(চার)
ময়না ভাই কারাগারে রোজনামচা বলেই চলেছে, আর আমরা সত্যিই আগ্রহ করেই শুনছি। কিছুক্ষণ পরপর একটা জোরেসোরে হাসির আওয়াজ বের হচ্ছে ড্রইং রুম থেকে। ময়না ভাইয়ের মুখে তেমন কোন হাসি নাই। তারপর ময়না ভাই আবার বলা শুরু করলোঃ
-কাশিমপুর কারাগারের প্রথম দিনের ঘটনাতো ভয়াবহ এক্সপেরিমেন্ট হলো। পরের দিন আমার রুম চেঞ্জ করে দিলো। সাথে আরো দুইজন আছে। এর মধ্যে একজন সাঁজা খাটছে গত তিন বছর ধরে। উনার নাম কোরবান আলী। বয়স চল্লিশের উপর হবে। বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা থানায়। অন্য জনের মামলা চলমান। তার নাম "ডলার" । ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানায় ডলারের বাড়ি।
আবারো হাসির আওয়াজ। হাসি থামিয়ে 'করবি' জিগ্যেস করলো- আচ্ছা সত্যি কি ঐ লোকের নাম ডলার? তুমি গুল মারছো ময়না ভাই।
- মিথ্যা বলার কি আছে। আমিও তাকে জিজ্ঞেস করছিলাম আপনার আসল নাম কি? জবাবে ডলার মিয়া বললো- আসলে ভাই আমার পুরা নাম দোলোয়ার ব্যাপারী। কিন্তু কেমনে যে আমার নাম ডলার হইলো আমিও বুঝি না। বেবাক মানুষ আমারে ডলার কয়া ডাকে।
'ডলার' গত মাসে ফেন্সিডিল নিয়া ধরা খেয়েছে কাচপুর ব্রীজের পুলিশের তল্লাশিতে। উনি কাঠালের ভিতর করে অভিনব কায়দায় বর্ডার থেকে ফেনসিডিলের চালান ঢাকায় নিয়ে আসতেছিলো। মাদকের মামলা। তিন মাসের ডিটেনশন। নো-জামিন।
এবার কোরবান আলী সাহেব আমাকে জিগ্যেস করলেন - ভাইজান কি মামলায় অভিযুক্ত? আমি বল্লাম বিস্ফোরক মামলা। তবে সন্দেহ জনক ভাবে এ্যারেস্ট করেছে।
- ওহ! চুয়ান্ন ধারার মামলা। টেনশন লইয়েন না ভাইজান। খালি ভালো একটা উকিল ধরেন। কোরবান আলী সাহেব বললো।
আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম আপনার কি মামালা?
- আমার স্ত্রী তার মায়ের কথা মতো নারী-শিশু নির্যাতনের মামলা দিয়ে আমারে জেল খাটাচ্ছে ভাইজান। তা আমিও দইমে যাওয়ার মানুষ না। আমি সাফ কথা বইলে দিয়েছি। -“যা মাগি তোরে আর ঘরে উঠোবো না”
একটা মজার ব্যাপার হলো কারাগারে প্রতিদিন তিনবার মাথা গননা করা হয়। এটাকে গুনতি বলা হয়। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা এই তিন টাইম। বিরাট একটা ঘন্টা বাজানো হয়। তখন যে যার রুমে চলে যায় তারপর জেলের পুলিশ এসে মাথা গননা করে।
- বলো কি? আজব তো। এটার মানে কি? করবি বললো।
- মানে কি সেটা জানি না। কেউ পালালো কিনা সেটা চেক করার জন্য হয়তো।
-আচ্ছা ময়না ভাই তোমাকে দিয়ে ঘাস টাস কাটিয়েছে কিনা?
-আরে না ওসব যারা স্বশ্রম কারাদণ্ড পায় তাদের দিয়ে করায়। যেমন ধর বাবুর্চির কাজ, রান্নাবান্নার কাজ সব সময় স্বশ্রম কয়েদিরা করে।
-তারপর কি হলো?
তারপর আমি বের হবার আগের দিন রাত তিনটার সময় কোরবান আলী মারা গেলো। রাতে হটাৎ গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো দেখি আমার পাশে শুয়ে কোরবান আলী হাত পা ছুড়তেছে। আমি জেল পুলিশকে ডাকলাম। গার্ড আসতে আসতে উনি শুধু বললো ময়না ভাই চইলে যাচ্ছি।
-তারপর?
-তারপর অনেকক্ষণ চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ডলার মিয়া হাত দিয়ে চোখ বুজিয়ে দিয়ে বললো -সবাই ইন্না লিল্লাহে পড়েন উনি মারা গেছেন । এই কথা বলেই ডলার মিয়া হাউ মাউ করে কাঁদতে আরাম্ভ করলো।
(চলবে.........)
ময়না ভািই-১ম পর্ব
ময়না ভাই -২য় পর্ব
ময়না ভাই-৩য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:২৬