somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা মানুষ-আমরা বল-আমরা বোকার দল

০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট বেলা মনে হয় খুব বোকা ছিলাম (এখন যে চালাক হয়ে গেছি তা কিন্তু না)। কেমন বোকা ছিলাম এর একটা উদাহরণ দেয়। প্রতি বছর সামার ভেকেশনে আমরা(পরিবার) নানা বাড়ি যাব এটা ছিল কমন বিষয়। শুধু আমরা নয়; এক কথায় বলতে গেলে, আমার মা-খালা ছয় জনের মধ্যে চার জন তখন বাচ্চা-কাচ্চাসহ (খালাতো ভাই-বোন আর কি) নানা বাড়িতে হাজির হত।(বাকি দু'জনের তখনও বিয়ে হয়নি) খালাতো ভাই-বোনেরা ছিল খুবই চালাক। বিশেষ করে ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার খালাতো ভাই গুলা ছিল দুরন্ত চালাক।( ওদের বাড়ি অবশ্য ব্রাক্ষণবাড়ীয়া সরাইল। সরাইলের মানুষের আবার চালাক হওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সুনাম আছে।) এত চালাক যেখানে থাকে সেখানে দুয়েক জন বোকা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে মজমা জমে না। আমি ছিলাম সেখানে এমনি একজন বোকা। অর্থাৎ আমি হলাম মজার উপকরণ। আমাকে বলত, "বল, আমি বেক্কল"। আমিও তাই বলতাম। আমার কথা শুনে একেক জন হেসে তো কুটিকুটি। এক দিনের ঘটনা। আমরা সবাই মসজিদে নামাজ পড়তে গেলাম। সোহাইল ভাই অথবা আব্দুল্লাহ ভাই হওয়ার সম্ভাবনা, এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না। যাহোক আমাকে মুসল্লিদের সামনে মিম্বরের কাছে নিয়ে গেল। বলল, "বল, আমারে বেক্কলে ঠেলা দিছে হে হে হে!! আমি তাই বললাম। সবাই খুব মজা পেল এবং হাসল। আমিও হাসলাম। কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমি নিজেও মজা পেতাম ব্যাপারটায়। কারন আমি জানতাম না এখানে আমাকে নিয়ে ঠাট্রা-মসকরা করা হচ্ছে। (২১ শতকের শুরুর দিকের ঘটনা। আর শিশু কালটা এখন সত্যিই মিস করছি)

উপরের ঘটনার প্রায় পাঁচশত বছর আগে স্পেনে বোকা বানানোর মহোৎসব হয়েছিল। এদের মধ্যে একপক্ষ ছিল বোকা মুসলমান। অপর পক্ষ ছিল চতুর খ্রীষ্টান। পতন ঠেকাতে মুসলমান সৈন্যরা ছিল প্রাণপণ লড়াই রত। খ্রীষ্টানরা নিয়েছিল প্রতারণার আশ্রয়।
এক বিকেলের চায়ের টেবিলে রাজা ফার্ডিন্যান্ড তার স্ত্রী রাণী ইসাবেলাকে বলল, ডার্লিং তোমাকে আমি মূল্যবান উপহার দিতে চাই। রাণী বলল, বাহ! আমার স্বামী বুড়ো হলে কি হবে রস-কস-সিংগারা-বুললবুলি সবই আছে।
রাজা বলল, আমার প্রেয়সী রাণী, আমি বুড়ো হয়েছি তো কি হয়েছে, আমার দিলটা তো এখনও জোয়ান আছে। রোমান্টিক একটা মন আছে।
রাণী বলল, আহারে আমার রোমান্টিক বুড়ো। তা জনাব কি উপহার দেবে বলেই ফেল না।
আমার রাণী তুমি অধৈর্য হয়ো না। অচিরেই দেখতে পাবে তোমার উপহার।
রাণী তার উপহার পেয়েছিল। চমৎকার উপহার। সে ইতিহাস সবারই জানা।
নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এক ঘোষনায় কাফেরদের কে বলেছিলেন যে, তোমরা ইসলামে প্রবেশ কর। মুক্তি পাবে, নিরাপত্তা লাভ করবে। মানুষ ইসলাম গ্রহন করে নিরাপত্তা লাভ করিল। একই কায়দায় রাজা ফার্ডন্যান্ডও ঘোষনা দিল, ওহে যারা ঈশ্বরের প্রতি ঈমান আনয়নকরী(মনে মনে বলল, বোকার দল) যদি তোমরা অস্ত্র পরিত্যাগ করে মসজিদে আশ্রয় নাও, তাহলে তোমরা নিরাপদ। যদি তোমরা জাহাজে আশ্রয় নাও, তাহলে নিরাপদ স্থানে নামিয়ে দেওয়া হবে।
মুসলমানরা আল্লাহর উপর নির্ভর না করে, বিশ্বাস করল ফার্ডিনান্ডের উপর। সেই বিশ্বাসের মূল্য হিসেবে রাজার সৈন্যরা মুসলমানদের কে দিল আগুন। পুড়িয়ে দিল হাজার হাজার মসজিদসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর রাজা ফার্ডিনান্ডও তার প্রেয়সীকে উপহার দেওয়ার বিরাট মওকা পেয়ে গেল।
১৪৯২ খ্রীস্টাব্দের ১লা এপ্রিলের কোন এক সময় রাজ প্রাসাদে ফার্ডিন্যান্ড এবং রাণী ইসাবেলা। রাজা বলল, হে আমার প্রাণের প্রেয়সী তুমি আমার পক্ষ থেকে উপহার পেয়েছ?
রাণী বলল, হ্যা প্রিয়, আমি উপহার পেয়েছি। কিন্তু এমন অদ্ভূত মজার উপহার আমার জীবনে কোন দিন পাইনি। তুমি আসলেই অনেক রোমান্টিক হে আমার পুরুষ।
রাজা ফার্ডিন্যান্ড খুশিতে আটখানা হয়ে বলল, হায়রে বোকার দল!
রাণী ইসাবেলা একটু গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, মুসলমানরা এত বোকা কেন?

পুনশ্চ: মমতাজের জন্য সম্রাট সাজাহানের উপহার তাজমহল সারা বিশ্বে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফার্ডিনান্ডের উপহারের দিনটি স্বীকৃতি পেয়ে গেল বোকা দিবস হিসেবে। আশ্চার্যই বটে খোদার লিলা খেলা।
প্রথম ঘটনার সাথে যারা সংস্লিষ্ট তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, (বাস্তব) ঘটনাটা রাগ করে বর্ণনা করিনি জাস্ট মজা করেছি। দ্বিতীয় ঘটনায়ও মজা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাণী ইসাবেলা মজা পেলেও আমি কেন যেন মজা পাইনি।

(ঘটনাটা মুসলমানদের সাথে সংস্লিষ্ট হলেও এখান থেকে যে কোন জাতিই শিক্ষা নিতে পারে। সেটা হল শত্রুর কথায় বিশ্বাস না করা। কিন্তু দূর্ভাগ্য হলেও সত্য যে আমরা সেই পুরনো শকুনদের কথায় প্রয়োজনে কান ধরে উঠবস করি। তাদের মিডিয়ার খবরে আমাদের ঢালাও বিশ্বাস, তাদের সংস্কৃতে আমাদের ভাললাগা, তাদের সিনেমা তারকাদের কে অনুকরন। আর আমাদের বুবুরা দাদাদের কথায় উঠবস করাটা তো চিরন্তন।)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×