somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

প্রগতি বিশ্বাস
জীবন ও সমাজ সম্পর্কে আমার ভাবনার ভিত্তি মূলত দর্শনশাস্ত্র, বিশেষত স্টোয়িক দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমি বিশ্বাস করি, আত্মনিয়ন্ত্রণ, প্রজ্ঞা এবং চারিত্রিক দৃঢ়তাই একজন মানুষের প্রকৃত শক্তির উৎস। আমি একজন সেকুলার মানুষ—যিনি যুক্তি, মানবিকতা এবং বৈজ্ঞানিক

ঘৃণা কেবল ঘৃণা ছড়ায়

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"ঘৃণা কেবল ঘৃণাই ছড়ায়"—এই ধারণাটি মানব জীবনের একটি গভীর সত্যকে প্রতিফলিত করে। ঘৃণা মানুষের মনের একটি অন্ধকার দিক, যা একবার মনকে অধিকার করলে তা কেবল আরও বেশি ঘৃণা এবং নেতিবাচকতা ছড়িয়ে দিতে থাকে। এই ধারণার দার্শনিক ভিত্তি অনেক বড় চিন্তাবিদ এবং মানবতাবাদী দার্শনিকদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রতিষ্ঠিত।


১. ঘৃণা এবং প্রতিফলন:
ঘৃণার মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি প্রতিফলিত হয়। যদি কোনো ব্যক্তি ঘৃণার দ্বারা চালিত হয়, তার চারপাশের মানুষও সেই নেতিবাচকতাকে প্রতিক্রিয়া হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেটি আরও ঘন ঘন চক্রের মতো ছড়িয়ে পড়ে। যে সমাজে ঘৃণা প্রবল হয়, সেখানে সম্পর্কের টানাপোড়েন, সহিংসতা, এবং বিভাজন বাড়তে থাকে। এই প্রক্রিয়া কখনোই সমাধান বা শান্তি নিয়ে আসে না; বরং এটি আরও সমস্যার জন্ম দেয়।

২. ঘৃণার বিরুদ্ধে কুরআনের শিক্ষা:
কুরআন ঘৃণার পরিবর্তে মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সমানুভূতি, এবং শান্তির শিক্ষা দেয়। কুরআনে উল্লেখ আছে:
• "আর ভালো এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করো, তবে তোমার মধ্যে যার সাথে শত্রুতা ছিল সে যেন তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে।"— (সূরা ফুসসিলাত, ৪১:৩৪)
এই আয়াতটি আমাদের শেখায়, যখন কেউ শত্রুতা বা ঘৃণা করে, তখন তার প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নয়, বরং ভালো আচরণ করতে হবে, যাতে শত্রু মিত্রে পরিণত হয়।



৩. বৌদ্ধিক ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি:
বুদ্ধিজীবী এবং মানবতাবাদীরা মনে করেন, ঘৃণা কখনোই একটি সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করে না। বৌদ্ধ দর্শনে "ঘৃণা কেবল ঘৃণার জন্ম দেয়" এই ধারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধ নিজে বলেছেন, "ঘৃণার মাধ্যমে ঘৃণাকে জয় করা যায় না; বরং ভালোবাসা এবং করুণার মাধ্যমে তা জয় করতে হবে।" যখন একজন ব্যক্তি ঘৃণাকে ভালোবাসা দিয়ে প্রতিহত করে, তখন ঘৃণার চক্রটি ভেঙে যায় এবং শত্রুতা পরিবর্তিত হয়ে সংলাপ এবং শান্তিতে রূপান্তরিত হয়।

৪. সামাজিক প্রভাব:
ঘৃণা একটি সংক্রামক অনুভূতি, যা একটি ব্যক্তিকে চালিত করার মাধ্যমে সমাজের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। ঘৃণার কারণে সমাজে মানুষ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। ঘৃণার ফলে বিদ্বেষ এবং বিভাজন বৃদ্ধি পায়, যা একসময় সহিংসতার রূপ নেয়। মহাত্মা গান্ধীর মতে, “চোখের বদলে চোখ কেবল গোটা বিশ্বকেই অন্ধ করে দেয়।” এই প্রাচীন প্রবাদটিতে লুকিয়ে আছে ঘৃণার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে একটি গভীর সত্য—ঘৃণা কখনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং তা আরও বেশি ঘৃণা ও সহিংসতার জন্ম দেয়।



৫. প্রেম এবং ক্ষমার শক্তি:
দার্শনিকদের মতে, ঘৃণার প্রতিকার হলো প্রেম, সহানুভূতি এবং ক্ষমা। মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বলেছিলেন, "ঘৃণা ঘৃণাকেই জন্ম দেয়। শুধুমাত্র প্রেমই ঘৃণাকে জয় করতে পারে।" যখন ঘৃণাকে ক্ষমা এবং ভালবাসার মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়, তখন তা মানুষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি কেবল ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, বৃহত্তর সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশেও গুরুত্বপূর্ণ।

৬. ঘৃণার পরিণতি:
ঘৃণা মানুষের মনকে একটি অন্ধকার স্থানে নিয়ে যায়, যেখানে যুক্তি এবং ন্যায়বিচারের জন্য কোনো স্থান থাকে না। এটি মানসিক শান্তি এবং সম্প্রীতির বিরোধী, এবং ব্যক্তির নিজের এবং অন্যদের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। এই কারণেই, দার্শনিক এবং মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ঘৃণা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হলো সচেতনভাবে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং ক্ষমার চর্চা করা।



সুতরাং, ঘৃণা কেবল ঘৃণাই ছড়ায়—এটি একটি অনস্বীকার্য সত্য। এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন মমতা, ক্ষমা, এবং ভালোবাসার শক্তি।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×