somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবীজ ক্ববজ নিয়ে আমি পূর্বে অনেক পোষ্ট দিয়েছি। আজ আরেকটা বিস্তারিত পোষ্ট দিচ্ছি। যারা আমার পোষ্ট নিয়মিত পড়েন তারা উপকৃত হবেন বলে আশা রাখি। দয়া করে এড়িয়ে যাবেন না, এই পোষ্ট পড়ার পর হয়তো আল্লাহ পাক আপনাকে ভয়াবহ গোনাহ এর হাত থেকে ফিরিয়ে আনবেন।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমে তাবীজ হারাম হওয়ার দলীল সমূহ কোরআন থেকে দিলামঃ

১) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন, আর যদি আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসরণকারী আর কেউ নেই, পক্ষান্তরে যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আন’আম: আয়াত-১৭)

২) আল্লাহ পাক আরো বলেন, আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে, তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই এবং আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ইউনুস: আয়াত-১০৭)

৩) আল্লাহ পাক অন্যত্র ঘোষনা করেছেন, তোমরা যে সমস্ত অনুগ্রহ ভোগ কর, তা তো আল্লাহরই নিকট হতে; আবার যখন দুঃখ দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুল ভাবে আহ্বান কর। আর যখন আল্লাহ তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করেন, তখন তোমাদের একদল তাদের প্রতিপালকের সাথে শরিক করে। (সূরা নাহাল: আয়াত-৫৩ ও ৫৪)

উপরোল্লিখিত আয়াত সমূহ স্পষ্টভাবে প্রমাণ কর যে, দুঃখ-কষ্ট দূর করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর বান্দা একমাত্র তাঁর কাছেই ভালো-মন্দের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আর তিনিই একমাত্র শক্তিধর, তিনিই একমাত্র বান্দার কল্যান সাধনে সক্ষম।

আসুন এবার নবী (সাঃ) এর হাদীস এর দিকে লক্ষ করি। এক শ্রেণীর লোক আছে যারা দেখাতে চান যে তারা, নবী (সাঃ) এর প্রেমে পাগল অথচ তারা হাদীসকে অস্বীকার করে, এই শ্রেণীর লোক হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে মুনাফেক। একবার অন্তত নিজের আমলকে কষ্টি পাথরে যাচাই করে দেখবেন বলে আশা রাখি।

১) ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা নবী (সাঃ) এক ব্যক্তির হাতে তামার চুড়ি দেখতে পেয়ে বললেন এটা কি? সে বলল: এটা ওয়াহেনার অংশ। তিনি বললেন: এটা খুলে ফেল, কারণ এটা তোমার দুর্বলতা বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। যদি এ তাবীজ বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তাহলে কখনও সফলকাম হতে পারবে না। (সহীহ, মুসনাদে আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ)

২) উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি; যে ব্যক্তি তাবীজ ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দিবেন না, আর যে কড়ি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না। (আহমদ, হাকেম)

৩) উকবা বিন আল-জোহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হলো। অতঃপর দলটির নয়জনকে রাসূল (সাঃ) বায়াত করালেন এবং একজনকে করালেন না। তারা বলল, হে আল্লাহ রাসূল (সাঃ) নয় জনকে বায়াত করালেন, আর একজনকে বাদ রাখলেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তার সাথে একটি তাবীজ রয়েছে। তখন তার হাত ভিতরে ঢুকালেন এবং সেটা ছিড়ে ফেললেন। অতঃপর তাকেও বায়াত করালেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তাবীজ ব্যবহার করল সে শিরক করল। (সহীহ মুসনাদে আহমদ, হাকেম)

৪) একদা হুজায়ফা (রাঃ) এক রোগীকে দেখতে এসে তার বাহুতে একটি তাগা দেখতে পেলেন, অতঃপর তিনি তা কেটে ফেললেন বা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, তাদের অনেকেই শিরক করছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

৫) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর স্ত্রী জায়নাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ বাহির থেকে এসে দরজার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে কাশি দিতেন এবং থুথু ফেলতেন, যাতে তিনি এসে আমাদেরকে তার অপছন্দ অবস্থায় না দেখেন। তিনি বললেন, একদিন আব্দুল্লাহ আসলেন এবং কাশি দিলেন। তখন আমার কাছে এক বৃদ্ধা ছিল। সে আমাকে চর্ম রোগের জন্য ঝাড়-ফুঁক দিচ্ছিল। এ অবস্থায় তাকে আমি খাটের নিচে লুকিয়ে রাখলাম। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে আমার কাছে এসে বসলেন এবং আমার গলায় তাগা দেখে জিজ্ঞেসা করলেন- এই তাগাটা কি? আমি বললাম, এই সুতার মধ্যে আমার জন্য ঝাড় ফুক দেয়া হয়েছে। আমি একথা বলার পর আব্দুল্লাহ তাগাটা কেটে ফেললেন এবং বললেন আব্দুল্লাহ পরিবারবর্গ শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, ফাড়-ফুঁক, তাবীজাবলী এবং ভালোবাসা সৃষ্টির তাবীজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। (আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ)

৬) ইসা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আব্দুল্লাহ বিন ওকাইম (রাঃ) অসুস্থ ছিলেন, আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। তাঁকে বলা হলো, আপনি কোন তাবীজ কবজ নিলেইতো ভালো হতন। তিনি বললেন: আমি তাবীজ ব্যবহার করব অথচ এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন কিছু রক্ষাকবচ ধারণ করবে, তাকে ঐ জিনিসের কাছে সোপার্দ করা হবে। (আহমেদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ)

৭) রোআইফা বিন ছাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন; হে রোআইফা! হয়তো তুমি আমার পরেও অনেকদিন বেঁচে থাকবে। অতএব, লোকদেরকে এ কথা বলে দেবে যে, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিঁট দিল অথবা খেজুরের ডাল লটকালো কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর মল বা হাড় দিয়ে ইসতিঞ্জা করল, তার সাথে মুহাম্মাদের (সাঃ) কোন সম্পর্ক নাই। (আহমদ, নাসায়ী)

উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তাবীজ ব্যবহার করা স্পষ্ট শিরক। আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের সকল গোনাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন এক মাত্র শিরকের গোনাহ ছাড়া। শিরক একটা ভয়াবহ গোনাহের নাম। আসুন শরীর থেকে সকল প্রকার তাবীজ কবজ ছিড়ে ফেলি, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর কথাগুলোকে গুরুত্ব দেই এবং মেনে নেই তিনি সত্য নাবী ও রাসূল (সাঃ) ও আল্লাহর বান্দা। তাবীজ কবজ প্রদানকারী কোন হুজুর সামান্য অর্থের বিনিময়ে তাবীজ বিক্রি করতে চাইল তাদের সাবধান করে দেই তারা যেন এই জঘন্য পাপকার্য আর না করে। মনে রাখতে হবে, কুরআন এসেছে আমল করার জন্য তাবীজ বানিয়ে গলায় ঝুলানোর জন্য নয়। কুরআন গলায় ঝুলিয়ে টয়লেটে যাওয়া কোন মুসলিমের কাজ নয় এটা পরিষ্কার ইহুদী ষড়যন্ত্র। তারা মুসলামানকে দিয়ে কুরআনকে টয়লেটে পাঠাচ্ছে তাবীজ দ্বারা। এছাড়াও তাবীজের ভিতর জ্বীনের সরদারের কাছে সাহায্য চেয়ে দরখাস্ত করা থাকে। তাবীজের ভিতর ফেরউন, হামান, শয়তান ও ঈবলীশের নাম লেখা থাকে।

আপনার কাছে আবারো অনুরোধ করছি দয়া করে তাবীজ শরীরে থাকলে তা আজই খুলে ফেলুন, মনে রাখবেন তাবীজ ঝুলানো অবস্থায় আপনার মৃত্যু এসে গেলে কশ্চিন কালেও আপনি নাজাত পাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×