পাঠকবৃন্দ কিছু মনে করবেন না আজকে আমি চোখের কয়েক ফোটা পানি বিসর্জন দিয়ে ব্লগটি প্রকাশ করছি। এই ঠিক কিছুক্ষন আগে সবার অজান্তে মনের মানুষটিকে সত্যিকারের কবর দিয়ে আসলাম। নিশ্চয় আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে কেন ? জেনে অবাক হবেন এটি আমার তিন নাম্বার কবর দেওয়া। তাও শেষবার।
আমার প্রথম ভালোবাসা। সম্পর্ক বন্ধূদের মাধ্যমে। তার সাথে প্রায় ১ বছর ২ মাস ৩ দিন যাবত সম্পর্ক ছিলো। অনেক দিন কোন ছোঁয়া ছাড়া প্রেম ভালোবাসা গড়িয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন জানতে পারলাম তাকে আরেকটি ছেলে ভালোবাসে। অথচ মেয়েটি জানতো না। পরে যখন সে জানতে পারে যে তাকে আরেকটি ছেলে ভালোবাসে তখন সে প্রকাশ করে দেয় আমাকে অপছন্দের কথা। ছেলেটি অর্থবিত্ত ছিলো। তবে আমার চেয়ে বেশি সুন্দর ছিলো না। লেখাপড়ার দিক দিয়েও কম ছিলো। যাক বেশি চাপ দিলাম না। পাখিকে মুক্ত করে দিলাম আর ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলো।
২য় জন ঃ সে ছিলো খুব সুন্দরী। যেমন লম্বা, তেমন স্মার্ট, তেমন সুন্দরী। সম্পর্ক কলেজে। এই মেয়েটি অনেকটা জেলাস হয়ে আমাকে পেতে চেয়েছে। তাও আবার ক্ষনিকের জন্য। নিশ্চয় প্রশ্ন করেছন কি রকম ?
আসলে কলেজে সবার চেয়ে আমি ছিলাম ভদ্র, নম্র ও স্মার্ট। গর্ব করে বলছিনা। তখন আমি এই মেয়েটির দিকে নজর দিতাম না। কারণ সুন্দরের পিছনে নাকি পোকা আছে। অন্য মেয়েদের সাথে আমি কথা বলতে দেখলেই খুব জলতো। তো কোন মতে আমাকে তার মায়ার জালে ফেলে নিজের করে নিল। প্রায় ৮ মাস যাবত তার সাথে সম্পর্ক ছিলো। পরে জানতে পারলাম তা সাথে আরেকজনের দৈহিক সম্পর্ক ছিল। না, না আমার সাথে তেমন কিছু হয়নি। পরে আমি সাথে সাথে তাকে রিজেক্ট করে দিয়েছি। কথায় আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।
এবারে আসা যাক তৃতীয় জন এই মেয়েটি যেমন ভালো, তেমন সফট, তেমন আদরের, বলতে গেলে একটি বাচ্চার মতোই। সম্পর্ক মোবাইলে। বন্ধুদের মধ্যমেও বলা যায়। সে বন্ধুদের কাছে আমার পূর্ববর্তী কাহিনী শুনে আমার সাথে সম্পর্কে আগ্রহী হয়।
অনেকদিন কথাবার্তা, পরিচয়, দেখা সাক্ষাত হওয়ার পর জানতে পারলাম মেয়েটিকে একটি ঘাতক রোগ গিলে খাচ্ছে। অর্থাৎ ব্রেইন টিউমার । যা তার কোন রক্ষা নেই। তারপর থেকে আমি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। সে প্রতিটা দিন আমার খোঁজ খবর রাখতো। নামাজ পড়েছি কিনা, খাওয়া দাওয়া করেছি কিনা, জীম করেছি করেছিনা, গোসল করেছি কিনা, পড়তে বসছি কিনা। মানে এক কথা বলতে গেলেই বউয়ের মতোই করেছে। কল দিতে একটু দেরি হলেই ব্যাস আর রক্ষা নেই। শুরু করে দিবে যত ধরনের ভালো বকাঝকা। আর আমি চুপ করে শুনতাপ।
তার প্রতিটা মুহুর্তই আমার স্বপ্নের মতো মনে হতো। আমাকে সবসময় বলতো বাইরে গেলে মেয়েদের দিকে তাকাবা না। না হলে চোখ দু'টি বের করে ডাক্তারকে বিক্রি করে দিবো। তার এইসব কথা বার্তা আমার খুব ভালো লাগতো। তো একদিন দেখি তার কোন খবর নেই। বাসায় বান্ধবীদের মাধ্যমে খবর নিয়ে জানতে পারলাম সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর দেরী না করে বন্ধুদের সাথে দিলাম দৌঁড়। ডাক্তার জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার করে তার সময় শেষ। আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়ি। এই মুহুর্তেই আমার চোখ দিয়ে দুই ফোটা নিরব পানি পড়লো।
যখন তার সামনে গেলাম সে আমাকে দেখে ফেল ফেল করে কাঁদতে থাকে। আমাকে বলে আমার কপালে এবং মাথায় একটা চুমু দাও। সে মানা করে আমি যেন আর কারও প্রেম না করি তবে তার মতো পেলে অবশ্যই করার শর্ত দেই। আমি বলি তোমার মতো পেলে তো সেও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। তখন সে একটু হাসি দেয়। আর আমি তাকিয়ে থাকি। যখন তাকে ছেড়ে আসছিলাম তখন জানতাম না যে এই আমার শেষ দেখা। তারপরদিন সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে বন্ধুদের মাধ্যমে খবর আসে সে পরকাল গমন করেছে। তখন আমি দৌঁড়ে পাহাড়ে উঠি। জোরে চিৎকার দিয়ে আর্তনাৎ করতে থাকি। আমার চোখের পানির সাথে সাথে আকাশও কান্না করছিলো ভীষন ভাবে।
যাক কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। কোন মতে তার জানাযাটা পড়লাম।
এখন আমার সবধরনের খাওয়া নেওয়া বন্ধ। মনে করেছিলাম ব্লগ বন্ধুদের কাছে কথাগুলো শেয়ার করে মনটা হালকা। কিন্তু না এখনও আমার মনটা হালকা হলোনা। এখন আমার চোখ দিয়ে অঝর ধারে পানি ঝরছে। দোয়া করবেন কোন মতে এই মুহুর্তটা কাটাতে পারি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




