somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

ছোটগল্পঃ শিকারী

১৩ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাত ৩ টা। হঠাত ঘুম ভেঙে গেল আমার। কি যেন স্বপ্ন দেখলাম। কোনভাবেই মনে করতে পারছিলাম না।নিলুকে খুব জড়িয়ে ধরতে মন চাইছে। খেয়াল করে দেখলাম নিলু পাশে নেই।

সন্ধ্যারাতে ভয়ংকর ঝগড়া হয়েছিল আমাদের। ঝগড়ার এক পর্যায়ে নিলু কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। আমি কিছু বলছিলাম না তখন।

নিলুর একটা ভালো গুণ হলো কান্নাকাটির পর সে সাথে সাথেই ঘুমিয়ে যাবে। এখন সেটা রাত ৮ টা হোক কিংবা সকাল ১১ টা। ঘুম ভাঙলেই নিলু আবার নতুন করে দিন শুরু করবে। কোন ঝগড়া নাই, কোন কিছু নাই। একদম লক্ষী বউয়ের মত।

আমাদের রিসোর্টের রুমটায় পাশাপাশি দুইটা বেড রাখা আছে।এর দরকার কি? আমি বুঝলাম না ।এরা কি ধরেই নিয়েছে কাপলরা আসলে শুধু ঝগড়া আর ঝগড়াই হবে।আর তখন আলাদা দুইটা বেডের দরকার পড়বে? আমার তো তাই মনে হচ্ছে।

যাই হোক। আমি নিলুর বেডে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।জড়িয়ে ধরতেই দেখি আমার হাতখানা সে ছাড়িয়ে নিচ্ছে বারবার। আজব ব্যাপার।একটু আগে হালকা নাক ডাকার শব্দ যেখানে ভেসে আসছিল এখন সে জেগে গেল কিভাবে! নাকি ঘুমের মধ্যে তার অবচেতন মন আমার স্পর্শ নিতে চাইছে না?

স্পর্শ ব্যাপারটাই হয়তো এমন, যা চেতন বা অবচেতন মন বুঝে না।যার স্পর্শ ভালো লাগবে না তা কখনোই ভালো লাগবে না। আর যার স্পর্শ ভালো লাগবে সে স্পর্শ না করলেও একটা স্পর্শ অনুভব হবে সবসময়।আমার স্পর্শ পেয়ে এবার নিলু কথা শুরু করল-

- এখানে কি তোমার?
- আমি আমার বউয়ের কাছে থাকব না?
- কিসের বউ?
- আমার বিবাহ করা একমাত্র বউ।
- দেখো। সন্ধ্যায় এমন করলে কেন?

আমি নিলুকে সন্ধ্যার ঘটনাটা বুঝিয়ে বললাম।নিলু এক পর্যায়ে স্বীকার করে নিলো আসলে দোষটা তার। দোষটা আসলেই তারই ছিল। আমি নিলুকে ডাক দিলাম-

- নিলু।
- কি?
- চলো সমুদ্র দেখতে যাই।
- এত রাতে?
- তো? সমস্যা কি?
- তোমার কি মাথায় সমস্যা?
- সমস্যার দেখলে কি?
- মানে!
- তুমি এখন একটা সাদা শাড়ী পরবে।
- আমি এখন সাদা শাড়ী কই পাব?
- আমার ব্যাগটা খোলো।সেখানে একটা সাদা শাড়ি পাবে।এটা তোমার জন্য কিনেছিলাম তোমার জন্মদিনে। একদম জর্জেট। এই মাঝরাতে তোমাকে আমি ছাড়া কেউ দেখতে পাবে না।

নিলু ব্যাগ খুলতেই দেখল ঈশিতার কথাই সত্যি। ঈশিতা আমার আর নিলুর কমন ফ্রেন্ড। আমি নিলুকে মেরে ফেলব এই কথা নিলুকে অসংখ্যবার বলেছে ঈশিতা। এবার সেন্ট মার্টিন আসার আগে সে নিলুকে একটা মেসেজ দেয় মেসেঞ্জারে। মেসেজটা আমার চোখে পড়ে যায়।ঈশিতা আর নিলুর কনভারসেশনটা ছিল এমন-

- তোর জামাই তোকে মেরে ফেলার জন্যই সেন্ট মার্টিন নিয়ে যাচ্ছে। তুই যাচ্ছিস কেন?
- মেরে ফেলবে মানে?
- তুই ইলিয়াসকে চিনিস না।আমি চিনি।
- কি চিনিস?
- ও তোকে মেরে ফেলবে। তোকে একটা সাদা শাড়ি পরিয়ে মারবে।
- কি বলছিস আবোলতাবোল?
- আমি সত্যিই বলছি।
- ও আমাকে এত রিকোয়েস্ট করে নিয়ে যাচ্ছে আর এখন মেরে ফেলবে?
- এতদিন যাস নি কেন?
- তোর কথা শুনে।
- এখন শুনছিস না কেন?
- জানি না।

নিলু ব্যাগের মধ্যে দেখল একটা বড় চাপাতি, একটা সাদা শাড়ী, কিছু চুড়ি। আমি স্পষ্টই দেখছি নিলু খুব ভয় পেয়ে গেছে।নিলু এখন সম্ভবত ঈশিতার কথা ভাবছে।ঈশিতা হয়তো মিথ্যা বলে নি। আমি নিলুকে ডেকে বললাম-

- ঐ যে সাদা শাড়িটা আছে না ব্যাগে?
- হ্যা।তো?
- এটা এখন পরবে ।
- কি!
- হ্যাঁ।
- তোমার কি আসলেই মাথা খারাপ?
- হুম। অনেক মাথা খারাপ।
- বাহিরে দেখছো কত আলো?
- সেজন্যই সাদা শাড়িটা পরতে বলেছি।তোমাকে যাতে হারিয়ে না ফেলি।

নিলুর চোখে মুখে ঘোর অবিশ্বাস,খুব ভয় ।সে আসলে বুঝতেই পারছে না কি হচ্ছে। ঈশিতার কথা সত্যি নাকি মিথ্যা সে হয়তো এটা ভাবছে।

আমরা দুইজন গভীর রাতেই যাচ্ছি সমুদ্র দেখতে। আকাশে মেঘেরা জমে আছে দলে দল। হঠাত এক ঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে মনে হলো। চাঁদের আলোয় মেঘগুলোকে বেশ মায়াবী লাগছে। সে মায়া কাটিয়ে পাখিগুলো কোথায় উড়ে যাচ্ছে? মায়া ব্যাপারটাকে এত সহজে কাটানো যায় কিভাবে ! ইচ্ছে করছে পাখিগুলোকে ডেকে বলি, এই ব্যাটারা, যাচ্ছিস কই? যাচ্ছিস কেন? যাচ্ছিস কিভাবে?

আমি নিলুকে মৃদুস্বরে ডাক দিলাম।

- নিলু?
- হ্যাঁ বলো।
- তুমি এখানে কিছুক্ষণ থাকতে পারবে একা?
- কেন?
- আমি আসছি। তোমার আশেপাশেই থাকব।
-আমি একা থাকব এখন?
- হ্যাঁ ।অল্প কিছুক্ষণ।
- চাপাতি আনতে যাবে?

নিলু একথা বলে আমার হাতে চাপাতিটা তুলে দিলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, এক কোপে কল্লা ফেলতে পারবে তো?

আমি বললাম ,না।আমি কল্লায় আঘাত করে কাউকে মারি না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৩২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×