তখন সম্ভবত আমি প্রাইমারিতে পড়ি। আমার ছোট ভাই জুয়েল আমর চাইতে দুই বছরের ছোট। রমজানের ঈদ প্রায় এসে গেলো এখনো আমাদের নতুন কাপড় কিনা হয় নাই। মা এর মাধ্যমে বাবাকে জানাই কিন্তু উত্তর আসে এই দু-এক এর মধ্যে একজনের কাছে বাবা টাকা পাবে সেটা দিলেই আমাদের কাপড় কিনা হবে। এই ভাবে ঈদ আরো কাছে চলে আসে কিন্তু বাবা আর টাকা পায় না।
অবশেষে আমরা দুই ভাই মাকে বললাম “বাবকে বলো কার কাছে টাকা পায় আমরা দুজন গিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসবো” পরের দিন উত্তর আসলো জেলা সদর জামালপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মতিউর রহমানের কাছে টাকা পাবে।(আসলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, ঈদের আগে মুক্তিযোদ্ধাদের এটা উৎসব বোনাস দেয়ার কথা ছিলো। এখনকার মত তখন কোনো রেগুলার ভাতা দিতো না। এটার উপর ভরসা করে বাবা বলেছিলেন)
দুই ভাই ঠিক করলাম দুজনেই জামালপুর যাবো আর সেটা ছিলো ঈদের আগের দিন। আমাদের বাড়ি থেকে জামালপুরের বাস বাড়া ছিলো দুই টাকা। বাসে প্রচন্ড ভিড় হলো, আমাদের নামিয়ে দিলো দয়াময়ী মোরে। সেখানে একজনকে জিজ্ঞাসা করলে বললো প্রথমে স্টেশন রোড় যেতে হবে সেখান থেকে পাঁচ রাস্তার মোরে মতিউর রহমানের বড়ি। দুই ভাই হাঁটা শুরু করলাম। মাঝ রাস্তায় সম্ভবত লম্বা গাছ নামে একটা জায়গায় দেখলাম কিছু পোলাপান গোল হয়ে কি যেনো্ দোখছে। কাছে গিয়ে দেখি বড় একটা কাঠের বাক্সের ভিতরে একটা টিভি বসানো আর সামনের তিন জন ছেলে এক হাতে কালো একটা গোল কাঠি গুরাচ্ছে আর অন্য হাতে লাল এ হলুদ বাটন সমানে টিপছে। বাকি সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
টিভির দিকে তাকিয়ে দেখি ভিতরের মানুষ গুলো এই তিনজন ছেলের হাতের ইশারায় চলছে। খুব অবাক লাগলো। একবার দেখলাম একটি পিস্তল মাটিতে রেখে নায়ক গুলো দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে মারামারি করছে। আমি মনে মনে বললাম এরা পিস্তলটি নিচ্ছে না কেনো ? কারন একটা ভিলেন মারতে তাদের কয়েকটা ঘুষি লাগছে কিন্তু পিস্তল দিয়ে তো একটা গুলি করলেই শেষ। আমার জানা ছিলো না ভিডিও গেমের ভিলেনরা পিস্তলের এক গুলিতে মরে না। (ও ভিডিও গেমটা মস্তোফা ছিলো)।
কিছুখন পরে খেয়াল হলো আমরা কি উদ্দেশ্য আসছি। আবার শুরু করলাম পথ চলা। স্টেশন রোড়ে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করলে পাঁচ রাস্তার মোরের দিক বলে দিলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে লোকদের জিজ্ঞাসা করলে সঠিক ভাবে কিছু বলতে পালো না। একজন বললো এই বাড়ি হতে পারে। দেখলাম দুতালা বাড়ি, পাশ দিয়ে লোহার সিঁড়ি লাগানো কিন্তু কোনো লোকজন দেখা যাচ্ছে না। গেটে গিয়ে নক করবো সে সাহস পেলাম না। আসলে ছোট মনে যে রকম কল্পনা করে ছিলাম যে জামালপুর আসলেই লোকটিকে পেয়ে যাবো আর সে বললেই আমাদের টাকা দিয়ে দিবে কিন্তু বাস্তব তো কল্পনা থেকে অনেক দূর। কিছুখন বাড়িরটির দিকে তাকিয়ে থেকে দুই ভাই সিদ্ধান্ত নিলাম চল বাড়ি ফিরে যাই। আসলে সারাদিন ঘোরাঘুরিতে আমাদের শরীর এ মন দুটিই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো।
যাক, আবার হেঁটে হেঁটে এসে বাসে চড়লাম। রাস্তায় দেখলাম একটা ঈদের মাঠ রঙ্গিন কাগজ দিয়ে সুন্দর করে সাজাচ্ছে। সেটা দেখে মনটা কেনো জানি দ্বিগুন খারাপ হয়ে গেলো। এখনো সেই রাস্তা দিয়ে গেলে সেই ঈদের মাঠটিকে খুঁজি....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




