somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেদিন মোনালিসা দেখতে গেলাম

১১ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্যারিসে গেলে লুভর মিউজিয়ামে যাওয়া নিয়ম। বিশেষ করে মোনালিসা দেখে না আসা অপরাধের মধ্যে পড়ে। তাতে মোনালিসাকেও অপমান করা হয়। তাই প্যারিসে গেলেই মোনালিসাকে দেখে আসতে হয়। মোনালিসার বাস লুভর মিউজিয়ামে।
ইউরোপে সহজে ফ্রি কিছু পাওয়া যায় না। সবকিছুই দাম দিয়ে কিনতে হয়। খানিকটা ব্যতিক্রম লুভর। তবে এজন্য একটি যদি আছে। আর তা হলো মাসের প্রথম রোববার লুভরে যেতে হবে। এদিন লুভরে প্রবেশ বিলকুল ফ্রি। ফ্রি বলেই নানা সমস্যা। পুরো প্যারিসবাসী মনে হয় এইদিনের অপোয় থাকে। লম্বা লাইন, প্রবেশ কষ্টকর।
নানা জনের নানা পরামর্শ মেনে লুভরের সামনে হাজির হলাম ভোর আটটায়। প্যারিসে সূর্যের আলো দেখা যায় ৯টা দিকে, আটটা মানে তখনো অন্ধকার। দেখলাম আমার চেয়েও বুদ্ধিমান মানুষ আছে, লাইনে আমার সামনে আরও চারজন। কনকনে শীত। মোনালিসা দেখার আনন্দে মাফলার আনতে ভুলে গেছি, সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছি ছাতা না এনে। চরম বিরক্তিকর হিসেবে ইউরোপের বৃষ্টি পৃথিবী বিখ্যাত। তীব্র ঠান্ডার মধ্যে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল থেমে থেমে।
আমার সামনে ভিনদেশি এক জুটি, ঠিক পেছনেও তাই। কথা শুনে ভাষা চেনা গেল না। পিছনের মহিলা সুন্দরী অথচ হৃদয়হীনা নন। বৃষ্টি হতেই তাঁর নিজের ছাতাটা আমাকে দিয়ে দিলেন। মমতাময়ীর মমতায় বৃষ্টির সমস্যা মিটলেও শীত থেকে সহজে বাঁচা গেল না। সামনের জুটি ইউরোপীয়ান কায়দায় শীত থেকে মুক্তির চেষ্টা করে যেতে লাগলো পুরোটা সময়। (ফেঞ্চ কিসের ইমো হবে)
আটটার সময় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু কখন ঢুকতে দেবে কেউ জানি না। লুভরের প্রবেশ পথটা পিরামিড আকারের মতো তৈরি করা। পেছন ফিরে দেখলাম লোকে লোকারণ্য। সামনের খোলা চত্বরটা দীর্ঘ। লাইন লুভর ছাড়িয়ে বাইরে চলে গেছে। মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হবে না। সবই ঠিক আছে, কিন্তু দরজা আর খোলে না। এদিকে অনেক ভোরে এসেছি বলে সকালের খাওয়া হয়নি। অভিজ্ঞদের দেখলাম খাবার সাথে নিয়েই এসেছে, কেবল আমিই অভুক্ত।
প্রতিবছর ৬০ লাখের বেশি মানুষ লুভরে যায় মোনালিসাকে দেখতে। এই ৬০ লাখের বড় অংশই যে মাসের প্রথম রোববার যায় তা বুঝতে সময় লাগলো না। ১০টার মধ্যে পুরো চত্বরটা ভরে গেল। ১০টার দিকে দেখি দুইটা বোর্ড রাখলো আমাদের সামনে। এই প্রথম সেখানে ইংরেজি কিছু লেখা পেলাম। ফরাসী ভাষায় তো আছেই লেখা, নীচেই আবার ইংরেজি করে দেওয়া। সেখানে বলা আছে যাদের কাছে ব্যাগ আছে তারা ঢুকবেন ডানের দরজা দিয়ে, আর ব্যাগ নাই যারা তারা বায়ের দরজা দিয়ে। মুহুর্তের মধ্যে আমি বায়ের দরজার একনম্বর ব্যক্তি হয়ে গেলাম। ইতিহাসে লেখা হয়ে থাকলো যে, ঐদিন লুভরে প্রথম প্রবেশ করেছিল একজন বাংলাদেশী। ঠিক সোয়া দশটায় এই ইতিহাসটি রচিত হয়েছিল।
একদিনে লুভর দেখা সম্ভব না। সাত দিনে দেখা সম্ভব একথাও বলা যায় না। আমার হাতে সময় মাত্র একদিন। সে কারণেই সবার আগে লুভরের যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল মাথায়, লুভরে ঢুকলামও সবার আগে। পুরো লুভর হেঁটে হেঁটে দেখতে হলে প্রচুর প্রাণশক্তির প্রয়োজন। তাই ভাবলাম আগে কিছু খেয়ে নেই। খাওয়ার ব্যবস্থা আছে সেখানে। উদরপূর্তি করে ভাবলাম এবার তাহলে লুভর দেখা হোক। যেখানে বসে খেলাম তার ঠিক পাশে ছোট একটা সিড়ি। কোথা থেকে লুভর দেখা শুরু করবো, মোনালিসা আগে দেখবো না পড়ে এসব ভাবতে ভাবতে সেই ছোট সিড়িটা দিয়ে উপরে উঠলাম কিছুটা। তারপর দেখলাম আরেকটা সিড়ি। সেটা দিয়ে খানিকটা উপরে উঠতেই একটু বেশী শীত শীত করতে লাগলো। ভিতরে তো এতোটা শীত লাগার কথা না। ভাবলাম এখানে মনে হয় বিশেষ কোনো চিত্রকর্ম রয়েছে। সেই আগ্রহে আরেকটু এগিয়ে যেতেই খোলা এক চত্বরে চলে আসলাম। আর নিজেকে আবিস্কার করলাম লুভরের বাইরে। নিজের অজান্তে আমি আসলে লুভরের জরুরী নিগর্মনের সিড়ি দিয়ে বাইরে চলে এসেছি। এর মাধ্যমে রচিত হলো আরেকটি ইতিহাস। লুভরে সবচেয়ে কম থাকা দর্শনার্থীদের মধ্যে আমার অবস্থান সম্ভবত শীর্ষে।
তারপর? আবার লাইনের শেষ খুঁজে পেলাম লুভরের একদম বাইরের রাস্তায়। আমি যখন দাঁড়ালাম আমার সামনে তখন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। কে জানে দ্বিতীয়বার লাইনে দাঁড়ানো মানুষের মধ্যেও হয়তো আমিই ছিলাম প্রথম।

আজ রস+আলোতে প্রকাশিত


লুভরে ঢোকার লাইন, এর শেষ দেখা যায় না


আমি যখন লাইনের সামনে


আমি যখন লাইনে সবার পেছনে


লুভরের দেওয়াল চিত্র। সারা লুভর জুরে এসব স্থাপত্য দেখা যায়


লাইনে দাঁড়াইয়া এসবই দেখতে হয়েছে


আমার পেছনের লাইন


এই পিরামিড দিয়ে ঢুকতে হয় লুভরে


লুভরে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:২১
৪৩টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×