐ সব ইন্ড্রাষ্ট্রিই আর বাড়তো না।
.
তারা জীবনের মান ঐ পর্যায়ে নিয়ে গেছে কারন তাদেরকে এই ভরসা দেয়া হয়েছিলো। আশ্বস্ত করা হয়ে ছিলো যে সড়ক, বিদ্যুৎ সহ চলমান প্রকল্পগুলো হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতি সিঙ্গাপুরের মত হয়ে যাবে। তারা ভরসা রেখেছিলো। সেই ভরসায় ভর করে এখানে যেটা ঘটছে সেটা হলো সরাসরি চুরি, ডাকাতি। সাথে বন্টনের জুলুম। আপনি উপভোগ করেন কিংবা জমা করেন দিন শেষে টাকা থাকবে ব্যাংকে, হাত বদল হোক আর না হোক। সেই ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা চুরি গেছে, লোন নেয়ার নামে গেছে, এল. সি খুলে হয়েছে পাচার। পাবলিক প্রজেক্ট গুলোতে খ্যাতা বালিশ ক্যালেঙ্কারির মত মোটা মাথার বুদ্ধি দিয়েও সফল ভাবে জোচ্ছুরি চলেছে।
.
এসব অজস্র ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই পাল্লার একটা অংশ আকাশে বাকি অংশ পাতালে নেমেছে। এজন্যে নগরের অতি ক্ষুদ্র এক ভাগ বিমান ভাড়া করে থাইল্যান্ড, কানাডা যাচ্ছে। আর আরেক ভাগ ভটভটি ভাড়া করে গেরামের দিকে রওয়ানা হয়েছে। দ্বিতিয় ভাগকেই মহানন্দে মহা জ্ঞানীর দল বেহিসাবির হিসাব শাস্ত্র শেখাচ্ছে। যাদের বারগেইন পাওয়ার জিরোতে ঠেকেছে। যে সকল হাঁসের ডিম বাঘডাঁসে খেয়ে গেছে তাদের বলছে -তোমরা আরো কয়টা ডিম কেন পেড়ে রাখনি বোকার দল!
.
একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি। শুনেছি এটা নাকি সত্যি। একবার গার্মেন্টস এর মালিক শ্রমিক সমাবেশ শেষে শ্রমিকরা চলে গেলো। মালিক পক্ষ নিজেদের মাঝে তখন ফিসফিসিয়ে বলতেছিলো- 'এই গার্মেন্টস ইন্ডষ্ট্রি যদি না থাকতো এই মেয়ে গুলা কি করতো বলেন তো। এই যে এত এত লম্বা লম্বা কথা বলে গেলো, তখনতো সব গুলো রাস্তায় রাস্তায় পতিতা বৃত্তি করতো। ঠিক কিনা বলেন?"
এক শ্রমীক নেত্রী সেখানে তখনো কোন কারনে রয়ে গিয়েছিলো যেটা কেউ খেয়াল করেনি। নেত্রী বলে উঠলেন-'আমরা না হয় ওসবই করতাম হুযুর। কিন্তু আপনেরা তখন কি করতেন। বেশ্যার দালালি?"
.
#Afnan_Abdullah
06242020
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১:১১