somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কথায় আমি .....2

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বকথা:
আমার জন্ম 1982 সালের 13ই মে, বাংলা সনটা ঠিক জানিনা, সম্ভবত 30শে বৈশাখ। মায়ের কাছে শুনেছি আমার জন্মের দুই-দিন আগেও নাকি ঝড়ের রাতে আম কুড়াতে যেতে ইচ্ছে করছিলো তার, নানীমা'র বকা শুনে আর হয়ে উঠেনি। আমার যখন জন্ম, মা তখনও চাকরি পাননি, বাবাও চাকরিতে নতুন। মা থাকতেন নানুবাড়িতে (প্রথম সন্তান জন্মের সময় বাবার বাড়িতে থাকার একটা রেওয়াজ আছে মনে হয় গ্রামে-গঞ্জে)।

আমার মা কিংবা বাবা কেউই খুব স্বচ্ছল পরিবারের ছিলেন না, জন্মের সময় বেশ দুরবস্থা চলছিলো তাদের। জন্মের বছর খানেক পরে মা চাকরিটা পেয়ে যান। তার আগ পর্যন্ত মামার সাথেই থাকতেন মা.. চাকরি পাবার পরও অবশ্য ওখানেই ছিলেন (পাশের গ্রামের স্কুলেই তার পোস্টিং হয়েছিলো।) এর মধ্যে জন্ম নেয় আমার একটি ভাই.... জন্মের ছ'মাসের মাথায় হঠাৎ নিউমোনিয়া হয়ে মারা যায় সে। এর পরেই আমার আম্মা মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন... যদি আমার কিছু হয়, অসুস্থ হয়ে পড়ি বা অন্য কোন সমস্যা হয় এই ভয়ে উনি আমার বাবার কাছে চলে আসেন শহরে। বাবার পোস্টিং তখন ময়মনসিংহে। মা অবশ্য এর আগেও আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে বাবার কাছে ব্রাহ্মনবাড়িয়াতে গিয়ে থাকতেন, তবে পাকাপাকিভাবে সংসার শুরু করেন ময়মনসিংহেই প্রথম। ময়মনসিংহে আসার পর মা আরেকবার চাকরিতে ফিরে গিয়েছিলেন... তবে নানা কারণে আবার চলেওআসেন । আমার শহরবাসের সেখানেই শুরু। মাঝে মাঝে ভাবি আমার মা যদি চাকরি ছেড়ে না দিতেন তাহলেই জীবনটা অন্যরকম হতো আমার। ভালো হতো কিনা জানিনা, তবে পুরোপুরি আলাদা একটা জীবন পেতাম।

মনে পড়ে:
মায়ের সাথে যখন গ্রামে থাকতাম তখনকার স্মৃতি খুব ধূসর, বলতে গেলে কিছুই মনে পড়ে না। টুকরো টুকরো কিছু ঘটনা টুকরো টুকরো কিছু দৃশ্য কেবল মনে পড়ে। এর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো আমি আমার এক বছরের বড়ো খালাত বোনের সাথে ঝগড়া করে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলাম। আজ এ্যাতো বছর পরে ঘটনার উদ্দেশ্য-বিধেয় কিছু মনে নেই... শুধু চোখে ভাসে একটা বাচ্চা মেয়ে মাটিতে গড়াগড়ি করে চিৎকার করছে..... একজন মহিলা ( সম্ভবত আমার নানু) তাকে কোলে করে..... ক্ষতস্থানের পরিচর্যা করছেন। ছোটবেলা থেকেই আমার এই হঠাৎ উঠে যাওয়া রাগটা আমার আয়ত্ত্বের বাইরে... খুব কমই রেগে যাই...তবে রেগে গেলে একেবারে কান্ডজ্ঞান থাকেনা.. বড় হবার পর এই ক্রোধটাকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করেছি কিংবা করতে চেষ্টা করেছি... যেমন হাঁটতে বেড়িয়ে পড়া.... গল্পের বই নিয়ে বসে পড়া... নিজের হাত ক্ষত-বিক্ষত করা ( এটা অবশ্য আরো ছোট থাকতে করতাম)।

গ্রামে থাকাকালীন আর কোন ঘটনার কথা মনে পড়েনা আমার. কিছু আবছা দৃশ্য মনে পড়ে...তবে সবগুলোর যোগসূত্র খুঁজে পাইনা। ময়মনসিংহের স্মৃতি সেই তুলনায় যথেষ্টই তাজা। প্রথমে যে বাড়িটাতে উঠেছিলাম... তার চেহারা মনে নেই আমার..শুধু কিছু ছাড়াছাড়া ঘটনা মনে পড়ে। পাশের বাসার এক আন্টি আমাকে নাকি খুব আদর করতেন.. উনার হাজবেন্ড আব্বুর কলিগই ছিলেন। উনার বছর চারেকের ছেলে ছিলো একটা...নাম রানা.... সে সাকি সদর্পে ঘোষণা করতো.... বড়ো হয়ে আমাকেই সে বিয়ে করবে.... বাচ্চ-কাচ্চাদের মর্জি বুঝা ভার । বিয়ের মতো কঠিন ব্যাপারই বা তার মাথায় কেন এসেছিলো কে জানে। এই বাসার দুইটা জিনিস শুধু পুরোপুরি মনে পড়ে আমার....এক: রানার একটা মুরগী ছিলো যার পেটের ভেতর ছিলো প্লাস্টিকের ডিম.... চাবি দিলে বা কিছু একটা করলে সেই ডিম বেরিয়ে আসতো। সদ্য গ্রাম থেকে আসা তিন বছর বয়সী একটা মেয়ের চোখে এটা ছিলো পৃথিবীর আশ্চর্যতম খেলনা..... মজার ব্যাপার হলো আরো একটু বড়ো হয়ে এই খেলনাটা অনেক খুঁজেছি...পাইনি। সম্ভবত..... আমার ছোটবেলার স্মৃতিতে সেই ডিম-পাড়া মুর্গির উপরে কল্পনাপ্রসূত কিছু গুণাগুণ বর্তেছিলো. যা আদতে তার ছিলোই না....

দুই: একদিন আমাকে ঘুম পাড়িয়ে বাবা-মা ছাদে গিয়েছেন লোডশেডিং এর রাতে, আমার এক ফুপাতো ভাই (তখন তার বয়স প্রায় তের বা চৌদ্দ ) আমার সাথে ছিলো.... তো সে কি মনে করে দরোজার ছিটকিনি আটকিয়ে পাশের ঘরে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে। তার ছিলো আবার কুম্ভকর্ণ স্টাইলের ঘুম। এদিকে পনের মিনিটের মাথায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে... আস্তে আস্তে মাকে ডাকছি...কোন সাড়া নেই.... হঠাৎ করে প্রচন্ড ভয় পেলাম আমি.... ওরকম বিজাতীয় ভয় আর জীবনেও পাইনি আমি...... বাবা-মা ফিরেও এসেছেন এর মধ্যে ...বাইরে থেকে তালা খুলে ঢুকতে গিয়ে দেখেন দরোজা ভেতর থেকে বন্ধ....প্রথমে কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করলেন....দরোজায় লাথি দিলেন..... ধাক্কা-দিলেন.....আমার নাম ধরে ... ভাই এর নাম ধরেও অনেকবার ডাকলেন....কোন সাড়া-শব্দ নাই.... তারাও খুব ভয় পেয়ে গেলেন..... এদিকে আমি শুনছি সবই...আমার আবার বাচ্চাকাল থেকেই স্বভাব হলো আমি চেঁচিয়ে কাঁদতে পারিনা... আমি ওদের সব চেঁচামেচি শুনছিলাম..... আর নিঃশব্দে কাঁদছিলাম..... অনেক ধাক্কাধাক্কির পরে শেষে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকলেন সবাই। মজার ঘটনা হলো এ্যাতোকিছুর পরেও আমার সেই কুম্ভকর্ণ ভাই এর ঘুম ভাঙ্গেনি..... যতোক্ষণ পর্যন্ত না আমার বাবা তাকে কঠিন মাইর দিলেন । এই ঘটনার পর থেকেই দরজা বন্ধ হওয়া নিয়ে আমার আম্মার মধ্যে একটা ভীতি কাজ করেছে..... পরবতর্ীতে যে কারো দরজা আটকে যাবার কথা শুনলেই আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়তেন। আমার অবশ্য সেরকম স্পেসিফিক কোন ফোবিয়া তৈরী হয়নি..... তবে সেই ভয়ের অনুভূতিটা খুব মনে পড়ে....... অন্ধকারে বসে একটা বাচ্চা মেয়ে প্রবল ভয়ে বিবশ হয়ে কাঁদছে........গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোচ্ছে না.... এখন যদিও মনে পড়লে হাসিই পায়...তবে সেই বাচ্চা আমিটার কথা ভাবলে কেমন মন খারাপ করতে থাকে!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৪:৪৫
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দুশ্চিন্তা দূর করার ১০ টি আমল: জেনে নিন

লিখেছেন মোঃ ফরিদুল ইসলাম, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৬

দুশ্চিন্তা দূর করার ১০ টি আমল:
১. ভালো-মন্দ তাকদিরের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। কেননা তাকদিরের ওপর পূর্ণ আস্থাবান ব্যক্তিকে দুশ্চিন্তা কাবু করতে পারে না। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×