somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য

২১ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয় থেকে -
সম্প্রতি ঢাকার নারিন্দা শাহ সাহেব লেনের দারুল উলুম আহছানিয়া কামিল মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের নতুন ছবক প্রদান ও কৃতী ছাত্র সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দেশের হক্কানী পীর মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট বুজুর্গ ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করিয়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতীব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, ফরাযীকান্দি দরবার শরীফের পীর ছাহেব কেবলা ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাশরিফ আনায় উক্ত অনুষ্ঠান অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও মোবারকময় হইয়া ওঠে। এখানে ছবক অর্থ নতুন ক্লাসের প্রথম পাঠদান। ইহা অনেকটা নবীনবরণ অনুষ্ঠানের মত হইলেও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক দিয়া পার্থক্য বিদ্যমান। অনুষ্ঠানে আলিম বা এইচএসসি পর্যায়ের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলিতে গিয়া দেশবরেণ্য আলেমগণ সার্বিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষার উপর যথাযথ তাগিদ দিয়াছেন। তাহারা বলিয়াছেন যে, কোরআন-হাদীস ও ফিকাহর সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহের সমন্বয় সাধন একান্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ ধর্মীয় শিক্ষাকে নীতি-নৈতিকতার মৌলভিত্তি ধরিয়া অনুষঙ্গিক পার্থিব জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে সকলকে আধ্যাত্মিকতা, উন্নতি ও প্রগতির পথে অগ্রসর হইতে হইবে।

অনেকেই মনে করিতে পারেন যে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও একজন মানুষ উদার মানবিক ও নীতিসম্পন্ন হইতে পারে। কিন্তু আমরা মনে করি, ধর্মাপেক্ষা অন্য কিছুতেই নীতি-নৈতিকতার বিষয়টি পরিপূর্ণতা লাভ করে না। আজ কমবেশি সকলেই স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন যে, ঐশ্বরিক জ্ঞানই হইতেছে সকল নৈতিকতার সূতিকাগার। ইহা মানুষের বিশেষ জ্ঞান বা বিজ্ঞানের চাইতেও মর্যাদাবান। যখন বলা হয় চুরি করো না, বা চুরি করা মহা পাপ, তখন এই দুইয়ের মধ্যে আসমান জমিন ফারাক পরিলক্ষিত হয়। একজন মুমিন মুত্তাকি ব্যক্তি আখেরাতের বিশ্বাস হইতে নিজেকে পাপ-পংকিলতা ও অমানবিক-অবিবেচক আচরণ হইতে বিরত রাখিতে বাধ্য। প্রচলিত ধর্মীয় শিক্ষায় আলোকিত ব্যক্তি সকলেই যে এরূপ উত্তম চরিত্রের অধিকারী হইয়া থাকেন, তাহা অবশ্য দাবি করা যায় না। কিন্তু তাই বলিয়া ধর্মীয় শিক্ষাকে খাটো বা অগ্রাহ্য করিলে নিজেরই অনিষ্ট সাধন করা হইবে। আবার ধর্মীয় শিক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করিতে হইবে- ইহাও অপরিহার্য নহে।

যে কোন মানুষের বাল্যকাল হইতেই নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে তালিম নেওয়া আবশ্যক। বাল্যকালের শিক্ষার স্থায়িত্ব সর্বাধিক। এক সময় আমাদের দেশে পরিবারগুলি ছিল ধর্মীয় শিক্ষার উত্তম পাঠশালা। এখন যেমন বাবা-মা, তেমন তাহার ছেলে-মেয়ে। শুধু তাহাই নহে, আগের ন্যায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মসজিদ বা উপাসনাকেন্দ্র ভিত্তিক প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার রেওয়াজ কমিয়া গিয়াছে বহুলাংশে। ফলে নয়া প্রজন্ম দিন দিন আরও বিপথগামী হইতেছে। হালে ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড লইয়া কথা উঠিয়াছে। প্রত্যেকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি সমর্পিত থাকিলে এমনটি অহরহ ঘটিবার আশংকা ছিল না। আগে বিশ্বাস ও মূল্যবোধ ঠিক করিতে হইলে প্রত্যেকের ধর্মগ্রন্থ পড়িয়া আত্মোপলব্ধির মত জ্ঞানার্জন খুবই জরুরী। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলিয়াছেন তালাবুল ইলমি ফারিদ্বাতুন আলা কুল্লি মুসলিম, - প্রত্যেক মুসলিমের উপর ধর্মের প্রাথমিক জ্ঞান আহরণ ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয়। পবিত্রগ্রন্থ বাইবেলে যে কোন জ্ঞানার্জনে মহান প্রভুর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখাকে অপরিহার্য করা হইয়াছে। (দ্য বুক অব প্রভারবস, ১.৭)। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় পান্ডব বা অর্জুনের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মজ্ঞানের গুরুত্ব তুলিয়া ধরিতে গিয়া বলা হইয়াছে, ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে। অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞান শুদ্ধিকর। ইহার তুল্য পবিত্র বস্তু ইহলোক বা পরলোকে নাই (জ্ঞানযোগ-৩৮)।

মানুষকে একদিন মৃত্যুবরণ করিতে হইবে। আল্লাহ বলেন, কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মাউত। এই মৃত্যুকে পরিহার করার মত ক্ষমতা কাহারও নাই। তাই সকলকে নিজ নিজ ধর্মের মূল শিক্ষার অনুরাগী হইতে হইবে। আমরা মুসলমান হিসাবে জানাজার পর কোন মাইয়েতকে কবরে রাখিবার পূর্বে বলিয়া থাকি, ওয়া আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লাহ। -অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উম্মত হিসাবে দাফন করা হইল। অথচ আমরা এই দুনিয়ায় তাহার উম্মতের পরিচয় দেয়ার মত কাজ করিতেছি না। ইহাই আধুনিক বা কলিযুগের বড় পরিহাস। অতএব, পরিবারেই যাহাতে ছেলে-মেয়েরা প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করিতে পারে, সেদিকে সর্বাগ্রে খেয়াল রাখিতে হইবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্ত প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। ইহা দায়সারা গোছের হইলে চলিবে না। প্রত্যেকের ধর্মগ্রন্থ পাঠের ক্ষমতা অর্জন করা তাহার মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। এরূপ জ্ঞানের প্রাথমিক ভিত্তি যদি মজবুত হয়, তাহা হইলে পরবর্তীতে ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করিয়াও তাহাকে ধর্মবিমুখ করা সম্ভব হইবে না। ধর্মীয় শিক্ষার দায়িত্ব সরকারসহ ব্যক্তিবিশেষ সকলকেই গ্রহণ করিতে হইবে।
এ পর্যন্ত ছিল দৈনিক ইত্তেফাকের কথা।

পাদটীকা হিসাবে আমি যাহা বলিতে চাই :
ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত কেহ নীতি-নৈতিকতায় সমৃদ্ধ হতে পারে, এ আমি বিশ্বাস করি না। আজকে যারা বলেন, শ্লোগান দেন; ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত নৈতিক হওয়া যায়, তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
তাদের এ কথার উদ্দেশ্য মানুষকে নৈতিকতার মানে উন্নীত করা নয়। উত্তম চরিত্র বা নীতি-নৈতিকতার দিকে মানুষকে আহবান করা নয়। বরং তাদের উদ্দেশ্য হল ধর্ম থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখা। সমাজে ধর্মের আর কোন প্রয়োজন নেই, মানুষকে এ কথাটা বুঝিয়ে দেয়া।
বর্তমানে অনেক ধর্ম-বিমুখ বস্তুবাদী বা ভোগবাদী মানুষকেও দেখা যায়, তারা তাদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষালয়ে ভর্তি করাচ্ছেন। তাদের যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন এটা করছেন? তারা উত্তর দেবে, ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমার সন্তান সমাজে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, আমি তা মনে করি না। সে নিজেকে গ্লোবালি প্লেস করতে পারবে, ভাবি না। তবে তারা নৈতিকতার আদর্শে চরিত্রবান হয়ে নিজেকে মানব-চরিত্র বিধ্বংসী যাবতীয় কলুষতা থেকে রক্ষা করতে পারবে। মাতা-পিতা, পরিবার-পরিজন ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হবে।

জীবনের সব বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে জওয়াবদিহিতার ধারণা ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে কখনো সম্ভব নয়। সকল কথা, কর্ম, বিশ্বাস, আচার, আচরণের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জওয়াব দিতে হবে, তার কাছেই একদিন হিসাব দিতে হবে, এ বিশ্বাসটি সকল নীতি নৈতিকতার মূল বিষয়। আর ধর্ম এটাই শিক্ষা দেয়।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×