লেখাটা লিখতে ৩ ঘন্টায় অনেক গুলো জার্নাল ঘাটতে হয়েছে নেটের পাতায় পাতায়, ভুল ভ্রান্তি হলে ক্ষমা করে দেবেন।
স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি এমন একটা রোগ যা প্রতি ১০০০০ শিশুর মধ্যে একজনের হয়। এই রোগের কারণে শিশুর হাত পা নাড়ানোর ক্ষমতা থাকেনা, কারণ ত্রুটি পূর্ণ জিনের কারণে ব্রেইন থেকে সিগন্যাল মাসল পর্যন্ত পৌছায় না। স্পাইনাল ফ্লুইডে থাকা বিশেষ প্রোটিন আমাদের সবার দেহে উৎপন্ন হয় এবং ব্রেইনের সাথে মাসলে সংযোগ বজায় থাকে স্পাইনের মাধ্যমে। সেই প্রোটিন ত্রুটিপূর্ণ জিনের কারণে উৎপাদিত না হলেই ধিরে ধিরে সব মাসল কার্যক্ষমতা হারায়, প্রোটিন উৎপাদন ক্ষমতা একেবারে নষ্ট হয় ফলাফল ধিরে ধিরে রোগী মৃত্যর দিকে ধাবিত হয়। কারণ একটা সময় ফুসফুস পর্যন্ত আর কাজ করতে পারেনা ।
এই ধরণের রেয়ার রোগের ইঞ্জেকশনের অনেক দাম। মানে আকাশ ছোয়া দাম। ইউএস ডলারে ২.১ মিলিয়ন ডলার সিঙ্গেল একটা ডোজের। বাংলা টাকায় ২২ কোটি টাকা। এই ২২ কোটি টাকার ইনজেকশন লটারির মাধ্যমে পুরো দুনিয়াতে বাংলাদেশের এক আড়াই বছরের শিশু পেয়েছে।
এই ইনজেকশন এর কাজ হচ্ছে শরীরে মিসিং জিন গুলোর প্রতিস্থাপন করা তাও আবার ওয়ান সিঙ্গেল শটে।
যেহেতু এই ধরণের রেয়ার রোগের চিকিৎসার গবেষণা খুবই ব্যয়বহুল, যেমন আড়াই বিলিয়ন ডলার শুধু মাত্র এই একটা থেরাপির উৎপাদনে আসতে পর্যন্ত খরচ হয়েছে। যেহেতু কোম্পানী গুলো নাপা ট্যাবলেটের মতন কোটি কোটি চালানে বিক্রি করে খরচ উঠাতে পারবেনা তাই এভাবেই আকাশ ছোয়া মূল্য ধরা ছাড়া আর তাদের উপায় থাকেনা। যেহেতু প্রায় শতভাগ কমন ডিজিজের মেডিসিন আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে আর কমন ডিজিজের গবেষণা তেও সেম খরচ হয় কিন্তু তা উঠে আসে খুব সহজেই কারণ ম্যাস প্রোডাকশন আর হেভি সেল।
কিন্তু রেয়ার ডিজিজের ইনজেকশন ফর্মুলা আবিষ্কারে যদি আড়াই বিলিয়ন খরচ হয়ে যায় আর তার দাম যদি খুব কম রাখে তাহলে বায়োটেক কোম্পানী গুলো নাই হয়ে যাবে।
এখন এখান থেকে মুক্তির উপায় কি! লাখ লাখ কোটি ডলার দুনিয়া জুড়ে আমরা সাধারণ মানুষেরা ডোনেশন করি কিন্তু সব কোথায় তা আর বলতে পারবোনা।
বললে মাইর একটাও মাটিতে পড়বেনা। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ শিক্ষা আর গবেষণায় একটা টাকাও ডোনেশন করিনা। বড়লোকেরাও করেনা। যদিও ইউরোপ আমেরিকায় বড় লোকেরা কিছু ডোনেশন করে তাও বিভিন্ন চুক্তি ভিত্তিক মানে ঔষুধ বের হইলে বেঁচে বুচে টাকার ভাগ পাওয়া শর্তে।
এভাবে হইলে সবচেয়ে বড় ধরা তো আমরাই খাই। আমাদের শিশুরা রেয়ার ডিজিজে আমাদের মাথায় হাত দেয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। দুনিয়াতে আমরা মানুষেরা প্রচুর দূষণ ছড়াচ্ছি। দিন যত যাচ্ছে জিনগত ত্রুটি নিয়ে শিশুরা জন্ম নিচ্ছে। আমরা নিজেরা কষ্টে না পড়লে কেউ বুঝিনা। বুঝতে চাই না।
সিআইয়ের ফ্যাক্ট বুক থেকে পাওয়া প্রাপ্ত তথ্য মতে বাংলাদেশে ২৪ ঘন্টায় ৭৫৬০ টি শিশু জন্ম নেয় বছরে ২৭,২১৬০০ (সাতাশ লক্ষ একুশ হাজার ছয়শত)। মানে গিয়ে দাঁড়ায় বছরে ২৭২ জন শিশু নিরবে নিভৃতে স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি নামের রোগ টিতে ভুগে মৃত্যর দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই ২৭২ জন শিশু কে বাচাতে দরকার ৫৭১ মিলিয়ন ডলার, এভাবে আরও অনেক অনেক রেয়ার ডিজিজ আছে শুধু একটাই না, থ্যালাসমিয়া থেকে ক্যানসার অভাব নাই।
কিন্তু কতজন কত ভাবে ডোনেশন করবে? শুধু একটা রোগেই বছরে জনমানুষ যদি কাধে কাধ মিলিয়ে বছরে ৫৭১ মিলিয়ন ডলার মানে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি ৭২ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা। শুধু মাত্র এই একটা রোগের জন্য যদিও এতো টাকা ডোনেশনে সম্ভব হয় তাহলে আর গুলোর কি হবে? আসুন এবারে দেখি আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয় কত?
গত অর্থবছরে (২০২১-২২) স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। মানে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এতো টাকা বরাদ্দের পরেও জনগন কতটুকু সেবায় পায় তা সরকারি হাসপাতালের খাবার আর ফ্রী ঔষুধ গুলো না পাওয়ার উপলব্ধি যার হয় সেই বোঝে। আমার মতে যে ভাবে লটারির মাধ্যমে বাংলাদেশের আড়াই বছরের শিশু ২২ কোটি টাকার ইনজেকশন ফ্রী তে পেয়েছে। এভাবে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠান যদি পুরো বিশ্বে রেয়ার ডিজিজের ফান্ড রেইজ করতো সবাই এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গুলোতে ডোনেশন করতো তবে হয়তো কিছু একটা হতো। একটা লটারী তে যদি একটা শিশু ২২ কোটি টাকার ইনজেকশন ফ্রী তে পায় তবে এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গুলোকে বিশ্বাস না করে উপায় নাই।
প্রত্যেক টা শিশু যেন এই দুনিয়াটা দেখে যেতে পারে, বড় হতে পারে, বুড়ো হতে পারে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে। কারণ পৃথিবী তো একটাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৫