somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কলেজ জীবন যেরকম আশা করেছিলাম, সেটা ঠিক সে রকম হল না ! [সসার ক্লাবঃ অধ্যায়-২]

২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব

মীরা রুমে ঢুকে নিজের বিছানায় ধপ করে বসল। তারপর সুমনার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিল শপিং ব্যাগগুলো কোথায় রাখতে হবে। মীরা গোছানো থাকতে পছন্দ করে, তার রুমের কোনো আসবাবপত্রে একটা কনাও ধুলো থাকেনা। এখটু অগোছালো হলেই তারা মাথা গরম হয়ে যায়।

“তোর ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার করে বল,” মীরা বলে উঠল।

“কোন ব্যাপার?”

“সাজিদের ব্যাপার আর আজকে ওই বেয়াদবটার রানা না কানা কি নাম জানি।”

সুমনা বুঝতে পারল মীরা এখনো ক্ষেপে আছে। মীরার চেহারা সুন্দরীদের কাতারে পাঠানো যায়। সারা জীবন সে দেখে এসেছে ছেলেরে তার পিছনে ঘুরাঘুরি করে কিন্তু আজকে একটা ছেলে তাকে পাত্তা দেয় নাই তার উপর আপদ বলেছে সেটা তার অহমে লেগেছে। তবে বই পড়ুয়া বলে রানা আজকে ক্ষমা পেয়ে গেছে নাহলে খবর ছিল তার!

“না তেমন কোনো যোগাযোগ করছে না, মাঝে মধ্যে মেসেজ দেয় এই,” সুমনা শুকনো গলায় বলল, “সে বলে মোবাইলে কথা বলা অনেক খরচ ইন্টারনেটের মাধ্যমে চ্যাটিং করলে ভাল হয়, এই জন্য কম্পিউটার কিনলাম, আজকে একটা ওয়েবক্যাম কিনলাম…”

“রানা ছেলেটা জানে যে তোর বয়ফ্রেন্ড আছে?” মীরা সুমনার কথা মাঝখানে বলে উঠল।

“এখানে রানার ব্যাপার আসছে কেন?” সুমনা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেশ করল।

“আমার মনে হয় ছেলেটা তোকে পছন্দ করে নাহলে আজকে তোর জন্য ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করত না আর তোর সাথে ঘুরতে বের হত না,” তারপর একটু থেমে নাক উচু করে বিশেষজ্ঞদের মত করে বলল, “আমি জানি নিশ্চয়ই সে তোর পিছে সারা দিন ঘুরে।”

“না।”

“বলিস কি তাহলে?”

“আমিই ওর পিছে থাকি, বলতে গেলে আমাকে এড়িয়ে চলে সে, আর আজকে ওয়েবক্যাম কেনার জন্য আমিই তাকে বলেছি আর নিউমার্কেট সেটা কাকতালীয়।”

মীরা হা হয়ে সুমনার দিকে তাকিয়ে থাকল। মনে মনে বলে উঠল, এই শুনছি আমি। সে কি বলে উঠবে বুঝে উঠতে পারল না। সুমনাই নিরবতাটা ভাঙ্গল। সে বলে উঠল, “আমি চিন্তায় আছি সাজিদ কে নিয়ে।”

“ওই পামড়ে কথা ভুলে যা,” নিস্পৃহ গলার মীরা বলল, “দেখ বিদেশের কোন মেয়ের সাথে লাইন ঘাট মারা শুরু করছে,” তারপর সে সুমনার দিকে তাকাল, বুঝল আসলে এই কথা বলা উচিত হয় নাই তার।

সুমনা মেয়েটা অনেক শক্ত আর রাগী দেখালেও ভিতরে তার মন একটা বাচ্চা মেয়ের মত। আগে সে সুমনাকে দেখতে পারত না তার অহংকারী ভাব দেখনোর জন্য। তিন বছর আগে একটা ঘটনার কারনে সে বুঝতে পারে সে সুমনাকে। এরপর থেকে সে সিদ্ধান্ত নেয় সে সুমনা যথাসম্ভব সাহায্য করে চলবে, ওর পাশে থাকবে। সে যখন শুনেছিল সাজিদের সাথে তার রিলেশোন হয়েছে তখন সে বলতে গেলে ক্ষেপে বোম হয়ে গিয়েছিল কিন্তু সুমনাকে কিছু বলেনি সে সাজিদকে বলেছিল, সুমনা গায়ে যদি একটা আচড়ও লাগে তাহলে সে তার চামড়া ছিলে ফেলবে।

সাজিদ তাদের কাজিন হয়। বাপ মায়ের একমাত্র ছেলে। তাদের বিশাল পরিবারের মধ্যে সাজিদদের অবস্থা ভাল। ভোলা ভোলা চেহারার হলেও ছেলেটা একটা বদের হাড্ডি। এর আগে মীরার পিছনে ঘুরে ছিল সে পাত্তা দেয়নি একদিন বাড়াবাড়ি করে উঠায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়েছিল সে তারপর সে একটা ছুরি নিয়ে সাজিদের কাছে গিয়ে বলেছিল, সে যদি আর কোনোদিন তার দশ হাতের মধ্যে আসে তাহলে এটা দিয়ে পেট ফেড়ে দিবে। এরপর থেকে সাজিদ মীরার ধারেকাছেও আসে নাই। বর্তমানে সে আমেরিকায় আছে, সেখানে কোন এক ভার্সিটিওতে আছে ফাইনাল ইয়ারে।

“তো আমি এখন কি করব?” সুমনা জিজ্ঞেশ করে উঠল।

“সাজিদকে ছেড়ে ওই রানা ছেলেটা পিছনে লাগ ভাল হবে, ছেলেটা বেয়াদব হলেও ওকে আমার ভাল লেগেছে।”

“বই পরে বলে,” এই বলে সুমনা হেসে ফেলল, “আর ওর পিছনে আমাদের কলেজের এক আপু লেগেছে, আর সে খুবই সুন্দরী আমি তার কাছে পাত্তাই পাব না।”

মীরা একটা ফিচেল টাইপ হাসি দিয়ে বলল, “তা মানে ইচ্ছা আছে।”

“যাহ, কি যে বল না আমি শুধু একটা ফ্যাক্টসের কথা তুলে ধরেছি,” সুমনা জোর গলায় বলল, কিন্তু তার চেহারার মধ্যে ফুটে উঠা লাল ভাবটা লুকাতে পারল না সে মীরার চোখ থেকে।

মীরা এবার উঠে বসল, বড়সড় একটা শ্বাস ফেলে নিজের কম্পিউটারের কাছে গিয়ে বসল, “আয় আজকে আমাদের আইডলকে দেখাই।”

“আইডল মানে?”

“আরে তোকে বলেছিলাম না আমাদের ভার্সিটিতে একজন সিনিয়র আপু ছিল গত বছর সে বের হয়ে গেছে।”

“ও, সেই আপুর কথা বলছ, এগুলো কি সম্ভব?”

“হ্যা সম্ভব।”

মীরার কথা সুমনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হল। সে মনে মনে ভাবল সেটা কিভাবে সম্ভব, একটা মেয়ে কিভাবে পুরো ভার্সিটি ঠান্ডা রাখে, তাও আবার ঢাকা ভার্সিটির মত একটা ভার্সিটি, যেখানে একটা না একটা গোলমাল লেগে থাকে। যদিও ভার্সিটিটা এত খারাপ না।

মীরা যেন সুমনার মনের কথাটা বুঝতে পারল, সে কম্পিউটারটা চালু করে সুমনার দিকে ফিরে বলল, “আমারো বিশ্বাস করতে খুবই কষ্ট হয়েছিল কিন্তু যখন তাকে একটা লাঠি নিয়ে এক ক্যাডারকে দৌড়ানি দিল তখন আমি বিশ্বাস করেছিলাম।”

“পরে ওই ক্যাডার কিছু বলে নাই!”

“না, সাহস পায় নাই, এইগুলার আবার সাহস কম। কুত্তা হয়ে বাঘের ছাল পড়ে থাকে এগুলা।”

সুমনা চুপ করে রইল।

“এটা ঠিক এই পলিটিক্স না থাকলে ঢাকা ভার্সিটি সেইরকম একটা ভার্সিটি,” এই বলার পর সে কম্পিউটারে সে ফেসবুকে ঢুকল তারপর একটা পেজ বের করে বলল, “এই যে এই আপা পেজ।”

সুমনা ছইটার দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাসের সাথে বলল, “এ, এতো পুরো বাচ্চাদের মত চেহারা। সে কিভাবে…”

“আরে চেহারা দেখে মানুষ বিচার করিস না।”

মীরার কথা শুনে কিছু বলল না সুমনা, তবে সে স্ক্রিনে ভেসে উঠা মেয়েটার ছবি দেখতে লাগল। তার কাছে কেন যেন মনে হতে লাগল সেই মেয়েকে কোথায় যেন দেখেছে। মীরাকে সেটা বলল না সে। সুমনা মীরার দিকে তাকিয়ে, “ওয়েবক্যামের কাজ কিভাবে করতে হয় শিখিয়ে দাও।”

“এটাতো সোজা কাজ।”

“দাও না।”

“দাড়া, বের কর।”

এটা শোনার পর সুমনা তার ব্যাগ থেকে ওয়েবক্যাম বের করে দিল। মীরা সেটা কম্পিউটারের সাথে লাগিয়ে সুমনাকে দেখাতে লাগল কিভাবে কাজ করতে হয়।



*

টিফিন পিরিয়ড। সেই গাছের নিচে বসে আছি আমরা ছয়জন, আশেপাশে ছাত্র-ছাত্রী কয়েকজন আসা যাওয়া করছে অবশ্য সেদিকে আমাদের কারোরই ভ্রুক্ষেপ নাই। কি ধরনের ক্লাব খোলা হবে সেটা নিয়ে সবার প্রশ্ন, আমি অবশ্য একটা মতামত দিয়েছিলাম সেটা তার উচ্চবাক্যে না করে দিয়েছে। আমি বলেছিলাম একটা বইপড়া ক্লাব খুলতে, সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছিল মনে হচ্ছে আমি একটা ভিনগ্রহবাসী, একটা ভিনগ্রহ ভাষায় কথা বলেছি।

টিফিন পিরিয়য় প্রায় শেষ হতে যাচ্ছে, আমি আর কিছু করার না পেয়ে একটা ঘাসের ডগা নিয়ে চিবুতে লাগলাম। মনে পড়ে গেল পিচ্চি কালের কথা, কতই না কাশফুলের নিচের অংশটা চিবিয়েছি, একধরনের মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যেত ওটা চিবুলে। আহ পিচ্চি কাল!

“ওই ছাগলের মত ঘাস না চিবিয়ে, একটা আইডিয়া দাও,” রুপার হেড়ে গলা বলে উঠল।

আইডিয়া কি গাছের আম যে ধরলাম আর পাড়লাম, মনে মনে বললাম এটা। রুপার কথা কানে না নিয়ে ঘাসের ডগা চিবুতে লাগলাম, মিষ্টি স্বাদ না পেলেও তিতকুটে স্বাদটা খারাপ লাগল না!

“আচ্ছা একটা হরর ক্লাব খুললে কেমন হয়।”

সজলের এই কথা শোনার পর ঘাসের তিতকুটে স্বাদটা যেন একটু বেশী বেড়ে গেল। আমি কিছু বলার আগেই নুশরাত বলে উঠল, “ওই ভুত এফ.এম. শোনার পর মাথা গেছে নাকি, আজেবাজে সব গল্প নিয়ে আসে।”

নুশরাতের এই কথা শোনার পর আমি কিছুটা আশা পেলাম, আমি তাকে তাল দিয়ে কিছু বলতে যাব তখনই নুশরাত আবার বলে উঠল, “তবে আইডিয়া একদম খারাপ না, কোনো এক হন্টেড হাউজে ঘুরাঘুরি করা।”

“ওইটাই তো বলেতে চেয়েছিলাম,” সজল বলে উঠল, “একটা হরর ইনভেস্টিগেশন ক্লাব, বিভিন্ন হন্টেড জায়গায় ঘুরে বেড়াব আমরা।”

সজলের এই কথা শনার পর সুমনা চোখ চকচক করে উঠল। আরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম সুমনা থ্রিলারের পাগল, আর হরর তো থ্রিলারে একটা অংশ। অরা যদি হরর ইনভেস্টিগেশন ক্লাব খুলতে যায়, সেটার কথা মনে হতেই আমার আমার শিরদাড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা পানির স্রোত বয়ে গেল।

“এটা একটা অসম্ভব কাজ,” আমি বলে উঠলাম।

“কিভাবে?”

নুশরাতে ভ্রু কুচাকানোটাকে উপেক্ষা করে আমি বলে উঠলাম, “হন্টেড জায়গায় যেতে হলে যেতে হবে রাতের বেলায়, এখানে কোন ফ্যামিলি আছে যারা রাত দশটার পর বের হতে দিবে?”

রাত দশটার দিকে বের হওয়া কোনো ব্যাপার না আমার জন্য। আপিকে একটু বুঝিয়ে দিলেই হবে। সজল আর নির্জন হয়তো অনেক ধানাই-পানাই করে বের হতে পারবে কিন্তু মেয়েরা, সেটা অসম্ভব! তার আগে তাদের ঠ্যাং ভেঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিবে।

আমার এই প্রশ্ন শোনার পর তারা চুপ করে গেল। মোক্ষম একটা জিনিষ ধরিয়ে দিয়েছি তাদের, এখন তাদের হরর ইনভেস্টিগেশ্ন ক্লাব খোলা বন্ধ হয়ে যাবে। আমি একটু শান্তি বোধ করে গাছের পিঠে হেলান দিয়ে বসলাম। আড়চোখে মেয়েদের দিকে তাকালাম, তার আমার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। থাকগে আমার কোনো সমস্যা নাই।

“আচ্ছা রানা তুমি কি ভুতকে ভত পাও?”

“হাহ~”

রুপার প্রশ্ন শোনার পর আমি সজা হয়ে বসলাম। একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললাম, “কি যে বল না যে জিনিষের অস্তিত্ব নাই সে জিনিষকে ভয় পাব কেন!”

“কিসের কথা হচ্ছে?”

রাতুলের গলা শুনতে পেলাম। সে রুপার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আর তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে হৃদি। হৃদিকে দেখে গত পরশু রাতুলের কথা মনে পড়ে গেল, ‘সে আমার মামী হতে চায়!’

সুমনার তখন উঠে দাড়াল সে রাতুলের কাছে গিয়ে বলল, “তোমার সাথে কথা বস।”

রাতুল একটু ঘাবড়ে গিয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেল। সে সুমনার দিকে কাষ্ঠ হাসি সিয়ে বলল, “কি কথা জানতে পারি?”

“আরে বস না, তাপর কথা বলি,” তারপর সে হৃদির দিকে তাকিয়ে, “তুমিও বস।”

হৃদি যেন এই কথার অপেক্ষায় ছিল, সে ঝপ করে আমার পাশে বসে পড়ল। এখন বাচ্চারা দেখছি মারাত্মক ধরনের। ওর মত বয়সে থাকলে আমি জীবনেও কোনো মেয়ের পাশে এভাবে বসতাম না। আসলেই এখনকার পিচ্চিরা অনেক এগিয়ে গিয়েছে।

রাতুল সুমনার পাশে বসেছে মানে বসতে বাধ্য হয়েছে। সে রাতুলের দিকে একটা রোল করাপরোটা দিয়ে বলল, “খেয়ে দেখো নিজের হাতে বানানো।”

রাতুল একটু ইতস্তত করে সুমনার হাত থেকে পরোটাটা নিল। সে এখনো নিশ্চিত না সুমনার তরফ থেকে কোনো আক্রমন আসবে নাকি। সুমনা যে তার ইজ্জত নিয়ে একবার টান দিয়েছল সেটা তার মনে বড় দাগ কেটে গেছে। সে পরোটাটা মুখে ঢোকানোর পর তার চেহার উজ্জ্বল হয়ে গেল, সে সুমনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল, “ভাল হয়েছে পরোটা, একট মিষ্টি মিষ্টি ভাব, ভেতরে কি দিয়েছ।”

“চকোলেট,” সুমনা হাসি মুখে বলল।

চকলেট! পরোটার সাথে! জীবনে প্রথম শুনলাম। তবে রাতুলের খাওয়ার ধরন দেখে বুঝলাম সেটা অনেক ভাল হয়েছে। রাতুল খাবার নিয়ে অনেক ঝামেলা করে, এটা খাব তো ওটা খাব না এই ধরনের তবে আপি ভয়ে এখন অনেক কিছু কোৎ করে গিলে খায়।

সুমনা রাতুলের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, “তা রাতুল তোমার মামা কি ভুতে ভয় পায়?”

“পায় মানে মারাত্মক ভয় পায়, পিচ্চিকালে তো প্যাচার ডাক শুনলেই সে বিছানা ন…”

“ওই,” রাতুলের কথা মাঝখানে আমি বলে উঠলাম।

সুমনার আর কিছু বলল না তার ভাব থেকে বুঝতে পারলাম সে যা জানার জেনে গেছে। রাতুলকে আর দরকার নাই তার। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“কি ব্যাপার, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন? আমি কি করলাম?”

সজল আমাকে আশ্বস্ত করার মত করে বলল, “সমস্যা নাই রানা, সবারই একটা না একটা দুর্বলতা থাকে,” তারপর বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “যেমন মেয়েরা তেলাপোকা বা ইদুর কে যেভাবে ভয় পায়।”

“ঠিক বলেছেন,” হৃদি বলে উঠল, “আমার এক মামী আছেন তিনিও ভুতকে ভয় পান।”

ওই মেয়ে তুমি মামী শব্দটা আমার সামনে উচ্চারন করবে না, মনে মনে বলে উঠলাম।

“আচ্ছা আমরা আসল আলোচনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি কিন্তু,” আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিলাম।

“উম হুম মনে করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ,” সুমনা এই বলে একটা গলা খাকারি দিল সে কিছু বলতে যাবে তখনই ঘন্টাটা জানান দিল টিফিন পিরিয়ড শেষ।

সুমনার আর কিছু বলা হল না, সে ক্লাস ক্যাপ্টেন তাই তাকে আগে ভাগে যেতে হল। আমি সবার যাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। রাতুলও আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল এর সাথে হৃদিও ছিল। সবাই কিছুটা দূরে যেতেই আমি রাতুলের কান ধরে বললাম, “বদমাইশ, তোর বলার দরকার কি ছিল যে আমি ভুতকে ভয় পাই।”

“আউ আউ~ মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে সরি।”

“তোর সরির আমি খ্যাতাপুড়ি আমি।”

“একটা মেয়ের সামনে মুখ খারাপ করছ কেন?”

“ওই হৃদি ক্লাস যাও, এইটা পরে আসবে, ওর আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করে তারপর পাঠাব।”

হৃদি কিছুটা হতবাক হয়ে গেল, তারপর মাথা ঝাকিয়ে চলে গেল। আমি এবার রাতুলের দিকে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললাম, “এতক্ষনতো টিফিন করলি আয় এবার সেগুলো হজম করার ব্যাবস্থা করি।”



ক্লাসরুমে গম্ভীর হয়ে বসে আছি। এটাই লাষ্ট পিরিয়ড। রাতুলকে আরেকটা ‘ট্রিটমেন্ট’ দেয়ার ইচ্ছে আছে, মনের ঝাল এখনো মিটে নাই আমার। সামনের দিকে নজর গেল দেখলাম সুমনা এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। দেখে মনে হচ্ছে খুবই ব্যস্ত একটা মানুষ কাজের কোনো শেষ নেই তার।

সজলে আমার সামনে এসে বলল, “কিরে বাপ এমন প্যাচার মত মুখ করে আছিস কেন?”

তার এই কথার জবাব দিতে মন চাইল না, আমি চুপ করে রইলাম।

“ওই বাপ কথা বল, এইরকম চেহারা করে রাখিস না, আর তুই ক্লাস ক্যাপ্টেন, সুমনাকে একটু সাহায্য কর।”

“সহকারী ক্যাপ্টেন,” আমি শুধরে দিলাম।

“সে যাই হোক।”

সেটা ঠিক সে অনেক্ষন ধরে দৌড়দৌড়ি করছে আর আমি এদিকে বসে ভেরেন্ডা ভাজছি। তাই উঠে তার কাছে গেলাম, “অনেক্ষন দেখছি এদিক ওদিক দৌড়াডৌড়ি করছ তুমি, কাজ কি বেশী পড়ে গেছে নাকি?”

আমার কথা শুনে ঘুরে দাড়াল সে, আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “বাড়ির কাজ তোলা লাগবে আবার ফিজিক্স ল্যাব স্যার কিছু শীট দিয়েছে, সেগুলো সবাইকে দেয়া লাগবে, তারপর বায়োলজি ম্যাডামকে ডাকা লাগবে…”

“হইছে, একটু থাম, তা এখাই কি সব করার দায়িত্বে আছি নাকি।”

“না, তোমাকে উদাস মনে বসে থাকতে দেখে আর বিরক্ত করলাম না।”

“সাহায্য লাগবে নাকি?”

“না, মনে হয় একাই পারব আমি।”

“ঠিক আছে, তবে তোমার সময় বাচিয়ে দিচ্ছি আমি,” এই বলে আমি লেকটার্নের দিকে দিকে গেলাম, গলা খাকারি দিয়ে উচু গলায় বললাম, “যারা বাড়ির কাজ এনেছ তারা ক্যাপ্টেন সুমনার কাছে জমা দাও, আর যারা পদার্থ বিজ্ঞান ল্যাবের শীট নিতে ভুলে গেছ তারা একটু দয়া করে দাড়াও, আমি বিলিয়ে দিচ্ছি।”

আমার এ কথা বলার পর পাচ মিনিটের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে গেল। টেবিলের সামনে এত গুলা বাড়ির কাজ জমা হয়ে আছে সেটা দেখে একটু অবাক হলাম। কার বাড়ির কাজ এটা যে সবাই জমা দিচ্ছে?

“ধন্যবাদ রানা, আমি এই খাতাগুলো নিয়ে যাচ্ছি।”

এখানে প্রায় পঞ্চাশটার মত খাতা আছে, আর সাথে পদার্থ বিজ্ঞান ল্যাবের শীটও আছে, একা নিতে গেলে ওর খবর হয়ে যাবে, আমি বলে উঠলাম, “আচ্ছা আমি খাতাগুলো নিয়ে যাচ্ছি।”

সুমনা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল, কিছু বলতে গিয়েও বলল না, শুধুই এইটুকুই বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে।”

আমরা কলেজের করিডোর দিতে হাটছি, দুজনই চুপচাপ আছি। আমার হাতে খাতা আর ও শীট হাতে নিয়ে যাচ্ছে। নিরবতাটা ভাঙ্গা দরকার এই মন করে আমি বলে উঠলাম, “আচ্ছা তুমি সব কিছু একা করতে যাও কিসের জন্য, কারো কাছ থেকে তো সাহায্য নিতে পার।”

“কি করব একা কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে।”

সুন্দর উত্তর!

“কারো কাছ থেকে সাহায্য নেয়া তো খারাপ না।”

সে কিছু বলল না। আমি একটা বড়সড় দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, “সবারই সাহায্যর দরকার আছে, একে অপরকে সাহায্য না করলে তো কিছু হবে না, আর সাহায্য করা বা সাহায্য নেয়া হচ্ছে একটা মানুষের অধিকার মানে হিউম্যান রাইটস।”

এই বলার পর আমি সুমনার দিকে তাকালাম, দেখলাম তার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠছে, সে বলে উঠল, “থ্যাংকস রানা, আমি ক্লাবের আইডিইয়া পেয়ে গেছি।”

হ্যা, বলে কি, এমন কি বললাম যে সে তার ক্লাব খোলার আইডিয়া পেয়ে গেছে!

কিছু বলতে যাব তখনই আমরা টিচারস রুমে পৌছে গেলাম, সুমনা বলল, “লায়লা ম্যাডামের ডেস্কে খাতা রেখে আস।”

কথাটা আমার কানে বোমার মত করে ফাটল। লায়লা ম্যাডামের বাড়ির কাজ, আমি তো করি নাই। আমারে ধরলে তো বিপদ। আশেপাশে তাকালাম, না ম্যাডামের ছায়াও পর্যন্ত নাই। মনে মনে ভাবলাম তাড়াতাড়ি খাতাগুলো রেখে ভাগি, দেরী করলেই বিপদ।

উপরওয়ালা মনে হয় আমার পক্ষে ছিলেন না, আমি খাতা উনার টেবিলে রাখতেই উনি আমার সামনে এসে হাজির, “কি খবর রানা, তা আমার বাড়িকাজ এনেছে?”

আমি কিছু বললাম না, একটা ঢোক গিললাম।

“আঃ, নিরবতা তারমানে বাড়িরকাজ নিয়ে আসেন নাই।”

“ভুল হয়ে গেছে, বাসায় ভুলে ফেলে এসেছি আমি,”

“ঠিক আছে রুনাকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি সে আমার হয়ে চেক করবে।”

এ দেখছি আরো বিপদ! আমি লায়লা আপু ধ্যাত ম্যাডামের কাছে বললাম, “মাফ করে দিন, আজকে করা হয়নি, আর কোনোদিন আমি আপনার বাড়ির কাজ ফাকি দিব না।”

লায়লা ম্যাডাম আমার দিকে একটা হাসি দিল, বাঘ যেমন একটা ফাদে পড়া হরিণকে দেখে হাসি দেয়, তারপর বলে উঠল, “আচ্ছা তাই নাকি, এটা হিসাবের খাতায় রেখে দিলাম, আর তিনটা রচনা লিখতে দিব সেগুলো কালকে নিয়ে আসবে, আর প্রত্যেকটা ২৫০ শব্দের কম হবে না।”

যাক তিনটা রচনা মেনে নেয় যায়, আমি ব্যাবস্থা করে নিব।

রচনা তিনটার নাম দেখে অনেকেরই চোখ চড়ক গাছ হলেও আমার হল না। আমি জানতাম সে আমাকে ঠিক এই ধরনের রচনাই দিবে। কড়া কড়া ধরনের। সমস্যা নাই আমার ইন্টারনেট আছে সেখান থেকে নামিয়ে নিব তারপর সেটা খাতায় তুলে নিলেই হল।

“ভাল করে করে আনবে, বুঝেছ,” আমার দিকে কড়া করে তাকিয়ে বলল লায়লা ম্যাডাম।

“হুম বুঝেছি।”

আমি টিচারস রুম থেকেই বের হতেই দেখলাম সুমনা দাঁড়িয়ে আছে, আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল, “কি ব্যাপার, এত দেরী কেন?”

“আরে ম্যাডাম কিছুক্ষন গ্যাজালো!”

“কি নিয়ে ?”

“আরে ওর কামই হল গ্যাজানো।”

“রানা আমি সব কথা শুনতে পারছি,” লায়লা ম্যাডামের গলা শুনে আমি সোজা হাটা শুরু করলাম। এখানে বেশীক্ষন থাকা আমার জন্য নিরাপদ না।

“শোনো কালকে আমরা ক্লাব নিয়ে মিটিঙে বসব।”

সুমনার কথা শুনে আমি থেমে গেলাম, “কিসের ক্লাব মিটিং!”

“ফাজলামি করবা না, কালকে বসব, তোমার ভাগ্নেকেও নিয়ে এসো ওকেও দরকার।”

“কিসের দরকার?”

“কালকে বলব,” সুমনা এবার হাটা শুরু করে, “তোমাকে ধন্যবাদ, তোমার কারনে এই ক্লাব খোলার চিন্তা মাথায় আসল, কি ধরনের ক্লাব খুলব সেটাও মাথায় এসে গেছে।”

এটা শোনার পর আমি খুশি হতে পারলাম না, কারন কেন যেন হচ্ছিল আমি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছি। আমি সুমনার পিছু হাটতে লাগলাম, তার উজ্জ্বল হওয়া চেহারা কথা মনে হতেই সজলের কথা মনে পড়ে গেল। সে বলেছিল, সুমনা নাকি অনেক পরিবর্তন হয়েছে, তখন কিছুটা সন্দেহ থাকলেও এখন তা কমে গেছে। কলেজের শুরু দিকে তার হাসি মুখ দেখে মানে অনেক কিছু কিন্তু সে এখন আর আগের মত থাকে না।

হয়তো বা ঠিক সে কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে।



------------------------------------------------------------------------------

ব্লগে এই পর্যন্ত আমি লেখা প্রকাশ করেছি। এর আরো তিনটা অধ্যায় বাকী আছে প্রথম পর্ব শেষ করার জন্য, হয়তো বা এই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×