somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরশ পাথর প্রাপ্তি: পর্ব-২ মুক্তিযুদ্ধের প্রাসঙ্গিক কিছু স্মৃতিচারণসহ বিলুপ্তপ্রায় দেশী প্রজাতির ধান, মরনের পথে নদ নদী, আর বিপন্ন শুশুক তথা গাঙ্গেয় ডলফিনের কান্না প্রসঙ্গ

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্বটি যারা পাঠ করেননি তাঁদের বুজার সুবিধার জন্য পরশ পাথর প্রাপ্তি :পর্ব-১ লিংক সহ ঘটনার শুরুটা সংক্ষেপ তুলে দেয়া হল ।

জীবনঘাতি করুনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের কেবিনে অসহায়ের মত নাকে মুখে অক্সিজেনের মুখোষ পরে অন্তিমের পানে ধাবিত হওয়ার সময় মনে হত, যা হয় তা হবে, হায়াত না থাকলে মরেইতো যাব, তবে ....... এ যাত্রায় যদি বেচে যাই তাহলে পরশ পাথর প্রাপ্তির কাহিনীটা জীবনের শেষ ট্রেনটা ধরার আগে সকলের কাছে বলেই যাব । সে ভাবনা হতেই লেখাটির অবতারনা।

১ম পর্বে বলা হয়েছে পরশ পাথর প্রাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু সেই বাল্যকালে স্কুলের সৃজনী পরীক্ষার জন্য ছোট একটি মাটির ঘর বানাতে গিয়ে। প্রথম পর্বে কাহিনীটি বলতে গিয়ে পুরাটাই কেটে যায় লেখাটিতে প্রসঙ্গক্রমে চলে আসা দেশের বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যমন্ডিত মাটির ঘরকে পুনরুজ্জিবিত করার কথামালায় ।এর মাঝে একটি পোষ্ট দিতে হয়েছিল মাটির ঘর প্রসঙ্গে এ ব্লগের অনেক গুণী ব্লগারের মুল্যবান কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হরাইজনটাল বনাম ভার্টিকেল গৃহনির্মান প্রসঙ্গ নিয়ে । এখন পরশ পাথর প্রাপ্তি ১ম পর্বের সুচনা বক্তব্যের রেশ ধরে ২য় পর্বের কাহিনী বলা হলো শুরু।


স্কুলের সৃজনী পরীক্ষার জন্য সুন্দর মাটির ঘর তৈরী করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতে পারব বলে বদ্দমুল ধারনা হল । তবে সমস্যা দেখা দিল মাটির ঘর তৈরী উপযোগী মুল উপাদান কাদামাটি তৈরী করতে প্রায় ১৫দিনের মত সময় লেগে যাবে। এদিকে স্কুলের সৃজনী পরিক্ষার জন্য হাতে সময় আছে মাত্র ৭ দিন। তাই অল্প সময়ের মধ্যে বিকল্প ভাবে কি করে উপযুক্ত কাদামাটি পাওয়া যায় সে ভাবনায় পেয়ে বসে। রাতে বিছানায় শুয়ে ভাবতে গিয়ে মনে পরে যায় আমাদের নদীর তীরে পানি আর মাটি যেখানে মিলেছে সেখানে সহজেই উপযুক্ত মানের কাদামাটি পাওয়া যাবে। তাই ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠে সকাল সকাল সেখান থেকে কাদামাটি সংগ্রহ করার ভাবনা নিয়ে ঘুমাতে গেলাম ।

[এখানে বলে রাখি রাত জেগে ছোটকালের কাদামাটি সংগ্রহের কথা জীবনের এ লগ্নে যখন লিখছি তখন নীজের অজান্তেই ঘটনা সংস্লিষ্ট স্থান কালের কিছু প্রাসঙ্গিক ইতিহাস, গৌরবগাথা ও বর্তমান দুর্দশার দু চারটি তথ্য চিত্র লেখাটিতে অনুপ্রবেশ করছে। সে সমস্ত অনুপ্রবেশকৃত তথ্য চিত্র ও কাহিনীগুলি যথাস্থানে বলার কারণে মুল কাহিনীতে মাঝে মাঝে কিছুটা যতি টেনে বিরোক্তির উদ্রেক ঘটানোর জন্য দু:খিত ]

ভোরে ঘুম থেকে জেগে নীমের ডালের মাজন দিয়ে দাঁত মেজে অজু করে দাদীর কাছে বসে সকালের কোরান পাঠের আসর শেষ করে নাস্তা পানি খেয়ে সকলের অগোচরে কোদাল একটি কাধে নিয়ে নদীর ঘাটে যাওয়ার জন্য ঘর হতে বেরিয়ে যাই । উল্লেখ্য আমাদের বাড়ীর অবস্থান নদীর তীর ঘেষা ছোট একটি টিলার উপরে, যা নদী লেভেল হতে প্রায় শখানেক ফুট উপরে। বাড়ী হতে নদীর ঘাট পর্যন্ত ৭/৮ মিনিটের হাটা পথে বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে । প্রথম দুটি ধাপে পারিবারিক ফল ফলাদির বাগান ও শেষ দুটি ধাপে ফসলের মাঠ, মাঠ পেরিয়ে নদী । প্রথম ধাপের শেষ ধাপে রয়েছে খেজুর ,শুপারী আর কলা গাছের বাগান । এখানেই ছিল বাল্যকালের সাথীদের সাথে খেলার জন্য ছোট একটি মাঠ । দাড়িয়াবান্দা, গোল্লা ছুট,হা ডু ডু ,কানা মাছি, ছাল কুত কুত, কাঁচা জাম্বুরা (বাতাবি লেবু) দিয়ে ফুটবল, ডাংগুলি প্রভৃতি কত জাতের খেলাই যে খেলতাম সেখানে তা ভাবলে মনে এখনো পুলক জাগে ।
ডাংগুলি যে খেলাটি এখন আর দেখা যায়না কোথাও


কাহিনীটি যেহেতু জীবনের এই ক্ষনে বসে লেখা সেহেতু এটা লিখতে গিয়ে স্মৃতির গহীনে থাকা আরো কিছু কথা মনে পড়ে যায় ।বাড়ী হতে নদীর ঘাটে যাওয়ার প্রথম দুই ধাপে ছিল দাদার হাতে গড়া বেশ বড় আম কাঠালের বাগান। মনে পরে দাদার মাথায় ছাতি মেলে ধরে দুজনে মিলে বাগানের পাশে ফসলের খেতের আলের পাশে আমের চাড়া লাগানোর কথা, দাদা বলতেন ছাতা মাথায় দিয়ে আম গাছ লাগালে সেটা নাকি বড় হয়ে ছাতার মত চারিদিকে ডাল পালা মেলে বড় হবে । এখন দেখা যায় দাদার কথাই ঠিক, প্রায় শতবর্ষী গাছগুলি ছাতার মত ডালা পালা মেলে বড় হয়েছে, ঘন পত্র পল্লবে ভরা ফলবান গাছের দিকে তাকালে সে কি প্রশান্তি।


স্মৃতিকথা সম্বলিত লেখাটি লিখার সময় এই বাগানটিকে ঘিরে থাকা ১৯৭১ সনে সংগঠিত দেশের মুক্তি যুদ্ধের সেই ভয়াল ও ঘটনাবহুল দিনগুলির কিছু স্মৃতিকথা নীজের অজান্তেই মানসপটে ভেসে উঠে, বিশেষ করে ১৯৭১ সনের এপ্রিল মাসের প্রথম দিককার কথা । সেসময় ভাওয়াল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস হতে একজন সুবেদার মেজরের নেতৃত্বে বের হয়ে আসা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একদল সাহসি সৈনিক ময়মনসিংহের উদ্দেশে (ময়মনসিংহ তখনো ছিল পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত শহর) যাত্রা করেন ।

মুক্তি যুদ্ধে যোগদানের জন্য ঈস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এই বিদ্রোহী সেনাদল পাকবাহিনীর নজরদারী এড়িয়ে ভাওয়াল শালবনের ভিতর দিয়ে আকাবাঁকা বনপথ ধরে পায়ে হেটে অনেকটা পথ পেড়িয়ে আমাদের গ্রামে এসে উপনিত হন। পথ শ্রান্ত সৈনিক দল আমাদের বাড়ী সংলগ্ন আম বাগানের ছায়া তলে যাত্রা বিরতি করেন । গ্রামবাসীরা বিপুল আনন্দে তাঁদের স্বাগত জানাই । দেশের মুক্তি যুদ্ধাদের প্রথম দিককার একটি প্রশিক্ষিত সিপাহী দলের নিরাপদ যাত্রা বিরতির নিমিত্ত ক্যাম্প স্থাপনের জন্য এ স্থানটি তাদের খুবই পছন্দ হয়ে যায়, কারণ আম বাগানের ছায়া ঘেরা স্থানটির একদিক দিয়ে বয়ে গেছে নদী, অন্যদিকে রয়েছে রাইফেল ও হালকা মেশিনগানের রেঞ্জের ভিতরে থাকা রেল লাইন। আম বাগানের ছায়াতলে বসে হালকা জলপানির আপ্যায়নের পরে তাঁরা এলাকার গন্যমান্য লোকজন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সেখানে সাময়িক ক্যাম্প গাড়লেন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এমনকি গৃহবধুরাও তাদের আপ্যায়নের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। গাজীপুর কেন্টনমেন্টের এই দেশপ্রেমী সাহসী সৈনিকদের কথা ও স্থানীয় মানুষের সহযোগীতার কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে যায় ভাউয়াল এলাকার গাজীর গীত এর কথায় । উল্লেখ্য শত শত বছর ধরে গাজীপুর জেলার অন্যতম বিখ্যাত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো গাজীর গীত। মানুষের মুখে মুখে ঘুরে গাজীর গীত এর কথা মালা। গাজী কালুর বিরত্বের কথা জঙ্গলাকীর্ণ ভাউয়াল এলাকার সকলের কাছে ছিল পরিচিত । এ পোষ্টের জন্য প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় গাজীর গীত এর বিখ্যাত কটি লাইন তুলে দিলাম নীচে ।
গাজী কালু দু্ই ভাই আড়াঙ্গি উড়াইল
জংলায় যত বাঘ দৌঁড়ায়ে পালাইলো
একি বাঘ, নেকি বাঘ, চোখ পাকাইয়া চায়
সুন্দর বন্য বাঘটা বৈরাগী লইয়া যায়
গোয়ালার মায় কয় কোমর ভাঙ্গা বুড়া
বাঘ মারিতে লইয়া যাও দোয়ার বান্দার লরা।

ভাওয়াল বনে একসময় ছিল বাঘ, চিতাবাঘ, কালোচিতা বাঘ , হাতি, মেছোবাঘ, ময়ূরসহ নানা জীব বৈচিত্রের বাস । শালবনের বৈচিত্রময় রুপমাধুরী এখন আর নেই ।এর ভিতরে বাহিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা, এর বুক চিরে বয়ে গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইন, বনের পরিবেশ বিপন্নকারী ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে। যন্ত্র দানবের বিকট শব্দ , কালোধোয়া আর মানুষের বিচরণ , বসতি স্থাপন ও বনদস্যুদের ধাপুটে করালগ্রাসে দেশের মধ্যভাগের এই উপকারী বনাঞ্চলকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব শধু ভাউয়াল বনের ভিতরে ছোট্ট একটি ভাউয়াল উদ্যানের মধ্যে সিমীত করে এলাকার পুরা বনাঞ্চলটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার মহা কর্মযজ্ঞ রোধ করা এখন সময়ের দাবী। সকলের সামান্য একটু সচেতনতায় সুন্দর এই বনটিকে রক্ষা করা যায় ধংসের হাত হতে ।


আমাদের আমবাগানে ক্যম্পের মুক্তিযুদ্ধাদের বিরত্বের কথামালার ফাকে মনে পড়ে যায় ১৯৭১ সালে এই এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহনের কথা । দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির সেই বীর নেতৃবৃন্দের প্রতি জানাই শ্রদ্ধাবনত কৃতজ্ঞতা ।


পরম শ্রদ্ধাভরে শ্মরণ করি ঐ আম্রবাগানে সৃষ্ট ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য শপথ গ্রহণের স্থানে নির্মিত মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স আর তার আঙ্গিনায় একটি বড় মানচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা মুক্তিযুদ্ধের ১১ টি সেক্টরের বীর মুক্তি যোদ্ধাদের বিরত্বের কথা ।তাদের বিরত্ব গাথা এমনি করেই ভাস্বর হয় থাকুক বাংলার প্রকৃতির বুকে ।


স্মরণকরি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স এর বাইরের অংশে ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণ এর কথা।পুরা মুক্তিযুদ্ধ কালেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত বজ্রকন্ঠ নামে প্রচারিত অনুষ্ঠানে প্রতিদিন শুনতাম সেই ভাষনের অংশ এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধিনতার সংগ্রাম “ভাইয়েরা আমার প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, যার কাছে যাই আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর” তার এই বর্জকন্ঠ আমাদের মাঝে উন্মাদনা জাগাত।


আরো স্মরণকরি সেখানে থাকা ২৫শে মার্চ বিভিষিকাময় কাল রাতে পাকিদের হত্যাযজ্ঞ শুরুর পরে রাজধানি ঢাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে গ্রামমুখী মানুষের কষ্টকর পথচলার কথা ।
পচিশে মার্চের পরে দেখেছি শত শত আবাল বৃদ্ধ জনতা কত কষ্ট করে পুটলা পুটলী নিয়ে রাজধানী ঢাকা শহর ছেড়ে এই বনপথ ধরে রেল লাইনের পাশ দিয়ে কংকটময় লতাপাতা ও নুরি পাথর মারিয়ে পথে হেটে চলেছে আবর্ণনীয় দু:খ দুর্দশাকে বয়ে নিয়ে ।তাদের পথচলার দু:খ দুর্দশার কথা এখনো মর্মে মর্মে উপলব্দি করি । পথমধ্যে একজন প্রসুতি মায়ের সন্তান প্রসব করার করুন কাহিনী সহ ঐসমস্ত মানুষদের কষ্টকর পথ চলার কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই আর এই জনপদে। কালের আবর্তে সেসকল ঘটনাবহুল কাহিনী ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতলে ।স্মরন করি তাদের অবর্ণনীয় দু:খ দুর্দশার কথা ।


তাই এই পর্বের লেখার সময় প্রসঙ্গক্রমে বৈদ্যনাথ তলার আমবাগানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্মৃতি কমপ্লেক্সটির তথ্যচিত্র মনের গহীনে উদিত হওয়ার সময় মনে হ’ল আমাদের এই আমবাগানে নাইবা নির্মিত হ’ল কোন স্মৃতি স্তম্ভ, তবে আমি কালির আঁচরে সামুর পাতায় রেখে যাইনা কেন দেশের মুক্তি যুদ্ধের প্রথম দিককার মুক্তিযোদ্ধাদের ঘটনাবহুল কিছু স্মৃতি চিহ্ন । কিন্তু লিখে দেখতে পেলাম কাহিনী ও ঘটনা প্রবাহ এতই বড় হয়ে যাচ্ছে যে তা এখানে তুলে ধরা হলে পোষ্টের আকৃতি হবে বিশালাকার একটি পুস্তকের মত। তাই আমবাগানকে ঘিরে থাকা মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ নিয়ে পাক বাহিনীর সদর দপ্তরের নাকের ডগায় বসে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দু:সাহসী বিদ্রোহী সৈনিকদের কিছু সচিত্র ঘটনামুলক প্রতিরোধ যুদ্ধের কথামালা পরের পর্বে লেখার জন্য তুলে রাখা হলো। তবে এ মহুর্তে এখানে দু চারটি কথা বলার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না কিছুতেই।

এখানে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থাপন করায় আমাদের গ্রামের যুবকেরা বেজায় খুশী। ক্যাম্পে সৈনিকগন একটু গোসগাছ হওয়ার পরের দিনেই সুবেদার মেজর শুরু করলেন মুক্তি যুদ্ধে যোগদানে আগ্রহী যুবকদের জন্য প্রাথমিক প্রশিক্ষনের কাজ, তাঁকে সহায়তা করলেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা ও সমাজের অন্যান্য সকল গুণী লোকজন। আমরা আগ্রহী যুবকেরা মাঠে জড়ো হয়ে হাফ পেন্ট পরে গেঞ্জি গায়ে সুবেদারের নেতৃত্বে শুরু করলাম লেফ্ট রাইট, এবাউট টার্ন, কুইক মার্চ, এবং হামাগুরী দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে চলার প্রশিক্ষন। গাজিপুর কিংবা ঢাকা কেন্টনমেন্ট হতে পাক পাকবাহিনী এই এসে পড়ল বলে গুজবের ডালপালা ছড়িয়ে পড়ার কারণে এলাকার হাট বাজার বলতে গেলে ছিল বন্ধ। তবে হাট বাজার বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পের সৈনিকদের জন্য খাদ্য যোগানে কোন সমস্যা হয়নি । উল্লেখ্য সত্তর সনের শেষ দিকে আমাদের এলাকায় পাওয়ার পাম্পের মাধ্যমে সেচ যন্ত্রের প্রচলন শুরু হওয়ার ফলে প্রথমবারের মত উচ্চ ফলনশীল ইরি ধানের চাষাবাদ শুরু হয়। International Rice Research Institute কতৃক উদ্ভাবিত হয়েছিল বলে এই ধানের নাম ছিল IRRI । মুক্তিযুদ্ধ শুরুর বছরেই নতুন ইরি ধানের আবাদ ঘরে উঠায় এলাকার অনেকের মত আমাদের গোলাঘর ভর্তী ছিল ধানে আর ধানে, দাদা আর বাবাতো বেজায় খুশী ইরি ধানের ফলন দেখে।


ইরি ধান চাষাবাদের আগে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান ঢাকার খবরে বলা হতো এটা নাকি একরে শত মন ফলন দিবে। দেশী জাতের ধান যেখানে একরে ফলন দেয় ৩০ হতে ৪০ মন সেখানে ইরি ধানের ফলন হয়েছে তার দ্বিগুণেরো বেশী । তবে মুসকিল হল এই ধানের চাল হতো খুবই মোটা এবং ভাতও হতো বেশ শক্ত। ভাত খাওয়ার সময় ভাতকে দুই অঙ্গুলের ভিতরে রেখে একটু হালকা চাপ দিলে ফুস করে ছুটে গিয়ে লেগে যেতো একসঙ্গে খেতে বসা কারো কারো চোখে মুখে কপালে, কেও হতো বিরক্ত, কেও বা দিত হেসে। ইরি ধানের চালের ভাত থেতেও ছিল বিস্বাদ। মিহি আমন ধানের চাল যথা লতা শাইল ,নাজির শাইল, ঝিংগাশাইল প্রভৃতি ধানের চালের ভাত খেয়ে অভস্থ গ্রামের বয়স্করা কাঁদত আর বলত আয়ুব খান এটা কি নামাইছে দেশে, আল্লাহ এতদিন বুজি বাঁচায়ে রাখছে এই মোটা শক্ত চাওলের ভাত খাওয়ার তরে। ইরি ধানের মোটা চালের শক্ত ভাত খাওয়া রপ্ত করতে আমাদের বেশ ক বছর লেগে যায় । স্বাধিনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা ভার্সিটির রেসিডেনসিয়াল হলে বসবাসকারি ছাত্র ছাত্রীদের হযতবা মনে আছে সেসময় হলের ডাইনিং রুমে ‘পি এল ৪৮০’ অধীনে আমিরিকান সাহায্য হিসাবে পাওয়া রেশনের মোটা চালের বেশ শক্ত ভাত পরিবেশন করা হতো ।

এখানে উল্লেখ্য ১৯৭৪ সালের দূর্ভিক্ষের অপর নাম ছিল ‘পি এল ৪৮০’ । এই পি এল ৪৮০ ( Public Law 480)যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক খাদ্য সহায়তা সম্পর্কিত একটি আইন । এটা শান্তির জন্য খাদ্য বা Food for Peace হিসাবেও বহুল পরিচিত । এই আইনের আওতায় বিশেষ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধুপ্রতিম উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশসমুহের কাছে স্বল্পমুল্যে কৃষিজাতপন্য বিক্রয় করে । মার্কিন খাদ্য সাহায্য আইন ‘পিএল ৪৮০’ অনুসারে যে দেশ কিউবার সঙ্গে বানিজ্য করছে ,সে দেশ খাদ্য সাহায্যের জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন নয় ।কিউবার নিকট পাটজাত পন্য বিত্রয় করার দায়ে ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই আইন ব্যবহার করেই বাংলাদেশের ক্রয়কৃত খাদ্য চালান বাতিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল অসংখ্য বাঙ্গালীকে।)
ঢাকা ভার্সিটির ডাইনিং হলে খাবার মেনু ছিল লম্বা ঝুলের সাথে এক টুকরা মাছ/মাংসের ছোট এক বাটি কারী, আর থাকত পাইন্না মুসুরীর ডাইলের সাথে যত পার খাও রেশনের মোটা চালের ভাত । খাওয়ার সময় সেই ভাতেও দুই আংগুলের চাপ পড়লে তা ফুস করে ছুটে গিয়ে কারো নাকে, মুখে, ড্রেসে লেগে গেলে বিশেষ করে মাস্তান টাইপের কারো গায়ে লেগে গেলে মাঝে মাঝে ঘটে যেতো মহা বিপত্তি ।

আমরা সকলেই জানি এ দেশে এক সময় কয়েক হাজার দেশি জাতের ধান আবাদ করা হতো। ১৯১১ সালে ১৮ হাজার জাতের ধানের একটি রেকর্ড আছে। ১৯৮৪ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে করা একটি জরিপে ১২ হাজার ৪৮৭ জাতের হিসাব পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০১১ সালের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে আট হাজার জাতের ধান আছে সুত্র Click This Link । বিশাল সংখ্যক ধানের জাত আমাদের কৃষকরাই উদ্ভাবন করেছেন শত শত বছর ধরে। বয়স্ক গুরুজনেরা বলাবলি করতেন এত দেশি জাতের ধান থাকতে কেন সরকার বিদেশি জাতের ধানের বীজ আনল দেশে , আর কি একটা বিশ্রি নাম দিয়েছে ইরি । অথচ আমাদের দেশি ধানের নাম কতইনা সুন্দর আর অর্থবহ । ধানের নামের বিষয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষদের কতই না নান্দনিকতা বোধ ছিল । কোনো কোনো জাতের ধানের নাম এমনই ছিল যে, নামেই তার গুণের প্রকাশ, যেমন রাধুনী পাগল । স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়, যে একবার খায় সে আবার এই ধানের চালের ভাত খাওয়ার জন্য হয় পাগল ।


নাম দিয়ে কৃষক চিনে নিত তার আকাঙ্খার ধানজাতটিকে। পরম যত্নে বুনে দিত এসব বীজ মাঠে। আবার ঠিকঠাক পরের বছর মাঠে বুনে দেবার জন্য জাতটির বীজকে আলাদা করে কৃষকগিন্নী সংরক্ষণ করত নিজস্ব পদ্ধতিতে। জাতে জাতে ধানের বীজ সঠিকভাবে সংরক্ষনে কিষানীই পালন করত মুল ভুমিকা।
দেশি জাতের ধানের নামকরণের বৈচিত্র্য নিয়ে ভাবলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। ফুলের নাম, ফলের নাম, নানা ঋতুর নাম, বস্তুর নাম, মাছের নাম, সবজির নাম , পশুর নাম , পাখির নাম ,স্থানের নাম , নদীর নামও বাদ যায়নি ধানের জাতের নামকরণে । পছন্দের ধানকে কত যে আদুরে নাম দিয়েছে আমাদের পূর্ব পুরুষরা তা ভাবলে অবাক হতে হয়। একালে এসেও ধানের কথা ঘুরে ফিরে আমাদের সাহিত্যেও এসেছে নানাভাবে, নানা প্রসঙ্গে। কবি ফররুখ আহমেদ ধানের বিচিত্র সব জাতের মহিমায় এতটাই বিমুগ্ধ ছিলেন যে, তাঁর একটি কবিতার নামই ছিল ‘ধানের কবিতা’। কবিতাটির প্রথম আট লাইন হলো:
কুমারী, কনকতারা, সূর্যমুখী, হাসিকলমী আর
আটলাই, পাশলাই ধান এ বাংলার মাঠে মাঠে।
আউষ ধানের স্বপ্নে কিষাণের তপ্ত দিন কাটে;
আমনের বন্যা আনে ফসলের সম্পূর্ণ জোয়ার।
শোকর গোজারী ক’রে তারপর দরবারে খোদার
গোলায় তোলে সে ধান-রূপসা’ল তিলক কাচারী,
বালাম, ক্ষীরাইজালি, দুধসর-মাঠের ঝিয়ারী
কৃষাণ পল্লীতে আনে পরিপূর্ণ সুখের সম্ভার।


হাজার হাজার দেশি ধানের জাত আজ বিদায় নিয়েছে কৃষকের মাঠ থেকে। এদের অনেকেই বিলুপ্ত হয়েছে চিরদিনের তরে । অনেকগুলিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে জিন ব্যাংকের অন্ধকার ঘরে । আমাদের মন থেকেও মুছে গেছে অনেক ধানের নাম। দিনে দিনে মুছে যাবে এসব বাহারি ধানের নাম। দিনাজপুরের কাটারীভোগ আআর বরিশালের বিখ্যাত বালাম তো এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।হারিয়ে যাচ্ছে সুগন্ধিকলিজিরা ধান


এ কথা ভাবতে মন কিছুতেই সায় দেয় না বটে কিন্তু বাস্তবতা তো আমাদের সে দিকেই নিয়ে যাচ্ছ। এখন বাংলাদেশের গবেষনাগার হতেই ধানের নাম দেয়া হচ্ছে নম্বর ধরে যথা বিরি-১, বিরি-২, বিরি-৩ ,বিরি-৪ ইত্যাকারে । অথচ জিন ব্যাংকে যাদের সংরক্ষণ করা হয়েছে এদের জিন আমাদের আধুনিক উচ্চ ফলনশল জাতের ধানের নামের সাথে সংযোজন করে দিয়ে আদি নামেই তাদেরকে সম্বোধন করা যেতে পারে । মাঠ থেকে হারালেও গবেষণার প্রয়োজনে দেশিজাতের ধানগুলি যেন একেবারে বিলুপ্ত না হয়ে যায় সেটিও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। দেশের স্বাধিনতা প্রাপ্তিকে সর্বদিক দিয়েই গৌরবান্বিত করতে হবে ।

লেখার মধ্যে ধানের কথা এসে যাওয়ায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে পরশ পাথর প্রাপ্তির মুল কাহিনী বলার কথায়।কি আর করা বিষয়টির গুরুত্বওতো একেবারে কম না ।
যাহোক, এবার শুরু করা যাক পুর্ব কথায়, নদীতে নেমে যাওয়ার শেষ দুই ধাপে ছিল ফসলের ক্ষেত । এই দুই ধাপ বর্ষার সময় জোয়ারের পানিতে যেত ভরে। বর্ষাকাল শেষ হলে জলের ধারা বইত শুধু মুল নদীতে । আর নদী তীরের জমিতে হতো শর্ষের চাষ । জোয়ারের সময় ক্ষেতে জমা পলিমাটি একটু শুকিয়ে যাওয়ার পরে জমিতে পরত নাঙ্গলের আচর। সে সময় উঠে আসত ছোট বড় অনেক ঢেলা ।পরশ পাথর প্রাপ্তির সাথে এই সব ঢেলার একটি গভীর সংযোগ আছে বলেই এত কথা বলা । নদীতে আমাদের ঘাট হতে মাত্র অর্ধ কিলোমিটর উজানে ছিল ত্রিমোহনা। সেখানে ভালুকার দিক হতে ক্ষিরো নদী ও ত্রীশালের দিক হতে ব্রম্মপুত্রের শাখা নদী সুতিয়া এসে একসাথে মিলিত হয়ে সুতিয়া নদী নাম ধারণ করে আরো মাইল তিনেক বয়ে বরমীর কাছে গিয়ে মিলিত হয়েছে শিতলক্ষার সাথে । সে সময় নদীটি ছিল বেশ খরস্রোতা ( বর্ষাকালে )এবং যৌবনা । নদীতে হতো জোয়ার ভাটা । জোয়ারের সময় নদীর পানি প্রায় ৩/৪ ফুট স্ফীত হয়ে ডালিমের রসের মত টলমল করত । নদীতে চলত পালতোলা নৌকা ,হাজারমনি নৌকায় পাল তুলে গুন টেনে পাট ও ভাওয়াল শালবনের কাঠ বোজাই করে পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদ ও শীতলক্ষা নদী দিয়ে ভেসে যেতো দুর দুরান্তের গ্রামে গঞ্জে।


অনেক সময় দেখতাম বাঁশের জোয়ালে গুন বেধে ঘাড়ের কাছে কাধে চেপে গুন টেনে হাজার মনি নৌকা বয়ে নেয়া হতো । সে যে কি কষ্টকর কাজ তা ভাবলেও শিহরিয়া উঠতে হয় । ছোটকালে আমাদের নদী তীর দিয়ে মাঝিদের গুন টেনে যাওয়ার কালে মাঝির কাছ হতে চেয়ে নিয়ে অল্প কিছু দুর গুন টেনে দেখেছি গুন টানার কষ্ট কাকে বলে । খালি পায়ে এবরো থেবরো উচা নিচা পথে চলার সময় পঁচা শুকনো ঝিনুকের আচরে পায়ের পাতার কত জায়গা যে কেটে যেতো তা টের পাওয়া যেতো ঘরে ফিরে।
AA13 Guntana Naoka


এই গুন টানার কিছু কষ্টকর দিক নিয়ে অনেকেই সাজিয়েছেন সুন্দর কবিতা যেমনটি দেখা যায়
সোনালি দরজার ব্লগে থাকা রিতু জাহান Click This Link এর লেখা ‘গুন টানা মাঝি’ শীর্ষক কবিতাটিতে, কৃতজ্ঞতার সহিত কবিতাটি তুলে ধরছি এখানে ।
গুণ টানা মাঝি, নৌকার দিশা দিতে টেনে গেছে তার নাও।
মাঝির ঘাড়ের ঐ যে কালসিটে কালো দাগ, আজও ইতিহাসের স্বাক্ষী।
নির্বাক যন্ত্রের মতো এগিয়ে গেছে সে,
খাড়া ঐ বিস্তৃত নদীর কিনার দিয়ে।
ঝড় আসে, বৃষ্টি আসে, মেঘ গর্জায় জোরেশোরে,
তবু খালি পায়ে তাঁর এ হাঁটা থামে না।
ভরা পূর্ণিমার চাঁদের সাথে হাঁটে সে,
নিশীথ রাতে চাঁদ বিহীন ঘোর অন্ধকারে,
নদীর পানির ছলাৎ শব্দও তাকে বলে দেয় এই পথে চলতে।
আকাশের ঐ তারার দলও পিছু নেয় তাঁর
হিসেব রাখে মাঝির শরীর থেকে খসে পড়া, হাজার ফোটা পানির
তারার দল কাৎরায় তাকে দেখে
সূর্যের ঐ তপ্ত, আগুন ঝরা রোদেও
মাইলের পর মাইল হেঁটে চলে সে
এ নৌকা ভিড়াতে হবে তরীর ঘাটে।


নদীটির একপারে ঘন পাতার জংলি গাছের সারি, অপর পারে ফসলের ক্ষেত মারিয়ে ঘন পাতায় ঘেরা ফলজ বৃক্ষের সমাহার, এমন সুন্দর দৃষ্টিনন্দন নদী খুবই বিরল ।


বছরের একটা সময় বিশেষ করে আগ্রানী ধান ঘরে উঠার সময়ে দুর দুরান্ত হতে বেদে নৌকার বহর এসে ভিরত নদীটির তীরে । সে সময় গ্রামে যেন লেগে যেতো উৎসবের আমেজ ।
AA15 Beder Naoka Bahor


বেদে নৌকার বহরে থাকা যুবতি বেদে মেয়েরা মাথায় বিভিন্ন প্রকারের প্রসাধনি সামগ্রি যথা আয়না,কাকই, চিরুনী , রংগীন চুরী, কানের দুল , নাকের ফুল ,গলার হার ( বলা হত নদীতে কুড়িয়ে পাওয়া ঝিনুকের মুক্তার হার) ও আলতা ফিতা নিয়ে ঢুকে যেতো গৃহস্তের বাড়ীর ভিতর আঙগিনায়। গৃহস্ত বাড়ীর বউ ঝিদের মাঝে মহাসোরগোল পরে যেতো সেগুলি কেনারতরে , পণ্যের দাম পরিশোধ হতো ধানের মাপে , যথা এক গুচ্ছ চুড়ীর জন্য দিতে হতো বেদের কাছে থাকা এক ঠিলা পরিমান ধান । টাকার অংকে যা সেসব পণ্যের বাজার দামের থেকেও বেশী । কিন্তু তাতে গৃহস্ত বাড়ীর বউ ঝিদের কোন আপত্তি নেই ,ঘরে বসে নীজের পছন্দ অনুযায়ী প্রসাধনি সামগ্রি কিনতে পারছে, এতেই তারা বেজায় খুশী ।এর সাথে বসত নেচে গেয়ে বেদে/বেদেনীদের সাপ খেলা দেখানোর আসর।


হাত নেরে সাপকে ফনা তুলে নাচানোর সময় সুর করে গাইতো
খারে খা বক্ষিলারে খা
কামরুক কামাক্ষার দোহাই
মা মনসার দোহাই
খারে খা সোহার মারে খা।
খেলা দেইখ্যা যারা
পয়সা দেয়না তাদের
ধইরা খা। খেলা দেইখ্যা
পয়সা দিলে নাগমনি
পইবে গাঙ্গের ধারে।
একদিন সাপের খেলা দেখার পরে সাহস করে বেদেনীর কাছে গিয়ে জিগাইছিলাম, তোমরা গাঙ্গের পারে নৌকায় থাক, নাগমনি পাইছনি কোন দিন ।
বলল সে হ নাগমনি পাওয়া যায়ত , মনি থাকে নাগের মাথায় ,দেখস না সাপে ফণা তুললে মাথার পিছনে মনির মত চিহ্ন দেখা যায় ।


বললাম নাগমনি পাইলে আর নৌকায় ঘুরে ডেঞ্জারাস বিষধর সাপের খেলা দেখায়ে জীবন কাটাও কেন?। বলল সে আরে বোকা , মনি যারা পায় তারাতো রাজরানী অইয়া যায় তারা আর কি তখন সাপের খেলা দেখায় ,দেখস না রাজা রানীরা কেমন করে বিলাসী জীবন কাটায়, তবে বেদ বেদেনীর স্বভাব তাদের কভু নাহি যায় ,হরেক রকম কায়দা করে তারা মানুষের পকেট খালি কইরা যায় ।
সাপ খেলা দেখানোর সাথে ছিল ঝাড়ফুক আর বাতের ব্যথা নিরসনের জন্য ব্যথার স্থানে সিংগা লাগিয়ে মুখ দিয়ে বিষ টেনে মানুষের বিষ নামানো ও গাছগাছলীর শিকড় দিয়ে দাতের পোকা বের করা প্রভৃতি কত প্রকারের টুটকা চিকিৎসাই না তারা করত। শুধু কি তাই. সাপের কামড়ের হাত হতে রক্ষার জন্য জঙ্গলে থাকা গোপন গাছের শিকরের রক্ষা কবজের তাবিজ। প্রেমে আসক্তি কিংবা ব্যর্থ প্রেমিকের প্রেম জোড়া দেয়া সহ নানাবিধ যথা কামরুপ কামাখ্যা থেকে শিখে আসা যাদু টোনা ভরা মাদুলি, যা নাকি অংগে ধারনে অব্যর্থ সফলতা আনে । উল্লেখ্য কামরূপ কামাখ্যাকে বলা হয় জাদু টোনা, তন্ত্র-মন্ত্রের দেশ। আসামের গুয়াহাটি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই কামরূপ কামাখ্যা । হাজার বছরের রহস্যময় স্থান কামরূপ কামাখ্যার আশপাশের পাহড়ী অরণ্য আর নির্জন পথে নাকি ঘুরে বেড়ায় ভালো-মন্দ আত্মারা।


কামরূপ কামাখ্যার রহস্যে ভরা আখ্যানের কথা শুনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কামাখ্যার জাদুবিদ্যা আর সাধকদের অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার গল্প ঘুরত সবার মুখে মুখে।

ভূত-পেত্নি-ডাকিনী-যোগিনী-শাকচুন্নি, অশরীরী, প্রেত, পেত্নী, ব্রহ্মদৈত্য, পিশাচ, ডাইনী বা ডাকিনীবিদ্যার অতিব ভয়ঙ্কর সাধনা চলে আসামের কামরূপ-কামাখ্যা মন্দিরে।
AA19 Kamrup Mondir


এক ভয়ংকর জায়গা ওখানে পৌঁছালে আর ফিরে আসা যায় না।আশেপাশে অরণ্যে আর নির্জন পথে দেখা যায় ভূত-পেত্নী আর ডাকিনী-যোগিনীর।

নারী শাসিত পাহাড়ী ভূ-খন্ড কামরুপ –কামাখ্যার নারীরা ছলাকলা আর কাম কলায় নাকি ভিষন পারদর্শী।কামরূপ-কামাখ্যার ডাকিনী নারীরা পুরুষদের মন্ত্রবলে নাকি ভেড়া বানিয়ে রাখে ।
আবার বাংলাদেশের সাপুরেদের মুখেও কামরূপ কামাখ্যা নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প প্রচলিত আছে।তারা সেখান থেকে বিভিন্ন মন্ত্র তন্ত্র শিখে আসে। শিখে আসা বিদ্যা দিয়ে পশরা সাজায়
বিবিধ ফন্দি ফিকিরে।
বসন্ত রোগের জন্য শিতলা দেবীর পানি পড়া দিত


এই নদীতে এখন আর বেদে বহর আসেনা ।এতে চলেনা আর পাল তোলা সওদাগরী নৌকা, কেরায়া নৌকা ( স্বল্প দুরত্বের যাত্রীবাহী নৌকা ) আর গয়না নৌকা(অধিক দুরত্বের যাত্রীবাহী বড় নৌকা)। নদিটির মুল ধারার উজানের অংশ এখন শুকিয়ে গিয়ে হয়েছে ফসলের মাঠ, মাঝ খান দিয়ে কোনমতে একফালি সুতার মত বয়ে চলছে মৃত প্রায় নদীর ধারা । এটা এখন আর দেখলে মনে হবেনা যে মাত্র কিছুদিন আগেও ছিল ব্রম্মপুত্র নদের একটি প্রমত্তা শাখা নদী ,বরং এটা এখন দেশের নদী নালার মানচিত্র হতে হারিয়ে যেতে বসেছে চির দিনের মত ।


নদীটিকে বাঁচানোর জন্য দৃশ্যমান কোন কর্মসুচী বা উদ্যোগ নেই বরং দুই তীরের নদীখোড়দের মহা উয্যোগ দেখা যায় নদীটিকে গ্রাসের তরে।
এখানে উল্লেখ না করে পারছিনা যে বৃহত্তর বঙ্গের বিখ্যাত পঞ্চ কবির একজন অতুলপ্রসাদ সেনের সমাধি আছে এই সুতিয়া নদীর তীরেই।
ঢাকার অদূরবর্তী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দক্ষীন প্রান্তে সুতিয়া নদীর তীরে ছিল ভাওয়ালের রাজা কালীনারায়ণ গুপ্তের কাছারিবাড়ি। এখানেই কালীনারায়ণ গুপ্ত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি ব্রাহ্মমন্দির।


এই ব্রাহ্মমন্দির লাগোয়া সমাধিতে শুধু অতুল প্রসাদেরই নয়, রয়েছে তার দাদামশাই কালীনারায়ণ ও মামা কেজি গুপ্ত নামে সমধিক পরিচিত স্যার কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্তের সমাধিও। কেজি গুপ্ত ছিলেন প্রথম ভারতীয় প্রিভি কাউন্সিলর ও পূর্ববঙ্গ থেকে প্রথম আইসিএস। পাশেই রয়েছে কালীনারায়ণের পরিবারের অন্য সদস্যদের সমাধিও।সমাধিতে কারোরই মৃতদেহ নেই, চিতাভস্ম রয়েছে। তাদের কেউ লখ্নৌ, কেউ আবার লন্ডনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। যে যেখানে মারা গেছেন, সেখানেই তাদের চিতা হয়েছে। পরে চিতাভস্ম এনে এই নদী তীরে এখানে সমাহিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, ব্রাহ্ম ও হিন্দু রীতি অনুযায়ী সবারই পিণ্ডদান করা হয়েছে পাশের সুতিয়া নদীতেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় অতুল প্রসাদ সেনের স্মৃতিফলকটি পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি করে ভেঙে ফেলেছিল। তখন স্মৃতিফলকে তার 'মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা' গানের চরণটি লেখা ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে অতুল প্রসাদের সমাধিতে মার্বেল পাথরে নতুন একটি স্মৃতি ফলক পুণস্থাপন করা হয়


মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!
কি যাদু বাংলা গানে!- গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে
এমন কোথা আর আছে গো!
গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা।।’


অতুল প্রসাদের লেখা মাতৃভাষার প্রতি প্রেমপূর্ণ সঙ্গীতটি বাঙালির প্রাণে আজও ভাষা প্রেমে গভীর উদ্দীপনা সঞ্চার করে। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উপলক্ষে এই গানটিতে বাঙালি এবং বাংলা ভাষার প্রতি গভীর প্রেম ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অতুলপ্রসাদ সেন। গানটি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে অসীম প্রেরণা যুগিয়েছে।


বিভিন্ন তথ্যসুত্রে জানা যায় যে একদা এই ব্রাম্ম মন্দিরে কিছু সময়ের জন্য এসেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্র্রনাথ ঠাকুরও। রাজা রামমোহন রায় ১৮২৬ সালে একেশ্বরবাদী মণ্ডলী স্থাপন করে নাম দেন 'বেদান্ত প্রতিপাদ্য ধর্ম'। পরে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বেদান্ত প্রতিপাদ্য ধর্মের নামকরণ করেন ব্রাহ্মধর্ম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চদশ সন্তানের অন্যতম।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ছিলেন। ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন ময়মনসিংহে যান, তখন কাওরাইদে ব্রাহ্মধর্মের অনেক বড় মণ্ডলী ছিল। তাই পথে তার যাত্রাবিরতি করা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। উল্লেখ্য ঢাকা –ময়মনসিংহগামী রেললাইন ধরে সে সময় চলাচল করত স্টীম ইঞ্জিনচালিত রেলগাড়ী ।মাঝপথে কাওরাইদ রেল ষ্টেশনে থেমে ইঞ্জিনে পানি ও কয়লা লোড করে নিত । কাওরাইদ ষ্টেশনের কাছে ছিল বিশাল ১০০০০গ্যালনের একটি অভারহেড পানির ট্যাংক।সুতিয়া নদী হতে ট্যাংকে পানি তোলা হত । এই স্টেষনে প্রতিটি ট্রেনকেই প্রায় ঘন্টাখানেক যাত্রাবিরতি দিয়ে কয়লা ও পানি লোড করে ইঞ্জিন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ষ্টীমের ব্যবস্থা করা হত। তাই এই যাত্রা বিরতীর সময়টিতে নিকটবর্তী ব্রাম্মমন্দির ও সে সময়কার দেশের বিখ্যাত ব্রাম্ম মনিষীগনের সমাধিসৌধে কবি গুরুর গমন কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।


উল্লেখ্য খ্যাতিমান জমিদার মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর আমন্ত্রণে ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহে আসেন। সেসময় কবির সফরসঙ্গী ছিলেন তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইতালির অধ্যক্ষ জোসেফ তুচি প্রমুখ। ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কবি গুরু সূর্যকান্তের বাগান বড়ি আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থান করেছিলেন । সেই সময় থেকে কবির অবস্থানে গর্বিত ময়মনসিংহের আম জনতা । সেই আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল এখন ময়মনসিংহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহসহ অনেক রাজপরিবারের সদস্য এই বাগান বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন।


কবিকে ময়মনসিংহ টাউনহলে নাগরিক সস্বর্ধনা দেয়া হয় । মিউনিসিপ্যাল কমিটির অভিনন্দন গ্রহণ করে তার উত্তরে কবিগুরু যে মুল্যবান ভাষনটি দিয়েছিলেন তার সংক্ষিপ্তরূপ তুলে ধরা হলো নীচে-
ময়মনসিংহের পুরবাসীগণ, আজ আপনাদের কাছে সর্বপ্রথমেই আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমি এই ক্লান্ত দেহে আজ আপনাদের অতিথি। যখন আমার শক্তি ছিল, স্বাস্থ্য ছিল, যৌবন ছিল, তখনই এখানে আমার আসা উচিৎ ছিল ।
...........দেশমাতার এই যে শক্তির পীঠস্থান, এখানে যে পূজা নিবেদন করতে পারি, সেরকম সম্পদ বা ক্ষমতা আমাতে নেই; কেবলমাত্র আপনাদের সহিত পরিচয়ের জন্য এসেছি ;পরিচয়ের আভাস আপনাদের দিয়ে যাব এবং নিয়ে যাব এইটুকু মাত্র প্রত্যাশা করি। যথার্থ পরিচয় শুধু ত্যাগ ও সেবা দ্বারা সম্ভব।.............................আমরা দুঃখ-দৈন্যের ম্লান রূপ দেখেছি। বিরাট মহিমাময় রূপ দেখতে হলে বিশ্বাস ও ত্যাগের ভিতর দিয়ে দেখতে হবে। দেশের রূপ সত্য উপলব্ধি করতে হলে সংকীর্ণ বর্তমান দিয়ে চলবে না। সেই সুদূর অতীত হতে সুদূর ভবিষ্যতের মাঝে দেশের সত্তা অনুভব করতে হবে।
দেশের সেবায় শ্রদ্ধা আছে বলে সেখানে গিয়ে কেউ নত না হয়ে থাকতে পারে না। দেশমাতার পূজাবেদীর সামনে ঈর্ষা অশুচি ও বিদ্বেষে- জর্জরিত হচ্ছি বলেই দেশমাতার পরিপূর্ণ স্বরূপ তার নীজ আবরণ ভেদ করে প্রকাশ পাচ্ছে না। আত্মার এত অপমান কখনও সহ্য হতে পারে? পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষের ন্যায় কুৎসিত আর কিছুই নয়। দেশের পরিচয় সংকীর্ণতার মধ্যে নয়। অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝেই যে দেশের সত্যিকার পরিচয়;-- সেই ধ্যান আমাদের সত্য হোক, উজ্জ্বল ও নির্মল হোক।
......দেশের দৈন্যতা দুর হতে পারে ত্যাগের দ্বারা, সেবা দ্বারা ও আত্মনিবেদন দ্বারা। সেই শ্রদ্ধার সঙ্গে নত হয়ে আমরা যেন দেশকে জানতে চাই --দেশের ভবিষ্যৎ বিরাট মূর্তি যেন ধ্যাননেত্রে দেখতে পাই।
আমি আপনাদের এখানে আসবার সময় গাড়ীতে বাতায়ন থেকে দেখতে চেষ্টা করেছিলাম আজকের দিনের জর্জরিত দেশকে নয়--দুঃস্থ দেশকে নয়—শ্রদ্ধা বিশ্বাসহীন অপমানিত দেশকে নয়-- দেখতে চেষ্টা করেছিলুম ভাবীকালের হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গমাতার সুন্দরী মূর্তি।সেই দূরের মূর্তি ধ্যানের মধ্যে আনবার চেষ্টা করেছিলুম; কি করে সকলের কাছে সেরূপ প্রকাশ পাবে এই ইচ্ছা আমার হচ্ছিল।
সেই সুজলা, সুফলা,শ্যামলা মধুকর-গুঞ্জিত নবচ্যুতমঞ্জরী-শোভিত সুন্দরী বঙ্গমাতার মধুর মূর্তি আমার অন্তরে জাগ্রত হয়ে উঠেছিল।
আজ নতুন যুগ এসেছে --রথের ঘর্ঘর ধ্বনি শোনা যাচ্ছে--বঙ্গদেশ আশার বাণীতে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

আমার স্বাস্থ্য নেই, যৌবনের তেজ নেই , কিন্তু তৎসত্ত্বেও আমার ইচ্ছা আছে, সেই ইচ্ছাই আজ আপনাদের কাছে নিবেদন করতে চাই। এই দেশের আকাশে-বাতাসে স্নেহ আছে,মাদকতা আছে-- সৌন্দর্য আছে--তার কথা চিন্তা করতে করতে আমার জীবন শেষ হবে, এই আমার কামনা; সেই আশার সঙ্গীতধ্বনি দেশের আকাশে-বাতাসে মুখরিত হবে এই আমার চিরন্তন বিশ্বাস।–বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর আমরাও কামনা করি বিশ্ব কবির এই বিশ্বাস বাস্তবায়ন হোক ।


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থানকালে একটি বিশালাকার বৃক্ষতলে বসে বেশ কয়েকটি কবিতাও রচনা করেছেন।


কবিগুরুর মত বৃক্ষটির নীচে বসে ব্রহ্মপুত্র নদের শীতল বাতাসে শরীর মন জুড়িয়ে নেন অনেকেই।


অতীব দু:খ্যের সাথে বলতে হয় মাত্র পঞ্চাশ বছর আগেও যে ব্রম্মপুত্র নদ ছিল প্রমত্তা তা আজ জীর্ণদশায় পতিত, বলতে গেলে মরা নদী, ফলে এর শাখা নদীগুলিও আজ পরিনত হয়েছে মরা নদীতে ।


অপরদিকে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত শিল্প বর্জ নিস্কাসন কারণে ভালুকায় অবস্থিত শিল্পকারখানা বিশেষ করে বস্রশিল্পের ডাইং ও ফিনিসিং কারখানার বিভিন্ন রং ও কেমিকেল মিশ্রিত বর্জের কারনে সুতিয়া নদীটির অপর উৎস ধারা ক্ষিরো নদীর পানি হয়েছে ভিষণভাবে দুষিত এবং দুষনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছেই ।


দেশের পোশাক শিল্প বিশেষ করে টেক্সটাইল ডায়িং কারখানাগুলো যদিও সরকারী বিধানের কারণে নামকাওয়াস্তে প্রচলিত ব্যবস্থায় তাদের বর্জ্য শোধন করে তা মোটেই মানসন্মত নয় ।ফলে ২০২১ সাল নাগাদ তৈরী পোষাক খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যে পৌঁছতে পৌঁছতে পানি দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নেবে। উল্লেখ্য ২০১৬ সালে ২১ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটার এবং পরের বছর ২৩ কোটি ৮০ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য নিঃসরণ হয়েছে এ শিল্প থেকে। সাম্প্রতিককালে বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে বস্ত্র শিল্পের বর্জ্য পানির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৪ কোটি ঘনমিটার । এর মধ্যে ভালুকা এলাকা হতেই নিস্বারিত বিপুল পরিমান দুষিত বর্জ্য যুক্ত হয়ে মিশবে গিয়ে দেশের মুল ধারার নদ নদীর পানিতে।

ডাইং ফিনিসিং কারখানার বর্জে ক্ষিরো নদীর উজানে উৎস মুলে নদীর পানি অনেক আগেই রক্তিম রং ধারণ করেছে ।


এ রংগীন দুষিতপানি নীচের দিকে গড়ায়ে ভাটিতে আসতে আসতে ধারন করে কুচ কুচে কাল রঙ। নদীর মাছতো কবেই মরে সাফ। এখন জনস্বাস্থ্য ও জীব বৈচিত্রও দারুন হুমকির মুখে ।
প্রথমে ক্ষীরো নদী পরে সুতিয়া নদী হয়ে ভালুকায় চালু বস্ত্র শিল্পসহ অন্যন্য শিল্প কারখানার দুষীত পানি গিয়ে পড়ছে শীতলক্ষা নদীতে । ফলে শীতলক্ষার পানি হতেছে দুষিত যা আবার ঢাকার কাছে গিয়ে মিসতেছে বুড়ীগঙ্গার পানির সাথে। বর্জ দুষন রোধের অভিপ্রায়ে রাজধানী ঢাকা হতে ৩০ মাইল দুরে এসমস্ত শিল্প কারখানা স্থাপিত হলেও ভালুকার দুষিত পানি ক্ষীরো, সুতিয়া, শিতলক্ষা আর বুড়িগঙ্গা হয়ে রাজধানীতে ফিরে যেতে সময় নিচ্ছে ৩০ ঘন্টারো কম।


তাই এমহুর্তেই কতৃপক্ষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন, তা না হলে বেশ বড় ধরনের পরিবেশ দুষনের শিকার হবে রাজধানী শহর ঢাকাসহ এইসব নদী অববাহিকার জীব বৈচিত্র । সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বিপর্যস্ত করে তুলবে । এর সাথে আবার যুক্ত হয়েছে ক্ষিরো নদীর শেষ প্রান্তে (সুতিয়ার মোহনার কাছে) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত রাবার ডেমটি যা আরো অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এ যেন মরার উপর খারার ঘা ।


রাবার ডেমটি ক্ষিরো নদীর উজানের কিছু অংশের কৃষি কাজে সেচের সুবিধা দিলেও এর ভাটিতে নদীর নাব্যতা বিনষ্ট করেছে । এখন দুষিত বর্জের কারনে রাবার ডেমের উজানে আটকানো দুষিত পানি সেচের কাজে ব্যবহারেও ঝুকি পুর্ণ হয়ে গেছে ।নদীর দূষিত পানি দিয়ে সেচ দেওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের সবজি ও ধানের চারা। এই এলাকায় সেচ যোগ্য পানির সঙ্কট দেখা দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তাই পরিবেশবাদী ও সচেতন সকলকে এগিয়ে আসতে হবে ভালুকা এলাকা সহ দেশের সকল শিল্প কারখানা বিশেষ করে বস্ত্র শিল্পের অনিয়ন্ত্রিত বর্জ নিষ্কাষন ব্যবস্থাসহ দেশের সকল নদ নদীর পানি দুষন প্রতিরোধে ব্যপক গনসচেতনতা সৃজনের জন্য।

নদীর পানি দুষিত হওয়ার কারণে দেশের জীব বৈচিত্রের আরেকটি মারাত্তক ক্ষতির বিষয়ে দু একটি কথা না বলে পারছিনা । সেটা হলো স্থানীয়ভাবে ‘শুশুক’ নামে পরিচিত বিশ্বের বিরলতম প্রাণী বাংলাদেশের স্বাদু পানির রিভার ডলফিন ( শুশুক বা শিশুমাছ) আজ শুধু বিপন্ন প্রাণী্ই নয় এখন এটা একেবারে বিলুপ্তির পথে ।ডলফিন সাধারণত লবণ পানিতে বাস করে৷ শুধুমাত্র গাঙ্গেয় ডলফিন তথা শুশুক আর আমাজনের ‘বোতো’ এই দুই প্রজাতির ডলফিন সারা বছরই স্বাদু পানিতে থাকে৷ সেদিক দিয়ে শুশুক বিশ্বে খুবই বিরল একটি প্রাণী যা শুধু বাংলাদেশের নদ নদীতেই দেখতে পাওয়া যায় ।
আমাজনের বোতো প্রজাতির স্বাদু পানির শুশুক ।


বাংলাদেশের নদিতে ডুব সাতারে বিচরণকারি শুশুক যা শিশু মাছ নামেও পরিচিত । আমাদের নবপ্রজন্মের অনেকেই হয়তোএকে নদীতে ডিগবাজী দিতে দেখেননি। স্তন্যপায়ী এই প্রাণীটি মাঝনদী বরাবর চলার পথে একটু পরে পরেই পানির উপরে ডিগবাজী দেয়ার মত ভেসে উঠে ,এরা শ্বাস প্রস্বাস নেয় মানুষের মতই।


উল্লেখ্য ৩০-৪০ বছর আগেও বাংলাদেশের নদীগুলোতে অনেক শুশুক তথা রিভার ডলফিন দেখা যেত৷ কিন্তু এখন আর সেটা দেখা যাচ্ছে না৷ তাই ১৯৯৬ সাল থেকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় নাম উঠে গেছে শুশুকের৷

শুশুকের তেল মাছ ধরার জন্য বেশ কার্যকর৷ তাই জেলেরা গণহারে শুশুক ধরছে৷ এছাড়া জাটকা ধরার জন্য যে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে জেলেরা, তাতেও মারা পড়ছে শুশুকের দল৷ ছবিতে এমনই একটি মৃত শুশুক দেখা যাচ্ছে৷


নদীতে বাঁধ দেয়া, সেতু তৈরি ইত্যাদি কারণে নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে শুশুকের আবাস ও প্রজননস্থল৷ এছাড়া যেখানে সেখানে ফেলে রাখা পলিথিন নদীর পানিতে মিশে গিয়েও নষ্ট করছে শুশুকের আবাস৷ শিল্প-কারখানার দূষিত বর্জ্যও শুশুকের শত্রু৷
পদ্মা নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের জালে ধরা পড়া বাংলাদেশের স্বাদুপানির বিপন্ন স্তন্যপায়ী শুশুকের একটি সদস্য।


পুর্ণবয়স্ক শুশুকটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট, গড় পরিধি ৫ ফুট ও ওজন ১৬৫ কেজি । নীচের এবং উপরের চঞ্চুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১.৩০ ও ১.২০ ফুট।১৯৯৬ সালে এটি বিপন্ন (Endangered) প্রজাতির তালিকায় স্থান পায়। প্রাণী-প্রেমীদের জন্য যা মোটেও সুখের সংবাদ নয়। বিপন্ন এই জলজ স্তন্যপায়ীকে মাত্র তিন দশক আগেও পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী এবং এদের শাখানদীতে বড় বড় ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করতে দেখা যেতো।

আমাদের এলাকায় শীত লক্ষা ও সুতিয়া নদীতেও এই স্বাদুপানির শুশুক প্রানীটিকে দেখা যেতো ।বর্ষাকালে নদীতে এর আনাগোনা বেড়ে যেতো। তখন নদীতে গোছল করার সময় আমরা শুশুকের মত পানির উপরে পিঠ বাকিয়ে ডিগবাজি দিয়ে ডুব সাতার খেলতাম । মুরুব্বিরা ধমক দিয়ে মাঝ নদীতে শুশুকের মত আমাদের ডুব সাতার খেলা বন্ধ করাতেন কুমিরে ধরার ভয় দেখিয়ে।তবে কুমিরকে আমরা দেখিনি বলে তাদের ধমকে কুমিরকে আমরা ভয় পেতামনা মোটেও। বই এর ছবিতে কুমিরকে দেখেছি খুব ছোট একটি প্রাণী হিসাবে।

বাংলাদেশের স্বাদু পানির বিপন্ন এই স্তন্যপায়ী শুশুককে বাঁচাতে এখনই বড় পরিসরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এজন্য প্রথমেই শুশুক শিকার, বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে নদীর পরিবেশ উন্নয়নে নদীকে তার মত চলতে দিতে হবে। সকল বাঁধ অপসারণ, যৌক্তিক সেচ ব্যবস্থা প্রবর্তন, রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার বন্ধ এবং শুশুক অধ্যুষিত এলাকায় যন্ত্রচালিত নৌযানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবী।উল্লেখ্য রিভার ডলফিন বা শুশুক খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি পুরো নদীর বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের নির্ভরযোগ্য সূচক। যে নদীতে ডলফিন থাকে সেই নদীতে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং নদীর পরিবেশ সুস্থ থাকে। এটিকে জাতীয় জলজ প্রাণী হিসাবে ঘোষণা করা একান্তভাবে কাম্য । বর্তমান অবশ্য বাংলাদেশে ডলফিন ও তিমি শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২০১২ সালের প্রণীত আইন অনুযায়ী ডলফিন অথবা তিমি শিকার করা হলে তিন বছরের কারাদণ্ড, ৩ লাখ টাকা জরিমানাসহ উভয় দণ্ড দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান নাকি রয়েছে দেশে।তার পরেও এটা এখন বিলুপ্তির পথে ।দেশে বর্তমানে নাকি মাত্র ৪০০ গাঙ্গীয় ডলফিন রয়েছে । আস্তে আস্তে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে নদী পরিবেশগত প্রভাব বোঝার নির্দেশক এই শুশুকগুলো বর্তমানে ভালো নেই। পৃথিবীজুড়েও এদের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। এখানে উল্লেখ্য যে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ভাষ্যে দেখা যায় জাপানে তাইজির ডলফিন শিকার উৎসবে নাকি খুন হয় প্রায় পনেরো হাজার ডলফিন।


সারা পৃথিবীর কাছে জাপান মানেই শান্তির সাদা পায়রা। সেই জাপান বিশ্বের চোখের আড়ালে গর্বিত ভাবে বয়ে নিয়ে চলেছে এক কলঙ্কময় ইতিহাস। হ্যাঁ, হত্যার ইতিহাস। মানুষ নয়, ডলফিন। শান্তিপ্রিয় সামুদ্রিক প্রাণী ডলফিনদের সবচেয়ে নৃশংস ঘাতক হলো শান্তির পূজারী জাপান। অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিষয়টি সত্য। তাইজী উপকুলে প্রতি ১লা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় কুখ্যাত তাইজি ডলফিন হান্টিং ড্রাইভ। শেষ হয় পরের বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনে। মাত্র ছয় মাসে মারা যায় পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ও নিরীহ প্রাণী ডলফিন, হাজারে হাজারে । জাপান সরকার প্রতি বছর কম বেশি ২০০০ ডলফিন মারার অনুমতি দেয়। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে ডলফিন শিকাড় ড্রাইভে ১০-১৫ হাজার ডলফিন মেরে ফেলা হয় সুত্র Click This Link । অবশ্য সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠার পর, তাইজিতে এখন দিনের আলোয় ডলফিন হত্যা প্রায় বন্ধ । তবে রাতের অন্ধকারে চলে ডলফিন নিধন যজ্ঞ। বোঝাই যাচ্ছে, বিলুপ্তপ্রায় ডলফিন প্রজাতিকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার আগে থামবে না জাপান। উদীয়মান সূর্যের দেশ জাপান। বিশ্ব শান্তির পূজারী জাপান। বুদ্ধময় জাপান। ফলে ডলফিনেরা আজ সুর্যোদয়ের দেশে অকাল সুর্যাস্তের অপেক্ষায়। মনে হয় এই নিধন যজ্ঞের কারণে অচিরেই ডলফিনের কান্নার হবে চীর অবসান ।

মাটির ঘর বানাবার জন্য কাদামাটি সংগ্রহের লক্ষ্যে নদীর পানে চলার কথা বলতে গিয়ে দীর্ঘদিনের স্মৃতির পাতায় জমে থাকা অনেক প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক কত কথাই না বলে ফেলেছি, সম্বিত যখন ফিরে এল তখন দেখা গেল পরশ পাথর প্রাপ্তির বিষয়ে মুল কথা বলা হতে অনেক দুরে ছিটকে পরেছি।

যাহোক, আম কাঠাল আর শুপারির বাগান পার হয়ে বড়বিল থেকে নেমে আসা নদীমুখী খালের পাশ দিয়ে নদীর ঘাটের দিকে এগিয়ে চলেছি । জীবনে কত ছোট খালই না দেখেছি, দুই ধারে ঘন বন এমন খাল দেখেনি কভু এ তল্লাটে ।এ খালটিরও রয়েছে অনেক মজার ইতিহাস । এ খাল দিয়েই বর্ষাকালে বড় বিলের সব পানি নামে নদীতে আর নদী হতে উজানে বিলে ঢুকে নদীর যত ছোট বড় মাছ । নদীতে শুশুকের দাবরানী খেয়ে এখাল বেয়েই বড় বড় রুই, কাতল , বোয়াল, চিতল উঠে যেতো বড় বিলে। বর্ষা শেষে বিলের পানি নেমে গেলে চলত গ্রামের সকলে মিলে পলো দিয়ে মাছ ধরার জন্য হাত বাওয়ার মহা উৎসব। আর রাত নিশীতে এখালের উপর দিয়েই উড়ে যায় ভুত প্রেত,ডাকিনি যোগীনী আর মায়াবিনীর দল । সেসব কাহিনী আসবে পরের পর্বে।


বিবিধ প্রকারের কথামালা এসে ভির করায় পোষ্টটি লম্বা হয়ে যাওয়ায় পরশ পাথর প্রাপ্তির প্রান্তিক বাকি কথা গুলি পরের পর্বে তুলে ধরার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।

পরের পর্ব দেখার জন্য আমন্ত্রন রইল ।

এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

তথ্য সুত্র : যথাস্থানে লিংক আকারে দেয়া হয়েছে ।
ছবিসুত্র : কৃতজ্ঞতার সহিত গুগল অন্তরজল


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:২৭
৪৩টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×