somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তরের যাত্রা - শেষ পর্ব : সুমেরুর ভৌগলিক কেন্দ্রবিন্দু অভিমুখে যাত্রার কিছু সচিত্র বিবরণ

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বরফের সাগর পারি দিয়ে যেতে হবে উত্তর মেরুতে, কিন্তু কিভাবে ? উত্তরের হিমেল বায়ুকে উপেক্ষা করে বরফেরর উপর দিয়ে স্লেজে ও বীর দর্পে হেটে নাকি অন্য কোনভাবে । চলুন বিষয়টা দেখে নিই একটু সামনে এগিয়ে । আমরা সকলেই জানি উত্তর মেরু পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত বিন্দু (৯০ ডিগ্রী অক্ষাংশ)। এর অন্য নাম সুমেরু বা ভৌগোলিক উত্তর মেরু। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের যে বিন্দুতে এর ঘূর্ণন অক্ষ পৃষ্ঠতলের সাথে মিলিত হয় তাকে উত্তর মেরু বলে। উত্তর চৌম্বক মেরুর সাথে একে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবেনা কারণ এ দুটোর মধ্যে যথেষ্ট দুরত্ব আছে , যা নীচের ছবিতে দেখা যাবে । আর একটি কথা ,উত্তর মেরুতে সকল দিক দক্ষিণ দিকে নির্দেশিত হয় ।

ছবি-১ : উত্তর মেরুর মেগনেটিক বিন্দু ও ভৌগলিক বিন্দুর অবস্থান



পঞ্চদশ শতাব্দি পর্যন্ত কোন এক্সপ্লোরারই উত্তর মেরু অঞ্চলে দু:সাহসিক অভিযানে যান নি । মাত্র শত বছর আগে ১৯০৯ সনে মানূষ উত্তর মেরু বিন্দুতে প্রথম পা রাখে । চতুর্দশ শতকে মারক্রেটর (Mercator) নামে এক জনের ভ্রমন কাহিনী Inventio Fortunata তথা Fortunate Discoveries” হতে জানা যায় অক্সফোর্ডের একজন দুরন্ত সাহসী ভিক্ষু ইংলিশ বালক যাদুকরী তরীতে নরওয়ের উত্তর উপকুল পাড়ি দিয়ে উত্তর মেরুর কাছাকাছি যায় । ঐ বালকের ভ্রমন কাহিণী আনুসরনে মারকেটর উত্তর মেরু এলাকার একটি ম্যাপ তৈরী করেন তাতে তিনি মেরু বিন্দুতে একটি কাল ছোট খাড়া পাহাড় রয়েছে বলে দেখান । যা নিন্মের চিত্রে দেখা যেতে পারে ।

ছবি-২ : চতুর্দশ শতকের ম্যাপে উত্তর মেরুর ছবি



সে সময়ে এটা অনেকেই বিশ্বাস করতেন যে উত্তর মেরুতে একটি বড় মেগনেটিক পাহাড় রয়েছে ।
১৯৬৭ সনে নাসার বিজ্ঞানীরা ঠিক উল্টা কথা বলেন , তারা তাদের ছবি বিশ্লেষন করে দেখান আর্কটিক মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি বিশাল কাল গহ্বর । যা নিন্মের চিত্রে দেখা যেতে পারে ।

ছবি-৩ : নাসার বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষিত ছবিতে দেখা আর্কটিক মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলের বিশাল কাল গহ্বরের দৃশ্য



ছবি- ৪ : উত্তর মেরুর অবস্থান আর্কটিক মহাসাগর তথা উত্তর মহাসাগরের মধ্যভাগে



মহাসাগরের এই অংশের পানি বছরের অধিকাংশ সময়েই সামুদ্রিক বরফে আবৃত থাকে। উত্তর মেরুতে দুটি মৌসুম--গ্রীষ্মকাল আর শীতকাল। গ্রীষ্মকাল ছয়মাস পুরোটাই দিন আর শীতকাল ছয়মাস পুরোটাই রাত। উত্তর মেরুতে কোন জনবসতি নেই। শীতকালে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৩৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এখানকার প্রধান প্রাণী হল মেরুভাল্লুক আর বরফের নিচে পানিতে থাকা কিছু মাছ। এছাড়াও উত্তর মেরু অঞ্চল নিয়ে রয়েছে অনেক মিথ যার একটি হল 'এলিয়েন' পিংস রহস্য ।
উত্তর মেরুর নিকটে ভু অভ্যন্তর হতে ভুতুড়ে 'Pinging' পিংগিং এর মত ভীনদেশী ( এলিয়েন) শব্দ শুনাচ্ছে । কিন্তু কেউ জানে না এটা কোথা থেকে আসছে।
এই রহস্যময় গোলমালে শব্দ সম্পর্কে একাধিক খবর প্রকাশের পর এটা সমুদ্রের তলায় কোথা থেকে আসছে তা জানার জন্য সেনাবাহনীর টহল দল তদন্ত করে দেখে বলেছে -

ছবি – ৫ : ভুতুড়ে Pinging শব্দটি কানাডার দূরবর্তী আর্কটিক অঞ্চলে সমুদ্রের তলা থেকে আসছে ( লাল চিহ্নিত)।



উত্তর মেরু প্রথম কে আবিস্কার করেন তা নিয়ে রয়েছে মতবিরোধ । আমিরিকান নেভী ইনজিনিয়ার এড উন পিয়ারী তার সাথী মেথো হেনসন ও অন্য চারজন এস্কিমো যথা ওতাহ, সিগলু, এগিনোয়ে এবং ওকাওয়া একত্রে ১৯০৯ সনের ৬ এই এপ্রিল উত্তর মেরুর ভৌগলিক বিন্দুতে পৌঁছান । নীচে ছবিতে দেখা যেতে পারে :

ছবি- ৬ : এড উন পিয়ারী তার সাথী মেথো হেনসন ও অন্য চারজন র এস্কিমো মিলে বরফের উপরে মেরু বিজয় পতাকা স্থাপন


সুত্র : AGIP/Rue des Archives/The Granger collection , New York

পক্ষান্তরে আমিরিকান আরেক অভিযাত্রী ফ্রেডারিক কুক দাবী করেন যে তিনি তার দুই জন এস্কিমো সহচর যথা এপিলাম এবং আইথোকোসোক কে নাথে নিয়ে ১৯০৮ সনের ২১ শে এপ্রিল উত্তর মেরুর ভৌগলিক বিন্দুতে প্রথম পৌঁছান । ছবি দেখা যেতে পারে ।

ছবি-৭ : ফ্রেডারিক কুকের দলবল সহ উত্তর মেরু বিন্দুতে ইগলু বানিয়ে তথায় পতাকা উত্তোলন


সুত্র : Frederic Cook discovered north pole , AGIP/Rue des Archives/The Granger collection , New York

বর্তমান সময়ে উত্তর মেরুতে অভিযাত্রায় যাওয়ার জন্য যে সমস্ত যাত্রীবাহী সামুদ্রিক জাহাজ আছে তার মধ্যে বরফ ভাঙ্গার আনবিক শক্তি সম্পন্ন 50 Years of Victory নামক জাহাজটিই কেবল ৯০ ডিগ্রি উত্তর পোলার পয়েন্টে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে । ২০০১ সাল হতে Poseidon Expeditions শীর্ষক বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটি উত্তর মেরু অভিযানে এ জাহাজে করে অভিযান প্রিয় যাত্রীদেরকে উত্তর মেরুতে আনা নেয়া করছে । জাহাজটিতে রয়েছে দুটি নিউক্লিয়ার রিএকটর (nuclear powered propulsion system. Two OK-900A nuclear reactors provide a power output of 27.6MW) যা ৭৫০০০ অশ্বশক্তি উৎপাদন করে জাহাজটিকে আর্কটিক সাগরের ১০ ফুট পর্যন্ত পুরু বরফের আস্তরকে ভেঙ্গে/মারিয়ে জাহাজকে নিয়ে যেতে পারে একেবারে সুমেরুর ভোগলিক বিন্দু স্পটে ।

ছবি-৮ : ঘন কঠীন বরফ ভেঙ্গে উক্তর মেরু পয়েন্টে যেতে সক্ষম যাত্রীবাহী ‘50 Years of Victory’ নামের জাহাজ



ছবি – ৯ : এই ‘50 Years of Victory’ জাহাজটিতে করেই উত্তর মেরু হতে এক চক্কর দিয়ে আসা যাক । এটা মাত্র ১৪ দিনের একটি যাত্রা ।



এ অভিযাত্রায় বিশ্বের বিভন্ন দেশ হতে আগ্রহী অংশগ্রহনকারীদের সকলকেই প্রথমে যেতে হয় নরওয়ের হেলসিংকিতে । সেখান হতে চার্টার ফ্লাইটে সকলকে নেয়া হয় রাশিয়ার Murmansk সিটিতে । এই Murmansk সিটিতেই Arctic icebreaking fleet এর সদর দফতর অবস্থিত ।

ছবি-১০ : রাশিয়ার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত মুনারস্ক (Murmansk) সিটি



"মুরমানস্ক" হোটেলে থেকেই নেয়া হয় অভিযাত্রীদেরকে জাহাজে ।

ছবি- ১১ : সেখানে উষ্ণ অর্ভথনার পর নেয়া হয় বুকিংকৃত ডিলাক্স এলিগেন্ট কেবিন কিংবা আর্কটিকা সুটে ।



জাহাজটিতে রয়েছে অভিযাত্রীদের জন্য বিলাসবহুল কেবিন উইথ প্রাইভেট ভিউ ডেক , বাহিরের খোলা ডেকে সকলের সাথে সাগরের দৃশ্য দেখার সুযোগ, পাবলিক প্লেস যার মধ্যে ডাইনিং রুম, আর্ট সেলুন ফর লেকচারস , সমাজিক বিনোদন সুবিধা যথা ভলিবল খেলা , জিম ও সুইমিং পুল , এক্সপিডিশন স্টাফদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে ইতিহাসবিদ, পকৃতি বিজ্ঞনী ও অন্যান্য পারফরমার যারা উত্তর মেরুর যাত্রাটিকে নাচ গান সংগীতে উপভোগ্য করে তুলেন । এই জাহাজটি হতে হেলিকপ্টারে আরোহন করেও বহুদুরের অনেক আশ্বর্য দৃশ্যাদি অবলোকন করার সুযোগ রয়েছে ।

ছবি - ১২ : যাত্রার প্রারম্ভে "মুরমানস্ক" থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত যাত্রা পথটি একটু দেখে নেয়া যেতে পারে ।




এবার তবে হোক শুরু উত্তরে যাত্রা ।

ছবি-১৩ : যাত্রা শুরু করে সাগরের নীল জলে ভেসে জাহাজের ছুটে চলা



ছবি -১৪ : স্বচ্ছ জলে এটা ঘন্টায় প্রায় ২০ নটিকেল মাইল তথা ২২ মাইল বেগে দিবানিশি ছুটে চলে



আর্কটিকের বেরেন্ট সাগরের জলে ভেসে চলার পথে মাঝে মধ্যে খোলা চোখেই দেখা মিলে অনেক মনোরম দৃশ্য । তিমি মাছের ভেসে উঠার ছবি সাথে ডানা মেলে জাহাজের সাথে চলা উড়ন্ত সি গাল তো আছেই ।
জাহাজটি যাত্রা শুরুর কিছুক্ষনের ভিতরেই দেখা যায় অপুর্ব কিছু দৃশ্য জলে স্থলে ও অন্তরিক্ষে । বায়নাকুলারে দেখা যায় উপকুলের কাছাকাছি এলাকায় তৈগা বনভুমির সাদা ডানা তুন্দ্রা পেঁচা (snowy owls ) কিভাবে তুন্দ্রা ইন্দুর শিকার করে নিয়ে আকাশে উড়ছে ।

ছবি – ১৫ : সাদা পালকের তুষার- পেঁচা ( snow-owl) তুন্দ্রা ইন্দুরকে শিকাড় করে নিয়ে যাচ্ছে আপন নীড়ে ।



ছবি - ১৬ : তুন্দ্রা ইন্দুর (lemming)



ছবি-১৭ : সাগরের নীল জলে তিমি মাছের ভেসে উঠার দৃশ্য



ছবি -১৮ : শুধু তিমির ভেসে উঠাই নয় সে সাথে দেখা যায় তিমির খাদ্য গ্রহণের বিরল দৃশ্য



একটি তিমি বিশেষ করে নীল তিমি দৈনিক প্রায় ৪ টন ( প্রায় ১০০ শত মন ) খাদ্য গ্রহণ করে । ক্ষুধার তারনা পেলে তিমি পানির মথ্যে জু প্লাঙ্কটন ( এনিমেল প্লাঙ্কটন) আছে এমন এলাকায় গিয়ে তার বিশাল মুখ হা করে পানিকে তার পেটের দিকে টানে । সেসময় পানিতে থাকা টনকে টন প্লাংকটন ( সাথে অনেক ছোট মাছ) তার বিশাল হা করা মুখে ঢুকে যায় । বেলেন তিমির মুখের জালে (বেলেনে) অখাদ্য কিছু থাকলে ছাকনীর মত ছেকে নেয় । তিমি অনেক সময় জু প্লাঙ্কটনের অবস্থান ভেদে পানির নীচে বা উপর থেকে মুখ হা করে তা খেয়ে নেয়। সাগরের পানির উপরের অংশে যখন খায় তখন জাহাজ থেকে তার কিছু দৃশ্য দেখা যায় ।
জো প্লাঙ্কটন খুবই ছোট প্রজাতির প্রাণী যারা এক কোষ হতে বহুকুষী ও বিভিন্ন আকৃতির হয় , যার দুটি প্রজাতি নীচের ছবিটিতে দেখানো হল । এই জু প্লাঙ্কটন গুলি স্রোতের বিপরীতে চলতে পারেনা বিধায় এরা সহজেই তিমি সহ আনেক মাছেরই পেটে যায় খাদ্য হিসাবে নীজের জীবনকে দিয়ে বিলিয়ে ।

ছবি -১৯ : তিমির অন্যতম খাবার বিভিন্ন প্রকারের জু প্লাঙ্কটন, কোনটা চিংরী মাছ কিংবা অক্টোপাসের মত দেখতে



তিমি যখন তার পেটের ভিতরে চলে যাওয়া বিপুল পরিমান পানি ব্লো হোল দিয়ে প্রবল বেগে ঝড়নার মত নি:সারণ করে তখন এর ভিতর দিয়ে সুর্যের আলো প্রবাহিত হওয়ার কালে তার বিপরীতে পরিস্কার একটি রংধনুর মত দৃশ্যের অবতারনা হয় যা জাহাজ হতে খালি চোখেই দেখা যায় ।

ছবি - ২০ : তিমির ব্লো হোল নি:সারিত পানির বিপরীতে রংধনুর দৃশ্য



স্বচ্ছ জলের এলাকা পার হয়ে গেলে কিছুক্ষনের মধ্যেই কানে আসতে থাকে ররফ ভাঙ্গার ঘরর ঘরর শব্দ, কেননা জাহাজটি ততক্ষনে সাগরের বুকে জমা বরফ রাজ্যে করেছে প্রবেশ, ররফ ভেঙ্গে এটা এগিয়ে যায় ন্তব্যের পানে একটু ধীর গতিতে ।

ছবি-২১ : বরফ ভেঙ্গে ভেঙ্গে আণবিক শক্তি চালিত জাহাজ এগিয়ে চলছে সুমেরু পানে



জাহাজটি জমাট বাধা বরফ পেরিয়ে অনেকটা সময় আবার নীল জলেও ভেসে চলে। এভাবেই বরফ ভাঙ্গা আর নীল স্বচ্ছ জলের মাঝেই চলে অবিরাম যাত্রা । মাঝে মাঝে আকাশে দেখা দেয় ঘন মেঘ,
আরর্টিক সাগরে প্রকৃতি ঘন ঘন বদলায়, চলে মেঘ রোদ্দরের খেলা সাথে সাগরের ডেও । কখনো হালকা উত্তাল কখনো একেবারে শান্ত এভাবেই সামনে এগিয়ে চলা ।

ছবি-২২ : বরফ ভেঙ্গে জাহাজের নীল সাগরের জলে ভেসে চলার মাহেন্দ্র ক্ষন



ছবি-২৩ : জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে তুলা যায় আর্কটিক সাগরে জমাট বাধা বরফের দৃশ্য



বরফের মোটা আস্তরণ ভেঙ্গে জাহাজ যতই এগিয়ে যায় ততই দেখা যায় নানা অপরূপ দৃশ্য । চব্বিশ ঘন্টা দিবালোকের সুযোগে প্রতি ট্রিপে ৫ জন যাত্রী নিয়ে হেলিকপ্টারে করে পর্যায়ক্রমে সকল ইচ্ছুক যাত্রীর জন্য সাগর ও কাছের ছোট ছোট দ্বীপের দৃশ্য ও জীব বৈচিত্র দেখার অপরূপ সুযোগ রয়েছে জাহাজটিতে । দেখা যায় অনেক মনোমুগ্ধকর ছবি , নীচে নমুনা তার কিছু দেখানো হল ।

ছবি-২৪ : জাহাজের হেলিপেড হতে হেলিকপ্টারের উড্ডয়ন দৃশ্য



ছবি-২৫ : হেলিকপ্টার থেকে দেখা দিগন্ত বিস্তৃত বরফে জমাটবাধা সাগর ও নীল জল রাশির দৃশ্য



যাত্রা পথে সুবিধা জনক পর্যায়ে Sea kayaking ( সিলের চামড়ায় তৈরী নৌকার ‘কায়াক’ নাম অনুসারে এটা kayaking হিসাবে অভিহিত ) এই অভিযাত্রার প্যাকেজে অন্তরভুক্ত । তবে এই সুযোগ খুব সীমিত , একটি ভয়েজে এই কাইকিং এডভেঞ্চারের জন্য মাত্র ১৬ জন সুযোগ পায় এবং এদেরকে হতে হয় সুস্বাস্থের অধিকারী , থাকতে হয় শারিরিক ফিটনেস এবং কাইকিং এর পুর্ব অভিজ্ঞতা, সাথে ইংরেজীতে কথা বলা ও ভাল করে বুঝার সামর্থ থাকতে হবে । তবে অন্যরা তা জাহাজে থেকে দেখে আনন্দ উপভোগ করতে পারে অনায়াসে ।

ছবি – ২৬ : বরফ পানির লুকোচুরির মধ্যে সাগরের মাঝে এডভেঞ্চারাস কাইকিং



ছবি – ২৭ : আর্কটিক সাগরে পানির নীচে রয়েছে বিশাল বিশাল লুকানো বড়ফের পাহাড়সম স্তুপ , যা দেখতে পাওয়া যায় জাহাজের ডেকের বিনোদন সাইটের বড় ডিসপ্লে স্ক্রীনে



ছবি – ২৮ : জাহাজের ডেকের বিনোদন সাইটের বড় ডিসপ্লে স্ক্রীনে আরো দেখতে পাওয়া যায় বরফের ফুল ( Iceflowers ) যা কাশবনের ফুলের মতই দেখা যায়



আর্কটিক সাগরের বুকে ৬ দিন সযত্ন নেভিগেশনে বিভিন্ন ধরনের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে সপ্তম দিনে জাহাজটি হতে নয় টন ওজনের নোঙড় ফেলা হয় ৯০০ ডিগ্রি উত্তর মেরু সাইন পোস্টে । আনন্দে আত্মহারা হয়ে সকলেই জাহাজ হতে নেমে পা রাখে বরফাচ্ছন্ন আর্কটিক মহাসাগরের কেন্ত্র বিন্দুতে । এটাই জিউগ্রাফিক নর্থ পোল ।

ছবি-২৯ : ৯০ ডিগ্রি উত্তর মেরুতে ইন্টারন্যাশনাল সাইন পোস্টে জাহাজ হতে অবতরণ করে মেরু বিন্দুতে পদার্পন



ছবি-৩০ : উত্তর মেরুর ৯০ ডিগ্রি জিউগ্রাফিক বিন্দুতে পৌঁছে আতসবাজি ছুড়ে সেলিব্রেশন



ছবি- ৩১ : উত্তর মেরু বিন্দু সাইন পোস্টের চারদিকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে বিখ্যাত রাউন্ড ডেনস দিয়ে সকলে মিলে সেলিব্রেশন করা হয় আনন্দ সহকারে



আয়োজন করা হয় বার বি কিউ এর, আর বীর পুরুষ কেউ কেউ বিশেষ ব্যবস্থাধীনে কাছাকাছি বড় কোন ফাটলের বরফশীতল জলে কোমড়ে দড়ি বেধে একটা ডুব দিয়ে নেন, তবে মিনিট খানেকের মধ্যেই অবশ্য উঠে আসতে হয় প্রচন্ড শীতে কাবু হয়ে বীর পুরুষদের ।

ছবি-৩২ : উত্তর মেরুতে বরফ জলে ডুব দিয়ে উঠার দৃশ্য



নর্থ পোলের চারিদিক ঘুরে স্মরনীয় মহুর্তগুলি কাটলেও রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা কিন্তু তখনই শেষ হয়না । বহুল নন্দিত archipelago of Franz Josef Land তখনো দেখার বাকী । ফিরতি যাত্রায় এই দ্বীপমালার ভিতর দিয়ে জাহাজ চলা কালে দেখা অপুর্ব দৃশ্যাবলীর সচিত্র কিছু বিবরণ দেয়া হল নীচে ।

Archipelago of Franz Josef Land

Archipelago of Franz Josef Land টি ২০১২ সন হতে রাশিয়ার আর্কটিক ন্যাশনাল পার্ক এর পাকৃতিক সেংচুয়ারী হিসাবে পর্যবেসিত । Franz Josef Land ১৯১ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত । এই দ্বীপপুঞ্জের আয়তন প্রায় ১৬০০০ বর্গ কিলোমিটার যার শতকরা ৮৫ ভাগই গ্লেসিয়ার আবৃত । এটাই উত্তর মেরুর কাছের দ্বীপ, যদিউ উত্তর মেরুর কাছাকাছি আরো দুটো দ্বীপ রয়েছে । একটি কানাডার উত্তরে অন্যটি গ্রীন ল্যান্ডের উত্তরে ।

উত্তর মেরু অভিযাত্রায় এই Franz Josef Land একটি বড় আকর্ষণ । এই দ্বীপ মালায় মেরু ভাল্লুকসহ রয়েছে আরো কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যথা walruses এবং বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক তিমি । এই দ্বীপাধারে যেমনি রয়েছে মেরু ভাল্লুক তেমনি বড় বড় পাথরের ঢাল বা টালুস এবং ক্লিফের আশে পাশে রয়েছে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখী যথা গিলমটস (guillemots) , ডাবস্কিস (, dovekies) , আইভরি শঙ্খচিল (ivory gulls) প্রভৃতি পাখির উপনিবেশ, যা দেখে মন জোড়ায় ।

আর্কটিক মহাসাগর ও তার শাখা সাগর যথা বেরেন্ট সাগরের অগভীর জলে হাতীর দাঁতের মত দেখতে দাঁত ওয়ালা প্রাণীটিই ওয়ালরাস (walrus) এটা এলিফেন্ট সীলরই (Elephant Seal) গোত্রীয় । walrus লস্বায় প্রায় ১০ ফুট এবং প্রাপ্ত বয়স্ক একটির ওজন প্রায় ২ টন । নীচে walrus ও Elephant Seal এর ছবি দেখানো হল ।

ছবি-৩৩ : বাদিকের দুটো walrus এবং সর্ব ডানেরটি Elephant Seal



ছবি-৩৪ : বরফের চাই এর উপর দলবেধে বসে থাকা Walrus এর দৃশ্য



বড় বড় পাথরের ঢাল , টালুস এবং ক্লিফের আশে পাশে রয়েছে হাজার হাজার বিভিন্ন পরিযায়ী পাখী যথা গিলমটস. ডাবস্কিস ও আইভরি শঙ্খচিল

ছবি -৩৫ : পাথরের ঢাল , টালুস এবং ক্লিফে ঝুলে থাকা গিলমটস ও ডাবস্কিস



ছবি-৩৬ : গিলমটস পাথীদের উড়ে চলার মনোরম দৃশ্য



ছবি - ৩৭ : বরফের বুকে বসে থাকা আইভরি শঙ্খচিল



ছবি- ৩৮ : বায়নোকোলার দিয়ে দেখা মেরু ভাল্লুক এর চলার চলার দৃশ্য



ছবি- ৩৯ : মেরু ভাল্লুকের হোটে চলার দৃশ্যটাও চোখে পড়বে



ছবি - ৪০ :মেরু ভাল্লুকের সাতার কাটার দৃশ্যও মাঝে মাঝে দেখা যায়




দ্বীপমালা এলাকায় পানির নীচেও রয়েছে সুন্দর প্রবাল ও জীববৈচিত্র । সমুদ্রের এ অংশে জাহাজ আসলে সেসময় বড় স্ক্রীনের ডিসপ্লেতে যা দেখানো হয় নীচে তার কয়েকটা দেয়া হল ।

ছবি- ৪১ : Franz Josef Land এলাকায় পানির নীচে থাকা প্রবাল




আর্কটিক সাগরের তলদেশে বসবাসকারী বিস্ময়কর কিছু মাছের সাথেও দেয়া হয় পরিচয় করিয়ে জাহাজে এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিংএ

ছবি – ৪২ : স্নেইল ফিস ( snail fish )



ছবি – ৪৩ : স্কালপিন ফিস ( Sculpin fish )



ছবি- ৪৪ : Archipelago of Franz Josef Land এর নেচারেল সেংচুয়ারীতে লিচেন ঘাস



ছবি - ৪৫ : পাথরের ফাটলে আর্কটিক পপি ফুল ফোটার দৃশ্য



উত্তর মেরুতে রোমাঞ্চকর এডভেঞ্চার ও তৎসংলগ্ন এলাকার দর্শনীয় বিষয়াদি দেখার পরে শুরু হয় ঘরে ফিরার জন্য জাহাজের দক্ষীনে যাত্রা ।

দক্ষীন যাত্রায় জাহাজের সাথে সাথী হয় অসংখ শঙ্খচিল , উত্তর মেরুতে আসার সময় যেমনি করে অনেকটা পথ গার্ড অফ অনার দিয়ে জাহাজের সাথে চলেছে তেমনিভাবে ফিরতি পথেও তারা গার্ড অফ অনার দেয়ার মত সারটা পথ জাহাজের আগে পিছে থেকেছে ।
ছবি- ৪৬ : গার্ড অফ অনার দেয়ার মত জাহাজের সঙ্গী হয়ে চলা এক ঝাক শঙ্খচিল



Franz Josef Land এ অভুতপুর্ব দৃশ্যাবলী দেখার পরে আর্কটিকের বেরেন্ট সাগরের নীল জলরাশিতে ভেসে ঘরে ফিরার জন্য জাহাজের দক্ষিনে যাত্রাটি হয় মধুময় । ১৪ দিনের ভয়েজে অনেকের সাথেই হয় জানাশুনা , হয় একান্ত চারিতা , হয় ভাব বিনিময় , প্রনয়ও যে কারো কারো হয়না তা নয় । জাহাজের উন্মুক্ত ডেকে বসে প্রেজেনটেশন ওয়ার্কশপে এক্সপার্টদের সাথে বসে হয় অভিজ্ঞতা বিনিময় , হয় দর্শিত বিষয়াদি সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা, ফলে যাত্রার সময়টাও অলস কাটেনা , জানা যায় অনেক না জানা বিষয় ও ঘটনা , জানা যায় উত্তর মেরু জয়ের ইতিহাস, জানা যায় জীব বৈচিত্র সে সাথে উত্তর মেরুতে জমে থাকা বরফ গলে যাওয়ার অসনি সংকেতেরও কিছু কথপোকথন । আলোচনায় উঠে আসে যে হারে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের বরফ গলছে তাতে অচিরেই কিছু পাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসবে ধরার বুকে । এ অভিযাত্রায় পরিবেশবাদী লোকজনেরই আধিক্য থাকায় এ বিষয়ে বিশ্ব জনমত গঠনে সহায়ক হবে ।

এছাড়া এ বিলাস বহুল জাহাজের উপভোগ্য আয়োজন যথা কনসার্ট , খেলাধুলা, জিম, ভলিবল কোর্টে খেলা , গরম জলে সৃইমিং পুলে স্নান , খোলা ডেকে বসে উপরে সিগাল আর নীচে চারিদিকে তিমি মাছের লেজের ঝাপটায় ঝড়নার মত জল ছিটানোর অপরূপ দৃশ্য অবলোকন । এমত রকম বিবিধ আনন্দ উপভোগ সমাপনান্তে একসময় জাহাজ এসে ভিড়ে "মুরমানস্ক" পোর্টে । জাহাজ হতে হাসিমুখে হয় অবতরণ এন্ড দেন ফ্লাইট টু মস্কো । মস্কোতে এক রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা ভ্রমন প্যকেজেই অন্তরভুক্ত ।

ছবি-৪৭ : "মুরমানস্ক" পোর্ট সিটির কেন্দ্রের মনোরম দৃশ্য



ঘরে ফিরার তারা না থাকলে নীজ ব্যবস্থায় মস্কোতে থেকে যাওয়া যায় আরো কটা দিন । তবে এ বিরম্বনায় না গিয়ে উত্তরের যাত্রার তাজা স্মৃতি ও প্রিয়জনদের জন্য সংগৃহীত শুভেনির নিয়ে শীঘ্র করে ঘরে ফিরাতেই মনে হয় অধিক আনন্দ ।

উত্তর মেরু দেখার পরে এদেশবাসীর যে কারোরই মনে হতে পারে দেশের উত্তর প্রান্তের তেতুলিয়ার মহানন্দা নদী যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে , সে ডাকে সারা দিয়ে শীত কালে মহানন্দা নদীর প্রায় বরফের মত শীতল হাটু জলে নেমে নাইতে গেলে কত আনন্দই না মনে ধরে । মহানন্দার পানিতে নেমে মাঘ মাসের শীতের কাপনের কাছে সুমেরুর শীততো নস্যি। মহানন্দার ঠান্ডা পানি সাথে উত্তরের হিমেল বাতাসের শীতে দাতে দাতে লাগে কামড় , ঠোট ফেটে হয় চৌচীর । তার পরেও খালি গায়ে নামা যায় নদীর শীতল জলে নাইতে । মেরু ভাল্লুক না থাকলেও আছে সাদা -কাল রয়েল বেঙ্গল ছাগল , দুধ, চামড়া আর নীজের মাংসে যারা আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে । আমাদের দেশের উত্তরের যাত্রাও অতি বৈচিত্রময় বিবিধ প্রকারে, ধন্য মানি জন্মে ছিলাম সুজলা সুফলা চিরসবুজ এই বাংলাদেশে ।

ছবি-৪৮ : বাংলাদেশের উত্তর প্রান্তের তেতুলিয়ার মহানন্দা নদীর বরফসম পানি ও প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য ।




ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ।

ছবি সুত্র : গুগল অন্তরজাল

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:১৩
৭৭টি মন্তব্য ৭৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×