মানুষের জীবনে চাহিদা কখনোই ফুরোবে না। উন্নতির একেকটা ধাপ পেরোবেন, আরেকটা ধাপ সামনে এসে দাঁড়াবে। বেগম রোকেয়া সেই কবে থেকে বাংলার মুসলিম নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাবার দৌড় শুরু করেছিলেন, সেই এগিয়ে যাবার ম্যারাথন দৌড়ই বলেন, বা অলিম্পিক দৌড়, দৌড়েই চলেছে বাংলার নারীরা।
কি হয় নাই? প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, পুলিশ, আর্মি, বৈমানিক, ডাক্তার, নাবিক, ইঞ্জিনিয়ার, ট্রেনের চালক, ইট ভাঙ্গার শ্রমিক, গাড়ির ড্রাইভার, হেল্পার, সাংসদ, স্থানীয় নারী নেত্রী, কোম্পানীর মালিক, শিক্ষকতা নায়িকা, সংবাদ পাঠিকা, গায়িকা, উপস্থাপিকা, ই-কমার্স, আইটি, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল, কান্ট্রি ম্যানেজার, জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত, বিশ্বসুন্দরী, বিজনেস উইমেন, হিমালয় জয়ী...এরকম হাজারো নতুন নতুন পেশায় বাংলার নারী পদচারণা শুরু হয়েছে।
আরো বাকী আছে, এই প্রতিযোগিতার বিশ্বে নারীদের এগিয়ে যাবার আরো অনেক ধাপ বাকী আছে।
এই ধরণের ডুবুরী, মহাকাশচারী, এন্টার্টিকায় গমন, উত্তর মেরুতে যাওয়া, নোবেল বিজয়ী নামকরা বিজ্ঞানী, আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ বিজ্ঞানী, বিজনেস বিলিওনিয়ার, প্রেসিডেন্ট, নারী মুফতি, ফকিহ, এরকম আরো অনেক পেশা বা পদবী আছে, বাংলার নারীরা এখনো পৌঁছায়নি।
তবে আমাদের প্রচেষ্টাও থেমে নেই! নিশ্চয়ই বেগম রোকেয়া জান্নাতে বসে উনার এই সফলতার অর্জনগুলো দেখছেন, আর তৃপ্তি পাচ্ছেন। উনার প্রচেষ্টা বিফলে যায়নি!
আরো কিছু মৌলিক অর্জন এখনো বাকী আছে। যেমন নারীর আর্থিক ক্ষমতায়ন এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। নারীর স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার, সন্তানের ভরণপোষণের অধিকার বা সন্তানের অভিভাবকত্ব। নারীর শ্রমের পারিশ্রামিকের সমান মর্যাদা। একই পদে থাকা একজন পুরুষ এবং একজন নারীর সমান গ্রহণযোগ্যতা। ক্ষমতাবান পুরুষের তার অধীনে কাজ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতার, কিন্তু যোগ্য নারীদের অন্যায় আচরণের শিকার না হওয়া।
নারী সুরক্ষা আইনের অভাব নেই দেশে। অভাব এখনো রয়ে গেছে পুরুষ মানসিকতায়। নারীরা অনেক এগিয়েছে, কিন্তু এখনো নারীর এই উন্নয়নের চাবিকাঠি বা নাটাই পুরুষের হাতে। কখনো কখনো অনেক ক্ষমতাবান নারীরাও আরেকজন বা একদল ক্ষমতাবান পুরুষের হাতের পুতুল। পেছন থেকে সেই ক্ষমতাবান নারীপুতুলটির চাবিকাঠি নাড়া চাড়া করেন। ক্ষমতাপ্রাপ্ত নারীরা নিশ্চয়ই এটা অনুধাবন করতে পারেন। কোথাও যেন অসম্মান সেই ঘেরাটোপ রয়েই গেছে।
যেমনটা ছিল যৌথ পরিবারের রান্নাঘরের কোনায় পড়ে থাকা সেই গৃহবধুটির অসম্মান। সেই গৃহবধুটির কিছুই ছিল না, এমনকি স্বামীটিও তার ছিল না, তার সন্তানের পড়াশোনা বা ভবিষ্যত বা বিয়েশাদী নিয়ন্ত্রণ করা, সিদ্ধান্ত দেয়া, কিছুরই অধিকার ছিল না। কিন্তু আজ একজন ক্ষমতাবান নারী, যার অর্থ-বিত্ত-সম্মান-প্রতিপত্তি অনেক কিছুই আছে, তবুও অসম্মানও পাশাপাশি রয়ে গেছে।
নারীর প্রতি পুরুষের এই অবজ্ঞার অবসান হোক, এটাই হোক রোকেয়া দিবসের অঙ্গীকার।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৩