somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামুদ্রিক বর্জ দিয়ে তৈরী ভাসমান জৈব-তরীতে আবাসনের জন্য ফরাসী স্থপতী উদ্ভাবিত একটি স্থাপত্য শৈলী পরিচিতি ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কবি লিখেছেন আর শিণ্পী গেয়েছেন কাগজের এই নৌকা যদি ময়ুর পংখী হয়ে যেতো,গল্প কল্প না হয়ে সত্যি কথা হয়ে যেতো । গল্প কল্প না হয়ে সত্যি হওয়ার পথে মনে হয় জগত এগিয়ে চলেছে দৃপ্ত পদক্ষেপে । এতদিন ইউটোপিয়ান নগরীর কথা শুনছিলাম তবে তা ছিল স্থলভাগে, কিন্তু এখন তা হবে জলে, তাও আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর অবকাঠামোতে । সেরকমই একটি কাহিনীর সচিত্র বিবরণ দেয়া হল নীচে ।

১) ভবিষ্যতে ভাসমান গ্রাম স্বকিয় শক্তির একটি উপায় হতে পারে । ভিনসেন্ট কলবাট নামক একটি ফরাসী স্থপতি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক জল থেকে আহরিত বর্জ্যকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করে একটি নতুন টেকসই সামুদ্রিক ভাসমান আবাসনের স্থাপত্য নক্সা তৈরী করেছেন । তাদের রুপকল্পে বর্জ্য গুলিকে নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে পুণ: ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হবে। রাসায়নিক যৌগিক প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য পদার্থ এবং শেত্তলা দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করা হবে, যা হবে বায়োমেটিক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে বর্ধনযোগ্য একটি পক্রিয়া। এই পক্রিয়ায় তৈরীকৃত যৌগ পদার্থ দিয়ে টেকসই ভাসমান আবাসস্থল পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিদের জন্য একটি সমাজ বিনির্মানের কাংখিত ভিশন বলেই তারা উল্লেখ করেছেন । তাদের এই রূপকল্পটি পাশ্চাত্তের শিল্পোন্নত দেশ ও তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে জ্বালানী শক্তি ব্যবহারের বিষয়ে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনা নিরসনের একটি উপায় বলেও তারা উল্লেখ করেছেন । তাদের উদ্ভাবিত ভাসমান সামুদ্রিক গ্রামের ছবি সমুহ নিম্নে দেখা যেতে পারে ।
ছবি ১/১৬


২) একটি অপুর্ব নির্মাণ স্থাপত্য শৈলীর মাধ্যমে পুণ:নবায়ন যোগ্য শক্তি( renewable energies) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্মিলন ঘটিয়ে পৃথিবীর প্রতিটি দেশের সাগর উপকুলে স্বকীয় শক্তি নির্ভর একটি ভাসমান আবাসন পল্লী সৃজন করে জ্বালানী বিষয়ক বিরোধের অবসান ঘটানো যেতে পারে বলে ভিনসেন্ট কলবাট স্থপতিগণ দাবী করেছেন । তাদের উদ্ভাবিত এই স্থাপত্য শৈলীটি অনেকের ভুয়সি প্রসংসা কুড়িয়েছে ।
ছবি ২/১৬


৩) প্রথম দর্শনে এটাকে একটি আজগুবি (utopian) স্ট্রাকচার বলেই অনুভুত হয় । এসব আবাসে বসবাসকারীদের সামুদ্রিক অধিবাসী বলে অভিহিত করা হবে । এটি একটি নতুন ধরণের ভাসমান নগরায়ন প্রক্রিয়া , যার মাধ্যমে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উপায়ে সমুদ্রের অম্লীকরণ (acidification) এবং দূষণকে প্রশমিত করে মানুষ বসবাস উপযোগী আবাস স্থল হিসাবে গড়ে তুলা যায় বলে দাবী করা হয়েছে ।
ছবি ৩/১৬


৪) সমুদ্রের প্লাস্টিক বর্জ্যকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে রি সাইকেল করে তৈরী টেকসই বাসস্থান কে “একোয়ারিয়াস” নামে অভিহিত করা হয়েছে ।
ছবি ৪/১৬


৫) এই ইকো সিসটেম একবার নির্মিত হলে তা আপনা আপনি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে। কারণ পানির মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ব্যবহার করে এর বহিস্থিত কাঠামো তৈরী হবে , অর্ধভেদ্য ঝিল্লি দ্বারা সমুদ্রের নোনা জল লবণমুক্ত হবে এবং মা্‌ইক্রলেজ (microalgae) পদ্ধতিতে শক্তি তৈরী করে উষ্ণতা এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে দাবী করা হয়েছে ।
ছবি ৫/১৬


৬) ভাসমান গ্রামটিকে সাবমেরিন এবং জাহাজের মত স্থান হতে স্থানান্তরে সরানো যাবে এবং স্বয়ংসম্পুর্ণ একটি ভাসমানতরী সদৃশ্য গ্রামকে ২০০০০ জন মানুষের বসবাস উপযোগী করা যাবে ।
ছবি ৬/১৬


৭) প্রধান প্রবেশ পথটি পানির উপরিভাগে অবস্থিত এবং এটি দিয়ে যাওয়া যাবে ম্যানগ্রোভ মুলের উপর প্রতিষ্ঠিত ৫০০ মিটার ব্যস বিশিষ্ট গম্বুজ তলে ঢাকা চারটি ভাসমান তরণীসম আবাসে । সবগুলি আবাস নিয়ে গড়ে উঠবে একটি নিরাপদ পোতাশ্রয় ।
ছবি ৭/১৬


৮) সকল আবাসিক ইউনিটগুলিই মডুলার ভিত্তিক এবং সহ-কর্ম ক্ষেত্র সমাহার মন্ডিত , এতে থাকবে রিসাইক্লিং প্লান্ট , , বিজ্ঞান ল্যাব, শিক্ষালয়, হোটেল, ক্রীড়া ক্ষেত্র এবং একোয়াপনিক (aquaponic ) খামার ।
ছবি ৮/১৬


৯) শেত্তলা ( Algae) প্ল্যাঙ্কটন এবং খনিজ সমৃদ্ধ মুলাস্কা সংমিশ্রণে প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের জন্য চাষ করা হবে এবং এগুলিকে "জলজ প্রাণিকুল ও উদ্ভিদকুলের জন্য নার্সারি হিসাবে পরিচালিত করা হবে জানিয়েছেন এর স্থপতিগন ।
ছবি ৯/১৬


১০) অন বোর্ড জৈব খামার হতে চাড়া জন্মানো পুর্বক পুণ:র্ব্যবহারযোগ্য জীবাণুবিয়োজ্য পাত্রে ভরে তা ব্যপকভাবে বিতরণ করা হবে সকল ভাসমান গ্রামে ফল এবং উদ্ভিজ্জ বাগান করার জন্য ।
ছবি ১০/১৬


১১) জৈব- ভিত্তিক উপকরণকে (যথা ঝিনুক ) সংশ্লেসিত উপায়ে প্রক্রিয়াকরণ করে তৈরী উপকরনাদিকে একসঙ্গে শক্তিশালী আঠালু জাতীয় পদার্থ দিয়ে জোড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তৈরি করা হবে ।
ছবি ১১/১৬


১২) একোয়ারিয়াস গ্রামগুলি শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য প্রস্তাবনাই নয়, স্বয়ংসম্পুর্ণ শক্তি তৈরীর আধার হিসাবে (energy self-sufficiency ) একটি টেকসই প্রযুক্তিসম্পন্ন ব্যবস্থার উদ্ভাবন বলেও এর স্থপতিবিদগন দাবী করেছেন ।
ছবি ১২/১৬


১৩) দুরদৃস্টিমুলক স্থাপত্যশৈলীপুর্ণ একটি অনুভূমিক মডেল এর আওতায় সমমাত্রিক “পরিবেশ বান্ধব এন্টারপ্রেনার “ কাঠামুতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে একটি ইউটুপিয়ান (আজগুবি) ভাসমান স্বয়ংসম্পুর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই ফরাসী কলবাট স্থপতিদের মুল লক্ষ্য ।
ছবি ১৩/১৬


১৪) কার্বন মুক্ত একোয়ারিয়াস সমুদ্রাবাসন গৃহের বৈঠকখানার একটি দৃশ্য়
ছবি ১৪/১৬


১৫) কার্বন মুক্ত একোয়ারিয়াস সমুদ্রাবাসনগুলির মেনগ্রোভ মুলীতে স্থিতিচিত্র
ছবি ১৫/১৬


১৬) কেন্দ্রে ভাসমান আবাসের মডেল অনুসারে কার্বন-মুক্ত ত্রি মাত্রিক ডিজাইনের সামুদ্রিক ভাসমান একোইরিয়াস আবাস তরী টিকেই পাশে দেখতে পাওয়া ছোট ছোট চিহ্ন দিয়ে একটি পোতাশ্রয় হিসাবে দেখানো হয়েছে, যেখানে ২০০০০ মানুষের আবাস উপযোগী গুচ্ছ গ্রামের ব্য়বস্থা করা যাবে বলে এর নির্মাণ স্থপতিগন দাবী করেছেন ।
ছবি ১৬/১৬


শিল্পীর তুলি আর স্থপতির কলমে আঁকা এই রূপকল্পটিকে যদি পরিপুর্ণভাবে বাস্তবে রূপ দেয়া যায় তাহলে আশা করা যায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে মহাকাশে অক্সিজেন ও পানিশুন্য পরিবেশে কোটি কোটি মাইল পারি দিয়ে মনুষ্য বসতি স্থাপনের কথা বাদ দিয়ে এই ধরিত্রির বুকেই গড়া যাবে সুন্দর সুন্দর নতুন জীব বৈচিত্রময় আবাস ।
ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ।

ছবি সুত্র : ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০২০ ভোর ৬:৫৩
৪০টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×