somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাখি সমাচার: পাতিময়না

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পাতি ময়না (বৈজ্ঞানিক নাম: Gracula religiosa), সোনাকানি ময়না, পাহাড়ি ময়না বা ময়না Sturnidae (স্টার্নিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Gracula (গ্রাকুলা) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির মাঝারি আকারের কথা-বলা পাখি।পাতি ময়নার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ পবিত্র পাতিকাক (লাতিন: graculus = পাতিকাক, religiosus = পবিত্র)।পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৩৯ লক্ষ ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

পাতি ময়না মাঝারি কালো রঙের পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৯ সেমি, ডানা ১৭ সেমি, ঠোঁট ৩ সেমি, পা ৩.৫ সেমি, লেজ ৮ সেমি ও ওজন ২১০ গ্রাম।ভাত শালিকের (Acridotheres tristis) তুলনায় এটি আকারে একটু বড়।

সাধারণ অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পাখিকে পুরোপুরি চকচকে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ দেখায়। প্রজননের সময় মাথা আর ঘাড়ে হালকা বেগুনী আভা দেখা যায়। পালকহীন চামড়ার পট্টি হলুদ এবং চোখের নিচে, মাথার পাশে ও পেছনে মাংসল উপাঙ্গ থাকে। ওড়ার সময় ডানার সাদা পট্টি স্পষ্ট দেখা যায়, এমনিতে বসে থাকলে ডানা দিয়ে তা ঢাকা থাকে। চোখ কালচে বাদামি। ঠোট শক্ত ও হলুদ, ঠোঁটের আগা কমলা রঙের। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা একই রকম।অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঠোঁট তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হলদে-কমলা। মাংসল উপাঙ্গ ফিকে হলুদ এবং পালক কম উজ্জ্বল।

পশ্চিমে ভারতের কুমায়ন বিভাগ থেকে শুরু করে হিমালয়ের পাদদেশে নেপালের তেরাই, সিকিম, ভুটান ও অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত পাতি ময়না বিস্তৃত। সমুদ্রসমতল থেকে ২০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এদের দেখা মেলে। পূর্বে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে চীনের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত এরা বিস্তৃত। দক্ষিণে থাইল্যান্ড ও মালয় উপদ্বীপ হয়ে ইন্দোনেশিয়ার পালাওয়ান এবং ফিলিপাইন পর্যন্ত এদের বিচরণ রয়েছে। বাংলাদেশে আবাসস্থল ধ্বংস আর পোষার জন্য অতিরিক্ত আহরণ করার কারণে এটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। অথচ একটা সময় দেশের মিশ্র চিরসবুজ অরণ্যে এদের মোটামুটি সাক্ষাৎ পাওয়া যেত। দেখা যেত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অরণ্যেও।ক্রিস্টমাস দ্বীপের ময়নার দলটিও একই কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

পূর্বে শ্রীলঙ্কান ময়নাকে উপপ্রজাতি G. religiosa-এর অন্তর্ভূক্ত বলে মনে করা হত। বর্তমানে এটিকে একটি পৃথক প্রজাতির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে (G. ptilogenys)। পাতি ময়নার মাংসল উপাঙ্গটি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগ ঘাড়ের সাথে আর আরেকটি ভাগ চোখের সাথে যুক্ত। কিন্তু শ্রীলঙ্কান ময়নার শুধু ঘাড়ের উপাঙ্গটি রয়েছে, চোখের উপাঙ্গটি অনুপস্থিত। এর ঠোঁট আর চোখের রঙও ভিন্ন। এরকম আরও দুইটি স্বীকৃত প্রজাতি হল এনগনো ময়না (G. enganensis) আর নিয়াস ময়না (G. robusta)। কয়েকজন লেখক নীলগিরি পর্বত ও ওয়েস্টার্ন ঘাটস অঞ্চলের উপপ্রজাতি G. r. indica-কে আলাদা প্রজাতি হিসেবে গণ্য করেছেন।

ময়না প্রায় সবসময়ই তীক্ষ্ন চিৎকার করে ডাকে। সেকারণে ঘন অরণ্যে এদের সনাক্ত করা খুবই সহজ কাজ। তীক্ষ্ন ডাক ছাড়াও এরা বিভিন্ন বিচিত্র স্বরে ডাকাডাকি করে। ভোরে আর সন্ধ্যায় এদের ডাকাডাকি বেড়ে যায়। সাধারণত এ সময়ে এরা দল বেঁধে গাছের মগডালে বসে ডাকাডাকি করে।

স্ত্রী পুরুষ দুই লিঙ্গের ময়নাই বিচিত্র রকমের ডাকে সমানভাবে দক্ষ। এরা শিষ দেয়, খর্ খর্ করে ডাকে আবার গলা খাকরানোর মত করে ডাকতে পারে। এরা আবার মানুষের মত শব্দ উৎপন্ন করতে সক্ষম। বুনো ময়না প্রায় তিন থেকে তের রকমে ডাকতে পারে। সম্ভবত ময়নারা শিশু অবস্থায় আশেপাশের ময়নাদের থেকে এসব ডাক শেখে। এক দলের ময়নার ডাক অন্য দল থেকে ভিন্ন। এমনকি কোন একদল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের আরেকটি দলের ডাক ভিন্ন হয়।

গোটা বিশ্বে রয়েছে এদের ব্যাপক চাহিদা। কারণ এরা মানুষের কথাবার্তা হুবহু নকল করতে পারে। অন্যসব কথা বলা পাখিরা যেমন বনের অন্য পাখি বা প্রাণীদের স্বর বা আওয়াজ নকল করতে পারে (যেমন- ভিমরাজ, Dicrurus paradiseus), ময়না তেমনটি পারে না। যদিও এ বিষয়ে মানুষের একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে বুনো ময়নারা অন্য প্রাণীর ডাক অনুকরণ করতে পারে। তবে বন্দী অবস্থায় এরা মানুষের কথা ছাড়াও বাচ্চার কান্না, থালাবাসনের শব্দ, কলিংবেলের শব্দ, বেড়ালের ডাক ইত্যাদি অবিকল অনুকরণ করতে পারে। তারা তীক্ষ্ণ ও পরিষ্কার গলায় মানুষের মত শিষ দিতেও সক্ষম।

পাতি ময়না সাধারণত আর্দ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ বন এবং চা বাগানে বিচরণ করে। পাহাড়ি এলাকার ঘন বন এদের পছন্দের জায়গা। এরা দলবদ্ধ অবস্থায় ৫-৬টি পাখির পারিবারিক দলে থাকে। বনের ধারে বা আবাদি জমিতে ও গাছের চূড়ায় খাবার খোঁজে। কখনও রসালো ফলের ঝোপে নামে তবে ভূমিতে নামার ঘটনা বিরল। খাদ্যতালিকায় রয়েছে রসালো ফল, ফুলের কুঁড়ি, মধু ও পোকামাকড়। পোষা ময়না ভাতও খায়।

স্ত্রী-পুরুষ ময়না আজীবনের জন্য জোড়া বাঁধে। সঙ্গী না মারা যাওয়া পর্যন্ত ওদের জোড় অটুট থাকে।বর্ষাকালে এরা প্রজনন করে। এপ্রিল-জুলাই মাসে বন অথবা চা বাগানের ধারে ১০-১৫ মিটার উঁচুতে গাছের কোটরে (সাধারণত কাঠঠোকরার সৃষ্ট) ঘাস, পালক ও আবর্জনা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো নীল, সংখ্যায় দুই-তিনটি। ডিমের মাপ ৩.৬ × ২.৬ সেমি।ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫। ছানারা উড়তে শিখলেই মা-বাবার কাছ থেকে সরে পড়ে।

তথ্যসূত্র ও ছবিঃ উইকিপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×