somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্ক্যাভেন্জার হান্ট

১৩ ই জুলাই, ২০১৯ ভোর ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"মা, তুমি মোজা পেয়েছো?"
মনে মনে স্ক্যাভেন্জার হান্টের লিস্টে চোখ বুলিয়ে নিলাম। লিন্কনের টুপি , বারবারা বুশের বলজুতো, এসব মনে পরলো। আরো কিসের কিসের কিসের যেনো নাম আছে, কিন্তু মনে পরছেনা। ওর মধ্যে কি মোজা ছিলো? থাকতে পারে। মিউজিয়ামে যদি মোজা থাকে, স্ক্যাভেন্জার লিস্টে তার নাম থাকতে অসুবিধা কি? মিউজিয়ামে বিভিন্ন ঐতিহাসিক জামাকাপড়, আমেরিকার বিখ্যাত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত জিনিস, সব দেখতে দেখতে মাথা ঘুরছে। ওসবের মধ্যে কারো মোজা থাকাটা অসম্ভব না। তবে, দেখেছি কিনা মনে পরা দুরের কথা, লিস্টে নাম আছে কিনা তাই বেমালুম ভুলে গেছি! নাহ্, মেমোরীটা দেখছি গেছে।

গিয়েছিলাম ওয়াশিংটন ডিসির মিউজিয়াম দেখতে। নিজের না, ছেলের স্কুলের আয়োজনে। স্কুল থেকে বাচ্ছাদের ফিল্ড-ট্রিপে নিয়ে যাবে, আগে আসলে আগে যাবেন নীতিতে কিছু মা বা বাবাও যেতে পারবে। আমি তো বেড়াতে রাজী, বেড়ানোর প্ল্যান করতে গররাজী। এই কোথায় যাবো ঠিক করো, কিভাবে যাবো, কোথায় থাকবো, কি খাবো, কি করবো, এতো ঝামেলা কে সামলায়? তারচেয়ে ঘরে বসে বই পড়ে ঘুরাঘুরি করতেই ভালো। তবে স্কুল যখন এ হ্যাপা নিয়ে নিলো, আমি সবার আগেই হ্যা বলে দিলাম।

নির্দিষ্ট দিনে ছা-এর পিছে মা স্কুলে হাজিরা দিলো। দেখি বিশাল আয়োজন। স্কুলের সামনে সাত-আটটি বাস দাঁড় করানো। আ্যত্তো লোক যাবে? গুনে-গেথে সব ফিরিয়ে আনলে হয়! প্রতিটি বাসের সামনে ড্যাসবোর্ডে একরঙা কাগজ, এক-একটা বাসে এক-একটা রঙের । রং ঢং দেখতে দেখতে, মায়ে-পোয়ে ক্লাসরুমে ঢুকলাম। সবাই হাজির হলে, ক্লাস টিচার সবাইকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে দিলো। প্রতি গ্রুপে দুজন করে অভিভাবক বা স্কুল-ষ্টাফ, আর চার থেকে ছয়জন ছাত্রছাত্রী। আমার গ্রুপে দুইজন মা আর চারজন ছাত্র। বলা বাহুল্য, মায়েদের সাথে ছা-এরা একই গ্রুপে। আমিতো চারটি বাচ্ছা দেখেই চিন্তায় পরে গেলাম। এগুলো সামলাবো কিভাবে? সহদলীয় মহিলাটি, ক্যাথি, দেখি নির্বিকার। সে আবার আরেকটি স্কুলের টিচার কিনা, বাচ্ছা চড়িয়ে এবং পড়িয়ে পটু।

সব দলকেই একটা করে ফোল্ডার দেয়া হলো। তাতে ভ্রমনের সময়সূচী, মিউজিয়ামের লিষ্ট, ম্যাপ, এসব ছাড়াও দুটি জিনিস ছিলো।
প্রথমটি হলো একরঙা কাগজ। এতক্ষনে রঙের মাজেজা বুঝলাম। Wrong বাসে উঠা ঠেকানোর ফন্দি। সারবন্দি হয়ে রঙ মিলিয়ে বাসে উঠতে হবে। অন্যটি স্ক্যাভেন্জার লিস্ট। ভ্রমন আকর্ষনীয় করার এক দারুন উপকরন। প্রতিটি মিউজিয়ামের কিছু সংগ্রহের নাম দেওয়া আছে। আমাদেরকে মিউজিয়ামে গিয়ে সেই জিনিসগুলো খুঁজে দেখতে হবে। যে গ্রুপ সবচেয়ে বেশী জিনিস খুঁজে পাবে তাদের জন্য সামান্য পুরষ্কারও আছে। সত্যি দেখেছে কিনা প্রমান? মুখের কথাই যথেষ্ট।

বাসে উঠার সময় হলো। বাসের ড্রাইভার লিষ্ট দেখে সবাইকে বাসে উঠালো। তারপরেও আবার স্কুলের রোলকলের মত নামকল করলো, সব দল ঠিকমত উঠেছে কিনা দেখতে। ছেলেদের মা-এর পাশে বসতে বয়েই গেছে। তারা তাদের ব্ন্ধুদের সাথে বসলো। আমি বসলাম ক্যাথির পাশে। দেখা যাক আমার নতুন বন্ধু জোটে কিনা। বাস চলার সাথে সাথে চললো গল্প । জানলাম তার হাসব্যান্ড জার্মান অভিবাসী। নিজের দু'টি ছেলে আছে। একটি ইথিওপিয়ান মেয়েকে দত্তক নিয়েছে। আরো একটি দত্তক নেওয়ার ইচ্ছা আছে। চোখ বড় বড় করে বললাম, "ওয়াও, তোমার তো মাল্টিকালচারাল ফ্যামিলি"। সে হেসে আমার সম্পর্কে জানতে চাইলো। জিগ্গাসা করলো আমার ছেলে বাংলা জানে কিনা। গর্বভরে জানালাম ছেলেরা বাংলা ইংরেজি দুটোই পারে। এমনকি ওদের ঠাম্মার হয়ে বাইরে দোভাষীর কাজও চালায়। এটা চেপে গেলাম যে, কখনো-সখনো ঠাম্মা-নাতির বাংলা-টু-বাংলা আলাপে আমাকে দোভাষীর ভুমিকা পালন করতে হয়।

গল্প করতে করতেই পৌছে গেলাম ডিসিতে। ড্রাইভার এবং তার সহকারী আমাদের কিছু লেকচার দিয়ে ছেড়ে দিল। সব গ্রুপ নিজের মত ঘুরে বেড়াবে। যথাসময়ে হাজিরা দিতে হবে ফেরার জন্য। ওরা কাউকে ডিসিতে রেখে যেতে চায়না। বেশতো, আমরাও থাকতে চাইছি নাকি!

সদলবলে প্রথমেই চললাম Smithsonian National Museum of Natural History দেখতে। ঢুকতেই চোখে পরলো একটি বিশাল হাতি। এইতো পেয়ে গেছি আমাদের স্ক্যাভেন্জার লিষ্টের প্রথম শিকার, হেনরী নামের আফ্রিকান এলিফ্যান্ট। হেনরীকে হান্ট করে আমরা যাত্রা করলাম জেম কালেকশনের দিকে, Hope Diamond শিকারের আশায়। দেখতে দেখতে সবাই ক্যাভেন্জার হান্টের নেশায় মেতে উঠলো। অন্য দলের সাথে দেখা হলে তারা জানায় কি দেখেছে আর কোথায়। আমরা ছুটি সেইদিকে। তারাও শুনে আমরা কি পেয়েছি।







ন্যাচারাল হিষ্টরীর প্যাচাল শেষ করে আফ্রিকান আর্টে এক্সপার্ট হতে গেলাম। এখানে এসে boy গুলো সব বেয়াড়া হয়ে গেলো। একজন উত্তরে ছোটে কিসের উত্তর খুঁজতে কে জানে। আরেকজনের দক্ষিনের দাক্ষিন্য না পেলে চলবেনা। কেউ চলে পূর্বের অভুতপূর্ব অভিঙ্জতা লাভের আশায়। পশ্চিমদিক চষাই বা বাকি থাকে কেন? আর আমি চড়কিপাক খেতে থাকি সবকটিকে চোখে চোখে রাখার জন্য। ক্যাথির দেখি কোনো সিমপ্যাথীই নেই আমার প্রতি। সে নিজের মতো ঘুরে বেড়ায়। এখানে ওরা কি হান্ট করলো বুঝলামনা। আন-এক্সপার্ট থেকেই Smithsonian National Museum of African Art থেকে বেরুলাম।

পরের গন্তব্য Smithsonian National Air and Space Museum। ঢুকেই আমি একটা ঝুলন্ত প্লেনের নিচে বসে পড়লাম। করুক ওরা ছোটাছুটি। ক্লাস সিক্সে পড়ে, একেবারে ছোট তো না। একটু Space দেয়া দরকার। আমি ততক্ষন দম নেই।
দম নেওয়া শেষে ক্যাফেটিরিয়াতে বেদম খাওয়া হলো। তারপর হাবল্ স্পেস টেলিস্কোপের ব্যাক-আপ মিরর, স্পেস-স্যুট, আরও কিকি সব হান্ট করে পরের মিউজিয়ামের দিকে রওনা হলাম।

এবারে National Museum of American History দেখার পালা। ততক্ষনে লিষ্ট কার কাছে আছে আমি জানিনা। খোঁজ রাখছিনা ওরা কি খুঁজে পেয়েছে। আমি যে ওদেরকে খুঁজে পাচ্ছি এটাই অনেক। ক্যাথির পথ অনুসরন করে পৌছালাম ফাষ্টলেডিস' গ্যালারীতে। আমেরিকান ফাষ্টলেডিরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে গাউন, অলংকার পরেছেন তার অনেককিছুই সাজিয়ে রাখা আছে। কোনো অদুর বা সুদুর ভবিৎষতে কোনো ফাষ্টম্যানের স্যুট কি এখানে স্থান পেতে পারে? তাহলে তো গ্যালারীর নাম বদলে ফাষ্ট লেডিস' আ্যন্ড জেন্টস গ্যালারী রাখতে হবে। ফাষ্ট জেন্টসদের আলাদা গ্যালারীর আশাতো সুদুর-পরাহত। শুধু ফাষ্টলেডি না, আমেরিকান প্রেসিডেন্সীয়াল ফ্যামিলীর ব্যাবহৃত অনেক কিছুই দেখলাম। প্রেসিডেন্সীয়াল গ্যালারী থেকে বেরিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন সময়ের ট্রাডিশনাল জামাকাপড়, আ্যপলের আদ্যিকালের কম্পিউটার, এসব দেখতে দেখতে দেখি সময় শেষ। আর দেরী করলে বাস আমাদের রেখে চলে যাবে!!!

ফেরার পথে আর গল্প-টল্প হলোনা। সবাই ক্লান্ত, ঘুমে ঢুলছে। ড্রাইভার বাদে, নইলে স্কুলে ফিরলাম কিভাবে? বাস থেকে নেমে বাসার পথে হাটছি। তখনই ছেলের প্রশ্নটা এলো--
-"মা, তুমি মোজা পেয়েছো?"
-"নাতো বাবা, তুমি পেয়েছো? কোথায়?"
-"সবখানেই। সব মিউজিয়ামেই মোজা ছিলো।"
সবখানেই??? ন্যাচারাল হিষ্টরী মিউজিয়ামে মোজা থাকে কিভাবে? আফ্রিকান আর্টসএ খেয়াল করিনি, কিন্তু এয়ার আ্যন্ড স্পেস মিউজিয়ামে যে নেই জানি। স্পেস-স্যুটে তো মোজা থাকেনা আর। আমেরিকান হিস্টরী মিউজিয়ামে জুতো দেখেছি মনে আছে, মোজা কি ছিলো? আমার মনে পরছেনা। একটু বিরক্ত হয়ে ছেলেকে বললাম--
-"আমিতো কোনো মোজা দেখিনি। তুমি কোথায় দেখেছ আমাকে বলতো।"
মাএর নির্বুদ্ধিতায় ততোধিক বিরক্ত স্বরে ছেলে এবার ইংরেজিতে বললো--
"Ma, have you had fun?

*******************
পাঠক, আপনি 'মোজা' পেয়েছেন?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৩৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×