somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফটোগ্রাফি সূত্র এবং হাবলুর অভিজ্ঞতা

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফটোগ্রাফি! আধুনিক যুগে এটি নব্য মহৎ গুণ হিসেবে সমাদৃত হচ্ছে। কিন্তু শত বৎসর পূর্বে বিশ্বজয়ী ফোপোলিয়ন বলে গিয়েছিলেন, "তোমরা আমাকে একটি ডি.এস.এল.আর. দাও, আমি তোমাদের রূপবান জাতি উপহার দেব!" ফেপোলিয়ন নিজের রূপ নিয়ে চিন্তাগ্রস্থ ছিলেন বলে, হয়ত তিনি সে সময়েই স্বপ্নে ডি.এস.এল.আর. দেখেছিলেন। তবে আফসোস! তাকে কেউ ডি.এস.এল.আর. ও দেয়নি, তাই তিনি রূপবান জাতিও উপহার দিতে পারেন নি। তবে দিন বদলে গেছে এখন। ডিজিটাল যুগ, তাই সবার হাতের ক্যামেরাটাও ডিজিটাল। ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদের পেছনে ফটোগ্রাফার বা ডি.এস.এল.আর. হোল্ডারদের অবদান বেশি বলে মনে করা হয়। যখন-তখন ফটোওয়াকে বের হয়ে তারা কিছু না পেয়ে হকারদের মাঝেই সৌন্দর্য্য খুজে পেত। আর এতে নিজেদের পণ্য বিক্রি না করতে পেরে অচিরেই হকারদের বিদায় নিতে হয় ফুটপাত থেকে। ফটোওয়াকে মনোনিবেশ করতে যেয়ে কত-শত ফটোগ্রাফার খোলা ম্যানহোলে পড়ে তাদের শখের মহামূল্যবান ডি.এস.এল.আর. হারাল তার হিসাব পরিসংখ্যান বুর্যোও দিতে পারবে না। তবে তারা দমে যায়নি, কারণ তারা ফটোগ্রাফার। তাদের লক্ষ্য এক এবং অবিচল, "দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ফটো আহরণ কর!"


গ্রামের ছেলে হাবলু শহরে পড়তে এসে পুরোনো বন্ধুর বাসায় উঠল। ভার্সিটিতে ভর্তির পূর্বে শহর ঘুরেই দিন পার হচ্ছিল। একদিন বন্ধুর সাথে শপিং মলে বেড়াতে যেয়ে এক সুশ্রী বিদেশী রমণীকে দেখে দাড়িয়ে গেল হাবলু। বিদেশিনী হাসিমুখে তার দিকেই অপলক চেয়ে আছে। হাবলু আনন্দে আটখানা হয়ে সমগ্র ইংরেজি জ্ঞান হাজির করে কথা বলতে লাগল তার সাথে। কিন্তু হাবলু যাই বলে না কেন, কোন জবাব দেয় না বিদেশিনী বরং হাসে। এদিকে হাবলুর কান্ড দেখে তার আশে-পাশে বেশ লোক সমাগম হয়ে গেল। কেউ কেউ তাদের হাতে থাকা ঢাউস সাইজের ক্যামেরায় তার ছবিও তুলে নিতে লাগলো। নিজেকে নায়ক মনে করে হাবলুও পোজ দিতে লাগল! হঠাৎ হাবলুর বন্ধু এসে এক ঝটকায় তাকে দূরে নিয়ে যেয়ে বলল, "আরে বোকা এগুলো হল পুতুল। দোকানদাররা জামা পড়িয়ে বাইরে রেখেছে যাতে মানুষ পছন্দের জামাটা দেখতে পারে।" নিজের বোকামিতে হাবলু লজ্জায় লাল হয়ে গেল। কিন্তু তার মনে উকি দিতে লাগল লোকগুলো ঢাউস ক্যামেরায় কেন তার ছবি তুলছিল, আর ক্যামেরাই বা এমন কেন দেখতে। রাখ ঢাক দূরে ফেলে বন্ধুকে বলেই ফেলল। বন্ধুর কাছে জানতে পারল এরা হল ফটোওয়াকার আর ক্যামেরাগুলোকে বলে ডি.এস.এল.আর! সেদিন থেকেই হাবলুর মনে ঢাউস ক্যামেরাটার প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত হল।

হাবলু শহরের নামকরা উত্তর-দক্ষিণ ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে দু'দিনেই হাল-চাল শিখে নিল। সেখানে উত্তর-দক্ষিণে তাকালে শুধু সুন্দরী রমণী চোখে পড়ে। হাবলু শুধু দেখেই যায়, এদিকে হাবলুর হৃদয়ের প্রেমের নদী শুকিয়ে মরা তক্তা হয়ে গেলেও কোন সুন্দরীর সাথে ভাবানুলাপ করতে পারে না। অবশেষে এক বন্ধুর পরামর্শে জীবনের সকল সঞ্চয় এক করে হাবলু একটি ডি.এস.এল.আর. ক্যামেরা কিনল। কথায় আছে,"যেখানেই দেখিবা গাছ, ক্লিক বাটনে মারো চাপ, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য ফটো!" হাবলু তাই গাছ দেখিবামাত্রই ফটো তুলে ফেসবুকে আপলোড করত আর সবাইকে ট্যাগ করত। ফটোর শিল্প মর্যাদা বলে কিছু না থাকলেও ডি.এস.এল.আরে. তোলা বলে সেই ফটোতে লাইকের অভাব হত না। অন্যদিকে হাবলুর হাতে ডি.এস.এল.আর. দেখে পঙ্গপালের মত লুলনারীরা ছুটে আসতে লাগল। কারণ ফটোগ্রাফারদের বহুল আলোচিত গুণগুলোর মাঝে অন্ধকারে কাজ করা এবং ফোকাস করে বিভিন্ন এঙ্গেলে কাজ করার দক্ষতাই লুলনারীদের সুপ্তবাসনা। আর হাবলু তাই গাছ ছাড়িয়া ক্যমেরা নিয়ে নারীতে মন বসালো। নারীদের ছবি তুলে ফটোশপে এডিট করে আপলোড করতে করতে বহুনারীকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে ফেলল। "নগ্নতাই অশ্লীলতা নয় বরং মহৎ শিল্প" বলে নানাবিধ চাপা মেরে বিভিন্ন নারীর স্বল্পআব্রু শিল্পিত ফটোও তার হাতে কম আসল না। হাবলুর হৃদয় নদীতে প্রেমের ঢেউ জলোচ্ছাস হতে সুনামিতে রূপ নিল, তা সবই ডি.এস.এল.আর. ক্যামেরার গুণে!


হাবলু এতদিন ফটোগ্রাফি সম্পর্কে না জেনে শুনেই ফটো তুলে গেছে। তাই সে ভাবলো অন্তত ফটোগ্রাফি সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান নেয়া উচিৎ। তাই সে নীলক্ষেতে ফটোওয়াকে যেয়ে সাথে করে একখানা ফটোসূত্র কিনে নিয়ে আসল। কিন্তু হাবলুর সরলতার সুযোগ নিয়ে দোকানদার তাকে ফটোসূত্রের বদলে কামসূত্র ধরিয়ে দিয়েছিল। হাবলু সারারাত ধরে খুব মনোযোগ দিয়ে বইটি শেষ করে ফেলল। বইয়ের ছবিগুলো ভালো করে পরখ করে নিল যাতে ফটো তোলার সময় ভুল না হয়। কামসূত্রের অনুরূপ ফটোশুট করবে বলে পণ করে বের হতে যাবে, সে মুহূর্তেই হাবলুর বন্ধু বইটি দেখতে পেয়ে তাকে ডাক দিল। হাবলু তো বুক উচিয়ে যখন বলতে গেল এইটা ফটোসূত্রের বিশ্বখ্যাত বই, তখনই উচ্চস্বরে হাসিতে ফেটে পড়ল তার বন্ধু। এ যাত্রায় বন্ধুর জন্য বেচে গেল, নইলে বান্ধবীদের এরূপ ফটোশুটের প্রস্তাব দিলে হাবলু আর জীবন নিয়ে ফিরতে পারত না। সরল বন্ধুকে মায়া করে হাবলুর বন্ধু তাই নিজের ফটিসূ্ত্র বইটা হাবলুকে দিয়ে দিল। এবার হাবলু মহা আনন্দে সূত্রগুলো মুখস্থ করে ফেলল।

ফুটপাতে ফটোওয়াকে যাচ্ছিল হাবলু আর সূত্রগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছিল!

মহা ফটোবিজ্ঞানী ফিউটন তার ফটোকর্ষ সূত্রে নারীমনের লালায়িত দিক আবিষ্কার করেছিলেন, "এই মহাবিশ্বে প্রতিটি নারীর মন টাকা-পয়সাকে নিজেদের দিকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলের মান ডি.এস.এল.আর. ক্যামে তোলা ফটোর মানের সমানুপাতিক এবং ফটোশপে এডিটিং এর ব্যাস্তানুপাতিক। এবং এই বল টাকা-পয়সা ও ডি.এস.এল.আর. এর সংযোগ সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।

এছাড়া ফিউটন তার আবিষ্কৃত ভালোবাসার গতি সূত্রেও ভালোবাসার সাথে ক্যামেরার সংযোগ দেখিছিলেন।

১ম সূত্র: কোন বাহ্যিক বল প্রযোগ না করলে ভালোবাসা চিরকালই স্থির থাকে। এখানে বাহ্যিক বল হিসেবে ক্যামেরার ক্লিক বাটনে চাপ বুঝানো হয়েছে।
২য় সূত্র: ভালোবাসার বল পুরুষের পকেটের টাকা আর ফটোশপে ফটো এডিটিং এর দক্ষতার ত্বরণের গুণফলের সমান। (ভালোবাসার বল=টাকা*ফটোশপে দক্ষতার ত্বরণ)
৩য় সূত্র: ডি.এস.এল.আর. ক্যামে প্রতিটি ক্লিকের সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ফটো ভালো হলে প্রেমিকার নরম আদর এবং খারাপ হলে গালে কষা চড়ও পড়তে পারে।

৩য় সূত্র আওড়ানো শেষ করতেই হাবলুর গালে কষা একখান চড় এসে পড়ল। চড় খেয়ে চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল সে। কোন ক্রিয়ার বিপরীতে চড় পড়ল সেটা ভাবার আগেই শুনতে পেল,"যা কিছু আছে সব দিয়ে ফুট শালা!" কিন্তু হাবলু কি আর কাউরে ডরায়, ফটোসম্রাট হুমায়ূণ ছবি তুলতে যেয়ে মই থেকে পড়ে মারা গিয়েছিলেন। মারা যাবার সময় তার এক হাতে ছিল ক্যামেরা আর অন্য হাত ছিল পকেটে। তাই পা পিছলাবার সময় পকেট থেকে হাত বের করতে অলসতা করেছিলেন বলে জানটাই দিয়ে দিলেন কিন্তু ক্যামেরার ক্ষতি হতে দেন নি। এদিকে মা বলেছিল, নখ-শিংওয়ালা প্রাণী, অস্ত্রধারী পুরুষ এবং বেগানা নারীকে কখনোই বিশ্বাস করা উচিত নয়। হাবলু তাই অস্র দেখে মায়ের বাণীতেই আস্থা রেখে তার জান-জীবন স্বরূপ ডি.এস.এল.আর. টা ছিনতাইকারিকে দিয়ে দিল। ফটোগ্রাফারের খ্যাতি লুকিয়ে থাকে ডি.এস.এল.আর. ক্যামেরার অন্তরে। ক্যামেরার সাথে সাথে হাবলু তাই সবই হারালো। খ্যাতি থেকে শুরু করে সুন্দরী বান্ধবী এবং সেই সাথে সারাজীবনের জমানো অর্থও। মনে বিরহ নিয়ে বাড়ি ফিরবার সময় হাবলুর মনে পড়ল ফটোসূত্রের সর্বশেষ সূত্রটি," একজন ফটোগ্রাফারের লাভ তাহাতেই, যদি সে ক্যামেরাটি বিক্রয় করিতে পারে নতুবা সারা জীবন ক্ষতিই গূণতে হইবে!"

বি:দ্র: নিতান্তই রম্যতে কাউকে কাকতাল না খুজতে এবং লেখায় অশ্লীলতা খুজে পেলে সেটাকে শিল্পগুণ বিচারে দৃষ্টিপাত করতে অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×