
এখনতো রাস্তা ঘাটে চলতে ফিরতে মানুষের সাথে ধাক্কা লাগলে মানুষ বলে উঠে, ভাই আমি ফটোগ্রাফার। DSLR কাধে ঝুলিয়ে ফটাফট ছবি তুলে আবার সাথে সাথে দেখে নেওয়া সেটা ফ্লিকার, পিকাসা কিংবা পিন্টারেস্ট-ফেসবুকে আপলোড করার মত হয়েছে কিনা। না হলে মুছে দেবার অপশন তো আছেই। একটা সময় ছিল, যখন কেউ তার পছন্দের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলার পর ছবিটি কেমন হয়েছে তা দেখার জন্য পয়সা খরচ করতে হত। শুধু তাই না, ছবি তোলার একঘণ্টার মধ্যে এমনকি একদিনের মধ্যেও দেখার সুযোগ ছিলনা। বর্তমানে ডিজিটাল সেন্সরের সুযোগে মানুষ যেভাবে ফটোগ্রাফার হয়ে উঠছে সেসময় মেগাপিক্সেল কিংবা কোয়ালিটি কন্ট্রোল মোড, অটোফোকাস এসব কোন শব্দই মানুষ চিনত না। তবে মানতেই হবে আজকাল কিছু তরুণ ফটোগ্রাফিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এবং তারা সত্যি সত্যিই ভালো কিছু করছে। শুধুমাত্র শখের বশে তোলা কথাটার সাথে যুক্ত হয়েছে পেশা হিসেবে এর সার্থকতা। আজকাল তো অনেকেই ফুলটাইম প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। যাদের ছবি এখন একেকটি নৈন্দনীক শিল্প।
আজকে আপনার কিছু প্রাচীন মডেলের ক্যামেরা দেখাতে চাই যেগুলো বর্তমানের ফটোগ্রাফিং এবং DSLR ক্যামেরার চলার পথে পাকা রাস্তা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছে। তবে তার আগে ক্যামেরার মডেলগুলো নিয়ে কিছু তথ্য শেয়ার করতে চাচ্ছি।
ইন্টারনেট ঘেঁটে জানলাম, আলো কে কোন ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করে তা কোন স্থায়ী ইমেজ হিসেবে তৈরি করার আইডিয়াটি আসে ৬ষ্ঠ শতকের কিছু আগে। কিন্তু ১৭ শতকে ফটোগ্রাফিক প্লেট আবিস্কারের পূর্ব পর্যন্ত পুরো আইডিয়াটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। দিনকে দিন এক্সপোজার কে নিয়ন্ত্রন করা, সুক্ষাতি সুক্ষ লেন্স তৈরি, ফোকাস করার কলা কৌশল এবং ফটোগ্রাফিং ফ্লিমের পিছনে মানুষের শ্রম ও গবেষণা ফটোগ্রাফিং কে আরও অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে এসেছে। এ ব্যাপারে জর্জ ইস্টম্যান(১৮৫৪-১৯৩২) এর নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতেই হয়। যিনি একই সাথে একজন ব্যাবসায়ি, একজন সৃজনশীল উদ্ভাবক এবং একজন মানবহিতৈষী ছিলেন। ইউকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে, ১৮৮৯ সালে তিনি 'ইস্টম্যান কোডাক' (পরবর্তীতে কোডাক) নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন এবং 'brownie' নামে ক্যামেরা বাঁজারে আনেন। পার্সোনাল ক্যামেরা জগতে brownie এক নতুন যুগের সুচনা করে। তৎকালীন সময়ে brownie এতোটাই সাড়া ফেলেছিল যে সেটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত দাপটের সাথে বাঁজারে চষে বেরিয়েছে।

এটি brownie মডেলের একটি ক্যামেরা যেটি ১৯২৪ সালে তৈরি করা হয়েছিল। (ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার। মডেলঃ No. 2A Brownie Model C
এধরনের ক্যমেরা গুলোকে বক্স ক্যামেরা। বক্স ক্যামেরা গুলো আগে খুব বিখ্যাত ছিল এর সরল গঠনের কারনে। বর্তমানে বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না তবে কোন সৌখিন ব্যাক্তি কালেকশনে পাওয়া যেতে পারে।
এরকম আরও কিছু বক্স ক্যামেরাঃ

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Ferrania Zeta Duplex

Brownie মডেলের আরেকটি ক্যামেরা। (ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেল Kodak Brownie Target Six-20

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ অজানা।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Kodak Brownie Starlet

শিকাগো ভিত্তিক Herbert George Co. এর তৈরি ১৯৫০ সালের করা ক্যামেরা।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Imperial Mark 27
কিছু কিছু ক্যমেরা আছে ভাজ করে রাখা হত। কারন ক্যামেরা লেন্স অনেক বেশি জায়গা দখল করত। পরে তা ভাজ করে আলাদা করে ব্যাগে রাখার পদ্ধতি চালু হয়। এরকম ফোল্ডিং কিছু ক্যামেরা

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ অজানা।

১৯৩৭ সালের একটি ক্যামেরা।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Certo Super Sport Dolly
TLR বা Twin-lens Reflex Camera নামের আরেক ধরণের ক্যামেরা রয়েছে। এধরনের ক্যামেরায় সম্মুখে দুটি লেন্স থাকত। দুটি লেন্সের ফোকাস দূরত্ব একই থাকত। সাধারণত উপরের লেন্স দিয়ে দেখে নিচের লেন্স দিয়ে ছবি তুলত।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Summicron-M 50mm on M8.2

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ rolleiflex_0348

১৯৮০ সালের ক্যামেরা। সোভিয়েত শাসনামলে বানানো। ৩৫ডলার খরচ করলেই পাওয়া যেত।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Lubitel2
সাধারণ মডেলের কিছু ক্যামেরার ফটোঃ

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ YASHICA Electro 35 GT (1969)

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Argus C3 Match-Matic

অসাধারণ ডিজাইনের এই ক্যামেরাটি Argus কোম্পানির হলেও Argus কোম্পানির জন্য জার্মানির Balda-Werke কোম্পানি ১৯৬৭ সালে বানিয়েছিল।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Argus Lady Carefree

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিয়াকা, মডেলঃ Olympus OM1

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ অজানা।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Nikon FM2n

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ canonet0069

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ অজানা। তবে ছবিটির ডেসক্রিপশন পড়তে ভুলবেন না।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ Olympus 35SP

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার, মডেলঃ argus c-four
উফফফ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন? ওকে এখানেই শেষ করে দিচ্ছি। শেষ করার আগে কিছু কথা বলে শেষ করে দিব। পোস্টটি লিখার জন্য সর্বমোট ১১২টি ছবি সংগ্রহ করেছিলাম। ইচ্ছা ছিল সবকয়টা দিব। কিন্তু পোস্টের সাইজ বেশি হয়ে যাবে দেখে দিলাম না

পোস্ট কৃতজ্ঞতাঃ
ফ্লিকার ডট কম।
ফটো ডট টুট প্লাস ডট কম।
ইউকিপিডিয়া।
পিন্টারেস্ট ডট কম
কোডাকের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ইস্টম্যান কে নিয়ে আরও পড়তে পারেনঃ
George Eastman
George Eastman - Kodak
The Brownie Camera এর অফিশিয়াল Page
Twin-lens reflex camera
প্রথম ও শেষ ছবি দুটি এখান থেকে সংগ্রহ করেছি।
ফটোগ্রাফি নিয়ে আমার খুব পছন্দের দুটি ফেসবুক পেইজঃ ArtPics ও Onexposure লাইক করতে পারেন।
হাতে সময় থাকলে আমার আরও কিছু পোস্ট পড়তে পারেনঃ
কোকাকোলা'র(CocaCola) কিছু প্রাচীন প্রিন্ট এড কালেকশন - ০২ (18+)
বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরার খনি
ধন্যবাদ।
একটি বল্টু মিয়া প্রোডাকশন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৩:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


