somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বক্তৃতা দেয়ার কৌশল

০১ লা মার্চ, ২০১০ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বক্তৃতা একটি নন্দিত শিল্প। বক্তৃতা অর্থ-ভাষণ, বাক-বিন্যাস, বাক-পটুতা। বক্তা অর্থ-ভাষণদানকারী, বাকপটু। আর পটুতা মানে-পরিপক্কতা, দক্ষতা, সিদ্ধতা, বিশেষ কোন বিষয়ে যথার্থভাব ও আবেগমন্ডিত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও টার্গেটে শাণিত জনসমক্ষে উচ্চারিত প্রাঞ্জল সুবিন্যাসত্দকিছু সাহসী শব্দমালাকেই বক্তৃতা বলে।
বক্তা হতে যা প্রয়োজন-
১) জড়তা ও আড়ষ্টতামুক্ত একটি জিহ্বা।
২) জ্ঞান
৩) বুদ্ধি, কৌশল পরিস্থিতি বিচার ও চাহিদার আলোকে উপযুক্ত বিষয় নির্বাচনের ক্ষমতা থাকা।
৪) শব্দ নিয়ন্ত্রণ ব্রেক। এজন্য বক্তৃতা শেখা, চর্চা, উন্নতি সাধনে অব্যাহত প্রচেষ্টা, সুন্দরকে গ্রহণের মনোভাব ও সচেতনতা অপরিহার্য।
বক্তৃতার প্রাণ হচ্ছে-
১) তথ্য
২) ভাষা
৩) উপস্থাপনা
বক্তৃতার কাঠামো হলো
১) আপনি কি ব্যাপারে বলতে চান তা শ্রোতাদের বলুন
২) আপনার বক্তব্য তুলে ধরম্নন
৩) বক্তব্য শেষ হলে শ্রোতাদের বলুন
বক্তৃতার কাঠামো বিন্যাস
ক) নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। থাকবে-
র) বিষয় বস্তুর উপর দখল
রর) অনুশীলন
ররর) প্রয়োজনীয় শব্দভান্ডার ও উপসা
খ) নাটকীয় প্রভাব সৃষ্টিকারী প্রারম্ভিক কথা
গ) বক্তৃতাকে সাজানো
র) বিষয়বন্তুর সংজ্ঞা ও সীমা নির্ধারন
রর) প্রয়োজনী বিশেস্নষণ
ররর) যথাযথ উপমা ব্যবহার
ঘ) উপসংহারে উলেস্নখ্য ৩টি বিষয়
১) বিনয় ও নম্রতার প্রকাশ
২) স্রষ্টার সাহায্য কামনা
৩) সংগঠিক ও শ্রোতামন্ডলীর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন
বক্তা হতে যে সব বাধাকে অতিক্রম করতে হবে
১) মানসিক দুর্বলতা, নিজের প্রতিসংশয়বোধ ও আস্থাহীনতা
২) অনুশীলনের অভাব
৩) পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব
৪) ভাষাগত দৈনতা
গ্রহণযোগ্য ও নন্দিত বক্তা হবার কৌশল
১) পরিবেশ পরিস্থিতি উপলব্দি
২) শব্দ উচ্চারন
ক) বিপস্নবী শব্দবলী
খ) আবেদনময় শব্দাবলী
৩) বক্তার অঙ্গ-ভঙ্গি
৪) বিদেশী শব্দের উচ্চারণ
৫) বক্তৃতার মর্মের সাথে মিশে যাওয়া
বিশেষ বিবেচ্য বিষয়
১) শ্রোতামন্ডলীকে জানা ও বুঝা।
২) অনমনীয় নয়, কিন্তু সোজাভাব আরামে দাড়ানো।
৩) প্রয়োজনে সামাঞ্জস্যপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি।
৪) প্রাণোচ্ছল মুখের ভাব প্রকাশ।
৫) শ্রুতি গোচর স্বরে কথা বলা।
৬) শব্দ ব্যবহারে ছন্দময় গতির ব্যবহার।
৭) আনন্দ দায়ক ও উষ্ণ সুরে কথা বলা।
৮) বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আবেগ, অনুভূতি, আগ্রহ এবং প্রবল উৎসাহ ছড়িয়ে দেয়া।
৯) কার্যকর মাত্রায় শব্দের সংখ্যা ও সুরে পরিবর্তন
১০) সকল শ্রোতামন্ডলীর দিকে তাকানো।
১১) চোখে চোখে যোগাযোগ
১২) উত্তম শব্দচয়ন ও ইতিবাচক বক্তব্য পেশ
১৩) অহেতুক প্রশ্ন এড়াতে সংবেদনশীল বাক্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দান
১৪) সময় নিয়ন্ত্রণ
বক্তৃতার ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় বিষয়
১) সঠিক তথ্য বেশী প্রদান, ভূল তথ্য না দেওয়া।
২) উপস্থাপনা সুন্দর ও আকর্ষণীয় হওয়া
৩) স্বরের স্কেল ঠিক রাখা।
৪) উত্তেজনা, উচ্চস্বর পরিহার
৫) পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখা অবস্থা অনুকুলে রাখা, ঠিক রাখা।
৬) অত্যন্ত সচেতন থাকা যাতে কোন দৃষ্টিকটু ও বিরক্তিকর অবস্থার সৃষ্টি না হয়।
৭) সাজিয়ে গুছায়ে কথা বলা, বিশৃঙ্খলতা পরিহার।
৮) প্রশাসনে ও উপস্থিতিদের প্রতি আবেদন
অবশ্যই খেয়ালের বিষয় হচ্ছে
১) আঞ্চলিকতা পরিহার
২) শুদ্ধভাষী হওয়া
৩) জিহ্ব বা মুখের জড়াত কাঠামো
৪) কাগজ দেখে কথা না বলা
৫) সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলা।
৬) চোখের ব্যবহার
৭) কথার পরিশ্রেক্ষিতে নিজের মুড পরবর্তন করা
৮) ডায়াস এর সঠিক ব্যবহার
৯) মাইকের উপযুক্ত ব্যবহার
১০) সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখা।

বক্তৃতাদানে কতিপয় গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়-
১) সালাম বিনিময়
২) আবেগময়ী ভাষায় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেয়া
৩) শ্রোতাদের মনোযোগ থাকলেই কথা বলা
৪) শ্রেতাদের বয়স ও যোগ্যতার লক্ষ্য রেখে কথা বলা
৫) শোতারা বিরক্ত হবে ভাবলে বক্তৃতা না দেয়া
৬) প্রাঞ্জল ভাষায় কথা বলা, কঠিন শব্দ প্রয়োগ না করা
৭) মূল পয়েন্ট পুনর্বক্ত করা
৮) উদাহরণ দেওয়া
৯) শ্রোতাদের অংশীদার করা
১০) সকলেই শুনতে পায় এমন আওয়াজে কথা বলা
১১) অনর্থক কথা না বলা
১২) বডি ল্যাঙ্গুয়েজ
১৩) নিদর্শন উপস্থাপন ও বাস্তব উদাহরণ পেশ করা
১৪) আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
বক্তব্যের সাধারণ টেকনিক
গবেষকদের সেমিনার আলোচনাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১) প্রস্তুতি পর্ব
২) বক্তৃতা রাখার সময়
৩) বক্তৃতা রাখার পর পর্যালোচনা
প্রস্তুতি পর্বের সাথে কয়েকটি বিষয় সম্পৃক্ত
১) বক্তর্বের লক্ষ্য ও বিষয়বস্তু নির্ধারণ
২) বিষয়বন্তুর উপর ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা এর দুটি দিক
ক) একাডেমিক প্রস্তুতি
খ) উপকরন
৩) বক্তৃতা মুখসত্দনা করা
৪) বক্তৃতা প্রাকটিস করা, এক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় ক) পরিষ্কারভাবে শব্দচয়ন হয়েছে কি না, খ) স্বাভাবিক আওয়াজে কথা বলা হয়েছে কি না, গ) খুব তারাহুড়া না করে আসত্দেআসত্দেবক্তৃতা রাখা, ঘ) বক্তৃতা দেওয়ার সময় চেহারা চিন্তামুক্ত ছিল কিনা? কারো সামনে বক্তৃতা প্রাকটিসের সুযোগ হলে শ্রোতাকে জিজ্ঞাসা করা দরকার- ক) উপস্থাপিত কথাগুলো বুঝতে পেরেছেন কিনা? খ) বক্তৃতা দেওয়ার সময় সঠিক গতিতে বক্তৃতা উপস্থাপন করা হয়েছে কি না? গ) বক্তৃতা আরও উন্নত করতে হরে কী করা দরকার?
বক্তৃতা প্রদানের সময় কতিপয় বিষয়-
ক) বক্তৃতা শুরম্নর আগে শ্রোতাদের দিকে তাকানো'
খ) ভূমিকাতেই মূল পয়েন্টগুলো বলা
গ) পর্যায়ক্রমে পয়েন্ট ব্যাখ্যা ও কথার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা
ঘ) নতুন কোনো তথ্য তুলে ধারা
ঙ) উপসংহার
চ) আত্মবিশ্বাস রাখা-নার্ভাস না হওয়া
ছ) হাসি-খুশি থাকা
জ) নোট ব্যবহার
ঝ) শ্রোতাদের প্রশ্ন করতেও উৎসাহিত করা
ঞ) সময়ের প্রতি খেয়াল রাখা
ট) আগের বক্তার সাথে একমত/দ্বিমত পোষণ
ঠ) নিজেকে সবজানত্দা মনে না করা
ড) নিজের গ্রেড নির্ধারণ ও নেতিবাচক কথা না বলা
ঢ) সর্বশেষ কথা বারবার না বলা
বক্তৃতা মানুষের জীবনে গুরম্নত্বপূর্ণ প্রভাব বিসত্দার করে। অতীতে যারা বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বক্তৃতা শুনেই মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে, জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মন-মননে নাড়া দিয়ে তাদের জাগিয়ে তুলতে হয়। আর সাধারণ মানুষ তাড়িক বই পরে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় না তারা প্রচারকদের কথা শুনেই আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সুতরাং ব্যক্তিত্বের বিকাশ, নিজের চিনত্দধারা সম্প্রসারণ, স্বীয় আদর্শ, চেতনা ও আবেগ সাথে অনেককে সম্পৃক্ত করে এক অর্থবহ সার্থক সকল জীবন গড়তে বক্তৃতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। দেশ জাতি ও মানবতার বৃহৎ কল্যাণ আত্মনিয়োগ, সুন্দর এক কাংখিত স্বপ্নময় সমাজ বিনির্মান করার লক্ষ্যেই নিজেকে সুবক্তা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা দরকার। আর এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার এখনই সর্বোত্তম সময়।
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×