somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ কারাগার - অনিয়ম (পর্ব - এগার) :বিশেষ দফা : সুইপার দফাঃ মাদক চালানের কাজে নিয়োজিত

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিটি কারাগারে রয়েছে বিশেষ দফা ও সুইপার দফা। বিশেষ দফার কাজ হলো জেলের অভ্যন্তরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মাটি কাটা, মাটি সরানো, ইট ভাঙ্গা, রং করা ইত্যাদি। সুইপার দফার কাজ হলো ময়লা পরিস্কার ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সুষ্ঠ্য রাখা। বিশেষ দফা ও সুইপার দফায় একজন করে কনভিক্ট ওভারশিয়ার রয়েছে, যাকে ওস্তাগার বলা হয়। কাজ করানোর জন্য এদেরকে জেল কর্তৃপক্ষ হেরোইন প্রদান করে থাকেন, নুতবা পয়-পরিস্কারের কাজ করানো দুরুহ হয়ে পরে বিশেষ দফা ও সুইপার দফায় যারা কাজ করে। তাদের মধ্যে ওস্তাগার বা ২/১ জন ছাড়া সকলেই হাজতী। এদরে অধিকাংশই নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা আসামী। জেলের বাহিরে এরা হেরোইন আসক্ত বলে এদের আত্নীয়-স্বজন আদালতের মাধ্যমে এদের নিরাপত্তা হেফাজতে কারাগারে পাঠিয়ে নিশ্চিত হতে চায়, কারাগারে এসে এরা অনেকই বিশেষ দফা ও সুইপার দফায় জড়িয়ে পরে নেশার কারনে।

সুইপার ও বিশেষ দফার বন্দীরা একসঙ্গে জেলে হেরোইন গাঁজা পাচারের কাজটা করে অতি সাবলীলভাবে। জেলের অভ্যন্তরে যে সমস্ত মাদক ব্যবসায়ী থাকে তাদের সাথে বিশেষ ও সুইপার দফায় একটা বিশেষ যোগাযোগ থাকে। মাদক ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ হিরোইন গাঁজা ও মাদক ট্যাবলেট কারাগারে ঢোকায়; বিশেষ দফা, সুইপার দফার বন্দীদের মাধ্যমে বিভিন্ন সেলে ও ওয়ার্ডে পাচার করে বা সরবরহে তাদের কোন বগে পেতে হয় না। এদের গায়ে লাল পোষাক থাকায় এখানে সেখানে যাওয়ার সুযোগে এরা বিভিন্ন এলাকায় গাঁজা ও হেরোইন সহজে বয়ে নিয়ে যেতে পারে।

সুইপার দফাগুলো হেরোইন সেবীদের জন্য বিশেষ স্পটে রুপ নেয়। সাধারণত কারাগারগুলোতে সেখানেই হেরোইন স্পট গড়ে তোলা হয়। সেখানে লক-আপ খোলার পর হতেই মাদক সেবনের কার্যক্রম শুরু হয় লক-আপের আগ পর্যন্ত তা চলতে থাকে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সুইপার দফাগুলো মাসিক ভাড়া হতো অন্ততঃ পক্ষে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। প্রতিদিন এই সমস্ত দফায় বিক্রি হতো ১লক্ষ টাকার মতো হেরোইন। সাবেক ডি.আই.জি (প্রীজম) মেজর সামছুল হায়দার সিদ্দীকির কারণে দফাগুলোতে হেরোইন স্পট সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের প্রতিটি কারাগারে সুইপার দফার মাধ্যমে মাদক সামগ্রী পাচারের কাজটি এখনো চালু রয়েছে।

সুইপার ও বিশেষ দফার হাজতী বন্দীরা যখনই কোর্টে হাজিরা দিতে যায় তখনই তাদের মলদ্বারে করে হেরোইন গাঁজা নিয়ে এসে জেলে বিক্রি করে। এরা হেরোইন ও গাঁজা ব্যবসায়ীদের হেরোইন ও গাঁজা বহন এবং খুচরা বিক্রয়কারী হিসেবে কাজ করে আসছে। পয়-নিষ্কাশন ড্রেনের ভিতর দিয়ে বাহির থেকে হেরোইন ও গাঁজা জেলের ভিতরে পাচার করা হয়। লালগাড়ীর বন্দীরা কারা রক্ষীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ড্রেন দিয়ে কারাভ্যন্তরে মাদক সামগ্রী বহন করে নিয়ে আসে।

বিশেষ ও সুইপার দফায় বন্দীরা দুপুরের পরেই চৌকায় নিজ হাতে সবজি মসল্লা ও তেল নিয়ে সবজি রান্না করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও সেলে বিক্রি করে। সবজি বা তরকারী বিক্রির টাকা দিয়ে তারা হেরোইন সেবন করে । সুইপার দফার বন্দীরা যেহেতু বিভিন্ন ওয়ার্ডে বা সেলে যেতে পারে সেই সুবাদে তারা পুরোনো প্লাষ্টিকের ড্রাম, বালতি, জগ, মগ, নারিকেল তেলের বোতল সংগ্রহ করে বিভিন্ন এলাকায় জ্বালানী হিসেবে বিক্রি করে টাকা উপার্জন করে হেরোইন সেবন করে।

গুদাম ও চৌকা হতে এরা শুকনো মসল্লা চুরি করে এনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও সেলে যারা রান্না করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এমনকি চৌকার ওস্তাগার গুদামে রক্ষী রাইটার এদের মাধ্যমে তেল, চিনি, তরকারী, মসল্লা, শুকনো মরিচ, কাঁচা মরিচ, গোল আলু, বিক্রির ব্যবস্থা করে থাকেন। এথেকে বিশেষ দফা ও সুইপার দফার বন্দীরা। যা আয় করে তা দিয়ে হেরোইন গাঁজা সেবন করে থাকেন।

বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও সেলে চুরি করা হলো এই বিশেষ দফা ও সুইপার দফার আরেকটি অন্যতম কাজ। এই দফার বন্দীরা তাদের কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় সহজেই যেতে পারে বিধায়, এক এক এলাকায় গিয়ে সেখানে থেকে বন্দীদের মালামাল চুরি করে অন্য এলাকায় বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়ে মাদক সেবন করে থাকে। এছাড়া কারারক্ষী বা জমাদারের কাছে গোপন তথ্য এরা সরবরাহ করে। সেই তথ্য মোতাবেক কারারক্ষী-জমাদার বন্দীর নিকট হতে টাকা উদ্ধার করে, তারপর কেইস টেবিল পুট-আপের হুমকি দিয়ে অর্ধেক টাকা হাতিয়ে নিয়ে বন্দীকে ছেড়ে দেয়। যে পরিমাণ টাকা বন্দীর নিকট হতে কারারক্ষী ও জমাদার হাতিয়ে নেয় তা কমিশন দিতে হয় সেই বিশেষ বা সুইপার দফার বন্দীকে। সেই বন্দী টাকা দিয়ে হেরোইন গাঁজা ও নেশার ট্যাবলেট সেবন করে। (চলবে........!)

বাংলাদেশ কারাগার - অনিয়ম (পর্ব -দশ) পড়তে somewherein এখানে অথবা bd news এখানে ক্লিক করুন ।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×