লেখাটি কপি করা... ভাল লাগায় সেয়ার করলাম...
সম্প্রতি আমার কলেজজীবনের তিনজন অত্যন্ত মেধাবী বন্ধু যৌথভাবে একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম Going Digital ~ Realizing the Dreams of a Digital Bangladesh for All| বইটি প্রকাশ করেছেন দেশের মর্যাদাবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় আমার এই বন্ধুরা সেই সময়ে গোটা দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝেই সেরা ছিলেন। এরা তিনজনই বৃত্তি নিয়ে আমেরিকা চলে যান, এর মাঝে হাবিবুল্লা নেয়ামুল করিম ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িত্ প্রকৌশলে ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে এলেও বাকি দু’জন স্থায়ীভাবে রয়ে যান আমেরিকায়।
করিম শুরু থেকেই কম্পিউটার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন এবং টেকনোহ্যাভেন নামক নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কামরুল মিনা পড়াশোনা করেন কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে এবং কিছুকাল ভুবনবিখ্যাত সব কম্পিউটার কোম্পানিতে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করার পরে টেক্সাসের অস্টিনে নিজের কোম্পানি প্রাগমাসিস্টেমস গড়ে তোলেন। তৃতীয়জন, গোলাম সামদানী, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন; তিনি পৃথিবীর শীর্ষ কনসালটিং কোম্পানি ম্যাকেঞ্জির একজন ঊর্ধ্বতন কনসালট্যান্ট। তাদের এই পরিচয় দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, এরা যে কেউ একাই ওই বইটি লিখতে পারতেন; কিন্তু তিনটি অসামান্য মেধাবী মস্তিষ্ক যখন একটি গ্রন্থ রচনায় মিলিত হল তখন আমাদের প্রত্যাশা আকাশ ছুঁয়ে যায়। আনন্দের সঙ্গেই বলছি, বইটি আকাশ স্পর্শ করেছে।
কম্পিউটার আর তার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ইন্টারনেট আমাদের জীবন আমূল পাল্টে দিয়েছে, সন্দেহ নেই। আমরা সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল জীবনযাপন করছি। অবাক লাগে, একটি ক্ষুদ্র জীবনে প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর উত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, করার সৌভাগ্য হল। পূর্বপুরুষদের তুলনায় আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান। ইন্টারনেট জগতের তথ্য ও জ্ঞানের সকল দরজা খুলে দিয়েছে, যে তথ্য জোগাড় করতে পূর্বে একজন গবেষকের মাসের পর মাস লাগত, আজ তা সে পেয়ে যায় কয়েক মিনিটের ভেতরেই গুগল জাতীয় সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে। মানুষে মানুষে বন্ধুত্বের বিস্ময়কর বন্ধন গড়ে তুলেছে সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেইসবুক, টুইটার প্রভৃতি। ইলেকট্রনিক চিঠি বা ই-মেইল লেখা হয় ইয়াহু, জিমেইল, হটমেইল প্রভৃতি সুপরিচিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। প্রযুক্তির কারণেই সেসব চিঠি প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায় মুহূর্তের মধ্যে এবং প্রায় বিনা খরচে। এর সঙ্গে আমরা যদি পুরনো দিনের চিঠি পাঠানোর তুলনা করি, তবে দেখব পরিবর্তনটা বিস্ময়কর; আমাদের সময় ও অর্থ প্রচণ্ডভাবে বেঁচে গেছে অথচ গতি ও দক্ষতা যুক্ত হয়েছে সহস্রগুণ বেশি। বলা হয়ে থাকে কম্পিউটার প্রযুক্তিতে যে উত্কর্ষ অর্জিত হয়েছে তা যদি অটোমোবাইলে হতো, তবে এক গ্যালন পেট্রল পুড়িয়ে ২২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যেত; আর খরচ যেভাবে কমেছে তা যদি বিমান উড্ডয়ন শিল্পে ঘটত, তবে গোটা পৃথিবী চক্কর দেওয়ার বিমানভাড়া হতো মাত্র পঁচিশ ডলার। ইনটেলের যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মোরের অবলোকন হচ্ছে প্রতি দু’বছরে ডিজিটাল প্রযুক্তি মাইক্রোপ্রসেসরে কোষঘনত্ব (Cell Density) ও কার্য সম্পাদনায় দ্বিগুণ হচ্ছে। এই বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধিকে (exponential growth) আমার লেখক বন্ধুরা বলেছেন, ডিজিটাল ‘Big Bang’। আজ থেকে ১৩.৯ বিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্বে যে ‘বিগ ব্যাং’ ঘটেছিল তদ্রূপ ‘বিগ ব্যাং’ ঘটছে ডিজিটাল প্রযুক্তির দুনিয়ায়।
২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার। গতানুগতিক নির্বাচনী ইশতেহারের বিচারে এটি ছিল একটি দূরকল্পী, আশাজাগানিয়া ইশতেহার। এই অঙ্গীকার দেশের তরুণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল, তারা নৌকার বাক্সে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত্মুখী পরিকল্পনাকে সোত্সাহে সমর্থন দিয়েছিল। ভিশন ২০২১ আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মযজ্ঞের ভেতর এই বই ড়েরহম Digital একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী প্রকাশনা। বস্তুত আমার মেধাবী বন্ধুত্রয় বাংলাদেশের ডিজিটাল স্বপ্নপূরণের পথনির্দেশনা দিতে এবং সহযোগিতার হাত বাড়াতেই বইটি লিখেছেন। বইটির নামের ভেতরেই রয়েছে এই স্বপ্নপূরণের আকাঙ্ক্ষা।
এখন প্রশ্ন হল, সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলটি এই সহযোগিতা নিতে প্রস্তুত কি না? ডিজিটাল বাংলাদেশ তাদের জন্য কি কেবলই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার একটি আকর্ষণীয় স্লোগান, নাকি তারা সত্যি সত্যিই এ ব্যাপারে আন্তরিক? কথাটা এজন্য বলছি অতীতে ক্ষমতাসীন দলগুলো বিশেষজ্ঞদের কথা তেমন শোনেনি, বিশেষজ্ঞদের দিকনির্দেশনা সংবলিত প্রস্তাবনাসমূহ গুদামঘরে ফেলে রেখেছে; তারা শুনেছে অর্ধশিক্ষিত মন্ত্রী ও মতলববাজ আমলাদের কথা। এসবের ফলাফল কী হতে পারে তার সবচেয়ে করুণ উদাহরণটি তো সবারই জানা। আমাদের (গোপন) তথ্য পাচার হয়ে যাবে এই ভয়ে সমুদ্রগর্ভস্থ (submarine) কেবলের সঙ্গে বিনামূল্যে সংযুক্ত না হওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত। এটা ঘটেছিল বিএনপির শাসনামলে। পরে ওই একই সংযোগ আমাদের নিতে হয়েছে অনেক অর্থের বিনিময়ে, সফটওয়্যার রফতানি ও ডাটা ট্রান্সফারের অনেক কাজ ইতোমধ্যে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে হারিয়েছিলাম। ১৯৯৭ সালে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি দল সফটওয়্যার রফতানির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ভারতের চারটি শহর পরিদর্শন শেষে সরকারের কাছে ৪৫টি সুপারিশ পেশ করেছিল। এটি তারা করেছিল সরকারেরই অনুরোধে, অথচ সরকার মাত্র কয়েকটি সুপারিশ গ্রহণ করে, বাকিগুলো ‘হিমঘরে’ ফেলে রাখে।
কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ, প্রাকৃতিক সম্পদহীন একটি দেশের পক্ষে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা ছাড়া উপায় নেই। Going Digital গ্রন্থের লেখকদের মতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ‘উল্লম্ফন’ (লেখকদের ভাষায় leapfrogging), পা পা করে এগুনোর আর সময় নেই, প্রয়োজনও নেই, প্রথার পুরনো পথে না হেঁটে দরকার প্রযুক্তির রকেটে চড়ে বিপুল লাফ দেওয়া। ২০০৯ সালে ১২০টি দেশের ওপর পরিচালিত বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা যায় ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সংযোগ ১০% বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ১.৩% বৃদ্ধি পায়, অর্থাত্ একটি মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে ১০% ব্রডব্যান্ড সংযোগ বৃদ্ধি আমাদের বহু বছর ধরে ৬%-এর রানওয়েতে আটকে থাকা জিডিপিকে স্বপ্নের ৮.৫%-এ নিয়ে যেতে পারে, অর্থনীতির বিমানটি ডানা মেলে আকাশে উড়তে পারে। বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এশিয়ার দেশগুলোয়, যেখানে শ্রমমূল্য অনেক কম, সেখানে আউটসোর্সিং করছে। বাংলাদেশ এই খাত থেকে উপার্জন করতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। আমাদের প্রতিবেশী ভারত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার উপার্জন করছে এই খাত থেকে। এছাড়া রয়েছে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। গার্মেন্ট শিল্পের মতোই বিকশিত হতে পারে এই শিল্প, আর তখন আমাদের দেশের লাখ লাখ বেকার তরুণ এই শিল্পে কাজ খুঁজে পাবে। (প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাংলাদেশের তরুণরা যথেষ্ট মেধাবী এবং উদ্ভাবনী মস্তিষ্ক সম্পন্ন)।
আজকের যুগকে বলা হয় তথ্যপ্রবাহের যুগ, তাকে তথ্যপ্রযুক্তির যুগও বলা যেতে পারে; কেননা প্রযুক্তির বিস্ময়কর সাফল্য তথ্যপ্রবাহকে করেছে বিদ্যুত্গতি সম্পন্ন। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিত্সার মতোই তথ্য অধিকার আজ মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। আর তথ্য কেবল অধিকার নয়, তা মানুষের সম্পদ ও শক্তি। অজ্ঞানতা মানুষকে যে কেবল অন্ধকারে রাখে তাই নয়, তাকে করে রাখে অধিকারবঞ্চিত, পশ্চাত্পদ এবং পরমুখাপেক্ষী। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রবাহে অসামান্য অবদান রাখতে পারে, গ্রামবাংলার লাখ লাখ নিরক্ষর মানুষ ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জেগে উঠতে পারে, তারা জেগে উঠছেও। কোন ফসলে কোন সার প্রয়োগ করতে হবে কী পরিমাণে, আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি (বৃষ্টি হবে নাকি খরা), কোন বাজারে পণ্যের কী দাম-সব সে জেনে নিতে পারে ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট থেকে। Going Digital গ্রন্থে এমনি বেশ কিছু দেশের উদাহরণ দেওয়া আছে। ইন্টারনেট সার্চইঞ্জিন কোম্পানি গুগল উগান্ডার চাষিদের সেবায় ‘কৃষকের বন্ধু’ নামের একটি কৃষিতথ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখান থেকে কৃষকরা চাষবাসের সব পরামর্শ পাচ্ছেন। ভারতে টাটা প্রতিষ্ঠিত এমনি একটি ওয়েবসাইট হল সকত্রংযর। ফিনল্যান্ডের বহুজাতিক কোম্পানি নোকিয়াও অনুরূপ একটি সেবা (Nokia Life Tools) খুলেছে ভারতে, যেখানে শিক্ষা ও বিনোদনের পাশাপাশি কৃষি বিষয়ক তথ্যও পাওয়া যায়। গ্রামীণ মহিলাদের মোবাইল ফোন দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলার গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগটিও অনুরূপ, যেখানে ক্ষুদ্রঋণ ও মোবাইল ফোন একীভূত। এখানে ‘মোবাইল ফোনটি একটি গাভীর মতোই’ অর্থকরী। e-governance চালু হলে সরকারি তথ্য, সেবা ও সিদ্ধান্ত জনগণের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে যাবে, দুর্নীতির করালগ্রাস থেকে দেশবাসী অনেকটাই মুক্তি পাবে, আমরা যাকে বলি ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ তা ঘটবে।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক ভালো দিকনির্দেশনা তৈরি হয়েছে। ১৯৯৮ সালের জাতীয় টেলিকম নীতি, ২০০২ সালের জাতীয় ICT নীতি (যা ২০০৯ সালে সম্পূর্ণরূপে সংশোধিত হয়), ২০০৪ সালের BTRC আইন, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ন্যস্ত অ২ও প্রকল্প প্রভৃতি। সুতরাং কর্মপন্থা নির্ধারণে তেমন সমস্যা নেই, সমস্যা হল এদের বাস্তবায়নে। প্রয়োজন মালিকানা (ownership) প্রতিষ্ঠা করা। এই মালিকানা প্রধানমন্ত্রী নিজে নিতে পারেন অথবা তিনি ব্যস্ত থাকলে একজন নিবেদিত জ্ঞানসম্পন্ন মন্ত্রী এর দায়িত্ব নিতে পারেন। নেতৃত্বহীনতা ও অঙ্গীকারের অভাব এ সেক্টরে প্রয়োজনীয় গতি সঞ্চারিত না হওয়ার মূল কারণ। সরকার এ পথে না গিয়ে এই দায়িত্ব দিয়েছে UNDP এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থাকে। ফলে মাতব্বর অনেক, একক কর্তৃত্ব কারও নেই এবং নেই মালিকানাবোধও। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরও প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। কত বিনিয়োগ করতে হতে পারে তাও বলা আছে এ গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়ে। মোট বিনিয়োগ লাগবে দুই বিলিয়ন ডলার এবং সেটা লাগবে পাঁচ বছর মেয়াদে। সুতরাং ফিবছর টাকার অঙ্কটা খুব বেশি নয়। দীর্ঘমেয়াদি সুফল ও জাতীয় উন্নয়নে অসামান্য পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বরং তা নেহাতই সামান্য।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে বা ভিশন ২০২১ অর্জনের জন্য যে চারটি মৌলিক কাজ করতে হবে Going Digital গ্রন্থে তাদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। এগুলো হল :
১. ইন্টারনেট সংযোগ সবই জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কাজ কিছুটা এগিয়েছে, তবে তা আশানুরূপ নয়। বেতার (Wireless) প্রযুক্তির মাধ্যমে, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী (Wimax প্রযুক্তিনির্ভর) সংস্থাগুলো যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে তা ব্যবহার করে এটা গড়ে তোলা যেত সহজে, কিন্তু সরকার এগুচ্ছে শম্বুকগতিতে, চিরাচরিত আমলাতান্ত্রিক পথে।
২. কম মূল্যে ডিভাইস (কম্পিউটার) সরবরাহ করতে হবে। টেশিসের ‘দোয়েল’ এক্ষেত্রে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে এর মূল্য দশ থেকে আটাশ হাজার টাকা-যা অধিকাংশ গ্রামীণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আজ যে মোবাইল ফোন বাংলাদেশের আট কোটি মানুষের হাতে তার মূল কারণ, এক হাজার টাকায় একটি মোবাইল ফোন কেনা যায়। ভারতে ‘আকাশ’ নামের যে ট্যাবলেট কম্পিউটার সরকার ভর্তুকিসহ দিচ্ছে তার দাম দেড় হাজার রুপি। ‘দোয়েল’ বা তদ্রূপ ডিভাইসের মূল্য তিন/চার হাজার টাকার মধ্যে আনতে হবে। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে তিন লাখ কম্পিউটার বিক্রি হয় (সাম্প্র্রতিক বছরগুলোয় প্রবৃদ্ধির হার ২০%, যা আশাব্যঞ্জক), পরিবারে টেলিভিশনের পরেই রয়েছে কম্পিউটার; তারপরেও উচ্চমূল্য হবে এর সম্প্রসারণে বড় প্রতিবন্ধক। এক্ষেত্রে কম মূল্যের SmartPhone হতে পারে একটি চমত্কার বিকল্প।
৩. বাংলায় বিভিন্ন content (যেমন টেক্সট, ভিডিও, মিউজিক, আর্কাইভস) তৈরি করতে হবে। আমাদের বেশিরভাগ মানুষ, এমনকি ‘শিক্ষিত’জনেরা, ইন্টারনেটের ইংরেজি content ব্যবহারে সক্ষম নন।
৪. শিক্ষিতের হার বাড়াতে হবে, কেননা ৫০ ভাগ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন জনগোষ্ঠী নিয়ে ১০০ ভাগ ডিজিটালি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা যাবে না। এখনও আমাদের দেশে প্রাইমারি স্কুলে ছাত্র ঝরে পড়ার হার শতকরা আশি ভাগ, অর্থাত্ পঞ্চম শ্রেণী পাস জনগোষ্ঠীর হার শতকরা ২০ ভাগ। কেবল বাংলায় চিঠি লেখা ও পাঠ করতে পারলে সরকারি পরিসংখ্যানের ‘শিক্ষিতে’র হার স্বস্তিদায়ক হলেও এই ‘শিক্ষিত’রা কি আদৌ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে সক্ষম?
Going Digital গ্রন্থটি ডিজিটাল বিপ্লব বা ‘বিগ ব্যাং’য়ের বিস্ময়কর সব তথ্যেই কেবল পরিপূর্ণ নয়, সেই প্রযুক্তি কী করে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মানচিত্র পাল্টে দিচ্ছে তার অমিত আশাজাগানিয়া সব ঘটনায় ভরপুর। এটি পাঠে যেমন আনন্দ পাবেন প্রযুক্তিমনস্ক মানুষ, তেমনি সাধারণ পাঠক। বইটির সবচেয়ে পজিটিভ দিক হল বাংলাদেশ কী করে এই ‘আলাদিনের দৈত্য’টিকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া, কেননা প্রযুক্তিজ্ঞানে বোদ্ধা লেখকত্রয়ের গভীর মমতা স্বদেশভূমির প্রতি, অন্য কিছুতে নয়। তাই সরকারি নীতিনির্ধারকগণই হবেন এই বইটির প্রধান পাঠক ও ব্যবহারকারী; যারা এর থেকে দিকনির্দেশনা নেবেন এবং প্রমাণ করবেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কেবলই একটি মুখরোচক নির্বাচনী স্লোগান ছিল না।
মুল লেখাটি

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



