somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূদ- পর্ব ০৯ (সূদের অর্থনৈতিক কুফল {২য় অংশ})

০২ রা জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১০। সূদের ফলে একচেটিয়া কারবারের প্রসার ঘটে
বড় বড় ব্যবসায়ীরা যে শর্তে ও যে সময়ের জন্য ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান হ'তে ঋণ পেতে পারে ছোট ব্যবসায়ীরা সেভাবে ঋণ পায় না। এজন্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও তারতম্য ঘটে। সে প্রতিযোগিতায় অসম সুবিধা ভোগের সুযোগ নিয়ে বড় কারবারী বা ব্যবসায়ী আরো বড় হয়। ছোট কারবারী বা ব্যবসায়ী টিকতে না পেরে ধ্বংস হয়ে যায়। বৃহদায়তন শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাই। এই জাতীয় শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংকই নয়, বিনিয়োগ কোম্পানী ও অনৈসলামী সরকারসমূহ যে বিশেষ সুবিধা ও নূন্যতম সূদের হারে টাকা ঋণ দিয়ে থাকে, ছোট বা ক্ষুদ্রায়তন শিল্পের জন্য আদৌ সে সুযোগ নেই। ফলে বড় শিল্পপতিরা প্রতিযোগিতাহীন বাজারে একচেটিয়া কারবারের সমস্ত সুযোগ লাভ করে। পরিণামে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো প্রকট হয়।

১১। সূদের কারণে মুষ্টিমেয় লোকের মধ্যেই পুঁজি আবর্তিত হয়
সূদ আদায় ও প্রদানের সামর্থের কারণেই বিত্তবান ঋণদাতা ও গ্রহীতাদের হাতেই পুঁজি আবর্তিত হ'তে ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। সূদভিত্তিক অর্থনীতিতে ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগ কোম্পানী তথা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান এবং ধনিক শ্রেণীর মধ্যে একটা অদৃশ্য সেতুবন্ধন বা যোগসাজশ লক্ষ্য করা যায়। উপরন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে, অবৈধভাবে বা অন্য কোন উপায়ে কেউ প্রচুর অর্থ সঞ্চয় করতে পারলে সূদের বদৌলতেই সে তা ক্রমাগত বৃদ্ধি করে যেতে পারে। পক্ষান্তরে পর্যাপ্ত জামানত দিতে না পারার কারণে স্বল্পবিত্তদের এখানে কোন ঠাঁই নেই। ফলে বিত্তশালীরা একাধারে সমাজকে শোষণ করে এবং একচেটিয়া কারবারেরও প্রসার ঘটে। সমাজে সৃষ্টি হয় অর্থনৈতিক নানা বিপর্যয়। এজন্যেই আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীন আল-কুরআনে বলেছেন, "(সম্পদ তোমরা এমনভাবে বন্টন করবে) যেন তা (কেবল) তোমাদের (সমাজের) বিত্তশালী লোকদের মাঝেই আবর্তিত না হয়" {সূরা আল হাশর, আয়াত ৭}

১২। সূদ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ
সূদবিহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনকারী উৎপাদন খরচের উপর পরিবহন খরচ, শুল্ক (যদি থাকে), অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় এবং স্বাভাবিক মুনাফা যোগ করে পণ্যসামগ্রীর বিক্রি মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু সূদভিত্তিক অর্থনীতিতে দ্রব্যের এই স্বাভাবিক মূল্যের উপর উপর্যুপরি সূদ যোগ করে দেওয়া হয়। দ্রব্য বিশেষের উপর তিন থেকে চার বার পর্যন্ত, ক্ষেত্রবিশেষে তারও বেশীবার সূদ যুক্ত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ আমাদের দেশের বস্ত্রশিল্পের কথাই ধরা যেতে পারে। এই শিল্পের প্রয়োজনে তুলা আমদানী করতে হয়। আমদানীকারকরা ব্যাংক হ'তে যে ঋণ নেয় বিদেশ থেকে তুলা আমদানীর জন্য তার সূদ যুক্ত হয় ঐ তুলার বিক্রয় মূল্যের উপর। এরপর সুতা তৈরীর মিল ব্যাংক হ'তে যে ঋণ নেয় তারও সূদ যুক্ত হয় ঐ তুলা থেকে তৈরী সুতার উপর। পুনরায় ঐ সুতা হ'তে কাপড় তৈরীর সময়ে বস্ত্রকল সংস্থা বা কোম্পানী যে ঋণ নেয় সেই সূদ যুক্ত হয় কাপড়ের উপর। এরপর কাপড়ের এজেন্ট বা ডিলার তার ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যাংক হ'তে যে ঋণ নেয় তারও সূদ যোগ করে দেয় ঐ কাপড়ের কারখানা মূল্যের উপর। এভাবে চারটি স্তর বা পর্যায়ে সূদের অর্থ যুক্ত হয়ে বাজারে কাপড় যখন খুচরা দোকানে আসে বা প্রকৃত ভোক্তা ক্রয় করে তখন সে আসল মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী দাম দিয়ে থাকে।

একটা নমুনা হিসাবের সাহায্যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হ'ল। ধরা যাক, বিদেশ হ'তে তুলা আমদানীর জন্যে কোন ব্যবসায়ী ব্যাংক হ'তে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিল। এরপর বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে তা থেকে তৈরী কাপড় বাজারে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সূদজনিত মূল্য বৃদ্ধির চিত্রটি কেমন দাঁড়াবে? সঠিক অবস্থা বোঝার জন্যে দুটো অনুমিতি (Assumption) এখানে ধরা হয়েছে : (ক) উৎপাদন, বিপণন, গুদামজাতকরণ প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাংক হ'তে ঋণ নেওয়া হয়েছে, এবং (খ) সূদের হার সকল ক্ষেত্রেই ১৬%। এই উদাহরণে বিভিন্ন পর্যায়ের অন্যান্য আবশ্যকীয় ব্যয় (যেমন- জাহাজ ভাড়া, কুলি খরচ, বিদ্যুৎ/জ্বালানী ব্যয়, গুদাম ভাড়া, পরিবহন ব্যয়, শ্রমিকের বেতন/মজুরী, সরকারী কর/শুল্ক ইত্যাদি) হিসাবের মধ্যে ধরা হয়নি।

উদাহরণ-২
ক. আমদারীকারীর আমদনীকৃত তুলার ক্রয়মূল্য টাঃ ১,০০,০০০/= হ'লে তার বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় টাঃ ১,১৬,০০০/=।
খ. সুতা তৈরীর মিলের তুলার ক্রয়মূল্য টাঃ ১,১৬,০০০/= হ'লে সুতার বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় টাঃ ১,৩৪,৫৬০/=
গ. কাপড় তৈরীর মিলের সুতার ক্রয়মূল্য টাঃ ১,৩৪,৫৬০/= হ'লে কাপড়ের বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় টাঃ ১,৫৬,০৯০/=
ঘ. মিল হ'তে এজেন্ট/ডিলারের কাপড়ের ক্রয়মূল্য টাঃ ১,৫৬,০৯০/= হ'লে কাপড়ের বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় টাঃ ১,৮১,০৬৪/=
ঙ. এজেন্ট/ডিলারের কাছ থেকে পাইকারী বিক্রেতার কাপড়ের ক্রয়মূল্য টাঃ ১,৮১,০৬৪/= হ'লে তার বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় টাঃ ২,১০,০৩৪/=

এখানে দেখা যাচ্ছে যে, যে তুলার ক্রয়মূল্য ছিল টাঃ ১,০০,০০০/= সেই তুলা হ'তে তৈরী কাপড় ভোক্তার নিকট পর্যন্ত পৌঁছাতে সূদ বাবদেই মূল্যের সাথে অতিরিক্ত টাঃ ১,১০,০৩৪/= যুক্ত হয়েছে, যা ভোক্তাকেই দিতে হবে। কারণ চূড়ান্ত বিচারে শেষ অবধি প্রকৃত ভোক্তাই মোট সূদের ভার বহন করে। এর অন্তর্নিহিত অর্থই হচ্ছে সূদ দিতে না হ'লে অর্থাৎ সূদ উচ্ছেদ হ'লে এই অতিরিক্ত বিপুল অর্থ (টাকা পিছু অতিরিক্ত ১.১০ টাকা) ভোক্তাকে দিতে হ'ত না।

এভাবে দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির প্রত্যেকটিতেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সূদ জড়িয়ে আছে। নিরুপায় ভোক্তাকে বাধ্য হয়েই সূদের জন্যে সৃষ্ট এই চড়া মূল্য দিতে হয়। কারণ সূদভিত্তিক অর্থনীতিতে এছাড়া তার গত্যন্তর নেই। অথচ সূদ না থাকলে অর্থাৎ ইসলামী অর্থনীতি চালু থাকলে এই যুলুম হ'তে জনসাধারণ রেহাই পেত। এতে শুধু তাদের জীবন যাত্রার ব্যয়ই কম হ'ত না, জীবন যাপনের মান হ'ত আরো উন্নত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×