প্রত্যেক নবী-রাসূলকে (আ.) (ও তাদের অনুসারীদেরকেও) প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছে:
কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা:
(ক) “বান্দাদের জন্যে বড়োই আক্ষেপ (বা আফসোস) যে, তাদের কাছে এমন কোনো রাসূলই আগমন করেনি যাদের প্রতি তারা ঠাট্ট-বিদ্রূপ করেনি।” (৩৬/সূরা ইয়াসীন:৩০)
(খ) “যখনই তাদের কাছে কোন রাসূল আগমন করেছেন, তখনই তারা তাঁর সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছে।” (৪৩/সূরা আয যুখরুফ:৭)
বিভিন্ন বিষয়ে নবীদের মধ্যে পার্থক্য ছিল:
যেমন: দ্বীনকে বিজয়ী করতে পারা না পারা, বিধি-বিধান এর ধরণ, সাহাবীর (বা সাথীর) সংখ্যা, নিকটজনকের দ্বীন গ্রহণ করা না করা, ইবাদাতের পদ্ধতি, পোশাক এর ধরণ, খাবার এর ধরণ ইত্যাদি। কিন্তু একটি বিষয় সকল নবীর জন্য একই ছিল। আর তা হলো, ঠাট্টা-বিদ্রুপ, অত্যাচার, নির্যাতন, খুন-যখম, বহিষ্কার ইত্যাদির একটি, কয়েকটি বা সবগুলোর সম্মুখীন হওয়া। এক কথায়, নবীরা সকলে অবশ্যই প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
লক্ষাধিক নবীর মধ্যে এ বিষয়ে ব্যতিক্রম কেবল দু’একজন যেমন: প্রথম (মানুষ ও নবী) আদম আ. ও আল্লাহর ইচ্ছায় শাসনকর্তত্ব (প্রকৃত অর্থে খিলাফাত) লাভকারী নবী সোলায়মান আ.। এটা নিতান্তই ব্যতিক্রম- যা স্বাভাবিকভাবেই উদারহণ হতে পারে না।
প্রতিরোধের সম্মুখীন না হয়ে জান্নাত আশা করা বোকামী:
আল্লাহ বলেছেন,“তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা (এমনি এমনিই) জান্নাতে চলে যাবে, (অথচ) সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে (বহু ধরণের) বিপদ ও কষ্ট (অভাব, অভিযোগ, রোগ-ব্যধি)। আর এমনিভাবে (কঠিন নিপীড়নে তাদেরকে) শিহরিত (বা প্রকম্পিত) হতে হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত (অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে) একথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্যে! (আল্লাহ সান্ত্বনা দিয়ে বললেন) তোমরা শুনে নাও, আল্লাহর সাহায্যে একান্তই নিকটবর্তী। (২/সূরা আল বাকারাহ:২১৪)
নবী রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য:
“তিনি (আল্লাহ) তাঁর রাসূলকে (সুস্পষ্ট) পথনির্দেশ (হিদায়াত) ও সঠিক জীবনবিধান (দ্বীনে হক) দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে (সে) একে (বা ইসলামেকে) (দুনিয়ায় প্রচলিত অন্য) সকল মতবাদের (বা জীবনদর্শনের) উপর প্রবল (বা বিজয়ী) করে দিতে পারেন। (৬১/সফ:৯, ৯/তাওবা:৩৩, ৪৮/ফাতহ:২৮) (তিনটি আয়াতেই এ একই ঘোষণার পর দু’টি আয়াতে বলা হয়েছে, “যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (৬১/সফ:৯, ৯/তাওবা:৩৩)(মানে- ইসলামের বিজয়ে শিরককারীরাই অসন্তুষ্ট হয় তারা অখুশি হবে বলে সত্যের বিজয় থেমে থাকতে পারে না) এবং অন্য আয়াতটিতে বলা হয়েছে “সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে আল্লাহ যথেষ্ট।” (৪৮/ফাতহ:২৮) (মানে- কেউ ইসলামের বিজয়ে ভূমিকা পালন না করলেও ইসলামের বিজয় হবেই, আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী করবেনই, যে/যারা এ কাজে ভূমিকা পালন করবে না সে/তারা নিজেরই ক্ষতি করবে।)
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় জান্নাতে যাওয়ার উপায় (বা মাপকাঠি) হলো:
(ক) প্রতিরোধ, বিপদ-আপদ, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন ইত্যাদির সম্মুখীন হয়েও ন্যায়ের পথে দৃঢ়পদ থাকা
(খ) ভয় না পেয়ে, লোভ এ না পড়ে এবং পার্থিব লাভ-ক্ষতির পরোয়া না করে আল্লাহর পথে সংগ্রামে অনড় থাকা।
জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়:
আল্লাহ বলেন, “মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি (লাভজনক) ব্যবসার সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে (মহাবিচারের দিনে) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর (দ্বীন প্রতিষ্ঠার) পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ (ইসলাম পালন ও প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা) করবে। এটাই তোমাদের জন্যে ভালো; যদি তোমরা (কথাটা) বুঝো। (ঠিকমতো এ কাজ করতে পারলে) তিনি (আল্লাহ) তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং (শেষ বিচারের দিন) এমন (সুরম্য) জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত থাকবে এবং (সর্বোপরি আল্লাহ তোমাদের প্রবেশ করাবেন) বসবাসের জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। এবং (আল্লাহ) আরও একটি (বড়ো ধরণের) অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। (তা হচ্ছে) আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং (ময়দানের) আসন্ন বিজয়। (যাও, তোমরা) মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করো।” (৬১/সূরা আস সফ:১০-১৩)
মনে রাখা প্রয়োজন:
সত্যের (বা ইসলামের) বিজয়ে যাদেরই স্বার্থহানী ঘটে তারাই সত্যেকে প্রতিরোধ করে। যেমন: অনৈসলামিক শাসনশক্তি, অনৈসলামিক সাংস্কৃতিক শক্তি, অনৈসলামিক ব্যবসায়িক শক্তি, প্রতিষ্ঠিত ভ্রান্ত ধর্মীয়শক্তি প্রভৃতি।
সংকলণ ও সম্পাদনা: ইঞ্জিনিয়ার আবু রামিন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




