somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ কারাগার - অনিয়ম (পর্ব - বার) : মক্কেল রাখাঃ অবৈধ টাকা আয়ের মোক্ষম পথ

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের ৬৬টি কারাগারে সর্বমোট ৭২ হাজার বন্দী রয়েছে যা ধারণ ক্ষমতার ৪গুনের বেশী। তারমধ্যে ১১টি কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪০% বন্দী অবস্থান করে বাকী ৬০% অর্থাৎ ৫০ হাজার বন্দী ৫৫টি কারাগারে অবস্থান করে। সবচেয়ে বেশী বন্দী অবস্থান করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যার সংখ্যা ৮৫০০ থেকে ১৩৫০০ জন হয়ে জান যায়। বর্তমানে ৮৫০০ জন বন্দী রয়েছে, ঢাকা কন্দ্রেীয় কারাগারের ধারণ ক্ষমতার ২/৩ গুন অতিরিক্ত বন্দী অবস্থান করে থাকে। জেলা কারাগারগুলোতে অতিরিক্তি বন্দী অবস্থান করে। কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্তি বন্দী অবস্থান করায়; থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার অভাব রয়েছে; সেই সাথে প্রয়োজনীয় খাদ্যভাব। তাই জেলের অভ্যন্তরে বন্দীগণ টাকার বিনিময়ে একটু ভাল থাকা ও খাওয়া ও গোসলের নিশ্চয়তা খুঁজে নিতে চায়। বন্দীদের এই মনোভাবের কারণে সুযোগভোগী হচ্চে কনভিক্ট ওভারশিয়ার, পাহারা, রাইটার, এমনকি বহুদিনের পুরাতন হাজতী বন্দীগণ।
মক্কেল রাখার সূত্রপাত হয় আমদানী হতে। নবাগত আসামীরা আমদানী হওয়ার পর দিন লক-আপ খোলার সাথে সাথে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ইনচার্জ পাহারা ও রাইটার আমদানীতে হাজির হয়। সেই সাথে আমদানী ও বহিঃগমন হাসপাতাল রাইটারগণ বিভিন্নভাবে বন্দীদের জীবন বৃত্তান্ত পরখ করতে থাকেন। কোন বন্দী কত বড় লোক, মামলা বড় ধরণের কিনা; মামলা যদি বড় হয় তবেতো কথাই নেই। শুরু হয় খাওয়া নিয়ে আলোচনা, দেন দরবার কে কত সুবিধা দিতে পাবে তার বিবরণ; তার বিনিমিয়ে কত প্রদান করতে হবে ব্যাপারে এই কাউন্সিলিং হয়ে যায় এই সময়ের মধ্যে। কথা পাকা পাকি হলে সংশ্লিষ্ট রাইটার ইনচার্জ পাহারা ও পাহারাগণ আমদানী রাইটারকে কিছু টাকা বুকিং দিয়ে যান যাতে সেই মোতাবেক ওয়ার্ড পাশ হয়ে যায়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের রেট ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
ক) হাসপাতাল ১০-১৫ হাজার টাকা। খাওয়া ছাড়া; খাওয়ার জন্য সপ্তাহে ১৫০০ টাকা।
খ) ওয়ার্ডে সপ্তাহে ১০০০ টাকা খাওয়া ও গোসল, শরীর টিপে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
গ) মনিহারে (৭ ও ৮নং ওয়ার্ড) বাদে অন্যান্য ওয়ার্ডে ১হাজার টাকা পর্যন্ত সপ্তাহে, সাথে দু’বেলা
খাওয়া, দুপুরে ভাজি, ডাল ভাত রাতে মাছ অথবা , মাংস ডাল ভাত ভাজি। সকালে নাস্তা বন্দীর নিজের।
ঘ) বহিরাগমন মাসে ১০-১৫ হাজারা টাকা খাওয়াসহ। গোসলের ব্যবস্থা নেই। জেলের সর্বত্র ভি.আই.পি. ষ্টাইলে চলা ফেরার ব্যবস্থা রয়েছে। চা-কফির ব্যাবস্থাও থাকে।
ঙ) আমদানীতে মক্কেল হিসেবে থাকার জন্য ৫-১০ হাজার মাসিক। খাওয়া নিজের ব্যবস্থা; ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে যত্রতত্র।
চ) স্কুল-২ (মুরুব্বী ওয়ার্ডে) সপ্তাহে ১০০০ টাকা শুধু ভাল থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
কোন কোন ইনচার্জ পাহারা জেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩০-৩৫ টা সিট কিনে রেখেছে। সেই সিট ভাড়া
দিয়ে প্রতিমাসে আয় করেন ৩০-৩৫ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়ার্ডে তার নিযুক্ত হাজতী বন্দীগণ সেই সব সীটগুলো দেখাশুনার দায়িত্ব নেন। ইনচার্জ পাহারাগণ মক্কেল ধরে এনে তার নিযুক্তয় ব্যক্তিদের হেফাজতে রেখে যান। সপ্তাহে বা মাসে মাসে সীট ভাড়া আদায় করেন সেই সমস্ত হাজতী বন্দীগণ।
কোন কোন ওয়ার্ডে হাজতী রাইটার থাকে। তারাও মক্কেল এনে টাকা আয় করে বাসায় পাঠায়। তারা সেই আয় থেকে নিজেদের মামলা খরচ মিটিয়ে থাকেন। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরাতন বিচারাধীন আসামী ২/৪ বছর যাবৎ জেলে আছেন, যে সমস্ত হাজতী বন্দীগণ ধীরে ধীরে নিজের নামে ৫/৭ টা সীট কিনে নয়ে। সেই সমস্ত সিটে মক্কেল নিয়ে এসে তার দেখা শুনা করে মাসে ১০/১৫ হাজার টাকা উপার্জন করে নিজেও চলে এবং বাহিরে তার সংসারকেও দেয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তুলনায় অন্যান্য কেন্দ্রীয় কারাগারগুলোতে মক্কেল রাখার পরিমাণটা শতকরা ৫০% কম। মক্কেল পালার ব্যবস্থা অন্যান্য কারাগারগুলো একই নীতি মেনে চলে। জেলা কারাগারগুলোতেও মক্কেল পালা যায় শুধু মাত্র হাসপাতালগুলোতে। ওয়ার্ডে মক্কেল তেমন নেই বললেই চলে। তবে আমদানীতে ২/১ জন দেখা যায়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সেলগুলোতে মক্কেল পালার ব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মূখ্য ভ‚মিকা পালন করে হাজতী বন্দী। অনেকদিন কারাগারে অবস্থান করার ফলে নিজের নামে একটি রুম চালানোর ক্ষমতা নিয়ে নেয়। সে রুমে ৫/৬ জন পর্যন্ত থাকতে পারে। দেখা যায় অনেক পরিচিত মুখ বন্দী হয়ে আসে জেলে, তাদেরকে নিজের রুমে নিয়ে আসে। সেই বন্দীরা যে টাকা পয়সা আনে তার বেশীর ভাগ তুলে দেন যার নামে রুম চলে তার কাছে। সে কৈ এর তেলে কৈ ভাজে। ৫জনের টাকার জোরে সে নাচে ও প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় রেখে নিজের কর্তৃত্ব ও দাপট বজায় রাখে।
মক্কেলদের আবার করুন পরিনতি ভোগ করতে হয়, যদি সময় মতো টাকা না দেয়-তাহলে তার খাওয়া বন্ধ। শতর্ক মূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাতের ১টা অংশ বার নাম্বারে অর্থাৎ টয়লেটের সম্মুখে শুতে দেয়া হয় যাতে করে মক্কেল কষ্ট অনুধাবন করে তাড়াতড়ি, টেলিফোন করে বাসা হতে টাকা আনিয়ে মহাজনের হাতে তুলে দেয়া হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে মক্কেল উত্তেজিত হয়ে উঠে নানাবিধ অত্যাচারে। তাতে ফলাফল হয় হিতে বিপরীত। এমনও দেখা গেছে মক্কেল শুধু মুখে উচ্চারন করেছে সাহেব ফাইলে অর্থাৎ সুপার ফাইলে মক্কেল পালার নালিশ হবে। তাতেই হয়েছে; ইনচার্জ পাহারা সাথে সাথে সুবেদার ম্যানেজ করবে। সুবেদার সাহেব ফাইলের আগে ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে সেই বন্দীকে আমদানীতে এনে রেখে দিবে। তারপর সাহেব ফাইলের পর তাকে ছেড়ে দিবে। ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিবে এভাবে কোন দিনই অভিযোগ দানে ইচ্ছুক বন্দীর অভিযোগ জানানোর সুযোগ আসেনা। (চলবে.....

বাংলাদেশ কারাগার - অনিয়ম (পর্ব -এগার) পড়তে somewherein এখানে অথবা bd news এখানে ক্লিক করুন ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×