somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কলেজ জীবন যেরকম আশা করেছিলাম, সেটা ঠিক সে রকম হল না ! ২য় পর্ব [কিভাবে নাটক বানাতে হয় !-অধ্যায়-২]

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের অধ্যায়

আমি কানে হেডফোন লাগিয়ে বই পড়ছি। কলেজ থেকে সফলভাবে পলায়ন করার পর ভেবেছিলাম এদিক সেদিক একটূ ঘোরাঘুরি করব কিন্তু বাইরে এত রোদ ছিল যে পাগলেও এই রোদের ভিতর পাগলামি করতে বের হবে না। তাই আমি বাসায় ফিরে আসি।

বইয়ের ভিতর বলতে গেলে ডুবে গেছি আর হঠাৎ করেই মোবাইলের ভাইব্রাশনে দুনিয়াতে ফিরে আসলাম।

একটা আননোন নাম্বার, ধরার প্রয়োজন বোধ করলাম না। তিনবার কল দেয়ার পর মোবাইল আমার ঠান্ডা হল, তবে সেটা বেশীক্ষনের জন্যে না, একটা মেসেজ আসল। সেখানে লেখা,’আর এক মিনিটের মধ্যে দরজা না খুললে খবর আছে!’

মেসেজটা পাবার পর একজনের কথাই আমার মনে আসতে লাগল। তাই দরজার দিকে ছুটে গেলাম। দরজা খুলতেই অবাক হয়ে গেলাম, সুমনা দাঁড়িয়ে আছে। সে সরাসরি কলেজ থেকে আমার বাসায় চলে এসেছে!

সে আমার দিকে বিষমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারপর আমাকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে বলে উঠল, “কলেজ পালালে কেন?”

“পেট ব্যাথা করছিল।”

সুমনাকে দেখে মনে হচ্ছে পারলে এ আমাকে গিলে খায়। সেটা অসম্ভব বলে তার চোখের দৃষ্টি দিয়ে আমাকে পুড়ে খাক বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে!

পুড়ে খাক না হই তার দৃষ্টির আচ ঠিকই আমার গায়ে লাগছে। ভালভাবে লক্ষ্য করলাম সে ঘেমে আছে। রোদের মধ্যে নিশ্চয়ই সে হেটে এসেছে।
আমি কিছু না বলে রুমের ভিতর ঢুকলাম, সুমনা পিছন থেকে বলে উঠল, “ওই কই যাচ্ছ এখনো আমাদের মাঝে কথা শেষ হয় নাই।”

এই বলে সে আমার পিছে পিছে আসতে লাগল।

আমি তার কথা কানে না নিয়ে একটা টাওয়েল তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম, বললাম, “ঘেমে আছ আর দুপুরে খেয়েছ?”

আমার এই কথা শুনে সে হতবাক হয়ে গেল কিন্তু সে আমার হাত থেকে টাওয়েলটা নিয়ে নিল।

“বাথরুম ঐ দিকে,” আমি তাকে বাথরুম দেখিয়ে দিলাম।

সে বাধ্য মেয়ের মত বাথরুমের দিকে চলে গেল।

যাক বাচা গেল, এইভেবে আমি মুচকি হেসে উঠলাম। মেয়েটাকে আমি অনেক জটিল ধরনের ভেবেছিলাম আসলে তার মধ্যে একধরনে সহজ-সরলভাব আছে মনে হয়। হঠাৎ বাথরুম থেকে একটা চিৎকার শনা গেল। আমি কিছুই না ভেবে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম। বাথরুমের সামনে গিয়ে দেখলাম দরজা বন্ধ, আমি বলে উঠলাম, “সুমনা কিছু হয়েছে।”

“ভুলে শাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছি,” দরজার ওপাশ থেকে সুমনার গলার আওয়াজ পেলাম।

“তাহলে কি এভাবে চেচাতে হয়?”

দরজার ওপাশ থেকে এখন কোনো কথা আসল না।

“কি হয়েছে?” আমি জিজ্ঞেশ করে উঠলাম।

“…আমার জামা ভিজে গেছে,” সুমনা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠল।

“দাঁড়াও আপির জামা এনে দিচ্ছি,” এই বলে আমি আপির রুমের দিকে গেলাম।

আপির রুমে সাধারনত ঢোকা নিষেধ। সে যদি টের পায় কেউ তার রুমে ঢুকেছে তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে। যদিও আপির রুম আর সাধারন মেয়েদের মত তারপরেও কেন যেন আপি তার রুমে কাউকে ঢুকতে দেয় না।

আমি সাবধানে আপির রুমে ঢুকে তার একটা জামা নিয়ে বাথরুমের দিকে গেলাম। এখনো বাথরুম নিরব আছে। আমি মুচকি হেসে উঠলাম।

“আমি দরজার পাশে জামা রেখে বললাম আমি জামা রেখে দিয়েছি,” এই বলে আমি সেখান থেকে চলে গেলাম।



সুমনা আর আমি ডাইনিং টেবিলে বসে আছি। সামনে দুপুরের খাবার। আমি গপাগপ খেয়ে যাচ্ছি, সুমনা কাঠবিড়ালীর মত করে খাচ্ছে। সে রাজী হচ্ছিল না কিন্তু আমি অনেকটা জোর করে তাকে বসিয়ে রেখেছি।

সে যখন গোসল করে ড্র্ইংরুমে আসল তখন কিছুটা বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলাম। সে মনে হয় তখন সেটা খেয়াল করেনি। আপি আর সাধারন মেয়েদের তুলনায় লম্বা। তাই যখন সুমনা আপির জামা পড়ে বের হল তখন তাকে কিছুটা হাস্যকর লাগছিল কিন্তু তারপরেও তাকে অন্যরক্ম লাগছিল। একটা জিনিষ লুকাবো না, সুমনাকে তখন অনেক কিউট লাগছিল। সুমনা চুল মুছতে মুছতে বইয়ের তাকের দিকে তাকিয়ে থাকল।

আমি আমার বিহ্বলভাব তাড়াতাড়ি কাটিতে উঠলাম, সুমনাকে জিজ্ঞেশ করলাম, “তুমি কি এখন বাসায় যাবে না?”

“না,” সুমনা জবাব দিল।

“কোচিং আছে নাকি?”

“না, টিউশনি আছে তারপর একটা কোচিং যাব।”

“মনে হয় দুপুরের খাওয়া হয় নি।”

আমার এই কথায় সুমনা কিছু বলল না।

“খেয়ে যেও।”

সুমনা আমার দিকে ঘুরে তাকাল, বলল, “দরকার নাই এত কষ্ট করার।”

“আমি এত কষ্ট করব না, সব রেডী আছে, খেয়ে যেও।”

“… কি দরকার… “

“খেয়ে যাও।”

সুমনা কিছু বলল না। তখন আমার খেয়াল হল, রাতুল এখনো আসেনি।

আমি সুমনা কে জিজ্ঞেশ করলাম, “রাতুল কই?”

“সে নুশরাতদের সাথে আছে, প্ল্যান-প্রোগ্রাম করছে সব কিছু।”

“তুমি তাহলে কি করছ?”

এই প্রশ্ন করার পর বুঝতে পারলাম আমার প্রশ্ন করাটা ভুল হয়ে গেছে। সুমনা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, “কারনটা কি বলতে হবে?”

“না, ধন্যবাদ।”

এরপর আর তেমন কিছু কথা হল না আমদের মাঝে। আমি খাবার টেবিলে রেডি করলাম। আহমরি কিছু না। ডিম ভুনা, ডাল, বেগুনভাজি আর আলুর ভর্তা। আমি সুমনা দিকে তাকিয়ে বললাম, “তেমন কিছু করতে পারলাম না।”

“ন, এটাই অনেক,” এই বলার পর সে একটু ইতস্তত করতে লাগল।

আমি কিছু না বলে টেবিলে বসে পড়লাম, আমার সাথে সাথে সুমনাও বসে পড়ল।

খাবার খাওয়ার স্ময় তেমন কথা হচ্ছিল না। সুমনা একটু একটু করে খাচ্ছিল। তার এই খাওয়ার ধরন দেখে মজা করার লোভ সামলাতে পারলাম না, বলে ফেললাম, “তোমার খাবার খাওয়ার স্টাইল দেখে মনে হচ্ছে কোনো মেনি বিড়াল খেতে বসেছে।”

বলতে দেরী দুর্ঘটনা ঘটতে দেরী হল না। সুমনা বিষম খেলে। নাক-মুখ পুরো লাল হয়ে গেল তার। আমি পুরোই হচকচিত হয়ে গেলাম। সুমনা একটু ঠান্ডা হল তারপর আমার দিকে গরম চোখ করে তকিয়া বলল, “খাবার খাওয়ার সময় কেউ ফাজলামি করে ?”

“সরি ভুল হয়ে গেছে।”

সুমনা কি যেন বলতে গেল তারপর না বলে চুপ করে গেল।

আবার নিস্তব্ধতা ফিরে আসল।

খাওয়া একদম শেষ পর্যায়ে তখন সুমনা বলে উঠল, “তুমি আর তোমার বোন থাক একসাথে তাই না?”

“হ্যা, সেটা তো আমি আগেই বলেছি।”

“তোমার বাবা-মা এদিকে আসেন না?”

“না, তারাই খুলনাতে থাকা বেশি পছন্দ করেন। তাছাড়া আম্মু চায় আমি যেন আপিকে খুলনায় নিয়ে যাই।”

“তোমার আপি…”

“মাথা নষ্ট,” আমি সুমনার কথার মাঝে বলে উঠলাম, “তাকে বললে সে আমার হাড়গোড় গুড় করে দিবে!”

সুমনা আমার দিকে কি যেন বলতে গিয়েও বলল না।

“তোমার বাসায় কিছু বলবে না যে তুমি যে কলেজ থেকে দেরী করে আসছ?”

সুমনার মুখ কালো হয়ে গেল আমার এই কথা শুনে, সে বলে উঠল, “তোমাকে তো আগেই বলেছি আমি একটা টিউশনি করাবো তারপর একটা জায়গায় পড়তে যাব।”

“ও তাই, তা তোমার টিউশনি করার দরকার কি তুমি এলাকায় থাক সেটাও হাই-ফাই এরিয়া …”

“আমি নিজের পায়ে চলতে পছিন্দ করি।”

“ভালো।”

“তুমি? তুমি কি কোথাও কোচিং নেই?”

“না আমি যাই না, ভালো লাগে না, কলেজের যন্ত্রনা সহ্য হয় তারপর আবার কোচিং। এত বিদ্যা দিয়ে কি করব ?”

“কেন পড়ালেখা ভালো লাগে না তোমার,” সুমনা তীক্ষ্ণ গলায় বলল।

“লাগে, তবে পড়ালেখাকে শরবতের মত ঘুলে খেতে ভালো লাগে না।”

সুমনার আমার এই কথা বুঝল কিনা জানি না। সে কিছু বলল না ।

আমাদের খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেল। তখনই আমার মোবাইল কেপে উঠল, মানে ভাইব্রারেশন দিল আরকি!

রাতুল মেসেজ পাঠিয়েছে, সে আসছে।

কি জানি সে মেসেজে কি বোঝাতে চাইল।

“হুম সবাই নাটক নিয়ে মনে হয় ব্যাস্ত,” আমি সুমনার দিকে তাকিয়ে বললাম।

“হুম,” সুমনা একটু গম্ভীর হয়ে বলল। কেন যেন মনে হচ্ছে সে কিছু একটা বলতে চায়।

“কি হয়েছে? মনে হয় কিছু বলতে চাইছ তুমি?” আমি জিজ্ঞেশ করলাম।

“আসলে একটা কথা রানা,” সুমনা মাথা নিচু করে বলে উঠল।

“কি সেটা?”

“কিভাবে নাটক বানাতে হয় আমি জানি না,” সুমনা আস্তে আস্তে বলতে লাগল, “আমি তোমার কাছে এসেছি সাহায্যের জন্য।”

“কি সাহায্য?”

“রানা, আমাকে শেখাও ‘কিভাবে নাটক বানাতে হয়’!”

“হাহ???!!!!”

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×