somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আধার আমি
আমি শেষ রাতের অবহেলিত চাঁদ। যাকে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সমাজের বেশির ভাগ মানুষ দেখতে পারে না। ঘুমের দোহাইয়ে সবাই আমার সাথে প্রতারণা করে। আর আমি সমাজ জাগতে জাগতে তে-পান্তরে হারিয়ে যায়।

‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিল।’

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আসলে আমাদের লিংক-টিংক নাই তো তাই চান্স পাওয়ার পরও বাদ পড়ে গেছি। যার বাবার লিংক আছে, টাকা আছে তারাই চান্স পাবে। রাবিতে চান্স হওয়ার পর কবি নজরুলে পরীক্ষা ছিল; দিতে যাইনি, রংপুরে ফর্ম উঠাইনি। এখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই হবে না।


মোশাররফ হোসেন যখন শোনেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন, তখন তার আনন্দের সীমা ছিল না। কারণ, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে।

তাই তিনি আর অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাও দেননি। এর আগে ভর্তি হয়েও থাকেননি কোথাও।

কিন্তু এই স্বপ্ন ভেঙে গেছে নিষ্ঠুরভাবে। কারণ, রাবির ‘ই’ ইউনিটের জোড় রোল নম্বরধারীদের সংশোধিত তালিকায় তার নাম আসেনি। মোশাররফের কণ্ঠে এখন শুধুই হাহাকার, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিল।’

কেবল নেত্রকোনা জেলার কুমারপুর গ্রামের মোশাররফ হোসেনই নয়, এ রকম আরো ১৮২ শিক্ষার্থীর স্বপ্নই ভেঙে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে রাবির ‘ই’ ইউনিটের জোড় রোল নম্বরধারীদের সংশোধিত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর।

গত ১৭ নভেম্বর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ‘ই’ ইউনিটের ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু গত ২২ নভেম্বর রবিবার হঠাৎ করে ওয়েবসাইট থেকে ফল আর দেখা যায় না। পরে সোমবার ২৩ নভেম্বর পুনরায় ওই ফল সংশোধন করে প্রকাশ করা হয়।

এতে জোড় রোল নম্বরধারীদের মধ্যে ১৮৩ জন বাদ পড়েছে, যোগ হয়েছে নতুন ১৮৩ শিক্ষার্থী।

মোশাররফ হোসেন ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া আমার এলাকার এক বড় ভাই ফোন করে বলেছিলেন, ‘ভাইয়া, তুমি তো চান্স পাইলা। কনগ্রাচুলেশনস।’

পরে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখি, আমি চান্স পেয়েছি। ‘ই’ ইউনিটে আমার মেরিট পজিশন ছিল ৩৯৩তম। মার্ক ছিল ৫৪ দশমিক ৫। রেজাল্ট শিট প্রিন্ট করে আমি বাড়িতে দেখাই। তার কয়েক দিন পরেই আবার ওই ভাইয়া ফোন করে বলে, রেজাল্ট পরিবর্তন করা হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি, নতুন রেজাল্ট শিটে আমার নাম নেই। আমি বাদ পড়ে গেছি।”

এটাই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য মোশাররফের শেষ সুযোগ, ‘আমি একটা স্বপ্ন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার স্বপ্নটাই ভেঙে দিল। আমি ছিলাম সেকেন্ড টাইমার (দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ)। আমি কোনো জায়গায় ভর্তিও ছিলাম না। আমার স্বপ্ন ছিল, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব। কিন্তু এখন আমি আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারব না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আমি ওগুলোতে পরীক্ষা দিতে যাইনি। আমি জানি, আমার তো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়েছে। তাই আমি ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দিতে যাইনি। এখানেই আমার জীবনটা শেষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিল।'

মোশাররফের মতো আরেক শিক্ষার্থী নীলফামারীর জলঢাকার রায়হান কাওছার বলেন, আমার সিরিয়াল ছিল ৬৪। কিন্তু এখন যে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে আমার নাম নেই। নট সিলেক্টেড। চান্স পাওয়ার পর আমি এলাকার সবাইকে জানিয়ে দিই। কিন্তু পরে আমার চান্স হয়নি বলে বাসার সবারই মন খারাপ।’

রায়হান কাওছার আরো বলেন, আসলে আমাদের লিংক-টিংক নাই তো তাই চান্স পাওয়ার পরও বাদ পড়ে গেছি। যার বাবার লিংক আছে, টাকা আছে তারাই চান্স পাবে। রাবিতে চান্স হওয়ার পর কবি নজরুলে পরীক্ষা ছিল; দিতে যাইনি, রংপুরে ফর্ম উঠাইনি। এখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই হবে না।

সিরাজগঞ্জের আলতাফ হোসেইন বলেন, “রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পর রেজাল্ট প্রকাশ হলে আমি নেটে রেজাল্ট দেখি। সেখানে আমার ছিল ১৫৮তম। মেসেজও আসে। সেখানেও একই তথ্য। তার পাঁচ-ছয় দিন পর আরেকটা মেসেজ আসে। সেখানে লেখা, ‘নট সিলেক্টেড ফর ইন্টারভিউ রাজশাহী ইউনিভার্সিটি।’ এখন আমি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব না। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগও শেষ হয়ে গেছে।”

২৪ নভেম্বর মঙ্গলবার এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে সামাজিক অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক নীলুফার সুলতানা বলেন, ‘ওএমআর যন্ত্রে ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকা তৈরি করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছিল। এতে করে ১৮৩ শিক্ষার্থী কম নম্বর পেয়েও মেধাতালিকায় চলে আসে। পরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে আগের মেধাতালিকা কিছুটা সংশোধন করা হয়। এতে কম নম্বর পেয়ে আগের মেধাতালিকায় থাকা ১৮৩ জন বাদ পড়ে।’

এ সময় নীলুফার সুলতানা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বাদ পড়েছে, তারা চাইলে ডিন অফিসে এসে তাদের ওএমআর শিট যাচাই করতে পারেন। তবে আমাদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কিছুই করার নেই। এই ভুলটি ধরা না পড়লে আসল মেধাবীদের জায়গা হতো না। তাই বাদ পড়া শিক্ষার্থীরা মনে কষ্ট পেলেও যারা তাদের স্থানে জায়গা পেয়েছেন, তাদের আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছি।’

(একদিকে প্রশ্ন ফাঁস অন্যদিকে প্রশাসনের এমন খেলা! এভাবে কত শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হচ্ছে তা ওরা বুঝবে না। ক্ষমতার জোরে যারা এমন করছে তাদের আগত ভবিষ্যত ঐশীর মত কোনো এক সন্তান। পরাজয় তোদের হবেই। আমরা আম পাবলিক চুপ করে সব সহ্য করে আছি। আমাদের মেধাকে অবমূল্যায়ন করার চরম ফল তোরা একদিন ভোগ করবি। শুধু এতটুকুই, আর কিছুই বলার নেই!)

(সংবাদ ও ছবি এনটিভি অনলাইন থেকে নেওয়া)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৭
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×