somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউজিল্যান্ডের হয়াংগানুই নদীর জীবন্ত মানুষের সমান আইনগত অধিকার প্রাপ্তি : বাংলাদেশ প্রসঙ্গসহ একটি সচিত্র বিবরণ

১৯ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নিউজিল্যান্ডের এক নদীকে বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো মানুষের সমান আইনগত অধিকার দেয়া হচ্ছে।
গত ১৫ ই মার্চ ২০১৭ তারিখে নিউজিল্যান্ডের সংসদে একটি বিল পাশ করা হয়েছে যেখানে হয়াংগানুই (Whanganui ) নদীকে জীবিত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। নদীর এই ঐতিহাসিক অর্জনটি পৃথিবীব্যপী সকল সংবাদ মাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচার হয়েছে ।

নিউজিল্যান্ডের প্রধান জাতিসত্তা মাওরি গোত্র ( Maori Tribe ) হয়াংগানুই নদীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে দেখে থাকেন। মাওরিরা এই অধিকারটুকুর জন্য গত ১৬০ বছর ধরে লড়াই করেছে।

নিউজিল্যান্ড সেটেলমেন্ট এক্ট ১৮৬৩ অনুযায়ী ১৮৬৫ সনে হয়াংগানুই নদীর দুই তীরবর্তী তারানকি পাহাড় এলাকার মাওরি ট্রাইবসের ৩.০০ লক্ষ একর জমি নিউজিল্যান্ড সরকার বাজেয়াপ্ত করে । মাওরিদের নিকট হতে কেড়ে নেওয়া এই জমি ইউরোপিয়ান মিলিটারী সেটেলারদের কাছে বরাদ্ধ প্রদান করা হয়। সেই থেকে নদী ও জমি নিয়ে মাওরিদের সাথে নিউজিল্যান্ড সরকারের আইনি বিরোধ । সে সাথে যুক্ত হয় নদী হতে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য মাত্রাতিরিক্ত পানির ব্যাহার, নদী তীরে নগরায়নের ফলে নদী দুষনের কর্মকান্ড সমুহ । মাওরিদের কান্না আর নদীর কান্না মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় ।



এই আইনটি পাশের ফলে হয়াংগানুই জনগুষ্ঠি ক্ষতিপুরণ হিসাবে পাবে ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড আর নদীটি তার নীজের সুরক্ষার জন্য পাবে ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড ।

এখন এই নদীর স্বার্থ দেখার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে দু'জন মানুষের ওপর। এর জন হবেন ক্রাউন প্রতিনিধি ও অন্য একজন হবেন মাওরী নৃতাত্বিক জাতিগুষ্ঠির প্রতিনিধি ।

নিউজিল্যান্ডের কেবিনেট মিনিষ্টার ক্রিস্টফার ফিনলেসন বলছেন, মাওরিরা এই অধিকারটুকুর জন্য গত ১৬০ বছর ধরে লড়াই করেছে। লড়াইএর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই পোষ্টের শেষ অংশে দেয়া হয়েছে ।



নদীটি নিউজিল্যান্ডের সেন্ট্রাল আইল্যান্ডে টংকারিউ পাহাড় অধিত্যকা হতে জন্ম নিয়ে ২৯০ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে তাসমান সাগরে পতিত হয়েছে । নদীটি নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী ।



আইনটি পাশের পর নিউজিল্যান্ডের মন্ত্রী ক্রিস্টফার বলেন একটা প্রাকৃতিক সম্পদকে মানুষের আইনগত অধিকার দেয়ার ঘটনা অনেকের কাছে বিস্ময়কর বলে মনে হতে পারে।

সংসদের এই স্বীকৃতির ফলে নিউজিল্যান্ডের আদালতে এখন থেকে হয়াংগানুই নদীর পক্ষে কৌঁসুলিরা লড়াই করতে পারবেন।
সংসদে বিলটি পাশ হওয়ার খবরে মাওরি সম্প্রদায়ের লোকেরা আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তারা খুশিতে নাচগান করতে থকেন।



মাওরিদের প্রতিনিধিত্বকারী এমপি এড্রিয়ান রুরাহে বলছেন, নদীই যাদের জীবন, নদীর ওপর যারা নির্ভরশীল, সার্বিকভাবে তাদের জন্য নদীর অস্তিত্ব খুবই জরুরি। তিনি বলেন এই নদীর কল্যাণের সঙ্গে মানুষের কল্যাণ সরাসরিভাবে জড়িত। তাই এর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড পত্রিকা খবর দিচ্ছে, সংসদের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি এক আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটলো।
এই নদীর জন্ম নিয়ে মাওরি জাতিসত্তার কাছে চালু আছে অনেক মিথ । মাওরী গল্প দাদুর ( নীচের ছবি) কাছ হতে শুনা কিংবদন্তির এই কাহিনীটির উপর ভিত্তি করে নিইজিলান্ডে ১৯৫২ সনে একটি ডকুমেন্টারী তৈরী হয়েছে , নিউজিলান্ড অর্কাইভ হতে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এর কিছু সচিত্র বিবরণ নীচে দেয়া হলো ।



গল্প দাদুর কথা অনুয়ায়ী হয়াংগানুই নদীর জন্ম বৃন্তান্ত নিয়ে যে সমস্ত মিথ রয়েছে তার সবগুলিই নিউজিল্যান্ডের সেন্ট্রাল উত্তর আইল্যান্ডের পর্বতমালাকে নিয়ে আবর্তিত । এর একটি মিথ অনুযায়ী সেন্ট্রাল উত্তর আআইল্যান্ড এলাকায় ‘রুফেলো’ নামে একটি আগ্নেয় পর্বত ( নীচের চিত্র ) একাকিত্ব অনুভব করতে ছিল ।



সে সময় আকাশ- পিতা ‘রাগিনিউ’ রুফেলো পর্বতের পাদমুলে দু ফুটা চোখের জল ফেলে দেন , যার এক ফুটা জল হতে হয়াংগানু নদীর জন্ম হয় । কিন্তু তারপরেও রুফেলুসের একাকিত্ব থেকেই যায় । ফলে তাকে সংগ দেয়ার জন্য আকাশ- পিতা নীচের ছবির মত আরো ৪টি পর্বতকে সেখানে পাঠালেন । এই চারটি পর্বত হলো টংগারিউ ( তার কাজ ছিল আকাশ পিতার দেয়া চোখের জলকে পাহারা দেয়া ) নাগাওরুহু , তারানকি এবং পিহাংগা ( পর্বত কুমারী ) ।



পিহাংগা পর্বতটি ছিল টংগারিউর প্রতিশ্রুত বধু । কিন্তু তারানকি তার প্রেমে মঝে এবং তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যেতে চায় । এতে টরাংরিউই খুবই ক্ষিপ্ত হয় । তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায় । টংগারিউর বজ্রহুংকারে পর্বতচুড়ার উপরে নীচের ছবিরমত বিদ্যুত চমকাতে থাকে ।



ক্রুদ্ধ টংকারিউ তার ভিতর হতে অগ্নুতপাতের মত গলিত লাভা উদ্ঘিরণ করে তা তারানকার প্রতি ধাবিত করে ।



রাগাংন্বিত পর্বত টংগারিউর ছুড়ে দেয়া গলিত লাভার কাছে তারানকা পরাভুত হয় ।



টংগারিউ যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং তারানকির এক পাশে বড় ফাটলের সৃস্টি হয় ফলে তারানকি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ।
তারানকি রাতের আঁধারে পশ্চিমের দিকে চলে যায় , যখন সুর্য উঠে তখন তারানকি তার বর্তমান অবস্থানেই থেমে গিয়ে স্থিত হয়ে যায় ।



স্থিত হওয়ার পরে তারানকি তার হারানো প্রেমিকা পিহাংগার জন্য খুব কাঁদতেছিল । এ সময় সৃর্যের কিরনের সাথে সে তার প্রমিকা পিহাংগাকে রেইন ক্লাউডের মধ্যে তার সাথে দেখতে পায় ।



এতে টাংগারিউ ক্ষিপ্ত হয়ে লাভা উদ্ঘিরণ করে তাকে আর ফিরে না আসার জন্য প্রকান্ড হুমকি দেয়



পরাভুত তারানাকা তার চলে যাওার পথে নীচের ছবির মত একটি গিরিপথের চিহ্ন রেখে যায়



দীর্ধদিন পর টংগারিউর ক্রোধের উপসম হলে সে তার এককালের সঙ্গী পর্বত তারানকিকে শিতল করার জন্য মনন্থির করে । তাই সে তার হেফাজতে থাকা আকাশ- পিতা প্রদত্ত দো ফোটা চোখের জল হতে কিছু জল দানের ব্যবস্থা করে ।



টংগারিউ তার তত্বাবধানে জমিয়ে রাখা কিছু জলের ধারা নির্ঝরের মত নীচের দিকে তারানকির রেখে যাওয়া গিরিপথের দিকে প্রবাহিত করে ।



ক্রমে ক্রমে হাজার হাজার নির্ঝর হতে ঝর্ণাধারার সৃস্টি হয়ে তা নীচে জলপ্রপাতের মত গড়িয়ে পড়ে ঘ



এখান হতেই জন্ম নেয় নীচের ছবির মত জলপুর্ণ স্রোতস্বিনী একটি নদীর ঘ



নদীটির নামকরণ নিয়েও রয়েছে একটি চমকপ্রদ কিংবদন্তি । এক আদিবসী জাতিগুষ্ঠির সর্দার ‘’হুয়াং’’ সাগরপারে তার পলাতক স্রীকে খুঁজার জন্য উপতক্যা বরাবর পশ্চিমের দিকে চলতে থাকে । কিছুদুর যাওয়ার পরে তার পথের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় নীচের ছবির মত বিশালাকার এক খরস্রোতা নদী যা পশ্চিমের দিকে প্রবাহমান । এই নদী পারি দেয়ার জন্য তার কাছে সর্বোত্তম পন্থা বলে মনে হল Too wide to swim, too deep to wade, I will wait for the tide to turn" । এই চিন্তা হতে সে নদীটির নাম দেয় ‘হয়াংগানুই’ যার আক্ষরিক অর্থ হল – বড় অপেক্ষা (‘the big wait’ )।



এই নবসৃস্ট হয়াংগাইয়ুন নদীতে নীচের ছবির মত ডিঙ্গি ভাসিয়ে মাওরো উপজাতির লোকজন করে বিচরণ ও জীবিকার সন্ধান।



১৮৯০ সন হতে এই নদীতে স্টীম বোটে শুরু হয় পর্যটন ।



নদীতে পর্যটন শুরু হওয়ার ফলে এর গতানুগতিক ব্যবহার বিশেষ করে ইল ( গুতুম মাছ) শিকার হয় হুমকির সন্মুখীন । ১৯২১ সনে তোলা ফিসিং নেট ও ইল পটের ছবি ।



হয়াংগানুই জনগুষ্ঠির মানুয়েষরা মাছ ধরায় ছিল দারুন পটু এবং ইল মাছ শিকাড়ের জন্য ট্রেপিং ডিভাইস তৈরীতেও তারা ছিল সুদক্ষ । নিন্মের চিত্রটি ১৮৯০ সনের তোলা একটি ছবি



সারি সারি পাহাড়ের মাঝ দিয়ে উপত্যকা বেয়ে চলা এ নদীর দুই তীরে গড়ে উঠে দৃষ্টি নন্দন সবুজের সমারোহ । তবে ইউরোপিয় সেটেলমেন্টের সময় থেকেই শুরু হয়ে যায় আদিবাসি ও ইউরোপিয় সেটেলার ডিসপুট ।



নদীর তীরে গড়ে উঠে গবাদিপশুর বিচরণের জন্য মনোরম চারণভুমিম , বিচরণ করে তাতে মেষের পাল যা হয়াংগায়ুন নদী অববাহিকার জনগুষ্ঠির জীবনাচারের অন্যতম প্রধান উপাদান ।



পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নদীর শান্ত অংশে ‘কেনোপি’তে চলে ইউরোপিয়ান সেটেলারদের বিবিধ প্রকারের প্রমোদ ভ্রমন



নদী তীরে হয়াংগায়ুন জাতিগুষ্ঠির জমি দখল করে নিয়ে বিশাল এলাকা জুরে গড়ে তোলা হয় মনোরম গার্ডেন , এখান হতেই মুলত নদী ও জমি নিয়ে মাওরোদের সাথে মুল বিরোধের শুরু ।



হয়াংগায়ুন নদীর চলারমথের পথের প্রায় মাঝামাঝি অব স্থানে Moutoa Gardens নামে প্রজেক্টের আওতায় নদী তীরবর্তী মনোরম স্থানগুলির জমি স্থানীয়দেরকে বঞ্চিত করে ইউরোপিয় সেটেলারদের নিকট বরাদ্ধ দেয়া হয় ।

মাওরুদের স্বার্থের প্রতি হুমকীর মুখে পতিত এই নদীর অধিকারের জন্য আন্দোলন দানা বেধে উঠে । নদীর অধিকার আদায়ের জন্য ১৯ শতকের এই মাওরু প্রতিবাদ নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে দীর্ঘতম একটি আইনী লড়াই হিসাবে পর্যবেশিত হয় । ১৯৩০ সনে কোর্টে পিটিশন দাখিলের মধ্যে শুরু করে দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে ১৯৯০ সনে এর ট্রাইবুনাল হিয়ারিং হয় , তার পরে এর ট্রাইবুনাল প্রসিডিংস চলতেই থাকে । ১৯৭০ সনে এই নদী হতে বিদ্যুত প্লান্টের জন্য পানি নেয়া শুরু হলে হয়াংগানু ট্রাইবস ( ও আন্যান্য পরিবেশবাদিরা) এর বিপক্ষে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলে ।

১৯৯৩ সনে এই নদীর প্রবাহের মাঝামাঝি পথে সৃজিত Conservation hut টি প্রতিবাদি হয়াংগাইনু জনগন ১৯৯৫ সনে নীজেদের দখলে নিয়ে নেয় ।



দখল টিকিয়ে রাখার জন্য চলে প্রতিরোধ যুদ্ধ । হয়াংগানু সিটির উপকন্ঠে নির্মিত ঐতিহাসিক গার্ডেনটি (পাকাইটর) হয়াংগানু জনগন দখল করে ৭৯ দিন নীজেদের দখলে রাখে । পরে শান্তিপুর্ণভাবে এই অবরোধের অবসান ঘটে এবং সরকারের সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এর চুক্তির অন্তরনিহিত সুত্রধরে নদীর প্রতি তাদের দাবী আরো জোরদার হয় ।

পানির দখল নিয়ে নদীর উজানের এন্টি-ইউরোপিয়ান উপজাতি গুষ্ঠি এবং এর ভাটির মানুষদের (ইউরোপিয়ান সেটেলার) সাথে নীচের ছবিতে দেখানো এই ক্ষুদ্র দ্বীপের উপরে একটি যুদ্ধ হয় । মাত্র আধ ঘন্টা স্থায়ী এই যুদ্ধে উজানের ৫০ জন উপজাতি ও ভাটির ১৫ জন ইউরোপীয় নিহত হয় ।



দুই বছর পর যখন সেখানে শান্তি স্খাপিত হয় তখন সেখানে চার হাত প্রসারিত ‘রিরি করি ‘’ ( যার অর্থ হ‘ল ‘no anger’ or ‘no battle’ ) নামে একটি পোল স্থাপন করা হয় ।



এই নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখা , পানি দুষন প্রতিরোধ ও এর জমি রক্ষার জন্য হয়াংগায়ুন জনগন ১৯ শতকে আইনি প্রতিরোধ শুরু করে । এই আইনী লড়াই চলে বিংশ শতাব্দি পর্যন্ত । মাওটু গার্ডেন প্রকল্পের নামে এই নদী অববাহিকার জমি ও পানির ভিন্ন ব্যবহার ও সেটেলমেন্টের বিপক্ষে মাওরু জাতিসত্তার লোকজন তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে । ১৯৯৫ সনের ২৮ শে ফেব্রুয়ারী মাওরু উজাজাতি নেতারা সেখানকার মেয়রের সাথে কথা বলে , আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় তারা মাওটু গার্ডেন দখল করে অবরোধ কর্মসুচী পালন করে ।



১৯৯৫ সনের মার্চে আন্দোলনরত হয়াংগানু জনগন হাতে ব্যানার নিয়ে মিছিল করে রাস্তায় নামে ।



দাবী মেনে নেয়ার জন্য অবরোধকারীরা ৩০ শে মার্চ ১৯৯৫ পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দেয় । তবে কোন পুলিশি একশন না হ ওয়ায় বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী রাস্তায় নেমে সমবেত কন্ঠে গান গায় ।



আন্দোলনের প্রটেষ্ট ব্যানার



Pākaitore এই ব্যানারের বার্তা দ্বারা Bugger’ the English bulldog রা কোন রকম প্রভাবিত হয়নি বরং তারা কঠিন সতর্ক বার্তা দিয়ে নিন্মের মত পাবলিক নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় ।



ফলে ৭৯ দিন অবস্থানের পর অবরোধ প্রত্যাহার করে Niko Tangaroa এর নেতৃত্বে বিক্ষোভকারিরা হয়াংগানু ব্রিজের কাছে অবস্থান নেয় এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে । তাদের আন্দোলনের সুফল এই গত ১৫ ই মার্চ ২০১৭ সনে দেখা দেয় । নিউজিলাল্ডের পর্লামেন্টে তাদের দাবীর পক্ষে বিল পাশ হয়, নদী পায় মানুষের মত বাঁচার অধিকার ।



উল্লেখ্য নিউজিল্যান্ডের সেন্ট্রাল উত্তর আইল্যান্ডের আগ্নেয় অধিত্যকা( plateau) হতে প্রবাহিত এই নদীর ২৩০ কিলোমিটার নাব্য অংশের গতিপথে ৮০টির মত গ্রাম ও জনপদ গড়ে উঠেছে এর মধ্যে ওয়াংগানু শহড়টিও (নীচের ছবি) অন্তর্ভুক্ত ।



এই নদীর সাথে মাওরু নৃতাত্বিক জাতিসত্তার লোকজন ছাড়াও আরো কয়েকটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা যথা Raukawa and Ngāti Maniapoto, Ngāti Kahungunu এবং Ngāti Tūwharetoa জীবনও এই নদীকে ঘিরেই আবর্তিত । ২০১৩ সন পর্যন্ত এই সন্মিলিত আদিবাসি জাতিসত্তার মোট জনসংখ্যা ছিল ১৩৫০০ জন এবং হয়াংগানুই নদী অববাহিকায় বসবাসকারী এই অধিবাসিদেরকে সম্মিলিতভাবে ‘নাগাদি হাও’ নামে অভিহিত করা হয় ।

মাত্র ১৩৫০০ জন মানুষের একটি নৃতাত্বিক আদিবাসি জন গুষ্ঠি শত বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধ, কঠীন সংগ্রাম ও আইনি লড়াই এর মাধ্যমে তাদের জীবন মরণের সঙ্গী একটি নদীর জন্য জিবন্ত মানুষের মত যেভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে তা সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে একটি মহাবিস্ময় ও নদীর অধিকার আদায় ও তার জীবন রক্ষার জন্য সকলের কাছে একটি অনুকরনীয় পন্থা হয়ে থাকবে ।


বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। একসময় শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো বলে ইতিহাস কথা বলে । বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" হিসাব অনুযায়ি বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা ৪০৫টি, বলতে গেলে দেশের অর্ধেক নদীর মৃত্যু ঘটেছে । আমাদের বর্তমান নদীগুলির করুন অবষ্থাও আমরা সকলেই জানি । ফারাক্কার কারণে একসময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদী এখন বলতে গেলে ধু ধু বালুচরে পরিনগত হয়েছে , ঘোড়ার গাড়ীতে শুস্ক মৌসুমে পদ্মা পাড়ি দেয়া যায় অনায়াসে।



এক তরফা ভাবে দীর্ঘদিন ধরে নদীর উজানে ভারতীয় অংশে পানি উত্তোলনের ফলে একসময়ের খরস্রোতা তিস্তা শুকিয়ে শুস্ক মৌসুমে এখন একফালি ফিতার আকার ধারন করেছে ।



ঢাকার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত বুড়াগঙ্গা নদীর পানি দুষন ও এর তীরের জমির অবৈধ দখল চলছে দুর্বার গতিতে , বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষের জন্য ডেকে আনছে মহা বিপর্যয় ।



ঢাকার পশ্চিম প্রান্তের ধলেস্বরী ও পুর্ব প্রান্তের শীতলক্ষা নদীর অবস্থাও করুন থেকে করুনতর হচ্ছে বিবিধ প্রকারে। এর প্রধান উৎস ব্রম্মপুত্র নদ এখন ধু ধু বালুচরে পরিনত হয়েছে । উত্তরের তুরাগতো এখন বলতে গেলে নর্দমায় পরিনত । এককালের পাল তোলা নৌকা এখন যাদুঘরে যাওয়ার দিন গুনছে।



বাংলাদেশে নদী দুষন ও অবৈধ দখল বন্ধ করার জন্য নামকা ওয়াস্তে কিছু কিছু ব্যবস্থা যথা বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন ( নীচের ছবি) চললেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের অভাবে নদী দুষন ,নদী ভাঙ্গন ও প্রয়োজনীয় ড্রেজিংএর অভাবে এর তলদেশ ভরাট হয়ে বর্ষাকালে বন্যার ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে । সে সাথে যুক্ত হচ্ছে বিদ্যুত কেন্দ্রের মত পরিবেশ ও নদীর জল দুষনকারী কলকারখানা , ট্যানারী ও জলযানের বজ্র । পশুর নদীর পানি দুষনের মত কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ওয়ার্লড হেরিটেজ সুন্দর বনও এখন যায় যায় করছে ।



নদী রক্ষার জন্য ২০০৯ সনের একটি রিট পিটিশনের উপরে হাই কোর্টের রায় বস্তবায়ন করার জন্য মার্চ ২০১৭ তারিখে একটি মানব বন্ধনের মত ( নীচের চিত্র ) কিছু বিচ্ছিন্ন ও অসংগঠিত পরিবেশ বাদী আন্দোলন হলেও কোন সুফল আসছেনা । নদী ও মানুষ এক না হলে বাংলাদেশের জন্য সমুহ বিপদ ।

বাঁধ , দখল, পানিদুষন, উজান কিংবা ভাটিতে অপরিকল্পিত ও অপরিনামদর্শী উন্নয়ন, এই হলো আমাদের দেশের নদীর জীবন ।



নদী বিপন্ন হলে মানুষের জীবন কি করে স্বচ্ছন্দ হয়? হয় না বলেই দেশের কোটি কোটি মানুষ আজ দিশেহারা। বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ এখন ভয়াবহ আশঙ্কায় ঘেরা। যারা নদীর লাশ খেয়ে ফুলে ফেঁপে উঠে তাদের ওপর ভরসা করার উপায় নেই। অথচ এই নদী বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যতের অস্তিত্বের অবলম্বন। চোখের সামনে খুন হচ্ছে নদী। চোখ বন্ধ করে থাকলেই জীবন বাঁচবে না। এগুলো কেবল নদী নয়, আমাদের সবার, দেশ ও মানুষের প্রাণ। আজ এদেশের বিপন্ন নদী গুলিও বলছে আমাদেরও জীবন আছে, আমরাও বাঁচতে চাই , আমরা বাঁচলে তোমরা বাঁচবে, না হলে কারো বাঁচার উপায় নাই । নদী ও মানুষের একাত্ব হওয়ার এখনই সময় । প্রয়োজন নিউজিলান্ডের মত নদীকে জীবন্ত মানুষের মত অধিকার প্রদানের জন্য ব্যপক গনসচেতনতা, গনসম্পৃক্ততা ও প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলা ।

ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ।

তথ্য সুত্র : নিউজিল্যান্ড ফিল্ম আর্কাইভ ও উইকিপিডিয়া
ছবি সুত্র : অন্তরজাল


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫
৬৪টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×