বেহেশত পাব আমি, তার জন্য অন্য আরেকজন এত পেরেশান কেন ? কারণ মার্কেটিং করলে তারও কমিশন আছে। এই কমিশনের লোভ কারও পক্ষে এড়ানো সম্ভব না। এই মার্কেটিং পলিসি পৃথিবীব্যাপী ধর্মের ব্যবসা খুলে বসেছে।
কিন্তু ধর্মের ব্যবসায় যত লাভ, তার চেয়ে অনেক বেশি লাভ ধর্মের সঙ্গে যখন রাজনীতি এসে মেশে। তখন বিনা পুঁজিতে বিপুল জনসমর্থন পাওয়া যায় এবং সাম্রাজ্য জয় করা যায়। কোন কারণ ছাড়াই একদল মানুষকে আরেকদল মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়া যায়। যারা পার্থিব কোন কারণে কখনও শত্রু ছিল না, তাদেরকেও চিরস্থায়ী শত্রু বানিয়ে ফেলা যায়।
ফলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা এবং সাম্রাজ্য বাড়ানোর পক্ষে কুযুক্তি মগজে ঢোকানো খুব সহজ হয়। এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় লাভ হয় ধনী অস্ত্র ব্যবসায়ীদের, ধূর্ত রাজনীতিবিদদের এবং ধর্মজীবীদের। মারা যা খাওয়ার পুরোটাই যায় গরীব সাধারণ মানুষের। কিন্তু ধর্মের আফিম গিলিয়ে তাদের ধর্মান্ধ বানিয়ে চির দিনের জন্য গোলাম বানিয়ে ফেলা সম্ভব। ফলে তারা সব সময় তার তথাকথিত বানানো প্রতিপক্ষকে অনর্থক ঘৃণা করে এবং যুদ্ধকে সমর্থন করে সাম্রাজ্যবাদীদের সহায়তা করতেই থাকবে।
সারা পৃথিবীতে ধর্মের সংখ্যা ৪৩০০ টি। তার মধ্যে আব্রাহিমীয় তিনটি ধর্ম সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার ঢাল হিসেবে চমৎকারভাবে ব্যবহার করা যায়। এই ধর্মগুলো যুদ্ধ চায় বলেই ধূর্ত রাজনীতিবিদদের কাছে এই ধর্মগুলো প্রিয়। কারণ যুদ্ধ না হলে সাম্রাজ্য বিস্তার করা যায় না। এগুলো যতটা না ধর্ম, তার চেয়ে অনেক বেশি সাম্রাজ্য বিস্তারের হাতিয়ার। প্রতিটি ধর্মের মধ্যে সাম্রাজ্য বিস্তারের পক্ষে কুযুক্তির অভাব নাই। ফলে এগুলো অন্য দেশ দখল করার পক্ষে ব্যবহার করা খুব সহজ।
একই স্থান (জেরুজালেম) তিন ধর্মের লোকের কাছে ঈশ্বরের নাম দিয়ে বেচে দেয়া হয়েছে। অনেকটা একই নারীকে তিন পুরুষের কাছে বিয়ে দেয়ার মতো। স্বভাবতই যুদ্ধ লাগবে এবং প্রচুর রক্তপাত হবে। এই যুদ্ধের কোন শেষ কখনও হবে না। আজকে এক পক্ষ জিতছে এবং অপরপক্ষ হারছে। কোন এক প্রজন্মে এসে অন্য পক্ষ জিতবে। সাম্রাজ্য বিস্তারের পক্ষে ধর্ম ও রাজনীতি মিলেমিশে একাকার বলে এই যুদ্ধের পক্ষে সব সময় মানুষ পাওয়া যাবে। নিজেরাও মরবে, অপরকেও মারবে। আর লাভ হবে সারা পৃথিবীর অস্ত্র ব্যবসায়ীদের। ধর্ম ও রাজনীতিকে ব্যবহার করে তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ব্যবসা করে যাবে। এই খেলার কোন শেষ নাই।
ধর্মের আফিম গিলিয়ে এবং জাতীয়তাবাদ উস্কে দিয়ে বড় বড় অস্ত্রের ব্যবসায়ী রাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইল নামক রাষ্ট্রটি করা হয়েছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল রাখার জন্য। যুদ্ধকে ব্যবসা হিসেবে চিরস্থায়ী রূপ দেয়ার জন্য। এই ব্যবসার পক্ষে ধর্মের কুযুক্তি ব্যবহার করে বলা হচ্ছে 'দ্যা প্রমিজ ল্যান্ড'। তারা তাদের সংসদের সামনে লিখে রেখেছে সেই আয়াত - হে ইসরাইল, তোমার সীমানা নীল নদ থেকে ফোরাত পর্যন্ত। সেই প্রমিজ ল্যান্ডের জন্য ইহুদীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী যুদ্ধ করে যাবে। পৃথিবীর বড় বড় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের ল্যাবরেটরি হিসেবে এই 'প্রমিজ ল্যান্ড' ব্যবহার করবে এবং তাদের ডেমো বানাবে আরবদের খুন করতে করতে।
কিন্তু এই পাশা খেলায় ইহুদীরা এক তরফা জিতবে তার কি কোন গ্যারান্টি আছে ? কোন দিন কি পাশার ছক উল্টাবে না ? তখন ? সুতরাং যুদ্ধ থামবে না। ধর্ম, রাজনীতি, বিজ্ঞান, ব্যবসা --- সব কিছু যখন যুদ্ধের পক্ষে, তখন যুদ্ধ থামবে কেন ?
ধর্মের চশমা পরা চোখ দিয়ে এই সমস্যার কোন সমাধান কোন দিনও হবে না। ধর্মের চশমা সব সময় নিজেকে ও নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ এবং অপর ধর্ম ও তার অনুসারীদের ঘৃণিত বা অভিশপ্ত হিসেবেই আমাদের দেখাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২১ রাত ১০:১০