প্রাচীন মিশরের সূর্য দেবতা ওসিরিসের (Osiris) স্ত্রী ছিলেন চন্দ্রদেবী ইসিস (Isis)। ওসিরিস ও ইসিস কে নিয়ে অনেক রূপকথা প্রচলিত আছে। ওসিরিস ও ইরিস এর কারনেই পৃথিবী ও স্বর্গের মধ্যে যোগ সুত্র তৈরী হয়েছে এবং এদের কারনেই পৃথিবীর মানুষ স্বর্গে যাবার পথটুকু খুঁজে পাবে বলে বিশ্বাস করা হত।।।
ওসিরিসের ভাই টাইফুন সেই কোন ছোটবেলায় দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিল ইসিসকে। কিন্তু ইসিস ভালোবাসতো ওসিরিসকে। একদিন শত বাধা সত্বেও ইসিস বিয়ে করে ফেলে ওসিরিসকে যা টাইফুন মেনে নিতে পারেনি।
একবার মিশর ভ্রমন শেষ করে ওসিরিস যখন ফিরে এলো তখন টাইফুন(Typhon) তাকে এক ভোজ সভায় দাওয়াত করে। সেই ভোজসভায় টাইফুন ওসিরিসকে হত্যা করে তার লাশ নীল নদে ফেলে দেয়।
ইসিস যখন খবর পায় তখন সে দিশেহারা হয়ে পরে। সে একদন্ডে মৃত ওসিরিসের দেহের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে।
ওদিকে ওসিরিসের কফিন নীল নদে ভাসতে ভাসতে সাগর পাড়ি দিয়ে বিবলাসে (Byblos) গিয়ে সেখানকার একটি লতা গুল্ম ঝোপে আটকা পড়ে। আর সেই লতা গুল্ম মুহুর্তের মধ্যেই কুঁড়ি ও ফুলে ভরে উঠে। কফিনটি লতা ফুল ও কুঁড়ি দিয়ে এমন ভাবে ঢেকে যায় যে দেখলে মনে হয় না ওখানে কোন কফিন আছে আর তা হয়ে উঠেছে অনিন্দ্য সুন্দর। সে দেশের রাজা ঐ ফুলে ফুলে সজ্জিত লতাগুল্ম দেখে এত বিমোহীত হল যে তা তিনি তার প্রাসাদের নিয়ে এলেন এবং তার প্রাসাদের একটি থাম বানিয়ে রাখলেন লতাগুল্মের ঝাড়টিকে। ইসিস তার স্বর্গীয় অনুভূতি দিয়ে বুঝতে পারল ওসিরিসের কফিন কোথায় আছে। ইসিস বিবলসে এসে হাজির হলেন।
একদিন বিবলস এর রানী তার সাথীদের নিয়ে বাগানে বেড়াতে বের হলো। সে দেখল তার বাগানের ফোয়ারার পাশে বসে এক অপরূপ সুন্দরী মেয়ে কাঁদছে। রানী মেয়েটিকে তার কাঁদার কার জিজ্জাসা করলে মেয়েটি জানায়- সে এই পৃথিবীতে একা তার কোথাও যাবার যায়গা নেই। রানীর মেয়েটিকে খুব পছন্দ হয় এবং তাকে তার সহচরী করে নিল। মেয়েটি প্রতিদিন রানীর চুল এত সুন্দর করে বেঁধে দিত আর এমন এক সুগন্ধি মেখে দিত যে রানী মেয়েটিকে খুব বেশী ভালবেসে ফেলল। রানী মেয়েটিকে তার সন্তানের পরিচারিকা নিযুক্ত করল। এই মেয়েটিই ইসিস।
ইসিস রানীর ব্যাবহারে মুগ্ধ হল। আর রাজার প্রতি তো তার কৃতজ্ঞতা ছিলই। প্রতি রাতে ইসিস সেই থামের চারদিকে ঘুরতো ও কাঁদতো। ইসিস রাজপুত্রকে অমরত্ব দেবে রাজা রানীকে জানালো। তার বিনিময়ে রাজা যেন তাকে সে যা চায় তাই দেয়। রাজা রানী উভয়ই রাজী হয়ে গেল। সেই রাতে রানী তার শিশু পুত্রকে আগুনে জ্বলতে দেখল। রানী আতংকে চিৎকার করে উঠল। তার চিৎকারে ইসিসের ধ্যান ভেঙ্গে গেল । শিশুপুত্রটির আর অমরত্ব পাওয়া হল না।
এবার দেবী ইসিস নিজ রূপ ধারন করে রাজার কাছে তার প্রাসাদের থামটি চাইল। রাজা তাকে থামটি থেকে ওসিরিসের কফিনটি বের করে দিল। কফিন থেকে ইসিস ওসিরিসের লাশটি বের করে নিয়ে তা আলো ও সুগন্ধি দিয়ে ঢেকে দেয়। আর মূল্যবান কাঠের তৈরী কফিনটি রাজা রানীকে দিয়ে দেয়। পরে বিবলসের ইসিস মন্দিরে এই কফিনটি রেখে দেয়া হয়।
রাজা তার বড় রাজপুত্র সহ বিশাল নৌবহরে করে দেবী ইসিসকে বিদায় দেন। নৌ বহর ফাডরাস(Phaedrus) নদী দিয়ে যাত্রা শুরু করে। সাগরের মোহনার কাছা কাছি আসবার পর দেবী রাজপুত্রকে ফিরে যেতে বলল। দেবী ইসিসের রহস্যময়তা রাজপুত্রের মনে অনুসন্ধিচ্ছা জাগায়। সে তার নৌবহর ফেরৎ পাঠিয়ে গোপনে দেবী ইসিসের পশ্চাৎধাবন করে।
দেবী ইসিস একা নদীর কিনারায় নৌকা থামান। সে নৌকা থেকে কফিন মাটিতে নামায়। কফিন খুলে মৃত স্বামীর ঠোঁটে চুমু দেয়। তার সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তার কান্নায় অস্থির হয়ে রাজকুমার দৌড়ে এসে ইসিস কে ধরেন। ইসিস হঠাৎ করে মানুষের আগমনে ক্রোধে অন্ধ হয়ে তার প্রতি তিব্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর সাথে সাথে রাজকুমার মারা যায়। ফলে ইসিস আর ওসিরিস কে জীবিত করতে পারে না।
ইসিস ওসিরিসের কফিন বুটসে(Butos) রেখে দেয়। টাইফুন টের পায় যে ইসিস ওসিরিসের কফিন নিয়ে এসেছে। তাকে ইসিস আবার জীবিত করবেই। টাইফুন রাতের আধাঁরে সেই কফিন খুঁজে বের করে ওসিরিসের লাশকে চৌদ্দ টুকরা করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেয়। ইসিস সেই সব টুকরা খুঁজে খুঁজে বের করে এবং যেটি যেখানে পায় সেখানেই তা মাটিতে পুঁতে ফেলে। কিন্তু ইসিস একটি টুকরা খুঁজে পায় না। যে টুকরাটা সে খুঁজে পেল না তা ছিল মৃতের দেহের নিম্নাংশ। ইসিস সেই টুকরার পরিবর্তে সেই আঙ্গের প্রতিকৃতি তৈরী করে রহস্যের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে দেয়।
ইসিস জানত সম্মুখ যুদ্ধে টাইহুনের সাথে সে পারবে না। তাই টাইফুন যখন ইসিসকে তার বশে রাখার জন্য বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে আসে তখন ইসিস ছলনার আশ্রয় নেয় । সে সময় চায় এবং প্রেমিকার অভিনয় করে যায় টাইফুনের সঙ্গে।
একদিন ইসিস আবিস্কার করে ওসিরিসের সেই অংগ আছে টাইফুনের ঘরের একটি খাপের মধ্যে। রাতের আঁধারে সে চুপি চুপি তা চুরি করে এবং টাইফুনের ঘরের মোমের আগুনে তা পুড়িয়ে দেয়। এর ফলে জলন্ত আগ্নি কুন্ড থেকে বের হয়ে আসে ওসিরিস এবং টাইফুনকে পরাজিত করে। কিন্তু ইসিস টাইফুনকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই ওসিরিস ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। সে বলে ইসিস এর কাছে সে আর আসবে না। তাইতো সূর্য দিনে আকাশে থাকে আর চাঁদ রাতে। পালিয়ে যাওয়া টাইফুন এখনও মাঝে মাঝে দিনে এসে সূর্যকে দেখিয়ে যায় তার শক্তি। আর রাতের চাঁদকে ভালোবাসার চাদরে ঢেকে রাখতে চেয়ে না পাবার বেদনায় আবার পৃথীবিকে করে বিপর্যস্থ। কারন ইসিস ভালোবাসে ওসিরিসকে আর টাইফুন ভালবাসে ইসিসকে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




