বাবা হাতে ১০,০০০ টাকা দিয়ে বলনে এই নেও তোমার মাসিক খরচের টাকা। এই দিয়ে তোমার ইউনিভার্সিটির ব্যয়, হোস্টেল খরচসহ যাবতীয় খরচ বহন করবে।
এক্ষেত্রে করণীয় কি?
এক্ষেত্রে আগে পরিকল্পনা করব। এরপর খরচ করব আর নোট রাখব। নোট রাখার কারণ খরচ যাতে এদিক-সেদিক না হয়ে যায়; হয়ে গেল বিপদে পড়তে হবে; তাহলে খরচ কিভাবে সংকুলান করব? এখানে নোট রাখার অর্থ হচ্ছে নিজে নিজকে রিপোটিং করা বা খরচের আমলনামা তৈরি করা অথবা খরচের রিপোর্ট সংরক্ষণ করা।
আল্লাহতায়লা ঘোষনা করেন-
পাঠ কর তোমার কিতাব, আজ তোমার হিসাব নেয়ার ব্যাপারে তুমিই যথেষ্ট। [সূরা বনী ইসরাঈলঃ ১৪]
আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না। [আল কাহফঃ ৪৯]
আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে।আল্লাহ তা’আলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত। [আয-যারিয়াতঃ ৫৬-৫৮]
নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। [আল বাকারাঃ ২৭৭]
বাবা ১০,০০০ টাকা দিল তা নিয়ে এত দুঃশ্চিন্তা, উদগ্রীব, উচ্ছাস কাজ করে যার ফলে রিপোর্টিং করতে ব্যস্ত থাকি হিসাবে ভারসাম্যতার জন্য অনুরূপ ভাবে আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে উপায়-উপকরণ দিয়েছেন জীবনকে পরিচালনার জন্য তাতে আমরা কতটুকু রিপোর্টিং করছি বা আমলনামার হিসাব রাখছি। সেই ব্যাপারে চিন্তা করা কি দরকার নাই?
আল্লাহতায়লা ঘোষনা করেন-
তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না। [আল কাহফঃ ৫৭]
হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু বারযা আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার দুটি পা ততক্ষণ পর্যন্ত নড়াতে পারবে না; যতক্ষণ না তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমার জিন্দিগি কোথায় ব্যয় করেছ? জ্ঞানানুসারে কি আমল করেছ? সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছ আর কিসে খরচ করেছ এবং তোমার শরীরকে কী কাজে নিঃশেষ করেছ?’ (তিরমিজি, দারেমি)
হাসান বসরী রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, যিনি তোমার হিসাবের ভার তোমার কাছেই অর্পণ করেছেন তিনি অবশ্যই তোমার সাথে সবচেয়ে বড় ইনসাফের কাজ করেছেন।’ [ইবনকাসীর] কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ সেদিন সবাই তাদের আমলনামা পড়তে পারবে। যদিও সে দুনিয়াতে নিরক্ষর ছিল। [তাবারী]
আমরা হিসাব সহজতর করার জন্য যদি প্রতিদিন আমাদের কাজকর্মের হিসাব লিপিবদ্ধ করি বা নিজেদের নিজকে রিপোর্টিং করি তাহলে আমাদের জীবন অনেক সুন্দর-সুশ্রী হবে এবং মহা হিসাবের দিন তথা কেয়ামতের দিন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার নিকট হিসাব দিতে সহজ হবে। পক্ষান্তরে আমরা পাব সুখ-শান্তির অমিয়া সূধা।
বাবার প্রাপ্ত টাকার হিসাব রিপোটিং করার কারণে ভালো ভাবে মাস অথবা বছর পার হয়ে যায় তেমনি মহান আল্লাহর উপায়-উপকরণ ব্যবহারে ক্ষেত্রে রিপোটিং ও নিজে নিজের সমালোচনা করলে জীবনে যেমনি সুন্দর ভাবে পার হবে তেমনি জীবনের বাকী অংশ অর্থাৎ পরকালেও সুন্দর ভাবে পার করা সম্ভবে হবে।
ক্ষমতার ব্যবহার, ব্যবসায়িক লেনদেন, মোয়ামেলাত, হাক্কুল্লাহ এবাদত, হাক্কুল এবাদত, পারিবারিক কাজ-কর্ম, সামাজিক কাজ-কর্ম, জীবনের ধাপে ধাপে অতিবাহিত যে কোন কাজের মধ্যে সমঝোতা, সাম্য আনয়ন করা ইত্যাদি কাজে যেমন জবাদিহিতা তৈরি হবে তেমনি সফলতা নিশ্চয়ন করা যাবে।
আল্লাহতায়লা ঘোষনা করেন-
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত। [আস সাজদাঃ ১৯]
মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। [আত তাহরীমঃ ৬]
আল্লাহ আমাদের নিজের রিপোর্টিং নিজে করার মাধ্যমে নিজেদের আমলনামাকে সুন্দর-সুশ্রী করুক। জীবনধারার মান উন্নত করুক। পরকালীন জবাবদিহিতা সহজ করুক।