মানুষের অতিমাত্রার প্রত্যাশাই তার জীবনকে সংক্ষিপ্ত করে ফেলে। বিশেষ করে মানসিক আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রভাব তো স্বাস্থ্যের ওপর পড়েই। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের বর্তমান যুগে লাগামহীন আকাঙ্ক্ষার শেষ কোথায়? যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনের চাকা কোথায় গিয়ে পৌঁছায়, তা বর্তমান বিশ্বের গড় আয়ুর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তবে স্বাস্থ্য গবেষকরা অল্প আয়ুর জীবনের বিষয়টিকে আমলে নিয়ে এ থেকে উত্তরণে নিরলস গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গবেষকরা কতগুলো কারণকে শনাক্ত করে ধারণা করছেন, বর্তমান বিশ্বে মানুষের জীবন কেন এত সংক্ষিপ্ত? বিশেষ করে অল্প সময়ের মধ্যেই জীবনে এসে পড়ছে বৃদ্ধাবস্থা। আর এ সময়েই বেঁচে থাকার আকুলতা এবং মানসিকভাবে মৃত্যুচিন্তা পেয়ে বসে। আর মৃত্যুচিন্তার প্রহর গুনতে গুনতে বৃদ্ধরা আরো বেশি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হন।
এ ক্ষেত্রে গবেষকরা বলছেন, মৃত্যুচিন্তা বাদ দিয়ে যদি শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস বাড়িয়ে জীবনকে আরো গতিশীল করে তোলা
যায়, তাহলে পাওয়া যাবে বাড়তি আয়ু। এর বাইরেও জিন চিকিৎসার মাধ্যমেও বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষাকে দৃঢ় করা যায়।
মানুষের প্রত্যাশার বিপরীতে জীবনের সীমারেখার ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে লন্ডনের নিউ ক্যাসল ইউনিভার্সিটির বয়স্ক স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক টম কির্কউডের বলেন, মানুষ জন্মগতভাবেই একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেড়ে ওঠে। জন্মগত সুস্থতা, পরিবেশ, পরিমিত খাবার, নিয়মানুবর্তিতা, বিশ্রাম_এসব মিলিয়ে একটি মানুষ বড় হয়। যাঁরা নিয়ম মেনে চলতে পারেন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ থাকেন এবং তাঁদের প্রত্যাশার ব্যাপ্তিটাও হয় বেশি। অন্যদিকে অনিয়মের বেড়াজালে আটকে পড়েন যাঁরা, তাঁদের প্রত্যাশার গণ্ডি সীমিত হয়ে পড়ে। আর বৃদ্ধ বয়সে এসে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেসার, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনতে শুরু করেন। তিনি আরো বলেন, শারীরিকভাবেই মানুষ শরীরে অ্যান্টিবডি সিস্টেমের মাধ্যমে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। নানা কারণে মানুষের শরীরের অ্যান্টিবডি সিস্টেমের এ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। রোগে ভুগে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ থেকে উত্তরণে দরকার ভালো খাবার, উপযোগী বাসস্থান, শিক্ষা, মানসিক বিকাশ, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা এবং যেকোনো অসুস্থতায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
স্বাস্থ্য গবেষকরা ভবিষ্যৎ করে বলছেন, আগামী শতকে অনাগত প্রজন্ম দীর্ঘায়ু নিয়েই জীবন যাপন করতে পারবে, যদি তারা জীবনের চাহিদাগুলোকে সংযমের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারে। বিশেষ করে মানসিক শক্তি বাড়িয়ে যে কেউ স্বাস্থ্যগতভাবে প্রতি ১০ বছরে কম করে হলেও দুই বছর আয়ু বৃদ্ধি করতে পারে। একটু পেছনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ২০০ বছর আগের চেয়ে পৃথিবীতে এখন মানুষের গড় আয়ু দ্বিগুণ। তাহলে ওই সময়কার জীবনযাপনকে লক্ষ করলেই বোঝা যাবে তাদের জীবনধারণের ধরন কেমন ছিল, আর এখন কেমন? তবে এটুকু বলা যায়, আমরা কেবল সচেতনতার মাধ্যমে বেঁচে থাকতে পারি দীর্ঘতর জীবন। সূত্র : বিবিসি অনলাইন
Click This Link