somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনোদনের নামে এ সব কী হচ্ছে ?

২৩ শে মার্চ, ২০১০ সকাল ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দৈনিক ইত্তেফাক ২৩ মার্চ ২০১০
আবুল খায়ের ও জামিউল আহসান সিপু

কয়েকদিন আগের ঘটনা। একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির দুই শিড়্গার্থী ঘুরতে গিয়েছিলেন মিরপুরের পিছনে তুরাগ নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায়। বেড়ানোর এক পর্যায়ে নদীর ঘাট থেকে তারা একটি ছৈওয়ালা নৌকা ঘন্টায় একশ’ টাকা চুক্তিতে ভাড়া করেন। নৌকায় চড়ে পাঁচশ গজ দূরে ওপারের চরে নামেন। নির্জন চরে নিজেদের নিয়ে ব্যসত্ম হয়ে পড়েন তারা। হঠাৎ চরের ঘন কাশবনের ভিতর থেকে ৪/৫ জন যুবক বেরিয়ে আসে। তারা ছেলেটিকে আটক করে কাশবনের ভিতর বেঁধে ফেলে। মেয়েটিকে কাশবনের ভিতর নিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। প্রায় আধঘন্টা পর যুবকরা চলে যায়। নৌকার মাঝি তাদের চিৎকার শুনেও না শোনার ভান করে। পরে তারা সেখান থেকে চলে আসে। লোকলজ্জার ভয়ে ওই তরম্নণ-তরম্নণী এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ করেননি। বেড়িবাঁধের মিরপুর-আশুলিয়া সড়কের গড়ান চটবাড়ি এলাকায় বিনোদনের নামে বেলালস্নাপনা করতে গিয়ে এভাবেই ধর্ষণ, ছিনতাই-এর শিকার হচ্ছে তরম্নণ-তরম্নণীরা। গতকালও ঐ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে ছৈওয়ালা নৌকায় করে তরম্নণ-তরম্নণীরা চরে ঘুরতে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধ চরকে কেন্দ্র করে গড়ান চটবাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে এক ধরনের ঝুপড়ি ঘর। এসব ঘরেও তরম্নণ-তরম্নণীরা সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮টা পর্যনত্ম একানত্ম সান্নিধ্যে সময় কাটান। বিনোদনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে এখানে ছুটে আসে। আর ঝুপড়ি ঘরে বিনোদনের নামে চলে মাদক সেবন। এ এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জমজমাট মাদক ব্যবসা।

এসব ঘটনার ব্যাপারে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার চৌধুরী লুৎফুল কবীর বলেন, বিনোদনের নামে ঐসব এলাকায় কি হচ্ছে তা পুলিশ মনিটর করছে। এ ব্যাপারে শিগগির ব্যবস্থা নেয়া হবে। র‌্যাব-৪ এর উপ-পরিচালক মেজর আহমেদ সুমন সুবহান বলেন, বেড়িবাঁধ এলাকায় ছৈ ওয়ালা নৌকায় এবং ঝুপড়ি ঘরে তরম্নণ-তরম্নণীরা যেসব কর্মকাণ্ড করে তাকে বিনোদন বলা যায় না। ঐসব এলাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে তরম্নণ-তরম্নণীরা জিম্মি। আর মাদক ব্যবসাও চলে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুর মাজার রোডের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশ দিয়ে আশুলিয়া চেকপোস্টে যেতে গড়ান চটবাড়ি এলাকায় বেড়িবাঁধের দুই পাশে অসংখ্য ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করে একাধিক কথিত বিনোদন স্পট গড়ে তোলা হয়েছে। স্পটের নামও রয়েছে; ঈশামনি কফি হাউস, ছায়ানীড়, আইলো-খাইলো ইত্যাদি। বেড়িবাঁধের পাশে নিচু জমিতে বাঁশের মাচা করে এসব ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের একেকটি ঝুপড়ি ঘরে একটি ছোট টেবিল আর একদিকে দুইটি চেয়ার রয়েছে। এখানে আসা তরম্নণ-তরম্নণীদের জন্য বিনোদন স্পট কর্তৃপড়্গ বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করে থাকে। খাবারের বিল ছাড়াও ঝুপড়ি ঘরে বসার জন্য ঘন্টায় ৫০ থেকে ১শ’ টাকা দিতে হয়। অনেক স্পটে ঘন্টা হিসাবে টাকা নেয়া হয় না। তবে গ্রাহকরা যেসব খাবার খান তার বিল দ্বিগুণ বা তিনগুণ আদায় করে পুষিয়ে নেয়া হয়। সকাল থেকেই এসব স্পটে তরম্নণ-তরম্নণীরা ভিড় করেন। বিশেষ করে স্কুল বা কলেজ চলাকালে এসব স্পটে ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। স্কুল বা কলেজের পোশাক পরা কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যাই বেশি। শুধু মিরপুর এলাকা নয়, গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডিসহ অভিজাত এলাকা ছাড়াও ঢাকার অনেক এলাকা যেমন উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কাজীপাড়া, কাফরম্নল, শ্যামলী ও তেজগাঁও এলাকা থেকেও স্কুল-কলেজের শিড়্গার্থী এবং তরম্নণ-তরম্নণীরা গড়ান চটবাড়ি এলাকার ঝুপড়ি ঘরে বিনোদনের আশায় ছুটে আসে। তবে একটি বিনোদন স্পটের মালিক এই প্রতিবেদককে জানান, স্পট চালু রাখার জন্য আইন-শৃৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থার কাছে মাসোহারা দিতে হয়। এখানে বহিরাগত বা ছিনতাইকারীদের কোন উৎপাত নেই।

এদিকে গড়ান চটবাড়ির বেড়িবাঁধের আশেপাশে বিনোদন স্পট গড়ে তোলার নামে এলাকার জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যের জমি জোরপূর্বক দখল করে এসব বিনোদন স্পট স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই দখলদার চক্রটি ‘হাজী বাহিনী’ নামে পরিচিত। এরা নামে হাজী বাহিনী হলেও ধর্মীয় লেবাসে এলাকায় জমি দখল ও মাদক ব্যবসা চালায়। এমনকি বিনোদন স্পটে ঘুরতে আসা তরম্নণ-তরম্নণীদের কাছ থেকে ছিনতাই করার জন্য এ চক্রের একটি নিজস্ব ছিনতাই বাহিনীও রয়েছে। বেড়াতে আসা তরম্নণ-তরম্নণীদের কাছ থেকে এই ছিনতাই বাহিনী টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা লোকলজ্জার ভয়ে পুলিশ বা র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেন না।

অন্যদিকে গড়ান চটবাড়ি এলাকা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে বেড়িবাঁধ ঘাটে বাঁধা থাকে ছৈওয়ালা নৌকা। আশুলিয়া বিআইডাবিস্নউটিসি ঘাটের আশেপাশে এই ধরনের বিপুল সংখ্যক নৌকা রয়েছে। ইচ্ছে করলে প্রতি ঘন্টা হিসাবে ভাড়া করে নৌকায় তুরাগ নদীতে ভ্রমণ করা যায়। এসব ছৈওয়ালা নৌকায় তরম্নণ-তরম্নণীরা বেশি নৌভ্রমণে যান। কেউ কেউ একানেত্ম অভিসারে যেতে নদীর ওপারে চরে ঘুরতে যান। এক নৌকার মাঝি জানান, শীতকালে বেড়িবাঁধ চরে তরম্নণ-তরম্নণীরা ঘুরতে আসেন। বর্ষাকালে বেড়িবাঁধ চর ডুবে গেলে পাশে বিরম্নলিয়া চরে ঘুরতে যান। অভিযোগ রয়েছে, নৌকার যারা মালিক তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসী চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। ঘাট থেকে নৌকায় ওঠার পর ঐ চক্রটি নৌকা অনুসরণ করে। সুযোগ বুঝে নৌকার আরোহীদের সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। অনেক সময় ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে।

ঝুপড়ি ঘর ও ছৈওয়ালা নৌকায় করে বিনোদনের নামে এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ পুলিশ ও র‌্যাবের কাছেও জমা পড়েছে। র‌্যাব-৪ এর পরিচালক লে. কর্নেল কবীর হোসেন জানান, ঐ এলাকায় র‌্যাবের মনিটরিং ও টহল জোরদার করা হয়েছে। কেউ যেন বিনোদন ও ভ্রমণ করতে এসে ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসী চক্রের খপ্পরে না পড়ে সে ব্যাপারে টহল টিমকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×