somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জান্নাতী নারীর পরিচয়

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ লেখাটি আমার নয়, তবে নারীর জন্য খুবই দরকারী বলে পোষ্ট করলাম। আশা করি পড়লে সব বোনেরা উপকৃত হবেন। ]


কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জান্নাতী নারীর পরিচয়
মুহাঃ আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী

ভূমিকাঃ

আল্‌ হামদু লিল্লাহ ওয়াছ্‌ ছালাতু ওয়াস্‌ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ্‌।
পুরুষের জন্য নারী সহোদরের মত মূল্যবান। সে তার জীবন সঙ্গী। একজন অপরজনের পরিপুরক। উভয়ের প্রতি আল্লাহ তা’আলা নির্দিষ্ট বিধি-নিষেধ নাযিল করেছেন এবং তাদেরকে তাদের কর্মের উপর প্রতিফল প্রদানের অঙ্গিকার করেছেন। পূণ্যের ঠিকানা জান্নাতে পাপের ঠিকানা অন্যস্থানে। সেই জান্নাত লাভের আশায় ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার কামনায় নারী-পুরুষ সকলকেই সেই পথ অবলম্বন করতে হবে।
আলোচ্য পুস্তকে একজন মুসলিম রমণী কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করে জান্নাত লাভে ধন্য হতে পারবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাত এবং পূর্বসূরী নেক মনিষীদের বচন থেকে জান্নাতী রমণীর পরিচয় ও গুণাবলী তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেক মুমিন নারীর উচিত হচ্ছে উক্ত গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান হাসিল করা এবং তদানুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা।
একজন নারীর জান্নাতী হওয়ার জন্য অবশ্যই স্বামীর সহযোগিতা আবশ্যক। তাই বিষয়টিকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য স্বামী কিভাবে স্ত্রীর হক আদায় করবে? স্ত্রী জান্নাতের পথ পরিত্যাগ করে বক্রপথে চললে স্বামী কোন পদ্ধতিঅবলম্বন করে তাকে সংশোধন করতে পারবে? ইত্যাদি বিষয়ে স্বামীকেও নসীহত করা হয়েছে।
ইসলামের নির্দেশাবলীর জ্ঞান লাভ, তার প্রতি বিশ্বাস ও কর্ম জীবনের বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক নারী ও পুরুষের নিম্ন লিখিত মূলনীতিটি সর্বাবস্থায় স্মরণ রেখে চলতে হবে। আর তা হচ্ছে, আল্লাহর বিধানের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ এবং সর্বাবস্থায় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবনকে নিজের জন্য মডেল বা আদর্শরূপে গ্রহণ। এ উপলক্ষে মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالا مُبِينًا
“আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল কোন আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন অধিকার নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।”
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“আমার উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু ঐ ব্যক্তি নয় যে জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে। তাঁরা বললেন, কে এমন আছে জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।”
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছটি যে ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত জীবনের চলমান পথে স্মরণ রাখবে তার জন্য ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান মান্য করা সহজসাধ্য হবে।
সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি আমাদের নিবেদন, এই পুস্তকের মধ্যে যে কোন ধরনের ত্রুটি বা অভিযোগ পরিলক্ষিত হলে, আমাদেরকে জানাতে চেষ্টা করবেন। আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে তা গ্রহণ করে পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করব। ইনশাআল্লাহ্‌॥
আল্লাহর কাছে আমাদের আকুল আবেদন তিনি যেন এই পুস্তিকাটি দ্বারা আমাদেরকে এবং সমস্ত মুসলমানকে উপকৃত করেন। একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্য কবূল করে নেন। মুসলিম রমণীদের তাঁর সন্তুষ্টি মূলক কাজ আঞ্জাম দিয়ে জান্নাত লাভে ধন্য করেন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন॥
নিবেদক,
মুহাঃ আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, জুবাইল দা‘ওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার
পো: বক্স নং ১৫৮০, ফোনঃ ০৩-৩৬২৫৫০০
সঊদী আরব।
[email protected]

ইসলামে নারীর মর্যাদাঃ

ইসলাম নারীকে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় ভূষিত করেছে। এই ধর্ম নারীকে যে সম্মান দিয়েছে তা কোন যুগে কোন কালে কোন ধর্ম ও কোন জাতি দিতে পারেনি। ইসলাম নারীকে পুরুষের সাথী হিসেবে নির্ধারণ করেছে। তাদের একজন অপরজন ছাড়া অচল। দু‘জনই পরস্পরের মুখাপেক্ষী। নারীর দৃষ্টিতে যে পুরুষ শ্রেষ্ঠ মানুষের মধ্যে সেই সর্বোত্তম।
শিশুকালে নারী দুগ্ধ পানের সাথে সাথে বিশেষ তত্বাবধান ও উত্তম লালন-পালনের দাবীদার। সে সময় সে পিতা-মাতা ও ভাই-বোনের চক্ষু শীতলকারীনী ও হৃদয় ঠান্ডাকারীনী। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তিকে এই কন্যা সন্তান প্রদান করার মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে, সে যদি তাদের প্রতি সুন্দর আচরণ করে, তাদেরকে সঠিকভাবে লালন-পালন করে, তবে তারা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য পর্দা স্বরূপ হয়ে যাবে।” রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কারো যদি তিনজন কন্যা সন্তান থাকে বা তিনজন বোন থাকে, অথবা দু’জন কন্যা বা দু’জন বোন থাকে এবং সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌কে ভয় করে তাদের প্রতি করুণা ও সদ্ব্যবহার করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
এই নারী প্রাপ্তবয়স্কা হলে পরিবারে সর্বাধিক সম্মানিত। যার সম্মান ও ইজ্জত-আবরু রক্ষার জন্য পুরুষ তার সর্বাধিক প্রিয় বস্তু জানও বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। পরপুরুষের কাল হাত অগ্রসর হলে, অপ্রিয় কন্ঠ তাকে ত্যাক্ত করলে ও লোভনীয় চোরা দৃষ্টি তার প্রতি নিক্ষিপ্ত হলেই সে তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয় এবং তার ইজ্জতের সংরক্ষণ করতে নিজের জানকে বাজী রাখে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি নিজ পরিবারের ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হবে, সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।”
এই নারী বিবাহিতা হলে, আল্লাহর বাণীর দৃঢ় অঙ্গিকারের মাধ্যমে হয়। স্বামীর গৃহে সে হয় সর্বাধিক নিকটতম সাথী, সম্মানিত প্রতিবেশী। স্বামীর উপর আবশ্যক হয় তাকে সম্মান করা, তার প্রতি করুণা করা ও তাকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা। ভরণ-পোষণসহ তার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকা এবং সে ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি না করা।
এই নারী মাতা হলে, আল্লাহর হক আদায় করার সাথে সাথে তাঁর সাথে সদ্ব্যবহার করা ওয়াজিব হয়ে যায়। আল্লাহর সাথে শির্ক যেমন নিষিদ্ধ তেমনি মায়ের নাফরমানী ও তার সাথে অসদাচরণও নিষিদ্ধ। জনৈক ব্যক্তি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে কে আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক অধিকার রাখে? তিনি বললেন, তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা।”
এই নারী বোন হলে, ইসলাম তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে, তাকে সম্মান ও তার সম্ভ্রম রক্ষা করতে আদেশ করেছে।
এই নারী খালা হলে, খেদমত ও সদ্ববহারের ক্ষেত্রে মায়ের স্থানে তাঁর মতই মর্যাদাবান।
এই নারী বৃদ্ধা হলে বা দাদী-নানী হলে পরিবারে তিনি হন অত্যধিক সম্মানিতা ও সর্বশ্রদ্ধেয়া। সন্তান-সন্তুতি, নাতী-নাতনী ও নিকটাত্মীয় সকলেই তার প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকে। তার মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
এই নারী যদি দূরবর্তী কোন সাধারণ নারী হয়, তবে ইসলামের অধিকার অনুযায়ী তাকে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা কর্তব্য, দৃষ্টি নত রাখা আবশ্যক।
ইসলাম নারীকে অধিকার দিয়েছে- সে শিক্ষা অর্জন করবে, সম্পদ উপার্জন করবে, সম্পদের মালিক হবে, বেচা-কেনা করবে, উত্তরাধীকার হবে, বিবাহের প্রস্তাব দানকারী পুরুষকে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।
ইসলামী সমাজের সর্বত্রই নারী এভাবেই সম্মানিত হয়ে আসছে। ফলে নারী সেই সমাজে সর্বাধিক মূল্যবান, মর্যাদাবান ও শ্রদ্ধাভাজন হয়ে অবস্থান করে।

নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্বঃ
আল্লাহ্‌ বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ
“পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কেননা আল্লাহ তাদের একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদাবান করেছেন। এবং পুরুষগণ তাদের সম্পদ খরচ করে থাকে।”
হাফেয ইবনু কাছীর এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, পুরুষ নারীর কতৃত্বকারী। অর্থাৎ সে তার প্রধান, তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, তার শাসক এবং বাঁকা পথে চললে তাকে শিক্ষাদানকারী।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিম্ন লিখিত বাণীটি উক্ত অর্থকে সমর্থন করে। আবদুল্লাহ্‌ বিন আবু আউফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللَّهِ لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لا تُؤَدِّي الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِيَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ
“গাইরুল্লাকে সিজদা করার জন্য আমি যদি কাউকে আদেশ করতাম তবে নারীকে আদেশ করতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। শপথ সেই সত্বার যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, কোন নারী তার পালনকর্তার হক আদায় করতে পারবে না যে পর্যন্ত সে তার স্বামীর যাবতীয় হক আদায় না করবে। এমনকি যদি উটের হাওদাজে বসে তাকে সহবাস করতে আহবান করে, তবুও বাধা দিবে না।”
আল্লাহ্‌ বলেন,
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ
“পূণ্যবতী রমণীগণ আনুগত্য করে এবং আল্লাহর সংরক্ষিত প্রচ্ছন্ন বিষয়ের সংরক্ষণ করে।”
ইমাম ইবনু তায়মিয়া ফতোয়া গ্রন্থে এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘নারী সর্বদা স্বামীর আনুগত্য করবে। তিনি বলেন, আল্লাহ ও রাসূলের পর নারীর আনুগত্য পাওয়ার জন্য স্বামীর চাইতে অন্য কেউ অধিক হকদার নয়।’
অতএব বর্তমান যুগের মডার্ন ও প্রগতিবাদী নারীরা সাবধান। যারা স্বামীর অবাধ্য হয়ে চলতে চায়, পুরুষের সাদৃসাবল্বন করে পুরুষের উপর কর্তৃত্ব করতে চায়। লজ্জা ও আবরু পদদলিত করে বেপরওয়াভাবে যা ইচ্ছা তা করতে চায়, যেখানে খুশি যেতে চায়। স্বাধীনতা ও নারী অধিকারের নামে আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়া ও তার চাকচিক্য ক্রয় কতে চায়। সাবধান হে মুসলিম বোন! তাদের চক্রান্তের জাল থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন। তাদের পথ ও চরিত্র থেকে সতর্ক হোন। কারণ সেদিন বেশী দূরে নয় যখন আপনার যৌবনের চমক ও অহংকার শেষ হবে, মৃত্যুর বিভিষীকা আপনাকে ঘিরে ফেলবে। আপনি উপস্থিত হবেন সেই দিনে যেদিন শিশু বার্ধক্যে উপনিত হবে। অর্থাৎ- ক্বিয়ামত দিবস।
সৎ রমণী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদঃ
আবদুল্লাহ্‌ বিন আমর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ
“পৃথিবীটা হচ্ছে ভোগের বস্তু। আর পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে নেক রমণী।”
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ
“চারটি গুণের কারণে কোন রমণীকে বিবাহ করা হয়, তার সম্পদ, বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য ও ধর্মভীরুতা। ধর্মভীরু নারী বিবাহ করে তুমি বিজয়ী হও। তোমার দু’হাত ধুলোলুন্ঠিত হোক।”
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, “চারটি বস্তু সৌভাগ্যের। ১) নেক রমণী ২) প্রশস্ত আবাসস্থল ৩) সৎ প্রতিবেশী এবং ৪) আরাম দায়ক আরোহী। আর চারটি বস্তুতে রয়েছে দুর্ভাগ্য। ১) অসৎ নারী। ...।”
এ সমস্ত উক্তি ও অনুরূপ আরো অনেক হাদীছ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, একজন মুসলিম পুরুষের জীবন সঙ্গী নির্বাচন করার জন্য একজন নেক ও সৎ রমণী অনুসন্ধান করা কত গুরুত্বপূর্ণ। আর মুসলিম রমণীর উপর আবশ্যক হচ্ছে নেক স্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বোত্তম গুণাবলী সমূহ অর্জন করার চেষ্টা করা। যাতে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হন। ইহ-পরকালে তার জীবন হয় পূণ্য ও সফলতায় পরিপূর্ণ।
হে মুসলিম বোন! নিম্নে নেক রমণী হওয়ার জন্য কুরআন-সুন্নাহ ও পূর্বসূরী নেক মনিষীদের কতিপয় উক্তি সন্নিবেশ করা হল। এগুলোর শিখুন এবং নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করুন। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “শিক্ষা অর্জন করার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করা যায়, ধৈর্যের অনুশীলনের মাধ্যমে সহিষ্ণু হওয়া যায়। যে ব্যক্তি কল্যাণ লাভের চেষ্টা করে, তাকে উহা প্রদান করা হয়।”

সৎ স্ত্রীর গুণাবলীঃ
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ
“পূণ্যবতী রমণীগণ আনুগত্য করে এবং আল্লাহর সংরক্ষিত প্রচ্ছন্ন বিষয়ের সংরক্ষন করে।” (সূরা নিসা- ৩৪) হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) অত্র আয়াতের তাফসীরে বলেন, صالحات বলতে সৎ ও পূণ্যশীল নারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। ইবনু আব্বাস প্রমুখ বলেন, قانتات অর্থ হচ্ছে, স্বামীর আনুগত্যকারীনী। حافظات للغيب অর্থ সম্পর্কে সুদ্দী প্রমুখ বলেন, স্বামীর অনুপস্থিতে স্ত্রী নিজের ইজ্জতের সংরক্ষণ করবে এবং স্বামীর সম্পদ হেফাযত করবে।
আবদুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيلَ لَهَا ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ
“মুসলিম রমণী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রামাযানের ছিয়াম পালন করে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তবে তাকে বলা হবে, জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি ভিতরে প্রবেশ কর।”
আনাস বিন মলেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, “কোন ধরণের রমণী জান্নাতী আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তোমাদের জান্নাতী রমণীগণ হচ্ছে, স্বামীর প্রতি প্রেম নিবেদনকারীনী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারীনী। তার আনুগত্যের প্রকাশ হচ্ছে, সে রাগান্বিতা হলে বা তার সাথে খারাপ আচরণ করা হলে বা স্বামী তার প্রতি রাগান্বিত হলে, স্বামীর কাছে গিয়ে বলে, এই আমার হাত আপনার হাতে সপে দিলাম, আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি চোখের পলক ফেলব না। অর্থাৎ আমি কোন আরাম নিব না কোন আনন্দ বিনোদন করব না যতক্ষণ আপনি আমার প্রতি খুশি না হন।”
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ
রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করা হল হে আল্লাহর রাসূল! কোন শ্রেণীর নারী সর্বোত্তম? তিনি বলেন, “তার পরিচয় হচ্ছে তুমি তার দিকে চাইলে সে তোমাকে আনন্দিত করবে, কোন নির্দেশ দিলে তা বাস্তবায়ন করবে। তার নিজের ব্যাপারে এবং স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে স্বামী পসন্দ করেন না এমন কাজ করে তার বিরোধীতা করবে না।”
অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমর (রাঃ)কে লক্ষ্য করে বললেন,
أَلا أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ
“আমি কি তোমাকে মানুষের আকর্ষণীয় শ্রেষ্ঠ গুপ্তধন সম্পর্কে বলে দিব না? তা হচ্ছে, নেক রমণী।স্বামী তার দিকে তাকালে সে তাকে আনন্দিত করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং বাড়িতে না থাকলে তার ইজ্জত-আবরু রক্ষা করে।”
ওহে মুসলিম বোন নিজের প্রতি লক্ষ্য করুন, উক্ত গুণাবলী কি আপনার চরিত্রে সমাবেশ ঘটাতে পেরেছেন। আপনি কোথায়? আপনার কি উচিত নয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির পথ অনুসন্ধান করা? দু’নিয়া-আখেরাতে সুখের জীবন গঠন করার জন্য স্বামী- সন্তানের খেদমত করা ও আনন্দময় সংসার গড়তে সচেষ্ট হওয়া?
স্বামীর খেদমত জান্নাতে প্রবেশ করার মাধ্যমঃ
হুসাইন বিন মেহসান (রাঃ) বলেন, আমার ফুফু আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। একদা তিনি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে কোন প্রয়োজনে গিয়েছিলেন। প্রয়োজন শেষ হলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ قَالَتْ مَا آلُوهُ إِلا مَا عَجَزْتُ عَنْهُ قَالَ فَانْظُرِي أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّمَا هُوَ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ
“তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার জন্য তুমি কেমন স্ত্রী? আমি বললাম, একান্ত অপারগ না হলে তার খেদমত করতে কোন ত্রুটি করি না। তিনি বললেন, ভালভাবে খেয়াল রাখবে, তুমি কিরূপ তার খেদমত করে থাক। কেননা সেই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।”
অর্থাৎ- তার অনুগত্য ও খেদমত করলে জান্নাতে যাবে আর অবাধ্য হলে জাহান্নামে যাবে। শায়খ আলবানী বলেন, ‘এই হাদীছ থেকে সুস্পষ্টভাবে এ দলীল পাওয়া যায়, স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর উপর ওয়াজিব এবং সাধ্যের মধ্যে তার খেদমত করা তার উপর আবশ্যক। সন্দেহ নেই যে, খেদমতের প্রথম বিষয় হচ্ছে, স্বামীর গৃহের তদারকি করা তার সন্তান-সন্তুতিকে সুষ্ঠুভাবে লালন-পালন করা।’
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ مَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الْجَنَّةَ
“যে নারী এমন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে যে, স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

জান্নাতী রমণীর কতিপয় আলামতঃ
উল্লেখিত হাদীছ সমূহ থেকে জান্নাতী রমণীর পরিচয়ে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
1) জান্নাতী রমণী নেক ও পূণ্যের কাজে অংশ নেয় এবং আপন পালনকর্তার ইবাদত করে তাঁর হক আদায় করে।
2) জান্নাতী রমণী এমন ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করবে যাতে আল্লাহর নাফরমানী নেই।
3) নিজের ইজ্জতের হেফাযত করবে- বিশেষ করে স্বামীর অনুপস্থিতিতে।
4) স্বামীর সম্পদের হেফাযত করবে ও তার সন্তানদেরকে সঠিকভাবে লালন-পালন করবে।
5) সর্বদা এমনভাবে স্বামীর সম্মুখবর্তী হবে যাতে তিনি খুশি হন এবং এজন্য নিজের অতিরিক্ত সৌন্দর্য ও হাসি মুখ তার সামনে প্রকাশ করতে সচেষ্ট হবে।
6) স্বামী রাগান্বিত হলে যে কোন প্রকারে তাকে খুশি করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে। কেননা সেই তার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। যেমনটি ইতোপূর্বে হাদীছে উল্লেখ হয়েছে।
7) স্বামী তার সঙ্গ চাইলে কোনভাবেই তাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে না। তার ডাকে সাড়া দিবে এবং পরিপূর্ণরূপে নিজেকে তার কাছে সমর্পন করবে।
জান্নাতের অঙ্গীকারঃ
উল্লেখিত কাজগুলো করলেই প্রিয় নবীজীর ভাষায় তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার অঙ্গীকার রয়েছে। যেমনটি তিনি এরশাদ করেনঃ
স্ত্রী যদিঃ
1) পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে।
2) রামাযানের ছিয়াম পালন করে।
3) নিজ লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। (ব্যভিচার প্রভৃতি থেকে বিরত থাকে।) এবং
4) স্বামীর আনুগত্য করে।
তবে তাকে বলা হবে জান্নাতের আটটি দরজার যে কোনটি দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ কর।
আনুগত্যশীল নেক রমণীর দৃষ্টান্তঃ
হায়ছাম বিন আদী আত্‌ ত্বাঈ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শা’বীর বরাতে মুজালেদ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। শা’বী বলেন, শুরাইহ আমাকে একবার বললেন, শা’বী! তুমি বনু তামীম গোত্রের রমণী বিবাহ কর। কেননা আমি তাদেরকে সর্বাধিক জ্ঞানী ও বুদ্ধিমতি দেখেছি।
শা’বী প্রশ্ন করলেন, তাদের বুদ্ধিমত্তার তুমি কি দেখেছো? শুরাইহ বললেন, আমি এক দুপুরে জনৈক ব্যক্তির জানাযা শেষে ফেরার পথে তাদের এক বাড়ীর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। বাড়ীর দরজায় দেখলাম এক বৃদ্ধা এবং তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন বালিকা। মেয়েটি ছিল অতিব সুন্দরী ও রুপসী। এটা দেখে আমি তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম এবং পানি পান করতে চাইলাম। অথচ আমার কোন পিপাসাই ছিল না।
বৃদ্ধা বললেন, কোন ধরণের পানীয় চাও।
আমি বললাম, সহজলভ্য যে কোন পানীয়।
বৃদ্ধা বললেন, এই মেয়ে! একে দুধ পান করাও। মনে হচ্ছে লোকটি ভিনদেশী।
আমি বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করলামঃ মেয়েটি কে?
সে বললঃ তার নাম যায়নাব বিনতে জারীর। হানযালা পরিবারের এক মেয়ে।
আমি বললামঃ বিবাহিতা না কুমারী?
সে বললঃ এখন পর্যন্ত অবিবাহিতা কুমারী।
আমি বললামঃ তার সাথে আমার বিবাহের ব্যবস্থা করে দিন।
সে বললঃ যদি তুমি তার যোগ্য হও তবে হতে পারে।
আমি একথা শুনে গৃহে ফিরে এলাম। কায়লুলা তথা দুপুর বেলার নিদ্রা যাওয়া ইচ্ছা করলাম। কিন্তু চোখে নিদ এল না। যোহরের নামায আদায় করে, আমার বন্ধুবর সম্মানিত ক্বারী সাহেবদেরকে সাথে নিলাম। তাদের মধ্যে আলকামা, আসওয়াদ, মুসআইয়্যেব এবং মূসা বিন আরফাতা ছিলেন। তাঁদেরকে সাথে নিয়ে মেয়েটির চাচার নিকট পৌঁছলাম। তিনি বললেন, আপনাদের কি খেদমত করতে পারি?
আমি বললামঃ আপনার ভাতিজী যায়নাবকে বিবাহ করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
তিনি জাবাবে বললেনঃ সেও আপনার ব্যাপারী অনাগ্রহী নয়।
তারপর তিনি তার সাথে আমার বিবাহ দিয়ে দিলেন। সে যখন আমার বন্ধনের জালে আটকা পড়ল আমি যেন লজ্জিত হলাম। মনে মনে বললাম, তামীম গোত্রের মেয়েদের সাথে আমি কি আচরণ করতে পারি? আবার তাদের অন্তরের রূঢ়তার কথাও আমার মনে ভাসল। মনে মনে বললাম, তাকে তালাক দিয়ে দিব নাকি? আবার বললাম, যা হওয়ার হয়েছে, তাকে রেখেই দিব। মর্জি মোতাবেক চললে তো ভাল অন্যথা পথ খোলাই আছে তালাক দিয়ে দিব।
শা’বী! তুমি যদি আমার পাশে হতে যখন কিনা বনু তামীমের মেয়েরা তাকে হাদিয়া-উপহার দিচ্ছিল! তারপর তাকে আমার রুমে প্রবেশ করিয়ে দিল!
আমি মনে মনে বললামঃ সুন্নাত তো হচ্ছে, স্ত্রীকে স্বামীর নিকট প্রবেশ করালে দু’রাকাত ছালাত আদায় করা। তারপর আল্লাহর কাছে স্ত্রীর কল্যাণ কামনা করা ও অকল্যাণ থেকে আশ্রয় কামনা করা। তাই আমি দু’রাকাত নামায আদায় করলাম। নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে দেখি সেও পিছনে আমার অনুসরণে নামায আদায় করছে। নামায শেষ করলে তার দাসীরা এসে আমার পরনের কাপড় নিয়ে হলুদ রঙ্গের একটি চাদর পরিয়ে দিল।
ঘর থেকে লোকজন প্রস্থান করলে আমি স্ত্রীর নিকটবর্তী হতে চাইলাম এবং তার দিকে হাত বাড়ালাম।
কিন্তু সে বাধা দিয়ে বললঃ আবু উমাইয়্যা! একটু থামুন। প্রশান্তি ও ধৈর্যের সাথে নিজ স্থানে অবস্থান করুন। তারপর বললঃ
(الحمد لله، أحمده وأستعينه، وأصلي على محمد وآله، إني امرأة غريبة، لا علم لي بأخلاقك فبين لي ما تحب فآتيه ......)
‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য নিবেদিত। আমি তাঁর প্রশংসা গাইছি ও তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করছি। দরূদ পেশ করছি মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তাঁর পরিবারের উপর। নিঃসন্দেহে আমি আপনার কাছে একজন অপরিচিত নতুন নারী। আমি আপনার আচরণ, অভ্যাস ও রীতি-নীতি সম্পর্কে অবগত নই। দয়া করে বলুন আপনি আমার কাছে কি রকম আচরণ ভালবাসেন? যাতে করে আমি আপনার পসন্দমত চলতে পারি। আর আপনি যা অপসন্দ করেন তা থেকে বিরত থাকতে পারি!’
সে আরো বললঃ সন্দেহ নেই যে আপনার গোত্রে আপনার উপযুক্ত মেয়ে ছিল। আর আমার গোত্রেও আমার জন্য উপযুক্ত স্বামী ছিল। কিন্তু আল্লাহ্‌ যা ফায়সালা করে রেখেছেন তা অবশ্যই হবে। আল্লাহর যা নির্দেশ হয় মানুষ সেটাই করে। অতএব আপনি যার মালিক হয়েছেন তার সাথে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক আচরণ করবেন। অর্থাৎ- সৎভাবে সাংসারিক জীবন পরিচালনা করা অন্যথা ভালভাবে পৃথক করে দেয়া। (أقول قولي هذا وأستغفر الله لي ولك) আমার কথা এটুকুই। আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য এবং আমার জন্য মাগফিরাত কামনা করছি।
শুরাইহ বলেলেন, শা’বী! তার এই কথা শুনে আমিও একটি বক্তব্য দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করলাম। আমি বললামঃ
(الحمد لله، أحمده وأستعينه، وأصلي على محمد وآله وأسلم، فإنك قلت كلاماً ......)
‘নিঃসন্দেহে তুমি এমন কিছু কথা বলেছো যদি তুমি তার উপর দৃঢ় পদ থাক তবে তোমার উপকার হবে। কিন্তু যদি তার বিপরীত হয় তবে উহা তোমার বিপক্ষে দলীল হিসেবে গণ্য হবে। আমি এরূপ এরূপ আচরণ পসন্দ করি এবং এরূপ এরূপ আচরণ অপসন্দ করি। আমরা দু’জন একই সূত্রে গাঁথা। তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না। ভাল কিছু দেখলে তার প্রচার করবে। আর মন্দ কিছু দেখলে তা গোপন করবে।
মেয়েটি বললঃ আরো কিছু কথা ছিল যা বলা হয়নি। আমার পরিবারে লোকদের বেড়াতে আসা আপনি কি পসন্দ করেন?
আমি বললামঃ আমি চাই না যে আমার শশুর পরিবারের লোকেরা আমার পেরেশানী ও ক্লান্তির কারণ হবেন।
সে বললঃ আপনার কোন কোন প্রতিবেশীকে আপনি ভালবাসেন? তাদের কেউ এলে ভিতরে আসার অনুমতি দিব? আর কাকে কাকে অপসন্দ করেন, আমিও তাকে অপসন্দ করব?
আমি বললামঃ উমুক গোত্রের লোকেরা ভাল মানুষ। আর উমুক গোত্রের লোকেরা অসৎ।
শুরাইহ্‌ বলেনঃ শা’বী! আমি তার সাথে আনন্দময় একটি রাত কাটালাম। সে আমার সাথে পূর্ণ একবছর অবস্থান করল। এর মধ্যে অপসন্দনীয় কোন কিছু আমি তার নিকট থেকে দেখিনি। বছর পূর্ণ হলে আমি বিচারালয় থেকে এক দিন বাড়ি ফিরে দেখি এক বৃদ্ধ মহিলা গৃহের তদারকি করছে। এটা কর এটা করো না ইত্যাদি।
আমি প্রশ্ন করলামঃ ইনি কে? বাড়ির লোকেরা বললঃ আপনার শশুর পক্ষের উমুক নারী। একথা শুনে আমি যে ধারণা করছিলাম তা পাল্টে গেল এবং আমি আনন্দিত হলাম। আমি আসন গ্রহণ করলে বৃদ্ধা আমার নিকটে এলেন।
বললেনঃ আস্‌ সালামু আলাইকুম আবু উমাইয়া!
আমি বললামঃ ওয়া আলাইকাস্‌ সালাম। আপনাকে তো চিনলাম না?
তিনি বললেনঃ আমি আপনার শাশুড়ী।
বললামঃ আল্লাহ আপনাকে আমাদের আরো নিকটবর্তী করে দিন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার স্ত্রীকে কেমন পেলে?
বললামঃ সর্বোত্তম স্ত্রী।
তিনি আমাকে বললেনঃ আবু উমাইয়া! কোন নারী শুধুমাত্র দু’টি অবস্থায় খারাপ বা বাঁকা হয়।
1- যখন সন্তান প্রসব করে।
2- অথবা যখন অতিরিক্ত স্বামী-সোহাগ লাভ করে।
কোন বিষয়ে সন্দেহ হলেই তুমি লাঠি ব্যবহার করবে। আল্লাহর শপথ পুরুষেরা খারাপ নারীর চাইতে নিকৃষ্ট কোন জিনিস নিজ গৃহে রাখে না।
আমি বললামঃ আল্লাহর শপথ করে বলছি, আপনি তো তাকে শ্রেষ্ঠতম আচরণ ও সর্বোত্তম ভদ্রতা শিখিয়েছেন।
তিনি বললেনঃ তোমার শশুর পরিবারের কেউ তোমাদের কাছে বেড়াতে আসুক তুমি কি তা পসন্দ কর?
জবাব দিলামঃ তারা যখন চাইবেন।
শুরাইহ বলেন, এই রমণী প্রতি বছর একবার আমার গৃহে আসতেন এবং আমাকে পূর্বোল্লিখিত নসীহত ও উপদেশ করতেন।
মেয়েটিকে নিয়ে আমি বিশ বছর সংসার করেছি। এর মাঝে অপ্রীতিকর কোন কিছু তার কাছ থেকে পাইনি। তার দ্বারা এমন কিছু ঘটেনি যা আমার ক্রোধের কারণ হয়। আমি সর্বদাই তার উপর খুশি থেকেছি। কিন্তু শুধু একটি বার, তখন আমিই তার উপর যুলুম করেছিলাম। একদা গৃহে আমি ফজরের দু’রাকাত সুন্নাত নামায আদায় করলাম। এমন সময় মুআয্‌যিন নামাযের ইক্বামত দিতে লাগল। আমি ছিলাম মসজিদের ইমাম। হঠাৎ দেখি একটি বিষধর বিচ্ছু হেঁটে বেড়াচ্ছে। আমি ওটাকে একটি পাত্র দিয়ে ঢেঁকে দিলাম। তারপর স্ত্রীকে বললামঃ যয়নাব! আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি নড়াচড়া করবে না। নামায শেষে ফিরে এসে দেখি বিচ্ছুটি তাকে দংশন করে নিয়েছে। সাথে সাথে আমি সূরা ফাতিহা ও মুআব্‌বেযাতাইন (সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়ে তাকে ঝাড়তে লাগলাম। যেহেতু তাকে বলেছিলাম আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি নড়াচড়া করবে না, তাই বিচ্ছুটি পাত্রের নীচ থেকে বের হয়ে তাকে দংশন করল কিন্তু সে আমার নির্দেশের লংঘন করল না এবং সেখান থেকে পালিয়ে গেল না। সে স্বামীর এতদূর আনুগত্যকারী ছিল। অথচ তাকে ঐ নির্দেশ দিয়ে আমি কত বড়ই না ভুল করেছিলাম, কত বড়ই না যুলুম তার উপর করেছিলাম।
¯স্বামীর সংসারে মুসলিম নারী নিম্ন লিখিত বিষয়ে সতর্ক থাকবেঃ
নীচে এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করা হল যা থেকে বেঁচে থাকা ও দূরে থাকা মসুলিম নারীর উপর অপরিহার্য। এ সমস্ত বিষয় মুসলিম রমণীর জান্নাতে প্রবেশের জন্য বাধা স্বরূপ:
1) স্বামীর অবাধ্য হওয়াঃ
জাবের বিন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈদের দিন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে নামায আদায় করলাম। তিনি খুতবা দেয়ার পূর্বে আযান ও ইকামত ছাড়াই নামায পড়ালেন। অতঃপর বেলাল (রাঃ)কে সাথে নিয়ে দন্ডায়মান হলেন। খুতবায় তিনি মানুষকে আল্লাহর ভয় দেখালেন, তাঁর আনুগত্যের নির্দেশ প্রদান করলেন, মানুষকে নসীহত করলেন, নেক কাজের উপদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করলেন। এরপর সেখান থেকে উঠে নারীদের নিকট আগমণ করলেন এবং তাদেরকেও নসীহত করলেন ও সৎ কাজের নির্দেশ দিলেন। তারপর বললেন,
تَصَدَّقْنَ فَإِنَّ أَكْثَرَكُنَّ حَطَبُ جَهَنَّمَ فَقَامَتِ امْرَأَةٌ مِنْ سِطَةِ النِّسَاءِ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ فَقَالَتْ لِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ لأَنَّكُنَّ تُكْثِرْنَ الشَّكَاةَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ قَالَ فَجَعَلْنَ يَتَصَدَّقْنَ مِنْ حُلِيِّهِنَّ يُلْقِينَ فِي ثَوْبِ بِلالٍ مِنْ أَقْرِطَتِهِنَّ وَخَوَاتِمِهِنَّ
“ওহে রমণীগণ! তোমরা বেশী বেশী দান-সাদকা কর। অধিকহারে তওবা ইস্তেগফার কর। কেননা নারীরাই অধিকহারে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তখন মহিলাদের মধ্যে থেকে উত্তম হিসেবে বিবেচিত একজন নারী দাঁড়িয়ে পড়ল- কষ্ট-ক্লেশের কারণে যার উভয় গন্ডের রং বদলে গিয়েছিল। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কি? নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কারণ তোমরা স্বামীর নাফরমানী কর বেশী, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কর বেশী। তখন নারীরা নিজেদের গহনা খুলে সাদকা দিতে লাগলেন। কানের দুল, হাতের আংটি প্রভৃতি খুলে খুলে বেলাল (রাঃ)এর কাপড়ে ফেলতে লাগলেন।
2) স্বামীকে রাগান্বিত করাঃ
আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
ثَلاثَةٌ لا تُجَاوِزُ صَلاتُهُمْ آذَانَهُمُ الْعَبْدُ الآبِقُ حَتَّى يَرْجِعَ وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ
“তিন ব্যক্তির নামায তাদের কানের উপরে উঠে না (অর্থাৎ কবূল হয় না)ঃ
ক) পলাতক ক্রিতদাস যে নিজের মালিকের নিকট থেকে পলায়ন করেছে। যতক্ষণ সে ফিরে না আসবে তার নামায কবূল হবে না।
খ) সেই নারী যে স্বামীকে রাগান্বিত রেখে রাত কাটায়।
গ) সেই ইমাম লোকেরা যার ইমামতি পসন্দ করে না।”
3) স্বামীকে কষ্ট দেয়াঃ
মুআ’য বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لا تُؤْذِي امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِي الدُّنْيَا إِلا قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ لا تُؤْذِيهِ قَاتَلَكِ اللَّهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكَ دَخِيلٌ يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا
“কোন নারী যখন দুনিয়াতে তার স্বামী্কে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতে তার হুরেঈন স্ত্রী বলতে থাকেন, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন! ওকে কষ্ট দিও না। উনি তো তোমার কাছে কয়েক দিনের মেহমান। অচিরেই তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে (জান্নাতে) আগমণ করবেন।”
এ হাদীছে স্বামীকে অসন্তুষ্ট করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এজন্য যে, নেককার স্বামী দুনিয়ার স্ত্রীর কাছে কিছু দিনের জন্য অতিথিস্বরূপ। তার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট। তাছাড়া স্বামীকে দুঃখ দিলে জান্নাতে তার হুরেঈন স্ত্রীগণ উক্ত দুনিয়ার স্ত্রীর জন্য বদদু’আ করে।

4) স্বামীর অনুগ্রহের অস্বীকার করাঃ
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ “কিয়ামত দিবসে আল্লাহ ঐ নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। অথচ স্বামী থেকে সে স্বয়ং সম্পূর্ণ হতেই পারে না।”
অন্য এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
وَرَأَيْتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ مَنْظَرًا قَطُّ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ قَالُوا بِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ بِكُفْرِهِنَّ قِيلَ أَيَكْفُرْنَ بِاللَّهِ قَالَ بِكُفْرِ الْعَشِيرِ وَبِكُفْرِ الإِحْسَانِ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ
“আমি জাহান্নাম দেখেছি কিন্তু আজকের মত ভয়ানক অবস্থায় কখনো দেখিনি। জাহান্নামের মধ্যে আমি নারীদেরকেই অধিকহারে দেখেছি।
লোকেরা প্রশ্ন করলঃ নারীদের বেশীর ভাগ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ কি?
তিনি বললেনঃ তাদের কুফরীর (নাফরমানীর) কারণে।
তারা আরয করলঃ নারীরা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে?
তিনি বললেনঃ তারা স্বামীর সাথে কুফরী করে। অর্থাৎ তার অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা না করে তা অস্বীকার করার কারণে অধিকহারে জাহান্নামে যায়। তুমি দেখবে তাদের কারো সাথে সারা জীবন করুণা ও অনুগ্রহের আচরণ করার পর যদি সে তোমার নিকট সামান্য কোন ত্রুটি দেখতে পায়, তাহলে বলে ফেলবে, আপনার নিকট থেকে কখনো কোন উপকার পেলাম না।” (আপনার সংসারে আসার পর থেকে দুঃখেই আমার দিন যাচ্ছে।)

5) বিনা কারণে স্বামীর নিকট তালাক চাওয়াঃ
ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا الطَّلاقَ فِي غَيْرِ مَا بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ
“যে নারী কোনরূপ অসুবিধা ছাড়াই বিনা কারণে স্বামীর নিকট তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ হারাম।”
কিন্তু এই তালাক চাওয়া যদি কোন শরঈ কারণে হয়, যেমন স্বামী যথাযথভাবে স্ত্রীর হক আদায় করে না, তার ভরণ-পোষণে শীথিলতা করে অথবা স্বামী শরীয়ত বহির্ভূত চলাফেরা করে, তবে তালাক চাওয়াতে কোন দোষ নেই। কিন্তু আাফসোস বর্তমান সমাজ সম্পূর্ণ বিপরীত। এমন অনেক নারী এমন আছে, যারা স্বামীর কাছে অন্যায় আবদার করে। আর স্বামী তা পূরণ করতে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে বলে আমাকে তালাক দিয়ে দাও। যেমন দাবী করে বাড়িতে টেলিভিশনের ব্যবস্থা করতে হবে, গান-বাদ্যের জন্য ওডিও-ভিডিও রাখতে হবে। সিনেমা, পার্টি ও ক্লাবে নিয়ে যেতে হবে। বল্গাহীন বেপর্দা চলাফেরা করার স্বাধীনতা দিতে হবে... ইত্যাদি।
6) স্বামীর উপস্থিতিতে তার বিনা অনুমতিতে নফল রোযা রাখাঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لا تَصُومُ الْمَرْأَةُ وَبَعْلُهَا شَاهِدٌ إِلا بِإِذْنِهِ
স্বামী উপস্থিত থাকলে নারী তার অনুমতি ছাড়া যেন (নফল) রোযা না রাখে।”
সন্দেহ নেই যে স্বামী গৃহে থাকলে স্ত্রী যদি রোযা রাখে তবে তাকে তার হক থেকে বঞ্চিত করা হবে। যা তাকে ফিতনা বা অসৎ পথে হাঁটার রাস্তা সুগম করে দিবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে নফল রোযা। কেননা ফরয রোযা আল্লাহর হক। আর স্বামীর হক পূর্ণ করার আগে আল্লাহর হক পূরা করা অতি আবশ্যক।
7) সহবাস থেকে স্বামীকে বাধা দেয়াঃ
নারী জাতির সৃষ্টি পুরুষকে উপলক্ষ্য করে হয়েছে। পুরুষের প্রশান্তি ও আনন্দের মাধ্যম হচ্ছে নারী। বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনের মাধ্যমে পরস্পর পরস্পরের আপন হয়। একজন নারী স্ত্রী হিসেবেস্বামীর যাবতীয় আভ্যন্তরীন প্রয়োজন পূরণ করবে, তার গৃহের দেখাশোনা, সন্তানদের লালন-পালন ও সংসারের পরিপাটিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে। সেই স্ত্রীস্বামীর হৃদয় বাগের ফুল হিসেবে তাকে খোশবু দিবে, ভালবাসার বন্ধনে তাঁকে সঁপে দিবে নিজের দেহ মন। ফলে ভরে উঠবে তাদের দাম্পত্য জীবন স্বররগীয় সুখের অমৃত সুধায়।
দাম্পত্য জীবনের সুন্দর এই সম্পর্কের কথা মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করে এরশাদ করেনঃ
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
“আর তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য হতে স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন। যাতে করে তোমরা তাদের নিকটে শন্তি লাভ কর। আর তোমাদের উভয়ের মাঝে সৃষ্টি করেছেন ভালবাসা ও সহানুভুতি। এতে রয়েছে নিদর্শন সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে থাকে।”
কিন্তু তারপরও কোন নারী যদি নিজের সৌন্দর্যের অহংকারে, বাপ-দাদা ও ধন-সম্পদের অহমিকায় স্বামীর সাথে অসদাচরণ করে, আঙ্গুলের দোলায় তাকে চালাতে চায়- এমনকি স্বামীকে শরীরিক অধিকার থেকে বাধা দেয় ও বঞ্চিত রাখে। এ নারী সৃষ্টি কুলের মধ্যে নিকৃষ্ট ও অভিশপ্ত। যেমনটি হাদীছে সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا لَعَنَتْهَا الْمَلائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ
“কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে, কিন্তু স্ত্রী তার আহবান প্রত্যাখ্যান করে, অতঃপর স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায় তবে, প্রভাত হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ সে স্ত্রীকে অভিশাপ দেয়।”
উক্ত হাদীছের সমর্থনে ত্বলক বিন আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِذَا الرَّجُلُ دَعَا زَوْجَتَهُ لِحَاجَتِهِ فَلْتَأْتِهِ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُّورِ
স্বামী যদি প্রয়োজন পূরণের (সহবাসের) জন্য স্ত্রীকে আহবান করে, তবে সে যেন তাৎক্ষণিক তার ডাকে সাড়া দেয়; যদিও সে চুলার কাছে বসে থাকে না কেন।”
অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهَا فَتَأْبَى عَلَيْهِ إِلا كَانَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ سَاخِطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنْهَا
“শপথ সেই সত্বার যার হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে বিছানায় (সহবাসের জন্য) আহবান করে আর সে উহা প্রত্যাখ্যান করে, তবে আকাশের অধিপতি আল্লাহ্‌ তা’আলা ততক্ষণ পর্যন্ত তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন যে পর্যন্ত স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট না হয়।”
8) স্বামীর গোপন কথা অন্যের কাছে ফাঁস করাঃ
এটি সমাজের একটি ভয়ানক ব্যধি। জ্ঞানের স্বল্পতা ও লজ্জহীনতার কারণে অনেক নারী, অনেক পুরুষ পরস্পর সহবাসের বিবরণ অন্যের কাছে বর্ণনা করে থাকে।
আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَعَلَّ رَجُلا يَقُولُ مَا يَفْعَلُ بِأَهْلِهِ وَلَعَلَّ امْرَأَةً تُخْبِرُ بِمَا فَعَلَتْ مَعَ زَوْجِهَا فَأَرَمَّ الْقَوْمُ فَقُلْتُ إِي وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُنَّ لَيَقُلْنَ وَإِنَّهُمْ لَيَفْعَلُونَ قَالَ فَلا تَفْعَلُوا فَإِنَّمَا ذَلِكَ مِثْلُ الشَّيْطَانِ لَقِيَ شَيْطَانَةً فِي طَرِيقٍ فَغَشِيَهَا وَالنَّاسُ يَنْظُرُونَ
“সম্ভবতঃ স্বামী নিজের স্ত্রীর সাথে কিছু করে উহা অন্যের কাছে প্রকাশ করে দেয়। সম্ভবতঃ স্ত্রী নিজ স্বামীর সাথে যা কিছু করে তা অন্যের কাছে বর্ণনা করে দেয়!? একথা শুনে লোকেরা চুপ থাকল, কেউ জবাব দিল না। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ হে আল্লাহর রাসূল! নারীরা এরূপ করে থাকে এবং পুরুষরাও এরূপ করে থাকে।
তিনি বললেন, তোমরা এরূপ করো না। কারণ এটা শয়তানী ব্যবহার। এদের উদাহরণ হচ্ছে সেই শয়তানের মত যে রাস্তার ধারে নিজ শয়তানী স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে অতঃপর সেখানেই তার সথে সহবাসে লিপ্ত হয়। আর লোকেরা তাদেরকে দেখতে থাকে।”
অন্য বর্ণনায় আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الأَمَانَةِ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِي إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِي إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا
“নিশ্চয় ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট অন্যতম বড় আমানত হচ্ছে, স্বামী স্ত্রীর গোপন বিষয়। এক ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয় অতঃপর তার গোপন কর্মের বিবরণ প্রকাশ করে দেয়।”
অপর বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক নিকৃষ্ট হচ্ছে সেই লোক, যে নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয় অতঃপর তার গোপন কর্মের বিবরণ মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়।”
9) স্বামীর গৃহ ছাড়া অন্যের বাড়ীতে নিজের কাপড় খোলাঃ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَا مِنِ امْرَأَةٍ تَضَعُ ثِيَابَهَا فِي غَيْرِ بَيْتِ زَوْجِهَا إِلَّا هَتَكَتِ السِّتْرَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ رَبِّهَا
“যে নারী নিজ স্বামীর বাড়ী ব্যতীত অন্য কারো বাড়ীতে গিয়ে নিজের কাপড় খোলে, তবে আল্লাহ তার লজ্জার পর্দাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।”
অর্থাৎ- যে নারী অন্য গৃহে গিয়ে পরপুরুষের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তার চাইতে অসভ্য, বেহায়া ও খরাপ কোন নারী নেই। অনেক এমন নারী আছে যারা হয়তো রাস্তায় চলাফেরাতে পর্দা বজায় রাখে কিন্তু উদ্দেশিত স্থানে পৌঁছে গেলে পর্দার ধারধারে না এসব নারীও এই হাদীছের আওতাভূক্ত হবে।
10) স্বামীর বিনা অনুমতিতে কাউকে তার বাড়ীতে প্রবেশ করানোঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতিরেকে কোন স্ত্রীর নফল রোযা রাখা বৈধ নয়। স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার বাড়ীতে প্রবেশ করতে দিবে না। স্বামীর বিনা অনুমতিতে কিছু খরচ করলে তার অর্ধেক ছওয়াব স্বামীকেও দেয়া হবে।”
11) স্বামীর অনুমতি না নিয়ে তার গৃহ থেকে বাইরে যাওয়াঃ
নারীর প্রাসাদ ও তাজমহল হচ্ছে তার স্বামী গৃহ- যেখানে সে দাম্পত্য সংসার অতিবাহিত করবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া গৃহ থেকে বের হবে না। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ
“তোমরা নিজেদের গৃহেই অবস্থান কর।”
এই আয়াতের তাফসীরে ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, নারী স্বামীর গৃহেই অবস্থান করবে বিনা প্রয়োজনে গৃহ থেকে বের হবে না। যেহেতু স্বামীর আনুগত্য করা নারীর জন্য ওয়াজিব তাই তার গৃহ থেকে তার অনুমতি বেতিরেকে বাইরে যাওয়া জায়েয নয়।
12) আল্লাহর অবাধ্য হয়ে স্বামীর আনুগত্য করাঃ
যদিও স্বামীর আনুগত্য করা নারীর উপর ওয়াজিব ও তার নাফরমানী করা হারাম। কিন্তু এই আনুগত্য হতে হবে সুমহান স্রষ্টা আল্লাহ ও তাঁর হাবীব সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্যের পরে, তাঁদের আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন করার পরে। স্বামী যদি এমন বিষয়ে আদেশ করে যাতে রয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী তবে তা শোনা যাবে না তা মানা যাবে না তার আনুগত্য করা যাবে না।
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
“আল্লাহর নাফরমানী করে সৃষ্টির কারো আনুগত্য করা যাবে না।”
আল্লাহকে নাখোশ রেখে পৃথিবীর কোন মানুষকে খুশি করা যাবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীছে এরশাদ করেছেনঃ
مَنِ الْتَمَسَ رِضَا اللَّهِ بِسَخَطِ النَّاسِ كَفَاهُ اللَّهُ مُؤْنَةَ النَّاسِ وَمَنِ الْتَمَسَ رِضَا النَّاسِ بِسَخَطِ اللَّهِ وَكَلَهُ اللَّهُ إِلَى النَّاسِ
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে নাখোশ করে মানুষকে খুশি করবে আল্লাহ তার প্রতি নাখোশ হবেন এবং মানুষকেও তার উপর অসন্তুষ্ট করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টি সত্বেও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে আল্লাহ তার প্রতি খুশি হবেন এবং মানুষকেও তার উপর খুশি করে দিবেন।”
সুতরাং ¯স্বামী যদি স্ত্রীকে বেপর্দা, নামাযে অলসতা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন প্রভৃতি আল্লাহকে নাখোশকারী কাজের আদেশ দেয়, তবে তার আদেশ শোনা যাবে না মানা যাবে না। অনুরূপভাবে স্ত্রীও যদি এধরণের অশ্লীলতা ও গর্হিত বিষয়ে স্বামীকে পরামর্শ প্রদান করে তবে তার পরামর্শ গ্রহণ করা চলবে না।
স্বামীর খেদমতঃ
সম্মানিত মুসলিম বোন! নিম্নে আল্লাহর নবীর মহিলা ছাহাবীদের অসংখ্য কাহিনী থেকে জনৈক নারীর ঘটনা বর্ণনা করছি। বুদ্ধিমানের জন্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট। কিভাবে তাঁরা স্বামীর খেদমত করতেন তার এক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হচ্ছে।
আবু বকর (রাঃ) সম্পর্কে কেই বা না জানে। তাঁর কলিজার টুকরা কন্যা আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুবাইর (রাঃ) আমাকে যখন বিবাহ করেন, তখন তাঁর কোন জায়গা-যমিন ছিল না, কোন দাস-দাসী ছিল না কিছুই ছিল না। শুধুমাত্র একটি ঘোড়া ছিল।
আসমা বলেন, আমিই ঘোড়টিকে দানা-পানি খাওয়াতাম, ঘাস ও খড়ের যোগান দিতাম। ঘোড়ার জন্য খেজুরের আঁটি কুটে তার খাদ্যে মিশাতাম তথা সার্বক্ষণিক তাকে খাওয়াতাম ও পানি পান করাতাম। তাঁর জন্য আটা খামির করতাম। কিন্তু আমি তখন ভালভাবে রুটি বানাতে জানতাম না। আমার কিছু পড়শী আনছারী মহিলা ছিলেন তাঁরাই আমাকে রুটি বানিয়ে দিতেন। ওরা খুবই ভাল মহিলা ছিলেন।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুবাইরকে যে যমীন দিয়েছিলেন সেখান থেকে আমি খেজুরের বিচির বোঝা নিজের মাথায় নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ী আসতাম। ঐ স্থানটি আমাদের বাড়ী থেকে দু’মাইল দূরে ছিল।
রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “নারী যদি জানতো স্বামীর কি হক, তবে স্বামীর দুপুরের খানা বা রাতের খানা উপস্থিত হলে খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে বসতো না। দাঁড়িয়েই থাকতো।”
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর আদরের দুলালী জান্নাতের সর্দারীনী ফাতেমা (রাঃ) তাঁর ¯স্বামী আলী (আঃ)এর খেদমত করতেন। খাদেম বা দাসী ছাড়াই স্বামীর গৃহের যাবতীয় কাজ নিজ হাতে সম্পাদন করতেন। আটা পিষতে গিয়ে যাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে হাতে ফোসকা পড়ে গিয়েছিল। কলসি কাঁখে পানি আনতে আনতে কোমরে দাগ পড়ে গিয়েছিল। বাড়ি-ঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করতে করতে পরনের কাপড় ধুলামলিন হয়ে গিয়েছিল। রান্না-বান্না করতে করতে কাপড় কালো হয়ে গিয়েছিল। একবার যুদ্ধে বন্দী কিছু দাসী মদীনায় এলে তা থেকে একটি দাসী চাইতে ফাতেমা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে গেলেন। কিন্তু তাঁকে পেলেন না। আয়েশা (রাঃ) এর কাছে আগমণের উদ্দেশ্য বলে ফিরে গেলেন। আয়েশা (আঃ) এর মুখে নবীজী তাঁর আদরের দুলালীর আগমনের কথা শুনে নিজেই তার সাথে দেখা করতে বের হলেন। গিয়ে দেখেন তাঁরা শুয়ে পড়েছেন। নবীজীর আগমনে তারা উঠে বসতে চাইলেন। কিন্তু তিনি বাধা দিয়ে তাদের মধ্যখানে বসে পড়লেন এবং বললেন, তোমরা যা চেয়েছো আমি কি তার চাইতে উত্তম জিনিস তোমাদেরকে দান করব না? তোমরা যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ্‌’ পাঠ করবে, ৩৩ বার ‘আল হামদুলিল্লাহ’ বলবে এবং ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করবে। ইহা তোমাদের জন্য একজন খাদেমের চাইতে উত্তম হবে।”
মেয়ের বিবাহ দেয়ার পর জনৈক মায়ের নসীহতঃ

উমামা বিনতে হারেছ নিজ কন্যার বিবাহের সময় তাকে এমন কিছু নসীহত করেন যা শুধু মেয়ের জন্যই নয়; বরং পরবর্তী সমস্ত নারীর জন্য মাইল ফলক হিসেবে অবশিষ্ট থাকবে।
তিনি মেয়েকে লক্ষ্য করে বলেন, ওহে আমার কলিজার টুকরা মেয়ে! আজ তুমি নিজের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, বান্ধবী ও প্রতিবেশী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এমন এক অপরিচিত পরিবেশে এমন এক অপরিচিত ব্যক্তির নিকট গমণ করছো যেখানেই রয়েছে তোমার আসল ঠিকানা সেই ব্যক্তিই তোমার প্রকৃত বন্ধু সাথী ও কল্যাণকামী। তুমি ওখানের আচার-আচরণ ও পরিবেশ সম্পর্কে মোটেও অবগত নও। তুমি যদি স্বামীর দাসী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পার, তবে দেখবে সেও তোমার দাসে পরিণত হয়েছে।
এই মূহুর্তে আমি তোমাকে কতিপয় নসীহত করছি। আল্লাহ চাহে তো এগুলো তোমার জীবনের সাফল্য ও সুখি দাম্পত্য জীবনের জন্য পাথেয় হবে।
1) স্বামীর প্রতি বিনীত থাকবে এবং অল্পতেই তার উপর সন্তুষ্ট হবে।
2) ভালভাবে তার কথা শুনবে ও মানবে।
3) -৪) তার চোখ ও নাকের পসন্দের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। তোমাকে যেন কখনো খারাপ দৃশ্যে সে না দেখে এবং তোমার নিকট থেকে কখনো যেন সর্বোত্তম সুগন্ধি ছাড়া অন্য কিছু না পায়।
৫)-৬) তার খাওয়া দাওয়া ও নিদ্রার বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখবে। কেননা ক্ষুধা ও অনিদ্রা মানুষকে বদমেজাজী ও †µvavw¤^Z করে তোলে।
৭) তার ধন-সম্পদের রক্ষণা-বেক্ষণ করবে। হিসাবের সাথে পরিমাণমত তার সম্পদ খরচ করবে।
৮) তার পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীর দেখাশোনা করবে। উত্তমভাবে মনযোগসহকারে তার সন্তান-সন্তুতিকে লালন-পালন করবে।
৯) তার কোন গোপন বিষয় ফাঁস করবে না ও তার নাফরমানী করবে না। কেননা তার গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলে একদিন সে তোমাকে ধোঁকা দিবে। অবাধ্য হলে তার বুকে আগুন জ্বালাবে তাকে ক্রোধান্বিত করবে।
১০) তুমি কাঙ্খিত লক্ষ্যে কখনই পৌঁছতে পারবে না যে পর্যন্ত তার সন্তুষ্টিকে নিজের সন্তুষ্টির উপর স্থান না দিবে, তার পছন্দ-অপছন্দকে নিজের পছন্দ-অপছন্দের উপর স্থান না দিবে।
আগুন জ্বালাবে প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধির জন্য স্ত্রীকে কতিপয় উপদেশঃ
শায়খ ইবনু জুবাইলান আগুন জ্বালাবে ভালবাসা ও প্রীতি অর্জন করার জন্য নারীদেরকে উদ্দেশ্যে করে কিছু নসীহত করেছেন। তা নিম্নরূপঃ
1) বিভিন্ন উপলক্ষে স্বামীর হাতে কপালে চুম্বন করা।
2) স্বামী বাইরে থেকে এলে সাথে সাথে স্বাগতম জানানোর জন্য দরজায় এগিয়ে আসা। তার হাতে কোন বস্তু থাকলে তা নিজের হাতে নেয়ার চেষ্টা করা।
3) সময় ও মেজাজ বুঝে ¯^vgxi সামনে প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত বাক্যালাপ করা। তার সামনে তার প্রশংসা করা। সম্মান ও শ্রদ্ধা মূলক আচরণ করা।
4) স্বামীর পোশাক-আশাকের পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা। (পরিচ্ছন্ন পুরুষ মানেই তার স্ত্রী পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন)। রান্নার ক্ষেত্রে ¯^vgx যা পছন্দ করেন তা নিজ হাতে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট থাকা।
5) সর্বদা স্বামীর সামনে হাসি মুখে থাকা।
6) স্বামীর জন্য নিজেকে সুসজ্জিত রাখা। শরীরে দুর্গন্ধ থাকলে বা রান্না ঘরের পোষাকে তার সম্মুখে না যাওয়া। মাসিক ঋতুর সময়ও সুসজ্জিত অবস্থায় থাকা।
7) স্বামীর সামনে কখনই নিজের কন্ঠকে উঁচু না করা। নারীর সৌন্দর্য তার নম্র কন্ঠে।
8) সন্তানদের সামনে স্বামীর প্রশংসা ও গুণগান করা।
9) নিজের এবং স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজনের সামনে আল্লাহর কৃতজ্ঞতার সাথে সাথে স্বামীর প্রশংসা করা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। কখনই তার বিরুদ্ধে তাদের নিকট অভিযোগ করবে না।
10) সুযোগ বুঝে স্বামীকে নিজ হাতে লোকমা তুলে খাওয়ানো।
11) কখনো স্বামীর আভ্যন্তরীন গোপন বিষয় অনুসন্ধান না করা। কেননা কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেন, ولا تجسسوا “তোমরা কারো গোপন বিষয় অনুসন্ধান কর না।” (সূরা হুজুরাত -১৩) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কারো প্রতি কুধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।”
12) স্বামী কখনো ivMw¤^Z হলে চুপ থাকার চেষ্টা করা। সম্ভব হলে তার রাগ থামানোর চেষ্টা করা। যদি সে নাহক রেগে থাকে তবে অন্য সময় তার মেজাজ বুঝে সমঝোতার ব্যবস্থা করা।
13) ¯^vgxi মাতাকে নিজের পক্ষ থেকে (সাধ্যানুযায়ী) কিছু হাদিয়া-উপহার প্রদান করা।
14) সম্পদশালী হয়ে থাকলে ¯^vgxi অভাব অনটনের সময় তাকে সহযোগিতা করা। উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (আমার ¯^vgx) আবু সালামার সন্তানদের জন্য যদি আমি অর্থ ব্যয় করি তবে কি তাতে আমি প্রতিদান পাব। ওদেরকে তো এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। ওরা তো আমারও সন্তান। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি যে পরিমাণ তাদের জন্য সম্পদ খরচ করবে, তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
15) ¯^vgxi নির্দেশ পালন, তার এবং তার সংসারের খেদমত প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা করা।
জান্নাতী রমণীর পর্দার বিবরণঃ
ইসলামী শরীয়ত নারীর ইজ্জত-আবরু হেফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত ও সুউচ্চ করেছে। নারীর পোষাক এবং সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্তারোপ করা হয়েছে তা শুধু তাকে সংরক্ষণ করার জন্যই, সৌন্দর্যের প্রকাশের মাধ্যমে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে তার সকল পথ বন্ধ করার জন্য। এটা নারীর ¯^vaxbZv‡K ক্ষুন্ন করা নয়; বরং তাকে লোলুপ দৃষ্টির ছোবল থেকে রক্ষা করা এবং তার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের মানকে সংরক্ষিত করা। সেই সাথে মহান স্রষ্টা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করতঃ তাঁর রেযামন্দী লাভ করে জান্নাতের অধিকারী হওয়া।
ইসলামী পর্দার মর্যাদা:
পর্দা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্য। কেননা তাঁদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে।
আল্লাহ্‌ তা’আলা নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে এরশাদ করেন:
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর- ৩১)
তিনি আরো বলেন:
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
“তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব- ৩৩)
আল্লাহ্‌ আরো বলেন,
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
“তোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” (সূরা আহযাব- ৫৩)
আল্লাহ্‌ আরো বলেন,
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلا يُؤْذَيْنَ
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯)
রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন: الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ “নারী গোপন বস্তু।” অর্থাৎ- তাকে ঢেকে রাখতে হবে।

পর্দা নারীর পবিত্রতা: আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯) নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে। এতে সে পূত-পবিত্রা সংরক্ষিতা থাকবে, আর তবেই তাকে কষ্ট দেয়া হবে না, ফাসেক বা খারাপ লোকেরা তাকে উত্যক্ত করতে সুযোগ পাবে না। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নারীর সৌন্দর্য অপরের কাছে প্রকাশ হলেই তাকে কষ্ট, ফিৎনা ও অকল্যাণের সম্মুখিন হতে হয়।

পর্দা নির্মলতা: আল্লাহ্‌ বলেন, “তোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” (সূরা আহযাব- ৫৩)
এ আয়াতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্ত্রীদের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইতে বলা হয়েছে; অথচ তাঁরা হচ্ছেন মুমিনদের সম্মানিত মাতা, পৃথিবীর তাবৎ নারীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচাইতে অধিক পূত-পবিত্র। তাদের চাইতে অধিক পবিত্র এমন কোন নারী আছে কি যারা পর্দা না করে বলবে যে আমাদের অন্তর ঠিক আছে? আর অযৌক্তিক কথা বলবে ‘মনের পর্দা বড় পর্দা’?
এই আয়াতে পর্দাকে ঈমানদার নারী-পুরুষের হৃদয়ের পবিত্রতার কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা চক্ষু যখন অবলকণ করে; হৃদয় তখন কামনা করে। আর এজন্যই দৃষ্টিপাত না করাটা হৃদয়ের পরিশুদ্ধতার কারণ এবং ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকার সুস্পষ্ট মাধ্যম। কেননা পর্দার মাধ্যমে দুর্বল অন্তরের মানুষদের কুপ্রবৃত্তিকে বিনষ্ট করে দেয়া হয়। আল্লাহ্‌ বলেন,
 إِنْ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে থাক, তবে পরপুরুষের সাথে নম্র ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলবে না। এতে দুবর্ল হৃদয়ের লোকদের অন্তরে লালচ (কুবাসনা) সৃষ্টি হবে।” (সূরা আহযাব- ৩২)

পর্দা নারীর আবরণ: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ লজ্জাশীল গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পসন্দ করেন।” (নাসাঈ) তিনি আরো বলেন: “যে নারী নিজ গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে গিয়ে ¯^xq পোষক খুলবে, সে আল্লাহ্‌ ও তার মাঝের পর্দা ছিঁড়ে ফেলবে।”

পর্দা হল ঈমান: আল্লাহ্‌ তা’আলা ঈমানদার নারী ব্যতীত কাউকে পর্দার নির্দেশ দেন নি। এজন্যই তিনি বলেছেন: “আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন!...”।
একদা বনূ তামীম গোত্রের কতিপয় নারী উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রা:) এর নিকট আগমণ করে, তাদের পরিধানে ছিল খুবই পাতলা পোষাক। তা দেখে আয়েশা (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা যদি মুমেনা হয়ে থাক, তবে এটা ঈমানদার নারীর পোষাক নয়।’

পর্দা আত্মসম্ভ্রম: আত্মসম্ভ্রমবোধ সম্পন্ন পুরুষের জন্যও পর্দা মানানসই, যে পুরুষ নিজ স্ত্রী ও কন্যাদের প্রতি পরদৃষ্টির লোলুপতায় মর্যাদাবোধে আঘাত প্রাপ্ত হয়। জাহেলী যুগে এবং ইসলামের মধ্যেও অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে নারীর মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। আলী (রা:) বলেন, “আমি শুনলাম তোমাদের নারীরা অনারব কাফের পুরুষদের সাথে বাজারে গিয়ে ভিড় জমায়? তোমাদের মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই? যার মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই, তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।”

বেপর্দার পরিণতিঃ
পর্দাহীনতা আল্লাহ্‌-রাসূলের নাফরমানী:
যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে সে তো নিজেরই ক্ষতি করবে। আল্লাহ্‌র কোনই ক্ষতি হবে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى
“আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে সে লোক নয় যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করে। তাঁরা প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে আমার নাফরমানী করবে সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে।”

পর্দাহীনতা অভিশাপ: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “শেষ যুগে অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু নারী হবে, যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে। তাদের মাথা হবে উটের কুঁজের মত। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ কর। কেননা তারা অভিশপ্ত।”
বেপর্দা জাহান্নামীদের কাজ: আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ...
“জাহান্নামবাসী দু’টি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনও দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোষাক পরেও উলঙ্গ থাকে...।”

বেপর্দা ইবলীসের সুন্নাত:
আদমের সাথে ইবলীসের ঘটনাই আমাদের সামনে ইবলিসের ষড়যন্ত্র উম্মোচন করে দেয়; সে কিরূপ আগ্রহী ছিল লজ্জাস্থান প্রকাশ হওয়া ও পর্দা উম্মোচন করার জন্য। বেপর্দা হচ্ছে শয়তানের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ্‌ বলেন,
يَابَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمْ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُمْ مِنْ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا
“হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে; যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে তাদের থেকে তাদের পোষাক খুলিয়ে দিয়েছে। যাতে করে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ে।” (সূরা আ’রাফ- ২৭)

সুতরাং ইবলিসই হল, বেপর্দা ও লজ্জাহীনতার আহ্বানকারী। আর সেই হল আধুনিক ‘নারী মুক্তি’ নামে আন্দোলনের সবচেয়ে বড় নেতা।

বেপর্দা ইহুদী নীতি: মুসলিম জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের ব্যাপারে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র কারো কাছে গোপন নয়। বিশেষ করে নারীর ফিৎনার মাধ্যমে। কেননা নারীর সাথে পুরুষের অবাধ মেলামেশা জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের প্রধান অস্ত্র। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
اتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ
“তোমরা দুনিয়া এবং নারী থেকে বেঁচে থাক। কেননা বনী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফিৎনা ঘটেছিল নারীর মাধ্যমে।”

বেপর্দা ঘৃণিত জাহেলী রীতি: আল্লাহ্‌ বলেন, “তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব- ৩৩)
এ আয়াতে বেপর্দাকে অন্ধকার যুগের বর্বরদের রীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাহেলী যুগের সবধরণের রীতি-নীতিকে পদদলিত করেছেন। তিনি বলেন: “মূর্খ যুগের সব বিষয় আমার দু’পায়ের নীচে।”

বেপর্দা চারিত্রিক পদস্খলনের অন্যতম মাধ্যম: কেননা এর মাধ্যমে নারী পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে তাদের চরিত্র ধ্বংস হয়। বিশেষ করে যুব সমাজ। কেননা বেপর্দা তাদের অন্তরে কুচিন্তার উদ্রেক করে; ফলে তারা ধাবিত হয় অশ্লীলতার দিকে।
বেপর্দার কারণে নারী হয় সস্তা সামগ্রী। যার বাস্তব প্রমাণ হল বর্তমান প্রচার মাধ্যম। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য-সামগ্রী বাজারজাত করার ক্ষেত্রে নারীকেই ব্যবহার করে থাকে।

বেপর্দার কারণেই বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানা ধরণের দূরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- এইডস্‌...। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلافِهِمِ الَّذِينَ مَضَوْا
“কোন জাতির মধ্যে যখনই অশ্লীলতার প্রকাশ ঘটবে, তখনই তাদের মধ্যে মহামারী, দুর্ভিক্ষ.. প্রভৃতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে; যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।”
বেপর্দা চোখের ব্যভিচারের পথকে সুগম করে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “চোখের ব্যভিচার হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা।” নি:সন্দেহে দৃষ্টি অবনত রাখার আনুগত্যকে লংঘণ করার কারণেই পৃথিবীতে ফিৎনা-ফাসাদের সূত্রপাত হয়েছে; যা আনুবিক বোমা ও ভূমিকম্পের চাইতে বেশী ক্ষতি করে থাকে মানুষের চরিত্রকে। আল্লাহ্‌ বলেন,
وَإِذَا أَرَدْنَا أَنْ نُهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا
“যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাসম্পন্ন লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করি, অত:পর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। ফলে তাদের উপর দন্ড ন্যায়ত: অবধারিত হয়ে পড়ে এবং তখন আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে থাকি।” (সূরা বানী ইসরাঈল- ১৬)

শরীয়ত সম্মত পর্দার শর্ত সমূহ:
1) নারী তার সমস্ত শরীর ঢেকে দেবে। আল্লাহ বলেন, “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর- ৩১)
আল্লাহ আরো বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯)
2) পর্দার পোষাকটি যেন নিজেই সৌন্দর্যমন্ডিত না হয়। যাতে ঐ পোষাকের সৌন্দর্য ঢাকার জন্য আরেকটি পর্দার প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং পর্দার উপর নকশা ও কারুকার্য খচিত থাকলে বা ঝলমলে পাথর বসানো ও রঙ্গিন হলে সে কাপড় পরিধান করবে না।
3) পর্দার কাপড় মোটা হবে। এমন পাতলা যেন না হয় যাতে কাপড়ের অভ্যন্তর থেকেও দেহ বা দেহের কান্তি দৃশ্যমান হয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে দিয়েছেন, “যে সব মেয়েলোক কাপড় পরেও ন্যাংটা, পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট এবং পুরুষদেরও নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারীনী, তারা জাহান্নামী। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।”
একটি বিয়ের কনে আয়েশা (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত হল। তার পরিধানে ছিল খুবই মসৃণ পাতলা কাপড়। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি এ ধরণের পোষাক পরিধান করে, সে সূরা আন-নূরে বিধৃত বিধানের প্রতি ঈমান আনেনি।’
4) পর্দার পোষাক প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবে। আঁটসাট বা সংকীর্ণ হবে না, যার দরুন দেহের উচ্চ-নীচ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই বাইরে দৃশ্যমান হয়ে উঠে, যদিও তা ¯^”Q বা পাতলা নয়। উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, দেহ্‌ইয়া কালবী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে একটি কিবতী (মিছরের তৈরী) মোটা কাপড় উপহার দিয়েছিল। তিনি উহা আমাকে পরিধান করার জন্য প্রদান করলেন। আমি বাড়িতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে পরতে দিলাম। নবীজী আমাকে বললেন, কি ব্যাপার তুমি কিবতী কাপড়টি পরিধান কর না? আমি বললাম, আমার স্ত্রীকে উহা পরিয়ে দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তাকে আদেশ কর সে যেন ওটার নীচে অন্য একটি কাপড় পরিধান করে নেয়। কেননা আমার আশংকা হচ্ছে ঐ কাপড়ে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ হয়ে পড়বে।” (আহমাদ, আলবানী হাদীছটিকে হাসান বলেন।)
5) আতর সুবাশ মিশ্রিত হবে না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ
“যে নারী সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয়, অতঃপর মানুষের সম্মুখ দিয়ে হেঁটে চলে- যাতে করে তারা তার সুবাশ অনুভব করে, তবে সেই নারী ব্যভিচারী।”
6) কাফের নারীদের পোষাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। ইসলাম কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য করতে নিষেধ করেছে। ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে কাফেরদের বিরোধিতা করা। রাসূলে কারীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ যে লোক অপর জাতির সাদৃশ্য অবল্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত গণ্য হবে।” (আবু দাউদ)
7) পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট পোষাক মেয়েরা পরবে না। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন এমন পুরুষকে যে নারীর সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে, এবং অভিশাপ করেছেন সেই নারীকে যে পুরুষের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে। (বুখারী)
8) উক্ত পোষাক যেন মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে না হয়। দুনিয়ার সৌন্দর্যে মানুষের মাঝে গর্ব করার উদ্দেশ্যে অতি উচ্চ মূল্যের পোষাক পরিধান করাই হচ্ছে প্রসিদ্ধির পোষাক। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبًا ثُمَّ تُلَهَّبُ فِيهِ النَّارُ
“যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য বিশেষ কোন পোষাক পরিধান করবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাকে অনুরূপ পোষাক পরিধান করাবেন, অতঃপর তাতে জাহান্নামের আগুন প্রজ্জলিত করা হবে।”

[একজন নও মুসলিম নারীর দৃষ্টিতে ইসলামী পর্দা:
‘খাওলা’ নাম্নী একজন জাপানী নারী ২৫/১০/১৯৯৩ তারিখে সঊদী আরবের আল কাসীম বুরাইদা শহরের ইসলামী সেন্টারে এসে ইসলাম গ্রহণ ও পর্দা সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তা থেকে সংক্ষেপে কিছু কথা এখানে উল্লেখ করা হল।
তিনি ফ্রান্সে অবস্থানকালে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর থেকে ইসলামী জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখেন। তিনি বলেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর পর্দার মধ্যে আমি খুবই আনন্দ ও গৌরব করতে লাগলাম। কেননা পর্দা শুধু আল্লাহ্‌র আনুগত্যের প্রতীকই নয়; উপরন্ত তা মুসলিম নারীদের মাঝে আন্তরিকতার বাঁধন। পর্দার মাধ্যমে আমি নিজেকে অত্যন্ত ভদ্র ও সম্মানিত মনে করি।
তিনি বলেন, অনেক নারী এমন পোশাক পরেন যাতে তাদের স্তন ও নিতম্বের আকৃতি পরিস্কার ফুটে উঠে। ইসলাম গ্রহণের আগেও আমি এধরণের পোশাক দেখলে অস্বস্তি বোধ করতাম। আমার মনে হত এমন কিছু অঙ্গ প্রদর্শন করা হচ্ছে যা মূলত: ঢেকে রাখা উচিত, বের করা উচিত নয়। একজন মেয়ের মনে যদি এসকল পোশাক এধরণের অস্তিত্ববোধ এনে দেয় তাহলে একজন পুরুষ এ পোষাক পরা মেয়েদের দেখলে কিভাবে প্রভাবিত হবেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।
তিনি বলেন, আপনি যদি কোন কিছু লুকিয়ে রাখেন তাহেল তার মূল্য বেড়ে যায়। এমনকি অন্য নারীর চোখেও তা অধিকতর আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পর্দানশীন বোনদের কাঁধ ও গলা অপূর্ব সুন্দর দেখায়, কারণ তা সাধারণত: আবৃত থাকে। যখন কোন মানুষ লজ্জার অনুভূতি হারিয়ে নগ্ন হয়ে রাস্তাঘাটে চলতে থাকে, প্রকাশ্য জনসমক্ষে পেশাব, পায়খানা ও যৌনতা করতে থাকে, তখন সে পশুর সমান হয়ে যায়, তাকে আর কোনভাবেই পশু থেকে পৃথক করা যায় না। আমার ধারণা, লজ্জার অনুভূতি থেকেই মানব সভ্যতার শুরু।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারে, পুরুষকে উত্তেজিত না করার উদ্দেশ্যে নারীর সমস্ত শরীর ঢেকে রাখাটা বাড়াবাড়ি এবং অতি-সতর্কতা। একজন পুরুষ কি শুধুমাত্র যৌন আগ্রহ নিয়েই একজন নারীর দিকে তাকায়? একথা ঠিক যে সব পুরুষই প্রথমেই যৌন অনুভূতি নিয়ে নারীকে দেখে না। তবে নারীকে দেখার পর তার পোশাক ও আচরণ থেকে পুরুষের মনে যে যৌন আগ্রহ সৃষ্টি হয় তা প্রতিরোধ করা তার জন্য খুবই কষ্টকর। এধরণের আবেগ নিয়ন্ত্রণে পুরুষরা বিশেষভাবে দুর্বল। বর্তমান বিশ্বের ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের পরিমাণ দেখলেই আমরা একথা বুঝতে পারব। নারী-পুরুষের সম্মতিমূলক ব্যভিচার বৈধ করার পরও পশ্চাত্যে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের ঘটনা ধারণাতীতভাবে বেড়ে চলছে।

কেবলমাত্র পুরুষদের প্রতি মানবিক আবেদন জানিয়ে এবং তাদেরকে আত্মনিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়ে আমরা ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচার বন্ধ করতে পারব না। হিজাব বা ইসলামী পর্দা ছাড়া এগুলো রোধের কোন উপায় নেই। একজন পুরুষ নারীর পরিধানের মিনি-স্কার্টের অর্থ এরূপ মনে করতে পারেন: “তুমি চাইলে আমাকে পেতে পার।” অপরদিকে ইসলামী হিজাব পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়: ‘আমি তোমার জন্য নিষিদ্ধ।’
যারা বেপর্দা হয়ে চলতে ভালবাসেন এবং সেটাকেই সভ্যতা মনে করেন, তাদেরকে আমি প্রশ্ন করব: আপনি কি একজন নগ্নবাদী? আপনি কি নগ্ন হয়ে চলাফেরা করেন? যদি আপনি নুডিস্ট না হন তাহলে বলুন, যদি কোন নুডিস্ট আপনাকে জিজ্ঞেস করেন: ‘কেন আপনি আপনার স্তন ও নিতম্ব ঢেকে রাখেন, অথচ মুখ ও হাতের ন্যায় স্তন ও নিতম্বও তো শরীরের স্বাভাবিক অংশ?’ তাহলে আপনি কি বলবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে আপনি যা বলবেন, আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি ঠিক সেকথাই বলব। আপনি যেমন শরীরের স্বাভাবিক অংশ হওয়া সত্বেও স্তন ও নিতম্বকে গোপনীয় অঙ্গ বলে মনে করেন, আমরা মুসলিম নারীর সমস্ত শরীরকে গোপনীয় অঙ্গ বলে মনে করি, কারণ মহান স্রষ্টা আল্লাহ্‌ এভাবেই আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এজন্যই আমরা নিকটাত্মীয় (মাহরাম) ছাড়া অন্যান্য পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখি।’]
স্বামীদের জন্য উপদেশঃ
এতক্ষণ আমরা মুমেন রমণীদেরকে সেই সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দিতে চেয়েছি যা আল্লাহ সুবহানাহু স্বীয় গ্রন্থ আল কুরআনে প্রণয়ন করেছেন এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের জীবনীতে বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু একথার অর্থ এটা নয় যে, পুরুষগণ শুধুমাত্র নারীদের উপর কর্তৃত্ব করেই চলবে। আর কর্তৃত্বের পাওয়ার দেখিয়ে সামান্য অযুহাতে (পান থেকে চুন খসলেই) স্ত্রীর উপর যুলম-নির্যাতন করবে। উল্লেখিত নির্দেশাবলী নারী পালন করতে অক্ষম হলে তার উপর অত্যাচার-নিপড়নের ষ্টিম রোলার উঠে আসবে। কেননা স্ত্রীদের সাথে সাদাচরণ করাও পুরুষের উপর আবশ্যক। মহান আল্লাহ্‌ সে দিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ করেনঃ
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
“আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর।” (সূরা নিসা- ১৯)
আল্লাহ আরো বলেন,
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ
“আর নারীদের উপর তাদের যেরূপ অধিকার আছে নারীদেরও তদানুরূপ ন্যায় সঙ্গত অধিকার আছে এবং তাদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।” (সূরা বাকারা- ২২৮)
সুতরাং প্রত্যেক পুরুষের উপর অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর অধিকার সমূহ যথাযথভাবে আদায় করা। অবশ্য এই অধিকার প্রদানের পরও নারীদের থেকে কোন কোন সময় বক্রতা লক্ষ্য করা যায়। কোন অবস্থাতেই তাদেরকে পুরাপুরিভাবে বশে আনা সম্ভব নয়। এজন্য পুরুষকে ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদেরকে সর্বদা সদুপদেশ প্রদান করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ
“তোমরা নারীদেরকে সদুপদেশ দাও। কেননা নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে উপরের অংশ। উহা যদি সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে দিবে, আর যদি ছেড়ে দাও তো বাঁকাই থাকবে। অতএব তোমরা নারীদেরকে সর্বদা সদুপদেশ প্রদান কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَرِيقَةٍ فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَبِهَا عِوَجٌ وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَهَا وَكَسْرُهَا طَلَاقُهَا
“নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে। তোমার পছন্দমত পথে সে কখনই সোজা হয়ে চলবে না। তুমি যদি তার থেকে উপকৃত হতে চাও তো এই বক্র অবস্থাতেই উপকৃত হও। কিন্তু এই বক্রতা সোজা করতে গেলে তাকে ভেঙ্গে দিবে। আর ভেঙ্গে দেয়া মানেই তাকে তালাক প্রদান করা।” (মুসলিম)
নারীদের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে বক্রতা থাকলেই যে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে এমন নয়; বরং তার মধ্যে অনেক ভাল গুণও আছে। কোন বিষয় হয়তো আপনি অপছন্দ করছেন কিন্তু তাতেই রয়েছে আপনার জন্য প্রভূত কল্যাণ যা আপনি জানেনই না। এজন্যই আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
“আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। যদি তাদেরকে অপসন্দ কর, তবে মনে রেখো তোমরা হয়তো কোন বিষয়কে অপসন্দ করবে; অথচ আল্লাহ্‌ তাতেই প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।” (সূরা নিসা- ১৯)
আল্লাহ্‌ আরো বলেন,
وَعَسى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ
“তোমরা হয়তো কোন বিষয়কে অপছন্দ কর, অথচ উহা তোমাদের জন্য কল্যাণজনক। আর কোন বিষয়কে তোমরা পছন্দ কর; অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণজনক।” (সূরা বাকারা- ২১৬)

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
لا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ
“কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। কেননা সে হয়তো তার কোন চরিত্রকে অপছন্দ করে কিন্তু অন্য চরিত্রকে অবশ্যই পছন্দ করবে।” (মুসলিম)
অতএব স্ত্রীর নিকট থেকে কোন বিরোধিতা বা অপছন্দনীয় বিষয় প্রকাশ পেলে দ্রুত তাকে উপদেশ দিবে নসীহত করবে। আল্লাহর কথা স্মরণ করাবে, তাঁর শাস্তির ভয় দেখাবে। তার আবধ্যতা ও গোঁড়ামীর পরিণতি যে ভয়াবহ সে সম্পর্কে সতর্ক করবে।
কিন্তু এরপরও যদি স্ত্রীর মধ্যে অবাধ্যতা, হঠকারিতা ও অসৎ চরিত্র লক্ষ্য করা যায়, তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও সীমারেখা রয়েছে যা লঙ্ঘন করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। পবিত্র কুরআনে এবং সুন্নাতে নববীতে এর একটি সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছেঃ
মহান আল্লাহ্‌ এরশাদ করেন,
وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
“আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।” (সূরা নিসা- ৩৪)
এই আয়াতে অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য যে নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছেঃ তাকে উপদেশ প্রদান করা।
দ্বিতীয় পদক্ষেপঃ তাকে বিছানায় পরিত্যাগ করা।
তৃতীয় পদক্ষেপঃ প্রহার করা।
উপদেশঃ উপদেশ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, তাকে ভদ্র ও নম্রভাবে বুঝাতে হবে, বিরোধীতা ও হঠকারিতার পরিণাম সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে। স্বামী যে সত্য সত্যই স্ত্রীর কল্যাণকামী এ বিষয়টি যেন তার কাছে প্রকাশ পায় এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে। রাগতঃ ভাষায় কর্কষ কন্ঠের কথা কখনো উপদেশ হতে পারে না। কারণ নম্র ব্যবহারের দ্বারা যে কাজ আদায় করা সম্ভব হয় রূঢ় ও কর্কষ ব্যবহারে তা সম্ভব হয় না। এজন্য আল্লাহ তা’আলা ফেরাউনকে হেদায়াত করার জন্য যখন মূসা ও হারূন (আঃ)কে প্রেরণ করলেন, তখন তাদেরকে উপদেশ দিলেন, তারা যেন তার সাথে রূঢ় আচরণ না করে। নির্দেশ দিলেন,
اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى، فَقُولا لَهُ قَوْلا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى
“তোমরা উভয়ে ফেরাউনের কাছে যাও নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। অতঃপর তাকে নম্র ভাষায় নসীহত কর। হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা আল্লাহকে ভয় করবে।” (সূরা ত্বা-হা- ৪৩-৪৪)
প্রত্যেক স্বামীর মনে রাখা উচিত যে, স্ত্রীর দুর্ব্যবহার ও অবাধ্যতার ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে মূসা (আঃ)এর চাইতে শ্রেষ্ট মনে করবেন না এবং স্ত্রীকে ফেরাউনের চাইতে নিকৃষ্ট মনে করবেন না। অতএব স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য কখনই কঠিন ও শক্ত ভাষা ব্যবহার করে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায় না।
আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন,
إِنَّ الرِّفْقَ لاَّ يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ شَانَهُ
“যে কোন বিষয়ে নম্রতা অবল্বন করা হলে তা সুন্দর হয়। আর কোন ক্ষেত্রে নম্রতা না থাকলে তা অসুন্দর ও নিকৃষ্ট হয়।” (মুসলিম)
অতএব স্ত্রী সংশোধন হোক, ফিরে আসুক সঠিক পথে এটা আন্তরিকভাবে চাইলে সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত শব্দ এবং দয়া-মায়া ও দরদমাখা বাক্যাবলী চয়ন করে তাকে সদুপদেশ দিবে। এবং সেই সাথে তার সংশোধনের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবে। আশা করা যায় সেই স্ত্রী সঠিক পথে ফিরে আসবে, সেই সাথে সংসারে ফিরে আসবে স্বর্গীয় পরিবেশ। দাম্পত্য জীবন ভরে উঠবে আনন্দ সুখ ও কল্যাণের আশির্বাদে।
কিন্তু তাতে যদি কাজ না হয়, নরম কথায় যদি চিড়া না ভিজে তবে, মহান আল্লাহ্‌ নির্দেশিত দ্বিতীয় পন্থা অবলম্বন করবে। আর তা হচ্ছেঃ
বিছানায় পরিত্যাগ করাঃ একই বিছানায় তার থেকে আলাদাভাবে শয়ন করা। এমন কথা নয় যে, তাকে ঘরের বাইরে রাখা বা অন্য ঘরে রাখা বা পিতা-মাতার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়াতে নির্দেশিত বিছানায় পরিত্যাগ করার ব্যাখ্যায় এরশাদ করেন,
وَلا تَهْجُرْ إِلا فِي الْبَيْتِ
“তাকে নিজ ঘরের মধ্যেই আলাদা করে রাখবে।” (বুখারী, অনুচ্ছেদ শিরোনাম ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিজ স্ত্রীদেরকে পরিত্যাগ করা’। আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ বিবাহ হা/১৮৩০।
‘বিছানায় আলাদা করে রাখা’র অর্থ সম্পর্কে আবদুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, তার সাথে তার বিছানাতেই শুইবে কিন্তু তার সাথে সহবাস করবে না। তার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে শয়ন করবে। অন্য বর্ণনা মতে ইবনু আব্বাস বলেন, ‘তার সাথে কথা বলবে না।’ (তাফসীর ইবনু কাছীর সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর)
ইমাম কুরতুবী এই পদক্ষেপের উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, স্বামীর প্রতি যদি স্ত্রীর ভালবাসা থাকে তাহলে এ অবস্থা তার কাছে খুবই অসহনীয় ও কষ্টকর হবে, ফলে সে সংশোধন হবে। কিন্তু ভালবাসায় ত্রুটি থাকলে বা মনে ঘৃণা থাকলে নিজ অবাধ্যতার উপর সে অটল থাকবে- সংশোধনের পথে অগ্রসর হবে না।’ (তাফসীরে কুরতুবী সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর)
সংশোধনের এই দ্বিতীয় নীতি ফলপ্রসু না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তা হচ্ছেঃ
প্রহার করাঃ এটি হচ্ছে সর্বশেষ পদক্ষেপ। আল্লাহ্‌ বলেন, وَاضْرِبُوهُنَّ ‘এবং তাদেরকে প্রহার করবে।’ এর তাফসীরে হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা রাখার পরও কোন কাজ না হয়, স্ত্রীগণ সংশোধনের পথে ফিরে না আসে, তবে হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষনে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
...فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
“তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আল্লাহর আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছে। আল্লাহর বাণী সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা তোমাদের গৃহে এমন লোককে প্রবেশ করতে দিবে না যাকে তোমরা পছন্দ কর না। কিন্তু তারা যদি নির্দেশ লঙ্ঘন করে এরূপ করে ফেলে তবে, তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু প্রহার যেন কঠিন ও কষ্টদায়ক না হয়। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে, তোমরা সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক তাদের খানা-পিনা ও কাপড়ের ব্যবস্থা করবে।” (ছহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্জ, হা/২১৩৭)
হাসান বাছরী এই প্রহারের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রহার যেন এমন না হয় যার কারণে শরীরে কোন চিহ্ন দেখা যায় বা শরীর ফুলে-ফুটে যায়।
আত্বা বলেন, ইবনু আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, উক্ত প্রহার কিরূপ হবে? তিনি বললেন, ‘মেসওয়াক বা অনুরূপ বস্তু দ্বারা প্রহার হতে হবে।’ (তাফসীরে কুরতুবী)
অন্য হাদীছে প্রহারের ক্ষেত্রে হালকাভাবে হলেও মুখমন্ডলে প্রহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
হাকীম বিন মুআবিয়া আল কুশাইরী তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 وَلا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلا تُقَبِّحْ
“এবং মুখমন্ডলে প্রহার করবে না ও গাল-মন্দ করবে না।”
একটি সতর্কতাঃ শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আল হামাদ বলেন, ইসলাম যখন স্ত্রীকে প্রহারের অনুমতি দিয়েছে, তখন এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, প্রহারের উদ্দেশ্য যেন নিছক স্ত্রীকে কষ্ট ও শাস্তি দেয়া, প্রতিশোধ নেয়া না হয়। স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে জোর-জবরদস্তি সংসার করতে বাধ্য করা যেন না হয়।
বরং এই পদক্ষেপ তো তখনই গ্রহণ করবে যখন একান্ত প্রয়োজন দেখা দিবে। আর তা হল, তাকে আদব দেয়া ও সংশোধন করা। এজন্য সেখানে থাকবে মুরব্বী ও শিক্ষকের মত মায়া-মমতা। সেখানে নিষ্ঠুরতা ও কঠোরতা থাকবে না। এখানে প্রবৃত্তির কোন স্থান নেই যে মনে চাইলেই যখন তখন তাকে মারপিট করবে অপমানিত করবে। এজন্য স্ত্রীকে প্রহারের ক্ষেত্রে কতগুলো শর্ত নির্ধারন করা হয়েছে। তা হচ্ছে নিম্নরূপঃ
ক) স্ত্রীকে উপদেশ প্রদান করার পর এবং তাকে বিছানায় আলাদা রাখার পরও সে যদি নিজ হঠকারিতায় অটল থাকে, তবে প্রহারের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
খ) শাস্তি যেন অপরাধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। যেখানে সদুপদেশ দিলে কাজ হবে সেখানে যেন বিছানায় আলাদা না করা হয়। অথবা বিছানায় আলাদা করার পদক্ষেপ গ্রহণ না করেই যেন মারপিটের দিকে অগ্রসর না হয়। কেননা অপরাধের চাইতে অধিক শাস্তি প্রদান করলে তা হবে অন্যায়।
গ) মনের মধ্যে এই নিয়ত রাখবে যে, এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্যার সামাধান করা, তাকে সংশোধন করা ও শিক্ষা দেয়া, সৎপথে ফিরে আসা। এছাড়া অন্য কিছু নয়। তাই উত্তম পন্থায় হাল্কাভাবে প্রহারের চেষ্টা করবে। ছোট-খাট চড়-থাপ্পড় বা মেসওয়াক দ্বারা আঘাত করলে সেই উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে।
ঘ) প্রহারের ক্ষেত্রে স্পর্শ কাতর স্থান সমূহ থেকে সতর্ক থাকবে। যেমন মাথা, পেট, মুখমন্ডল প্রভৃতি।
ঙ) হাড্ডি ভেঙ্গে দিবে না, কোন অঙ্গ নষ্ট করবে না, রক্তাক্ত করবে না এবং একস্থানে বারবার প্রহার করবে না।
চ) যদি সংশোধন হয়ে যায় বা অবাধ্যতা পরিত্যাগ করে, তবে কথায় কাজে দোষারোপ করবে না বা অন্যায় শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করবে না।
মনে রাখবেন, আপনার স্ত্রী আপনার জীবন সঙ্গী, আপনার সুখ-দুঃখের সাথী, আপনার বিছানার পার্টনার, আপনার গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে সে জানে। তার সংস্পর্শ ছাড়া আপনি অচল, তার প্রীতি-ভালবাসা ছাড়া আপনার জীবন বিষাদময়। সুতরাং শয়তানের প্ররচনায় কোন অন্যায় করে বসলে কিভাবে আপনি তাকে নির্দয়ের মত প্রহার করবেন? আবার রাত আসলেই তার উষ্ণ পরশে সুখ অনুভবের চেষ্টা করবেন? এজন্যই সর্বশ্রেষ্ট শিক্ষক মহানবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِلامَ يَجْلِدُ أَحَدُكُمُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ الْأَمَةِ وَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ 
“কিভাবে তোমাদের মধ্যে একজন নিজ স্ত্রীকে ক্রীতদাসীর মত বেত্রাঘাত করে; অথচ দিনের শেষে (রাতে) তার সাথেই সহবাসে লিপ্ত হয়?” (বুখারী ও মুসলিম)
যারা বিনা কারণে স্ত্রীলোকদের মারধোর করে তাদের সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “এধরণের লোক তোমাদের মধ্যে কখনো ভাল লোক বলে গণ্য হতে পারে না।” (আবু দাউদ হা/১৮৩৪)

স্বামীর উপর স্ত্রীর কপিতয় অধিকারঃ
যেমন করে স্বামী নিজ স্ত্রীর নিকট থেকে আশা করে যে সে তার যাবতীয় অধিকার সমূহ আদায় করে দিবে, তার খেদমত আঞ্জাম দিবে, অনুরূপ স্বামীর উপরও আবশ্যক হচ্ছে স্ত্রীর অধিকার সমূহ আদায় করা। তার নিকট থেকে সঠিক খেদমত পেতে চাইলে তার যাবতীয় উপকরণের ব্যবস্থা করে দেয়া। সেই সাথে স্ত্রীর কষ্ট হোক তার মানসিক যন্ত্রনার কারণ হোক এমন কোন আচরণ থেকে দূরে থাকা।
হাকীম বিন মুআবিয়া আল কুশাইরী বর্ণনা করেন তাঁর পিতা থেকে। তিনি বলেন, আমি একদা প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের উপর আমাদের স্ত্রীদের অধিকার কি? তিনি বললেন,
أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ وَلا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلا تُقَبِّحْ وَلا تَهْجُرْ إِلا فِي الْبَيْتِ
“তুমি যখন পানাহার করবে তাকেও পানাহার করাবে। তুমি পোশাক পরলে তাকেও পোশাক পরাবে। কখনো তার মুখমন্ডলে প্রহার করবে। আর নিজ গৃহের মধ্যে ছাড়া অন্য কোথাও তাকে পৃথক করবে না।”
মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ وَلَا تُقَبِّحْ “তাকে গাল-মন্দ করবে না।” (মুসনাদে আহমাদ হা/১৯১৬২)
কাজেই স্ত্রীর ভরণ-পোষণের ব্যাপারে ঔদাসিন্য বা উপেক্ষা দেখান কোন মুসলমানের পক্ষেই জায়েয নয়। হাদীছে বলা হয়েছেঃ
كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ
“একজন লোকের গুনাহগার হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার উপর অর্পিত, তাদের প্রতি সে ব্যাপারে চরম উপেক্ষা দেখাবে।” (আবু দাউদ, হা/১৪৪২)

আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন,
يَا عَبْدَاللَّهِ أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وَتَقُومُ اللَّيْلَ فَقُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَلا تَفْعَلْ صُمْ وَأَفْطِرْ وَقُمْ وَنَمْ فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا
“হে আবদুল্লাহ! আমি সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি নাকি দিনে রোযা রাখ আর রাতে নফল নামায আদায় কর? একথা ঠিক কি?
আমি বললামঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল!
তিনি বললেন, এরূপ করো না। কখনো রোযা রাখবে কখনো ছাড়বে। কখনো ঘুমাবে কখনো নামায আদায় করবে। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হক রয়েছে। তোমার উপর তোমার চোখের হক রয়েছে। তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে।” (বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম হা/১৮৩৯।)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ
“কারো যদি দু’জন স্ত্রী থাকে আর সে একজনকে ছেড়ে দ্বিতীয় জনের দিকেই বেশী গুরুত্বারোপ করে ও ধাবিত হয়, তবে সে ক্বিয়ামত দিবসে এমন অবস্থায় উঠবে যে তার শরীরের এক দিক থাকবে লটকানো।”

জান্নাতী রমণীর জন্য কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়াঃ

একজন রমণী জীবন চলার পথে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হয়। কখনো শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে ইসলাম বিরোধী কাজ করে ফেলে। কখনো অলসতা বশতঃ ইবাদত-বন্দেগীতে গাফলতি করে বসে। সুবুদ্ধি হলে নিজের ভুল বুঝতে পারলে তখন ফিরে আসতে চায় সৎ ও সত্য পথে। তাই নিম্নে কতিপয় সমস্যার উল্লেখ করে তার সমাধান দেয়া হল যাতে করে মুসলিম বোন তা থেকে উপকৃত হতে পারেন।

প্রশ্নঃ প্রায় দশ বছর আগে বালেগ হওয়ার নির্দিষ্ট আলামতের মাধ্যমে আমি বালেগা (প্রাপ্ত বয়স্কা) হই। কিন্তু যে বছর বালেগা হই সে বছর রামাযান পাওয়া সত্বেও তার ছিয়াম আমি আদায় করি নি। এখন কি আমাকে সেই বছরের ছিয়াম আদায় করতে হবে? এবং সেই সাথে কি কাফ্‌ফারাও দিতে হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ উক্ত মাসের ছিয়াম ক্বাযা আদায় করা তোমার উপর আবশ্যক। সেই সাথে তওবা করবে, আল্লাহর কাছে এ অন্যায়ের ক্ষমা চাইবে এবং কাফ্‌ফারা আদায় করবে। আর তা হল, প্রতি দিনের বিনিময়ে একজন মিসকিনকে এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য যেমন চাউল বা খেজুর বা গম ইত্যাদী থেকে অর্ধ ছা’ তথা প্রায় সোয়া এক কেজি পরিমাণ খাদ্য। (-শাইখ ইবনু বায (রহঃ)।)

প্রশ্নঃ অপবিত্রাবস্থায় বা মাসিক অবস্থায় কি দ্বীনী বই পুস্তক যেমন কুরআনের তাফসীর ইত্যাদি পড়তে পারব?
উত্তরঃ নাপাক ব্যক্তি এবং ঋতুবতীর জন্য দ্বীনী কিতাব যেমন তাফসীর, ফিকাহ্‌, হাদীছ, তাওহীদ, ইসলামী সাহিত্য প্রভৃতি বই পুস্তক পড়া জায়েয। তার জন্য শুধু নিষেধ হল কুরআন তেলাওয়াত করা। কিন্তু কুরআনের কোন দু’আ বা দলীল পেশ করার জন্য কোন আয়াত উচ্চারণ করা এ নিষেধের অন্তর্ভূক্ত নয়। (-শাইখ ইবনু বায (রঃ)।)
প্রশ্নঃ পরবর্তী রামাযানের পর পর্যন্ত দেরী করে ক্বাযা ছিয়াম আদায় করার হুকুম কি?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি রামাযান মাসে সফর, অসুস্থতা, হায়েয-নেফাস প্রভৃতি কোন কারণে ছিয়াম ক্বাযা করবে, তার উপর আবশ্যক হল পরবর্তী রামাযান আসার আগেই উক্ত ছিয়াম আদায় করে নেয়া। কেননা দু রামাযানের মাঝে আল্লাহ্‌ তা’আলা অনেক প্রশস্থ সময় দিয়েছেন। তবে যদি পরবর্তী রামাযান পর্যন্ত তা আদায় করা পিছিয়ে দেয়, তবে তার উপর ওয়াজিব হল, উহা ক্বাযা আদায় করার সাথে সাথে প্রতি দিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর ছাহাবীদের একটি জামাআত এভাবেই ফতোয়া দিয়েছেন। মিসকিনকে প্রদত্ব খাদ্যের পরিমাণ হল, এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য- যেমন চাউল বা খেজুর বা গম ইত্যাদী থেকে- অর্ধ ছা’ তথা প্রায় সোয়া এক কেজি পরিমাণ। আর যদি পরবর্তী রামাযানের আগেই ক্বাযা আদায় করে নেয় তবে কোন খাদ্য প্রদান করতে হবে না। (-শাইখ ইবনু বায (রহঃ)।)
প্রশ্নঃ নেফাসযুক্ত মহিলার যদি ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই নেফাস বা রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কি সে ছালাত ছিয়াম আদায় করবে? আর যদি ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ঋতু স্রাব শুরু হয় তবে কি ছালাত ছিয়াম পরত্যিাগ করবে?
উত্তরঃ নেফাসযুক্ত মহিলা ৪০ দিন পার হওয়ার আগেই যদি পবিত্র হয়ে যায়, তবে তার উপর ওয়াজেব হল, ফরয গোসল করা এবং ছালাত ছিয়াম আদায় করা। এ অবস্থায় তার স্বামী তার সাথে সহবাসেও লিপ্ত হতে পারে। কিন্তু যদি ৪০ দিনের মধ্যে আবার রক্ত দেখা যায় তবে তার উপর ছালাত ছিয়াম পরিত্যাগ করা ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ীস্বামী সহবাসও হারাম হয়ে যাবে। আর এ অবস্থায় পবিত্র হওয়া পর্যন্ত বা ৪০ দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সে নেফাসযুক্ত মহিলাদের মত গণ্য হবে। যদি ৪০ দিন শেষ হওয়ার আগেই পবিত্র হয়ে যায় বা নির্দিষ্ট ৪০ দিন পূর্ণ হয়ে যায় তবে সে গোসল করবে এবং ছালাত ছিয়াম আদায় করবে, তার জন্য স্বামী সহবাসে লিপ্ত হওয়া হালাল হয়ে যাবে। আর ৪০ দিন পার হওয়ার পরও যদি রক্ত প্রবাহিত হতেই থাকে তাহলে তা ইস্তেহাযা (বা অসুস্থতা) হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য ছালাত ছিয়াম পরিত্যাগ করবে না স্বামী সহবাসও হারাম হবে না। তবে তার উপর আবশ্যক হল প্রত্যেক ছালাতের পূর্বে লজ্জাস্থান ধৌত করা এবং রক্ত প্রবাহ হালকা হয় এজন্য তুলা বা এজাতীয় কিছু ব্যবহার করা। তারপর ছালাতের সময় হলে অযু করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ইস্তেহাযায় আক্রান্ত মহিলাকে এরূপই আদেশ করেছিলেন। তবে যদি উক্ত মহিলার হায়েয তথা মাসিক ঋতু স্রাব শুরু হয়ে যায় তাহলে ছালাত ইত্যাদি পরিত্যাগ করবে। (-শাইখ ইবনু বায (রহঃ)।)
প্রশ্নঃ ফরয গোসল কি ফজর পর্যন্ত বিলম্বিত করা জায়েয আছে? মহিলাদের কি হায়েয এবং নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার গোসলকে ফজর পর্যন্ত দেরী করে করা জায়েয আছে?
উত্তরঃ কোন নারী যদি ফজরের পূর্বে পবিত্রতা দেখতে পায় (তার হায়েয বা নেফাস বন্ধ হয়ে যায়) তবে তার উপর ছিয়াম আদায় করা আবশ্যক। ফজরের পর পর্যন্ত দেরী করে গোসল করতেও কোন বাধা নেই। তবে সুর্যাস্ত পর্যন্ত দেরী করা কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়। কেননা তাকে ফজর ছালাত আদায় করতে হবে। আর পুরুষের উপর ওয়াজিব হল দ্রুত ফরয গোসল সেরে নেয়া যাতে করে সে ফজর ছালাতের জামাআতে শরীক হতে পারে। (-শাইখ বিন বায (রহঃ)।)
প্রশ্নঃ গর্ভবতী বা দুগ্ধবতী মহিলা যদি রামাযান মাসে রোযা না রাখে তবে তার উপর কি করা আবশ্যক?
উত্তরঃ কোন ওযর ছাড়া গর্ভবতী বা দুগ্ধবতী মহিলার পক্ষে রামাযানের ছিয়াম ছাড়া বৈধ নয়। যদি ওযরের কারণে ছিয়াম ছাড়ে তবে উহার ক্বাযা আদায় করা তার উপর আবশ্যক। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, (فَمَنْ كاَنَ مِنْكُمْ مَرِيْضاً أوْ عَلى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أياَّمٍ أُخَرَ) “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে বা সফরে থাকবে সে অন্য সময় উক্ত ছিয়াম পূরণ করে নিবে।” (সূরা বাক্বরা- ১৮৪) এ দুজন মহিলা অসুস্থ ব্যক্তির পর্যায়ে, যদিও তাদের ওযর হল শিশুর ক্ষতির আশংকা। তাই তাদের উপর আবশ্যক হল উক্ত ছিয়াম ক্বাযা আদায় করার সাথে সাথে প্রতি দিনের বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করা। সে খাদ্য মানুষের প্রধান থেকে গম বা চাউল বা খেজুর যাই হোক না কেন। অবশ্য কোন কোন বিদ্বান বলেন, তাদের উপর ক্বাযা আদায় ছাড়া অন্য কিছু আবশ্যক নয়। কেননা এক্ষেত্রে খাদ্য প্রদানের ব্যাপারে কুরআর সুন্নাহ থেকে কোন দলীল নেই। আর আসল কথা হল যিম্মা মুক্ত হওয়া যতক্ষণ না তার বিপরীতে দলীল পাওয়া যাবে। আর সেই যিম্মা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছিয়াম আদায় করলেই হয়ে যাবে। এটা হল ইমাম আবূ হানীফা (রঃ)এর মত, আর তা শক্তিশালী মত। (-শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রঃ)।)
প্রশ্নঃ জনৈক মহিলা রামাযান মাসে সন্তান প্রসব করার কারণে ছিয়াম পালন করে নাই। রামাযানের পরও দুধের শিশুর ক্ষতির আশংকায় তা ক্বাযা আদায় করতে পারে নাই। ইতোমধ্যে সে গর্ভবতী হয়ে যায় এবং পরবর্তী রামাযানে আবার বাচ্চা প্রসব করে। এখন কি তার ক্বাযা ছিয়ামের বদলে কিছু অর্থ বিতরণ করলে জায়েয হবে?
উত্তরঃ এ মহিলার উপর ওয়াজিব হল, যে দিনগুলোর ছিয়াম সে পরিত্যাগ করেছে তার ক্বাযা আদায় করা- যদিও পরবর্তী রামাযানের পর সে তা আদায় করে। কেননা দু’রামাযানের মধ্যবর্তী সময়ে সে ওযরের কারণে ক্বাযা আদায় করতে পারেনি। আমি মনে করি শীতকালে বাচ্চাকে দুধ পান করানের সাথে সাথে যদি সে এক দিন পর পর ছিয়াম পালন করে তবে তেমন কষ্ট হওয়ার কথা নয়। আল্লাহই তাকে শক্তি দান করবেন। এবং পরবর্তী রামাযানের ছিয়ামও সে আদায় করতে পারবে। একান্ত যদি নাই পারে তবে পরবর্তী রামাযানের পর ক্বাযা আদায় করলে কোন ক্ষতি হবে না। (কিন্তু ছিয়ামের বদলে খাদ্য প্রদান বা ফিদিয়া দেয়া বৈধ হবে না।) (-শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রঃ)।)
প্রশ্নঃ কোন কোন মহিলা রামাযান মাসে জম্ম নিরোধক ঔষধের মাধ্যমে ঋতু স্রাব বন্ধ করে ছিয়াম পালন করে, যাতে করে পরবর্তীতে ক্বাযা আদায় করতে না হয়। তার একাজ কি বৈধ? এক্ষেত্রে কি নির্দিষ্ট কোন নীতিমালা আছে?
উত্তরঃ এ মাসআলায় আমি যা মনে করি তা হল, কোন নারীর জন্য এরূপ করা উচিত নয়। বরং আল্লাহ্‌ তা’আলা আদম সন্তানের নারীদের উপর যা লিখে দিয়েছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকা। কেননা এ ঋতু স্রাবের নিয়ম সৃষ্টির ব্যাপারে নিঃসন্দেহে একটি হেকমত আছে যা অবশ্যই নারী প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল। যখনই এ প্রকৃতি বিরোধী কোন কিছু করতে যাবে নিঃসন্দেহে এর ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নারী শরীরে দেখা দেবে। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “নিজের ক্ষতি করা যাবে না এবং অন্য কারও ক্ষতি করা যাবে না।” এছাড়া চিকিৎসকদের মতানুযায়ী এধরণের ঔষধ ব্যবহারে নারীর জরায়ুতে সমূহ ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তাই এ মাসআলায় আমি মনে করি, মহিলারা যেন এ ঔষধ ব্যবহার না করে। আল্লাহর তাক্বদীর এবং তাঁর হেকমতের কারণে সকল প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য। যখন হায়েয আসবে তখন ছালাত এবং ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে এবং পবিত্র হলে ছালাত ছিয়াম শুরু করবে। আর রামাযান শেষ হলে ছুটে যাওয়া ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করবে। (-শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রঃ)।)
প্রশ্নঃ আমি একজন ২৫ বছরের যুবতী। কিন্তু আমি ছোট থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত অলসতা বশতঃ ছালাত ছিয়াম কোন কিছুই আদায় করিনি। অথচ আমার পিতামাতা সর্বদা আমাকে নসীহত করতেন। আমি কোন পরওয়া করতাম না। একারণে আমি এখন অনুতপ্ত এবং তওবা করেছি। আল্লাহ্‌ আমাকে হেদায়াত করেছেন। আমি রীতিমত ছালাত ছিয়াম আদায় করছি। এখন আমাকে কি করতে হবে?
উত্তরঃ নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তওবা পূর্বের যাবতীয় পাপকে ধ্বংস করে দেয়।” সুতরাং তোমার উপর আবশ্যক হল, কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার সাথে সাথে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া এবং ইবাদতে সততার পরিচয় দেয়া। রাতে অধিক হারে নফল ছালাত আদায় করা। দিনে বেশী করে নফল ছিয়াম পালন করা। বেশী করে আল্লাহ্‌র যিকির, কুরআন তেলাওয়াত এবং দু’আয় লিপ্ত থাকা। আল্লাহই বান্দার তওবা কবূল করেন এবং গুণাহ সমূহ মা’ফ করেন। (- শায়খ ইবনু বায (রহঃ)।)

প্রশ্নঃ নেফাস অবস্থায় ৪০ দিন ধরেই হলদে রঙের পানি বের হওয়ার হুকুম কি? এ অবস্থায় কি ছালাত ছিয়াম আদায় করব?
উত্তরঃ সন্তান প্রসবের পর নারীর জরায়ু থেকে স্বাভাবিক রক্ত, হলদে বা মেটে রঙের পানি যাই বের হোক না কেন তা নেফাস হিসেবে গণ্য হবে। কেননা ৪০ দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এটাই হল তার নিয়ম। এই সময় সীমা পার হওয়ার পর যা বের হবে তা যদি স্বাভাবিক রক্ত হয় এবং তা অবিচ্ছিন্নভাবে বের হয় তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। অন্যথা তা ইস্তেহাযা বা অসুস্থতা হিসেবে গণ্য হবে। (-শায়খ ইবনু বায (রহঃ)।)
প্রশ্নঃ আমার মাসিক ঋতু (গবহংবং) প্রতিমাসে ৭ দিন। কোন কোন মাসে এ দিনগুলোর বাইরেও রক্ত দেখা যায়। কিন্তু তুলনা মূলক কম। আর তা এক থেকে দু’দিন পর্যন্ত থাকে। এসময় কি আমার উপর ছালাত ছিয়াম করা আবশ্যক না ক্বাযা করা আবশ্যক?
উত্তরঃ স্বাভাবিকের অতিরিক্ত এ রক্ত রগ থেকে বের হয়, তা নির্ধারিত মাসিকের অন্তর্গত নয়। যে নারী তার মাসিক সম্পর্কে ভালভাবে অবগত সে নির্দিষ্ট দিনগুলোতেই শুধু ১) ছালাত-ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে, ২) কুরআন শরীফ স্পর্শ করবে না এবং ৩) স্বামী সহবাসে লিপ্ত হবে না। যখন সে পবিত্র হবে তথা নির্দিষ্ট দিন শেষ হয়ে গোসল করবে তখন সে পবিত্র হিসেবে গণ্য হবে। এরপরও যদি কোন রক্ত বা হলুদ বা মেটে রঙের পানি নির্গত হতে দেখে তবে তা ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য হবে। আর একারণে ছালাত ছিয়াম পরিত্যাগ করবে না। (-শায়খ ইবনু বায (রঃ)।)
প্রশ্নঃ আমার বয়স তখন ১৩। রামাযানের ছিয়াম পালন করছি। কিন্তু হায়েযের কারণে ৪ দিন ছিয়াম আদায় করিনি। আর লজ্জার কারণে এব্যাপারে কাউকে কিছু বলিওনি। এভাবে ৮ বছর পার হয়ে গেছে। এখন আমাকে কি করতে হবে?
উত্তরঃ এত দীর্ঘ সময়ে উক্ত ছিয়াম ক্বাযা আদায় না করে তুমি বিরাট ভুল করেছ। কেননা এব্যাপারটা তো আল্লাহ্‌ আদম সন্তানের নারীদের উপর লিখে দিয়েছেন। আর দ্বীনের বিষয় জানার ব্যাপারে লজ্জা করা কোন মানুষের জন্য উচিত নয়। এখন তোমার উপর আবশ্যক হল খুব দ্রুত উক্ত চার দিনের ক্বাযা আদায় করা এবং সেই সাথে কাফ্‌ফরাও প্রদান করা। আর তা হল, প্রতি দিনের বিনিময়ে এলাকার প্রধান খাদ্য থেকে এক ছা’ পরিমাণ খাদ্য মিসকীনকে প্রদান করা। (-শায়খ ইবনু বায (রঃ)।)
প্রশ্নঃ জনৈক মহিলার গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসবের পাঁচ দিন আগে রক্ত প্রবাহিত হয়। এটা কি তার হায়েয না নেফাসের রক্ত হিসেবে গণ্য হবে? আর তার উপর কি করা আবশ্যক?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় প্রসবের আগে যদি রক্ত দেখা দেয় এবং সেই সাথে সন্তান প্রসবের আলামত তথা প্রসব বেদনা অনুভূত না হয়, তবে তা না হায়েয হিসেবে গণ্য না নেফাস হিসেবে, বরং বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তা নষ্ট রক্ত হিসেবে গণ্য হবে, যার কোনই বিধান নেই। তাই সে কোন ইবাদত ছাড়বে না, ছালাত ছিয়াম আদায় করতে থাকবে। তবে উক্ত রক্তের সাথে যদি প্রসব বেদনার কোন আলামত দেখা যায়, তাহলে তা নেফাসের রক্ত হিসেবেই গণ্য হবে। আর সেকারণে ছালাত ছিয়াম পরিত্যাগ করবে। প্রসবের পর যখন পবিত্র হবে তখন শুধু ছিয়াম ক্বাযা আদায় করবে ছালাত নয়। (-স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড।)
প্রশ্নঃ জনৈক কিশোরীর বয়স বার বা তের বছর, এ অবস্থায় রামাযান মাস অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু সে ছিয়াম পালন করে নাই। এখন তার উপর বা তার পরিবারের উপর কি করা আবশ্যক? সে যদি ছিয়াম আদায় করে তবে তার উপর কি আবশ্যক?
উত্তরঃ কয়েকটি শর্তের ভিত্তিতে একজন নারীর উপর শরীয়তের বিধিনিষেধ জারী হয়। তা হল, ইসলাম গ্রহণ করা, জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া ও বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। আর কোন নারী বালেগ হওয়ার আলামত হল, তার ঋতৃস্রাব হওয়া বা স্বপ্নদোষ হওয়া বা নাভীমূলে চুল গজানো বা পনের বছর বয়সে উপনিত হওয়া। এই বালিকার মধ্যে যদি উক্ত শর্ত সমূহ পরিপূর্ণরূপে পাওয়া যায় তবে তার উপর ওয়াজিব হল পরিত্যাক্ত ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করা। আর কোন একটি শর্ত যদি অপূর্ণ থাকে তবে তার উপর কোন কিছূ আবশ্যক নয়। (-স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড।)
প্রশ্নঃ কোন নারী যখন ঋতুবতী হয় তখন তার জন্য কি রামাযান মাসে ছিয়াম পরিত্যাগ করা এবং পরে উক্ত দিনগুলোর পরিবর্তে ক্বাযা আদায় করা বৈধ?
উত্তরঃ ঋতুবতীর ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে না বরং ছিয়াম পালন করাই তার জন্য জায়েয নয়। যখন সে ঋতুবতী হবে তখন ছিয়াম পরিত্যাগ করবে এবং রামাযান শেষে উক্ত দিনগুলোর বিনিময়ে ক্বাযা আদায় করবে। (-স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড।)
প্রশ্নঃ কোন নারী যদি ফজরের পর পরই হায়েয থেকে পবিত্র হয়, তবে কি সে উক্ত দিন রোযা রাখবে, না কি উক্ত দিনের ছিয়াম ক্বাযা করবে?
উত্তরঃ কোন নারী যদি ফজরের সময় বা তার সামান্য পূর্বে হায়েয থেকে পবিত্র হয়, তবে সে সে দিনের ছিয়াম পালন করবে এবং তা বিশুদ্ধ হবে, ফরয ছিয়ামের জন্য যথেষ্ট হবে, যদিও সে ফরয গোসল না করে থাকে। তবে যদি ফজর সুস্পষ্ট হওয়ার পর পবিত্র হয় তাহলে সে দিন ছিয়াম আদায় করা থেকে বিরত থাকবে এবং রামাযান শেষে তার ক্বাযা আদায় করবে। (-শায়খ ইবনু বায (রঃ)।)
প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি ফজর হওয়ার পর রোযার নিয়ত করে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়েছে। এরকম ঘটনা তার দু’বার ঘটেছে। স্ত্রীও সে কাজে রাযী ছিল। উল্লেখ্য যে, এঘটনার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন কি করণীয়?
উত্তরঃ স্বামীর উপর ওয়াজিব হল, তওবা ইস্তেগফার করা, উক্ত দু’দিনের ছিয়াম ক্বাযা আদায় করা এবং কাফ্‌ফারা আদায় করা। আর তা হল, একটি ক্রীতদাস আযাদ করা, যদি তা করতে সক্ষম না হয় তবে একাধারে দু মাস রোযা রাখা, যদি তা করতেও সামর্থ না থাকে তবে ষাট জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করা। আর স্ত্রীর উপরও উক্ত কাজগুলো করা আবশ্যক। কেননা সে একাজ হারাম জেনেও তাতে সম্মতি দিয়েছে। (-শায়খ ইবনু বায (রঃ)।)
প্রশ্নঃ রোযা অবস্থায় খাদ্যের স্বাদ নেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ প্রয়োজন ছাড়া এরূপ করা মাকরূহ। কিন্তু এরূপ করলে রোযা নষ্ট হবে না। আর যদি প্রয়োজনের কারণে হয় তবে তা কুলি করার মত। তাতে কোন ক্ষতি হবে না। (-ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রঃ)।)
প্রশ্নঃ ছিয়াম অবস্থায় রক্ত বের হওয়ার বিধান কি- যে রক্তকে বাধা দেয়া সম্ভব নয়- যেমন ইস্তেহাযার রক্ত, যখম বা নাকের রক্ত?
উত্তরঃ ইস্তেহাযার কারণে বা যখম হয়ে বা নাক থেকে যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাতে রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু হায়েয ও নেফাসের রক্ত প্রবাহিত হলে রোযা নষ্ট হবে একথার উপর সমস্ত আলেম ঐক্যমত। (-ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রঃ)।)
সমাপ্ত


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×