কাল রাত থেকে আজ সারাদিন ঝুমঝুম বৃষ্টি। দিন গড়িয়ে আবার রাত বৃষ্টি থামার নাম নেই। শীতের অগমন বার্তা জানান দিচ্ছে প্রকৃতি। আমার জানালার পাশে একটা টিনের ঘর। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ দারুণ একটা অবেশ তৈরি করে। হাতের কাছে পুরনো একটা বই পেলাম হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা "আমি এবং আমরা"। বইটা আগে পড়া হয়নি। শুনেছিলাম ভূতের বাড়ি এবং ভূতের রহস্য উন্মোচন নিয়ে লেখা। এই রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব কার বলুনতো দেখি। আর কার হতে পারে। চিরচেনা সেই বিখ্যাত মিসির আলি সাহেবের। কিছুক্ষণ বইটা নাড়াচাড়া করে পড়বো বলে মনস্থির করলাম। বৃষ্টি রাতে ভূতের গল্প মন্দ নয়।
একদিন আমার একজন সিনিয়র বন্ধু কম বড় ভাই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তুমি এত হুমায়ূন পড়ো কেন? বলেছিলাম, আমার ভালো লাগে তাই। আমার মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা প্রচুর কম। কঠিন কোন বিষয় আমি নিতে পারি না। তাই হুমায়ূন আমার কাছে অনেক সহজ মনে হয়। ওনার লেখা পড়ে আমি প্রচুর আনন্দ পাই। আমি আর দশজনের মত বই পোকা নই। টুকটাক বই নাড়াচাড়ার অভ্যাস। দুনিয়া জুড়ে এত্ত এত্ত মহান এবং বিখ্যাত লেখকদের মাঝে আমার কপালে হুমায়ূন জুটেছে ঐ সই। বাকি লেখকদেরও লেখা পড়ি কিন্তু সেটা সংখ্যায় অতি নগন্য। সময় এবং নিজের মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতায় পড়া হয়ে উঠে না। তবে সময় সুযোগ পেলে পড়ার চেষ্টা করি।
যখন ওনার সাথে গল্প হয় গল্পে গল্পে উনি আমাকে অনেক কিছুই বোঝাতে চেষ্টা করেন। অন্যান্য অনেক লেখকের বই আমাকে সাজেস্ট করেন। সময় পেলে আমি দু-একটা পড়ি। উনার সাজেস্ট করা প্রতিটি বই কোন না কোন ভাবে " জিহাদ" এবং "ইসলাম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম" ইহা খুব সুন্দর ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে থাকে। মাঝেমধ্যে ভালোই লাগে এইসব একপক্ষীয় চিন্তাধারার গল্পগুলো শুনতে। আমার মতে, যা কিছু ভালো গ্রহণ করো, যা কিছু মন্দ বর্জন।
উনাকে কদিন আগে প্রশ্ন করেছিলাম, ঈশ্বর যদি এক হয় তবে কি ঈশ্বরও স্বৈরাচার। উনি বলেছিলেন, ঈশ্বর স্বৈরাচার হলে "ঈশ্বর কি স্বৈরাচার" এই কথা বলার মত ক্ষমতা তোমার থাকত না৷ ঈশ্বর তোমাকে এমন প্রশ্ন তোলার জ্ঞান বুদ্ধিও দিতেন না। ঈশ্বর নিজেই আমাদেরকে প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা দিয়েছেন। যার অর্থ এই উনি হয়তো বিশেষ কিছু বুঝেই এই ক্ষমতা আমাদের মাঝে দিয়েছেন। যেদিন আমরা সঠিক প্রশ্ন করে সঠিক উত্তরের কাছে পৌঁছে যাব। সেদিন আমরা ঈশ্বরের পথ এবং সান্নিধ্য পাবো।
কেন জানি উনি হুমায়ূনকে সহ্য করতে পারেন না। উনি বলেন হুমায়ূন আহমেদের লেখা নাকি মনকে কনভার্ট করে অন্য দিকে নিয়ে যায়। অন্য কোন দিকে নিয়ে যায় এইসব নিয়ে আমি আলোচনায় যাব না। যার বোঝার সামর্থ্য রয়েছে সে নিজে থেকে বুঝে নেবেন। আমি নির্বোধ তাই আমার চিন্তাগুলো সব বেকুবের মতন। আমি ভাবি যার যেমন মনে চায়, যেমন খুশি তেমন বাঁচুক। অবশ্যই পজিটিভ পন্থায়। যেমন খুশির মানে এই নয় যে অন্যায়কারী, জুলুমবাজ কিংবা ব্যভিচারী হওয়া। মানুষের ক্ষতি বা অনিষ্ঠা না করে যা ইচ্ছে তাই করাকে বুঝিয়েছি। মিষ্টি মুখের ভাষা এবং ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে নিজের বশে আনা যায়। আসলে ভালোবাসার শক্তিটাই অন্যরকম। ভালোবাসা দিয়ে একজন মানুষের অন্তর জয় করলে, সেই মানুষের দ্বারা পুরো পৃথিবী জয় করিয়ে নেওয়া যায়। উনার বলা প্রতিটা কথায় আমি খুব নরম ভাবে হুমায়ূনের প্রতি তার ঈর্ষা এবং ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই। মনে মনে খুব আনন্দও পাই উনার এই ঈর্ষা কিংবা ক্ষোভ দেখে। এখনো আমাদের চিন্তাধারার খোঁচাখুঁচি হয়। উনি খুব সফটলি আমাকে বুঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আমিও মিষ্টি ভাষা এবং ভালোবাসায় তাকে বুঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উনি একজন ধর্মভীরু মানুষ। যতটুকু পারেন তার পুরোটা দিয়ে দ্বীনের রাস্তায় চলেন। এদিকে আমি একজন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষ। যতটুকু পারি সবাইকে শ্রদ্ধা করে নিজের রাস্তায় চলার চেষ্টা করি। উনার লক্ষ্য নিজের ধর্মকে পৃথিবীর বুকে একমাত্র ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে মানুষকে কনভার্ট করা। আমার দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা আলাদা। মানুষের জন্য পৃথিবী সৃষ্টি তাই পৃথিবীতে মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকা আমার মূল লক্ষ্য। ধর্ম কূল গোত্র জাতির ঊর্ধ্বে মানুষের একটাই পরিচয় হোক সে মানুষ। সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই। যে নামেই আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন সে সর্বদাই আপনার কথা শুনছেন এবং শুনবেন। তার নামের মিছে দোহাই দিয়ে পৃথিবীতে অযথা রক্তপাত ঘটানোর কোন মানে হয় না। নিজ নিজ ধর্ম মেনে অন্যের আস্থার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কি এতই কঠিন। না আমার মনে হয় না এত কঠিন কিছু। আমার এই কথাগুলো সর্বজনীন। সবার জন্য বলা। এমন নয় যে কেবল এক পক্ষের জন্যই বলা।
দুইদিন আগে খবরে জানতে পেলাম ভারতের একজন পুরোহিত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। যার ফলে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে ভারতীয় এবং বিভিন্ন দেশের ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ। বিষয়টি নিয়ে প্রতিটি মুসলমান গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পূর্বেও এমন সব ঘটনার নজির রয়েছে ভারতে। নূপুর শর্মা নামের একজন একই কাজ করেছিলেন। তখনো অনেক প্রতিবাদ হয়েছিল। কিন্তু তাতে এই সব রাজনৈতিক ফায়দাধারী মানুষদের চিন্তাভাবনায় কোন পরিবর্তন ঘটেনি। কারণ তাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য একটাই, অন্যজনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে ধর্মের নামে মানুষের লাশ এবং রক্তের মিছিলে দাঁড়িয়ে নোংরা রাজনীতি খেলা খেলা।
ধিক্কার জানাই এমন সব চিন্তাধারার মানুষদের যারা অন্যের ধর্মের প্রতি সম্মান দিতে জানে না।
.
কয়েকদিন যাবত ফেসবুকের ভিডিও সেকশনে ওয়াজ মাহফিলের নামে কিছু হুজুর ও আলেমদের গীবতের দোকান দেখে আমি পুরা ফেডাপ হয়ে উঠেছি। উনারা নাকি ইসলামিক স্কলার অথচ কতটা অবলীলায় একে অপরের প্রতি লাঞ্ছনা লাগিয়ে যাচ্ছেন। উগ্রবাদী ও হিংসাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। গীবত কি তা আমার চাইতে অধিকতর তাদের জানার কথা। গীবত কি যারা জানেন না তাদের জন্য এই অংশ। অন্যরা চাইলে এই অংশ স্কিপ করতে পারেন।
গীবত:-
রাসুল (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, 'গীবত কাকে বলে? তোমরা কি তা জানো?'
উপস্থিত সবাই বললেন, "আল্লাহ আর তাঁর রাসুল (সা.) ভালো জানেন।"
রাসুল (সা.) তখন বললেন, "জিকরুকা আখাকা বিমা ইয়াকরাহু।" অর্থাৎ "গীবত হচ্ছে তোমার ভাইয়ের এমন কথা (দোষ) বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হবে।" কারও অনুপস্থিতিতে অন্যের সামনে তার দোষ নিয়ে আলোচনা করাই গীবত।
সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, বর্ণনা করা দোষ যদি ওই ভাইয়ের (আলোচিত ব্যক্তিটির) মধ্যে থাকে, তাহলেও কি তা গীবত হবে?
রাসুল (সা.) বললেন, যদি তা সঠিক থাকে হয়; তবেই তা গীবত। অন্যথায় তা হবে অপবাদ।
(মুসলিম, হাদিস: ৬৩৫৭; বুখারি, হাদিস: ৫৬১৩)
ইসলামে গীবত বা পরনিন্দা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ। গীবত করা ও গীবত শোনা সমান অপরাধ। অনেকে পরনিন্দাকে নিষিদ্ধ বলে মনেই করেন না। মদ্যপান, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদির চেয়েও মারাত্মক ও নিকৃষ্টতম পাপ ও কবিরা গুনাহ গীবত।
গীবত নিয়ে কোরআন হাদিসে কি আছে:-
কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কোরো না। আর তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)
কোরআনে আরও আছে, দুর্ভোগ এদের প্রত্যেকের যে সামনে ও পেছনে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও বারবার তা গোনে, ভাবে যে এ অর্থ তাকে অমর করে রাখবে। কখনো না। তাকে তো ফেলা হবে হুতামায়। হুতামা কী, তুমি কি তা জান? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত হুতাশন, যা হৃৎপিণ্ডগুলোকে গ্রাস করবে, ওদেরকে বেঁধে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভে। (সুরা হুমাজা, আয়াত: ১-৯)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘পরচর্চাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমাকে তামার নখওয়ালা একদল লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। তারা তাদের নখগুলো দিয়ে মুখমণ্ডলে আর বুকে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? জিবরাইল (আ.) বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত এবং তাদের মানসম্মান নষ্ট করত। অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত ও কুৎসা করত।’ (আবু দাউদ)।
.
বর্তমান পৃথিবীর জনসংখ্যা কত জানেন? ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৮০১ কোটি ৯৮ লাখ ৭৬ হাজার ১৮৯ জন। কখনো ভেবে দেখেছেন এতগুলো মানুষ সবাই সবার নিজ নিজ ঈশ্বরের প্রার্থনা করছেন। তবে কত জন ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে পৃথিবীতে। কে কার থেকে বড়, কে কার থেকে ছোট, এই নিয়ে কি পৃথিবী থেমে আছে। কতজনেই তো কত কথা বলবে। কয়জনের মুখ আপনি বন্ধ করবেন। কেউ একজন বললো ঈশ্বর নেই তার মানে এই নয় যে তার কথায় ঈশ্বর বিলীন। আবার কেউ একজন বললো ঈশ্বর রয়েছে তার মানে এই নয় যে ঈশ্বর সবার সামনে এসে হাজির। তাই করো কথায় কান ও গুরুত্ব না দিয়ে নিজ নিজ কাজ এবং নিজ ধর্ম আস্থার সহিত পালন করাই শ্রেয়। নিজের আস্থার উপর আস্থা রাখাটাই এই দুনিয়ায় সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। আমার এমন সব কথায় অনেকেই আমার উপর ক্ষেপে যায় কিন্তু উনি আমার উপর কখনো ক্ষেপেন না। উনি পরম আদবের সহিত যতটুকু পারেন আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। আমি উনার অতি মূল্যবান কথাগুলো আমার কান হতে মস্তিষ্কে গমন করিয়ে দিল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনা।
বৃষ্টি রাতে আয়োজন করে বই পড়তে হয়। ভাবলাম আজ রাতে বেশ আয়োজন করেই বই পড়বো। অনেকটা গরিবের নবাবী স্টাইল বলা যায়। আয়োজনের প্রথম অংশ হিসেবে টেবিল সাজানো। যার জন্য প্রয়োজন মোমবাতি। মোমবাতির আলোয় একটা ভৌতিক পরিবেশ তৈরি হয়। রুমের সব আলো নিভিয়ে দিয়ে মোমের আলোয় বই পড়ায় অন্যরকম একটা অনুভূতির জন্ম হয়। ড্রয়ারে খোঁজাখুঁজির পর দুইটা ক্যান্ডেল পাওয়া গেল। দ্বিতীয় আয়োজনের অংশ হিসেবে চা বানানো। সেই উদ্দেশ্যে রান্নাঘরের দিকে যাওয়া। রান্নার মধ্যে সবচেয়ে সহজে এবং দ্রুততম রান্না হলো চা বানানো। এক কাপ পানিতে এক চা চামচ দার্জিলিং গ্রীন টি। সামান্য পরিমাণের কুচি কুচি করে কাঁটা আদা। দুই মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে কাপে ঢেলে একটা জিরো ক্যাল মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেল চা। সো ইজি এন্ড সিম্পল। সাথে কিছু স্নাক্স।
রুমে এসে মোমবাতির সাথে দুটা আগরবাতি জ্বালিয়ে সব লাইট অফ করে দিলাম। রান্নাঘর থেকে আসার সময় আগরবাতি পেয়েছি। ল্যাপটপে প্লে লিস্ট সেট করে লিড বন্ধ করে দিলাম। আজ শুধু অর্ণবের গান আর রাতভর বই পড়া। শুরুতেই বেজে উঠলো বৃষ্টি নিয়ে গাওয়া সেই প্রিয় গান, "সে যে বসে আছে একা একা। তার স্বপ্নের কারখানা চলছে আর বুড়ো বুড়ো মেঘেদের দল বৃষ্টি নামার তাল গুনছে। সেই গুন গুন মনের গান বৃষ্টি নামায়। টপটপ ফোটা পড়ে অনেকক্ষণ। সেই বৃষ্টি ভেজা মনে ডাক দিয়েছে। ভেজা কাক হয়ে থাক আমার মন।"
ভেজা কাক হয়ে থাক আমার মন। এই একটা লাইন। কত গভীর অথচ কত সহজ। কিভাবে এত গভীর কথাগুলো এত সহজে বলে দেওয়া যায়। কখনো ভেবে দেখেছ কি?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


