somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোহিনূর হীরার ইতিহাস

১৮ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘোড়া ছুটিয়ে এসে পৌঁছান যুবক। প্রবেশ করেন পিতার তাবুতে। হাতে তুলে দেন উজ্জ্বল পাথরটি। বলে উঠেন, “আব্বাজান এটা একটা হীরক খণ্ড এখান থেকে হাজার মাইল দক্ষিণে গোলকুন্ডার খনিতে পাওয়া যায়- এত বড় হীরকখণ্ড আগে দেখেনি। গোয়ালিয়রের রাজপরিবারের রত্নাকর একবার এর মূল্য নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেছিলও যে পুরো পৃথিবীর অর্ধদিনের ব্যয় নির্বাহ করা যাবে এটা দিয়ে”। কথাগুলো বলছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের ২য় সম্রাট হুমায়ূন তাঁর পিতা সম্রাট বাবর কে। আর এই হীরকখণ্ড টি হচ্ছে পৃথিবীর বিখ্যাত হীরা কোহ-ই-নূর।



মোঘল বাহিনীর হাতে পরাজিত হন গোয়ালিয়রের শাসক। সেই শাসকের মাতা অপেক্ষায় থাকেন ছেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সুসম্পন্ন করার জন্য। কিন্তু তাঁর তাবুতে আক্রমন করেন ডাকাতের দল। ডাকাতের হাত থেকে তাদের উদ্ধার করেন শাহজাদা হুমায়ূন। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সেই মহিলা হুমায়ুনের হাতে তুলে দেন কোহিনুর হীরা।


১০৫.৬ ক্যারেটের এই হীরার ইতিহাস কিন্তু বহু আগের। নানা ঘটনা জড়িত রয়েছে এর সাথে। কারো মতে এই হীরার বয়স ৫ হাজার বছর। কারো মতে কর্ণাটকের কোলার খনি থেকে কেউ বা বলে গোয়ালিয়রের খনি থেকে এসেছে কোহিনুর। হিন্দু মিথলোজিতে আছে এই হীরাটার কথা। চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যের হাতেও এসেছিল এই হীরাটা এইরকম শোনা যায়। কিন্তু শক্ত কোনও ভিত্তি নেই এই কথাগুলোর।

যাই হোক ইতিহাসবিদদের মতে ১৩০৬ খ্রিষ্টাব্দে মালওয়ার শাসক কাকাতিয়া সাম্রাজ্যের শাসকের হাতে তুলে দেন কোহিনুর কে। কাকাতিয়া সাম্রাজ্যের হাত থেকে এই হীরা আসে দিল্লীর পাগলা সুলতান বলে খ্যাত মুহম্মদ বিন তুঘলকের হাতে সম্ভবত ১৩২৩ খ্রিষ্টাব্দে। পরে লোদী সাম্রাজ্যের শাসকরা এটার মালিক হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন।

সম্রাট বাবরের লিখিত বাবর নামাহর মতে গোয়ালিয়রের সেই নাম না জানা রাজপরিবারের হাত থেকে তারা কোহিনুর হীরাটি পান। প্রসঙ্গত সেই রাজপরিবার আর ইব্রাহিম লোদি এক সাথে লড়েছিলেন পানিপথের প্রথম যুদ্ধে। সম্রাট বাবরের হাত ধরে সেই হীরা আসে সম্রাট হুমায়ূনের হাতে। ইতিহাসবিদেররা বাবর নামা কে শক্তিশালী রেফারেন্স হিসেবে গন্য করেন।

আবার হাতবদলঃ
সম্রাট হুমায়ূন রাজ্যহারা। আশ্রয় নিয়েছেন পারস্যের অধিপতি শাহ তামাস্পের কাছে। কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে কিংবা উপহার বিনিময়ের রেওয়াজ হিসেবে পারস্যের সম্রাটের হাতে তুলে দেন এই মহামূল্যবান হীরাটি। পরবর্তীতে পারস্যের শাহর সহযোগিতায় দিল্লীর মনসদ ফিরে পান হুমায়ূন। কিন্তু মোঘল সম্রাটদের হাতছাড়া হয়ে যায় কোহিনূর। সম্রাট আকবর দ্য গ্রেট এবং তাঁর পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাম্রাজ্যের সময় এই হীরা তাদের কাছে ছিল না।

ফিরে আসা মুঘলদের কাছেঃ
পারস্যের শাহ আহমেদনগরের শাসক বুরহান নিজাম শাহ কে উপহার হিসেবে দেন কোহিনুর। মূলত নিজাম শাহ শিয়া ছিলেন বলেই এই উপহার দেওয়া। প্রায় ১০৯ বছর এই হীরা ছিল আহমেদনগরের নিজাম শাহ এবং গোলকুন্ডার কুতুব শাহ দের কাছে। পরে সুলতান আবদুলা কুতুব শাহের প্রধানমন্ত্রী মির জুমলা এই হীরা সম্রাট শাহজাহানের হাতে তুলে দেন। শাহজাহান এই হীরাটা কে বসান তাঁর বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসনে। সম্রাট শাহজাহান পর সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে ছিল এই হীরা। এই সময় কোহিনুরের স্থান ছিল মুঘল কোষাগারে। পরে মুহম্মদ শাহ রঙ্গিলার কাছে ছিল এই হীরাটা। ( উইকির মতে আওরঙ্গজেব তাঁর রাজধানী লাহোরে নিয়ে আসেন, কোহিনুর হীরার স্থান হয় তাঁর নিজ হাতে গড়া লাহোরের বাদশাহি মসজিদে)

অতঃপর হাত ছাড়াঃ
পারস্যের নাদির শাহ ভারত আক্রমন করে লুঠ করে নেন ময়ূর সিংহাসন সহ এই কোহিনুর হীরা। কিন্তু বেশিদিন ভাগ্যে সইল না তাঁর। আততায়ীদের হাতে খুন হয়ে যান নাদির শাহ। হীরা চলে যায় নাদির শাহ্‌র আফগান জেনারেল আহমেদ শাহ দুররানীর কাছে। নাদির শাহর লাশ দেখার সময় কায়দা করে তাঁর সিল টা আহত করের দুররানী এবং সেই সূত্রে মালিক হন কোহিনুরের। তাঁর মৃত্যুর পর হীরা আসে তাঁর সন্তান তিমুর শাহর কাছে। তিমুরের কাছ হতে জামান শাহর হাতে আসে সেখান থেকে সেখান হতে সুজা উল মূলকের কাছে। তিমুর শাহর ছোট সুজা উল মূলক তাঁর সৎ ভাই মাহমুদের কাছে পরাজিত হয়ে কাশ্মীরের গভর্নর আতা মুহাম্মদ খানের কাছে বন্দী হন ১৮১১ সালে। কিন্তু পাঞ্জাবের শিখ রাজা মহারাজ রঞ্জিত সিং সুজা কে উদ্ধার করেন এবং তাকে পরিবার সমেত লাহোরে পাঠিয়ে দেন। বদলে সুজা উল মূলক ১৮১৩ সালে রঞ্জিত সিং এর হাতে তুলে দেন কোহিনুর হীরা।

পাঞ্জাব থেকে ইংরেজদের হাতেঃ


রঞ্জিত সিং মারা গেলে হীরার মালিক হন তাঁর ১১ বছরের ছেলে মহারাজ দিলীপ। কিন্তু ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশরা দখল করে নেয় পাঞ্জাব আর বলা চলে দিলীপের হাত থেকে কেড়ে নেয় কোহিনুর হীরাটি। এইভাবে এই উপমহাদেশের কাছ হতে হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের অন্যতম মহামূল্যবান সম্পদটি। লর্ড ডালহৌসি ১৮৫০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেন হীরাটি। এই আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন করার জন্য তাঁরা দিলীপ কে নিয়ে যান লন্ডনে। সেই থেকে কোহিনুর শোভা পাচ্ছে রানীর মুকুটে। টাওয়ার অফ লন্ডনে দেখানোর জন্য মুকুটটি রয়েছে।


তথ্যসূত্রঃ
১) অ্যাম্পেয়ার অফ দ্য মোঘল রাইডারস ফ্রম দ্য নর্থ-অ্যালেক্স রাদারফোর্ড
২) উইকি লিঙ্ক
৩)ওয়েব সাইট
৪) ব্লগ
৫)ছবি নেট থেকে প্রাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×