somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখ

২২ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুখ সম্পর্কে অনেকেই তত্ত্ব দেন। কিন্তু যখন ইতিহাসের স্মরণীয় দার্শনিকরা সুখ নিয়ে কথা বলেন, তখন সেখানেই বিশ্বাস আসে মানুষের। এখানে দেখুন সেই দার্শনিকরা সুখ নিয়ে কি বলেছেন। ১. খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দের দিকেই গৌতম বুদ্ধ সুখের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সুখের কোনো পথ নেই। সুখই সেই পথ'। জীবনের চলার পথই গন্তব্য তত্ত্বের সঙ্গে মেলে অনেকটা। জীবনে অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষ যে তৃপ্তি লাভ করে তাই সুখ বলে মনে করেন বুদ্ধ। এটাই জীবনের অন্তিম গন্তব্য। ২. বার্টান্ড রাসেল ১৮ শো শতকের প্রথম দিকে বলেছিলেন, 'সাবধানতার যত রূপ আছে, তার মধ্যে ভালোবাসা সত্যিকার সুখের সবচেয়ে বড় মাধ্যম'। এই গণিতের প্রেমিক, বিজ্ঞানী এবং যুক্তিবাদী সুখের সন্ধান দিয়েছেন। ৩. উনিশ শতকের দিকে বেঁচে ছিলেন দার্শনিক ফ্রেডেরিক নিৎজচে। সুখ নিয়ে তিনি বলেন, 'সুখ এমন এক অনুভূতি যা শক্তি বৃদ্ধি করে, বাধা জয় করে'। ধ্বংসবাদে বিশ্বাসী এই চিন্তাবিদের মতে, চারপাশের সবকিছুতে নিয়্ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমেই সুখ মেলে। ৪. সক্রেটিস বেঁচে ছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের দিকে। তিনি বলেছিলেন, 'সুখের গোপন মন্ত্র হলো, খুব বেশি না চাওয়া। সেই সঙ্গে কম উপভোগের বিষয়টি আয়ত্ত করতে হবে'। প্রাচীন আমলের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকের একজন সক্রেটিস। তিনি মনে করেন, সুখ বাহ্যিক জগত থেকে আসে না। ৫. খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ অব্দের দিকের দার্শনিক প্লেটো। তিনিও সুখ নিয়ে কথা বলেছেন। 'একজন মানুষ জীবনে যা করেন, সুখ লাভ তার ওপরই নির্ভর করে। তার সুখ অন্যদের ওপর নির্ভর করে না'। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো যে তার শিক্ষকের মতোই সুখের কথা বলবেন তা সাধারণ বিষয়। ৬. প্রাচীন গ্রিসের আরেক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকের চিন্তাবিদ তিনি। সুখ নিয়ে বলেন, 'সুখ আমাদের ওপরই নির্ভর করে'। প্লেটোর শিষ্য হিসাবে অ্যারিস্টটলও সুখের সংজ্ঞা দিতে কিছুটা নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন। ৭. ১৮০৬ সালে দিকের খ্যাতিমান দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল সুখ নিয়ে বলেছিলেন, 'আমি আমার চাহিদাগুলো পূরণের পরিবর্তে তা কমানোর মাধ্যমে সুখ খোঁজার পথ পেয়েছি'। তবে সুখের সংজ্ঞা দিতে তিনি প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিকদেরই পথ ধরেছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ৮. প্রাচীন চীনের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ছিলেন কনফুসিয়াস। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দের দিকে তার চিন্তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। সুখ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'ভালো চিন্তা নিয়ে মানুষ যত বেশি সাধনা করবে, তার বিশ্ব ততটাই সুখকর হয়ে হয়ে উঠবে'। এই দার্শনিকের সুখের চিন্তাধারা সম্প্রতি কগনিটিভ বিহেভিয়োরাল থেরাপিতে যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষকে অন্যদের চিন্তা, চেতনা, আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে বলা হয়। ৯. হিসপানিয়া খ্রিষ্টপূর্ব ৪ অব্দের দিকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন চিন্তাবিদ সেনেকা। সুখ নিয়ে তার ভাষ্য হলো, 'মানবজাতির সবচেয়ে বড় আর্শীবাদ আমাদের ধরা-ছোঁয়ার মধ্যেই রয়েছে। যা আছে তা নিয়েই তুষ্ট থাকেন একজন জ্ঞানী মানুষ। কি নেই তা নিয়ে কখনো ইচ্ছাপ্রকাশ করেন না'। ১০. চীনের আরেক দার্শনিক লাও জু। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দের দিকে চীনের নামকরা চিন্তাবিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠালাভ করেন। সুখ সম্পর্কে বলেছিলেন, 'বিষণ্ণতায় ভুগছেন মানে আপনি অতীতে বাস করছেন। শঙ্কায় আছেন মানে ভবিষ্যত নিয়ে পড়ে রয়েছেন। আর যদি শান্তিতে থাকেন তবে বর্তমানেই আছেন'। অনেকের মতে, যারা বর্তমানে যা রয়েছে তাতেই ধ্যান দেন, তবে সুখ মেলে। ১১. উনিশ শো শতকের আরেক বিশ্বখ্যাত চিন্তাবিদ সোরেন কির্কগার্ড। তিনি বলেছিলেন, 'জীবন কোনো সমস্যা নয় যা সমাধান করতে হবে। বরং এটা একটা বাস্তবতা যার অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে'। তার মতে, বর্তমানের জীবন থেকেই সুখ আসতে পারে। আর জীবনের এই যাত্রাকে উপভোগ করতে হবে। ১২. আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস-এ ১৮১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন চিন্তাবিদ হেনরি ডেভিড থোরি। সুখ নিয়ে তার মতামত হলো, 'সুখ অনেকটা প্রজাপতির মতো; এর পেছনে যত ছুটবেন, এটি ততই আপনাকে ধোঁকা দেবে। কিন্তু যখন মনোযোগ অন্য কিছুতে দেবেন, তখন তা শান্ত হয়ে আপনার কাঁধে এসে বসবে'। তিনি যেকোনো ধরনের অভ্যাস গড়ে তোলার বিপক্ষে ছিলেন। তিনি আরো বড়, মহাজাগতিক ক্ষেত্রে সুখের সন্ধান করতে চেয়েছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×