somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নাজনীন১
শান্তি, সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা, সহযোগিতা

কোর্স কন্টেন্ট, কারিকুলাম, ক্লাস নেয়ার পদ্ধতি এবং প্রশ্নমান - সবই আমলে নিতে হবে

৩১ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজের বাচ্চাসহ কাজিনদের পড়ানোর সুবাদে স্কুলের এখনকার সিলেবাস কিছুটা হলেও দেখা হয়েছে। কন্টেন্ট যথেষ্ট সমৃদ্ধ! আমাদের সময়কার চেয়ে অনেক গুণ! ফেইসবুকে কিছু সেকুলারিজম বনাম ইসলামিক গল্প সাহিত্য নিয়ে আলোচনা - সমালোচনা দেখেছি, সেটা একটা দিক। কিন্তু এটা বাদ দিলে সাধারণ অর্থে জানার মতো বহু কিছুই আছে এখনকার সিলেবাসগুলোতে। এখন প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি এবং প্রশ্ন করার পদ্ধতির উপর।

ঠিক এই দুটো বিষয়কে কেন্দ্র করেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নানারকম ট্রেনিং দেয়ানো হচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিষ্টারেই নতুন জয়েন করা শিক্ষকদের এক সপ্তাহ ট্রেনিং দেয়ানো হয় কিভাবে ছাত্রদের ক্লাসে এনগেজড করতে হবে, মানে ইন্টারেকশনাল শিক্ষাপদ্ধতি (বাই লেটারেল), [ওয়ান ওয়ে নয়, মানে শিক্ষক কেবল বলবে, ছাত্ররা কেবল শুনবে, নোট নিবে এমন নয়]। ছাত্ররাও যেন একটা আপকামিং টপিকের উপর নিজেদের কিছু চিন্তাভাবনা শেয়ার করতে পারে সে সুযোগ তৈরী করে দিতে হবে, সাডেন কুইজ, পোলিং সিস্টেমের মাধ্যমে ছাত্ররা বিভিন্ন সমস্যার বা প্রশ্নের ব্যাপারে তাদের মতামত তুলে ধরবে ইত্যাদি ইত্যাদি... এর থেকেও আরো উন্নত ধারনা নিয়ে হাজির হয়েছে বিশ্বব্যাংক, IQAC (Internal Quality Assurance Cell) ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে। শেখানো হচ্ছে কিছু কি-ওয়ার্ড যা দিয়ে প্রশ্নের ধরণ ও কোয়ালিটি নির্ধারণ হবে, যা কিনা ভেরিফাই করা হবে ব্লুমস ট্যাক্সোনমি নামক একটা ছক দিয়ে, সাধারণত নিচের ক্লাসগুলোতে মুখস্থ বা বোঝা বা ব্যাখ্যা করা টাইপ প্রশ্ন বেশি হতে পারে আর উপরের ক্লাসের প্রশ্নতে বিশ্লেষণধর্মী, মাপকাঠি নির্ধারণ, নতুন কিছু চিন্তা করার মতো প্রশ্ন বেশি থাকবে। প্রতিদিনকার লেসন প্ল্যান তৈরীর পদ্ধতি যাতে থাকবে নির্দিষ্ট টপিকের উদ্দেশ্য, আউটকাম, ডিটেইলস টপিকের কোনটা কত সময় ধরে পড়ানো হবে, কি কি টুলস ব্যবহার করা হবে, কিভাবে তার এসেসমেন্ট হবে, মোদ্দাকথা ৯০ মিনিটের একেকটা ক্লাস একজন শিক্ষক কিভাবে দক্ষতার সাথে ছাত্রদের সমান বা অনেকটা একটিভ অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করবেন, সেটাই থাকবে এই লেসন প্ল্যানে। আর ২০-৩০টা লেসন প্ল্যান নিয়েই তৈরী হবে একটা কোর্স প্রোফাইল/ সিলেবাস। এরকম প্রায় ৪৮-৫০টা কোর্স প্রোফাইল/ সিলেবাস নিয়ে তৈরী হবে কারিকুলাম।



আবার কেবল সাবজেক্ট জ্ঞান নয়, পাশাপাশি একজন পূর্নাঙ্গ মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার জন্য কারিকুলামে যুক্ত করা হয়েছে 'আর্ট অফ লিভিং' নামক কোর্স, যার মাধ্যমে ছাত্ররা তাদের জীবনধারা, চিন্তাধারা আমুল পরিবর্তন করে নিতে পারবে এবং অনেকেই এর মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। কিভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে পরিবারের এবং পরিবারের বাইরের মানুষগুলোর সাথে আচরণ করতে হয়, দায়িত্ব পালন করতে হয়, কিভাবে একটা সোশাল গেদারিং এ আচরণ করতে হবে, একতা ইন্টারভিউ বা অফিসের বস এর সাথে ইন্টারেকশান কেমন হতে হবে -- এসব কিছুই শেখানো হচ্ছে এই কোর্সটিতে। এর পাশাপাশি টিম ওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য নানারকম ক্লাব একটিভিটিস, খেলাধূলা, বিতর্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো রইলো আগেকার মতো। সাথে যুক্ত হয়েছে সোশাল নেটওয়ার্কিং এ লেখালেখি, ফেইসবুক, ব্লগ, ফোরামে বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখালেখি করাটা রীতিমত শিক্ষকদের পারফরমেন্স উন্নতির মাপকাঠি হিসেবে দেখা হচ্ছে। গবেষণার জন্য ফান্ড এখনো অপ্রতুল হলেও দিনে দিনে ফান্ড বাড়ানো হচ্ছে।

নতুন করে আরেকটি কোর্সের প্রস্তাব নিয়ে এলো ভারতের তিনজন প্রফেসর। আমাদের মতো এই উপমহাদেশে ভারতেও শিক্ষার হার বেড়েছে, কিন্তু মূল্যবোধ কমেছে। এ নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের এক রায় আমলে নিয়ে সেখানে শুরু হয়েছে ব্যাপক শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার। তারই একটি বড় অংশ হলো "হিউম্যান ভ্যালুস এবং প্রফেশনাল এথিকস" নিয়ে কাজ করা। প্রায় ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কোর্সটি চালু হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় ওয়ার্কশপ চলছে, ভুটান ও বাংলাদেশে এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ার্কশপ হয়ে গেল। সেখানে শেখানো হচ্ছে প্রত্যেক মানুষের পটেনশিয়ালিটি আছে, সবাই সুখী হতে চায়। কাউকে দুঃখ দেয়াটা ইন্টেনশনাল বিষয় নয়, যোগ্যতার অভাবেই এমনতা হয়ে থাকে। সত্যিকার অর্থে কেউ কাউকে দুঃখ দিতে চায় না।

আমেরিকা বলি, বিশ্বব্যাংক বলি বা ভারত বলি, আর্ট অফ লিভিং বলি আর হিউম্যান ভ্যালুস বলি, প্রত্যেকটা ধর্মের বা নৈতিকতার মূল কথাই হলো নীতিবান হওয়া, বিনয়ী হওয়া, বিচক্ষণ হওয়া, প্রজ্ঞাবান হওয়া। ফাউন্ডেশন ডে উদযাপন উপলক্ষে আমার ডিপার্টমেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে 'আর্ট লিভিং ইন ইসলাম' নামক সেমিনার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি স্কুল কলেজগুলোতেও যদি এরকম প্রজেক্ট চালু করা যায়, আশা করি শিক্ষাক্ষেত্রে এক বড় ধরনের বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছি আমরা। বিশ্বব্যাংকের এই প্রজেক্ট অনুসরণ করে শ্রীলংকা, মালয়েশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। আমরাও নিশ্চয়ই আগামীতে এরকম আন্তর্জাতিক মানের উচ্চাসনে যেতে পারবো।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×