somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুয়েজ খাল-- কিছু জানা কিছু অজানা ইতিহাস।

২৬ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রায় তিন হাজার বছর আগের ঘটনা। ফারাও রাজা নেকো তখন মিসরের আধিপতি। তিনি প্রতাপশালী নৃপতি। বিশাল তার নৌবহর। শিল্প সংস্কৃতির প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা। কাজেই তিনি স্থির করেছিলেন যে তিনি যুদ্ধ করবেন না। কোন দেশ আক্রমন করবেন না কখনও।

তাহোলে তিনি এই বিশাল নৌবহরকে কি কাজে লাগাবেন? চিন্তায় পরে গেলেন তিনি।

রাতে ঘুমের ঘোরে ফারাও নিকো তার প্রশ্নের জবাব পেলেন। স্বপ্নাদৃষ্ট নৃপতি পরদিন সকালে তার সভাসদদের ডেকে বললেন স্বপ্নের কথা। সভাসদরা এক বক্যে মেনে নিলেন তার প্রস্তাব। তিনি খালটি খনন করবেনই।

এবার চাই শ্রমিক। দেখতে দেখতে লক্ষাধিক দাস সংগ্রহ হয়ে গেল। এবার শুরু হল স্থান নির্বাচনের কাজ। ভূমি জরিপ শুরু হয়। পরে স্থীর হয় বর্তমান কায়রোর অনতিদূরে নীল নদ থেকে লহিত সাগর পর্যন্ত দীর্ঘ হবে খালটি।সেই পথে চলবে বানিজ্যপোত আরব ও পারস্যে এবং আরও দূর দূর দেশে। মিসরের নৌবাহিনী ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত না হয়ে প্রমান করবে বানিজ্যে বসতি লক্ষী। তারা পারাপার করবে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি। মানুষে মানুষে গড়ে উঠবে সৌভাতৃত্ব।

নেকো বলেছিলেন সুয়েজ যোজক পূর্ব পশ্চিম মিলনের প্রতিক, মিলনের সেতু।সুয়েজ যোজকরূপেই থাকবে। ্জলে স্থলে দুইএ থাকবে যোগাযোগ- মিলনের দ্বার।

খাল কাটা প্রায় শেষ হয়ে এসেহে এমনি একদিনের কথা। নেকো হঠাৎ ভিত হয়ে উঠেছেন।তার বুক কাঁপছে। পা কাঁপছে । তার জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে আসছে। তিনি শংকাগ্রস্থ এক অস্বাভাবিক মানুষ হয়ে উঠলেন।

 বন্ধ কর! বন্ধ কর!-- বন্ধ কর এ খনন! বন্ধ কর এ খনন! -- গুরু গম্ভীর আওয়াজ।
 ফারাও সচকিত। আবার আওয়াজ ঃ সর্বনাশ হবে তোমার! সর্বনাশ হবে মিসরের, সর্বনাশ হবে তোমার স্বদেশ ভূমির! বন্ধ কর এ খাল! বন্ধ কর, বন্ধ কর!

মন্দিরের দৈববাণী। ফারাও নেকো নতজানু হয়ে শুনছে সে দৈববাণী। তার চোখে জল বুকে ভয়। মহামিলনের মহান সপ্ন তার ভেঙে খানখান হচ্ছে দৈববানীতে। তিনি হতাশ হয়ে পড়েন, দুর্বল হয়ে পড়েন।-- যেহেতু বাণীটি তার আরাধ্য দেবতার।

ফারাও নেকো তখনও শুনছেন দৈব্যবাণী । তিনি শুনলেন ঃ এ খালেই আসবে মিসরের বর্বর হামলাকারীরা। এপথেই আসবে মিসরের বৈদেশিক শত্রু, মিসরের যত আপদ। কাজেই আর নয়, খাল নয়, জলপথ নয়, বন্ধ করো এ খনন। শেষ পর্যন্ত নেকো বন্ধ করে দিলেন খাল খননের কাজ। কিন্তু তবুও তার বুকের ভয় দূর হয় না।

এমনি করে মিসরের ফারাও রাজাদের আমলে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগর এই দুই সাগরের মিলন আর হল না।যোজকের অদূরে প্রনালীর জন্মও আর হয় নি। তারা বলতেন -- এ কাজ আর হবেও না কোন দিন। দেবতার নিষেধ। সেই থেকে দীর্ঘদিন কেটে গেছে খালের কাজে আর হাত পড়েনি।

হঠাৎ একদিন আলবেনীয় মোহম্মদ আলীর বংশধর সৈয়দ পাশার আঙ্গীনায় প্রবেশ করেন এক তরুন ইংজিনীয়ার। তিনি কায়রোস্থিত ফরাসী রাষ্ট্রদূতের পুত্র ফার্ডিনান্ড-দ্য- লেসেপস্‌। লেসেপস্‌ সুদর্শন। খেদিভ সৈয়দ পাশাও বয়সে তরুন। লেসেপস্‌ বন্ধুর জন্য উপঢৌকন এনেছেন প্যারিস থেকে।-- পঁচাত্তুরজন সুদর্শনা তরুনী ও কয়েকশত বোতল লিকারের। সৈয়দ পাশা পরিতৃপ্ত,বন্ধুর গুনে মুগ্ধ।

সেই সু্যোগে একদিন লেসেপস্‌ তার বাসনার কথা জানালেন খেদিভকে। খেদিভ রাজী হলেন। সেদিন ছিল ১৮৫৪ সালের ১৫ই নভেম্বর। ১৮৫৪ সালে ৩০ নভেম্বর খেদিভ সৈয়দ পাশা লেসেপস্‌কে সুয়েজ জলপথের জন্য দিলেন নিরানব্বই বছরের এক সনদ।

বলা বাহুল্য শুরু হল নতুন করে মিসরের দুর্দশা। এই পথের সূত্র ধরেই এল মৃত্যু, এল জ্বরা, এল ধ্বংস, লোভ, লাঞ্চনা, বঞ্চনা আর এল বিশ্বাসঘাতকতা। যেন ফারাওদের সেই দৈব্যবাণীর জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। মিসর বিশ্বের বৃহত্তম রণাঙন। সুয়েজ খালের ইতিহাস অনেক বড় । এই খাল তৈরী হতে সময় নেয় দশ বছর আর প্রান হারায় এক লক্ষ বিশ হাজার শ্রমিক।

শুরু হল গৃধিনী আর শকূনীদের আনাগোনা। মিসর পরিনত হল ভাগারে। শত শত বছর পরে মিসরের দেশ প্রেমিকেরা যেন আবার শুনতে পেল ফারাও মন্দিরের সেই ভবিষ্যত বাণী-- যে বানী ফারাও নেকোকে সাবধান করে দিয়েছিল। ঃ বন্ধ রাখো এ খাল! -মিসরের সর্বনাশ হবে! এ পথেই আসবে বৈদেশিক শকূন গৃধিরা মিসরকে নিষ্পেষন করতে, গ্রাস করতে। শিউরে উঠলেন মিসরবাসী।

শিউরে উঠলেন ধূর্ত লেসেপস্‌ ও। যে সপ্ন নিয়ে তিনি সুয়েজ খাল নির্মানে হাত দিয়েছিলেন তা ধূলিস্মাৎ হয়ে গেল। সুয়েজ খালের কতৃত্ব ছলচাতুরী করে দখল করে বৃটিশেরা। লেসেপস্‌ এর সপ্ন সম্পূর্ন ভেংগে গেল। সুয়েজ খালে প্রতিষ্ঠিত হলো বৃটিশ সেনাবাহিনীর সর্বময় কর্তৃত্ব। অথচ সুয়েজ খালে কোন অংশীদ্বারিত্বই ছিল না ইংরেজদের। হতাশায় ধুঁকতে ধুঁকতে এবং আত্মগ্লানীতে দগ্ধ হতে হতে তিনি বিদায় নেন এই পৃথিবী থেকে।

সূত্রঃ দা রুলার অব ইজিপ্ট, সুয়েজ ইজ আ ক্যনাল, ইজিপ্টস্‌।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:২৮
২৩টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×