যেকোন যুদ্ধেরই শেষ পরিণতি এক। অর্থনৈতিক দূরাবস্থা, নারী ও শিশুর শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন, ধর্ষণ, স্থাপনা ধ্বংস ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক অনেক যোদ্ধা, সাধারণ নাগরিকের আহত এবং নিহত হওয়া তো প্রত্যক্ষ পরিণতিই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও এর ব্যতিক্রম নয়।
আমরা বাংলাদেশিরা ফিবছর ফিলিস্তিনে ইসরাইলী আগ্রাসন নিয়ে প্রতিবাদ করি। ইরাক নিয়ে মিছিল হয় আমাদের দেশে, আমরা আফগানিস্তানে আমেরিকার আগ্রাসন বিরুদ্ধে জনমত পোষণ করি। কিন্তু রাশিয়ার ব্যাপারে কি সংশয়ী? ন্যাটো বিরোধী মানসিকতা আমাদের অবচেতন মনেই রাশিয়ার পক্ষে একটা প্রচ্ছন্ন অবস্থান তৈরী করে। কিন্তু এই কয়েকমাস রাশিয়ার আগ্রাসনের পরে ইউক্রেনের অবস্থা কি ইরাক, আফগানিস্তানের চেয়ে আলাদা? আমরা ইয়েমেনের ব্যাপারে, সিরিয়ার ব্যাপারে কনফিউজড্। কার পক্ষে যাব?? কিন্তু আফগানিস্তান, চেচনিয়ায় রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তো পরিষ্কার বিরোধী ছিলাম! তাহলে এখন আমরা আশ্চর্য রকমের নিরব কেন? যুদ্ধের দাবানল নিজেদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছালে তারপর টনক নড়বে? ইউক্রেনীয়ানরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী, তাদের ভাষা ভিন্ন, সংস্কৃতি আমাদের চেয়ে অনেক দূরের, তাই কি তাদের দুঃখ আমাদের স্পর্শ করে না? আমরা তো স্পেনিশদের দুঃখের ইতিহাস জেনে কাঁদি! গ্রানাডার নির্মম পরাজয় যেন আমাদের সকল মুসলিম বিশ্বের পরাজয়!
তাদের মেয়েদের দুঃখ, শিশুদের দুঃখ অন্যান্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মতন একই। তাদের অনাহার, উদ্বাস্তু হওয়া, শারীরিক, মানসিক নির্যাতন সব একই। তাহলে আমাদের তাদেরকে অনুভব করতে অসুবিধা হচ্ছে কেন? বাংলাদেশের রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে রাশিয়ার ইঞ্জিনিয়ারগণ এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে রাশিয়ান আর্মিরা বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেন, থাকেনও। খোদা না খাস্তা কোনদিন ইউক্রেনের মানুষদের মতো দুঃখ আমাদেরকেও তাড়িয়ে নিয়ে যায়, আমরা কি তা বলতে পারবো? নিশ্চয়তা দিতে পারবো? আমরা ট্রানজিট ইস্যুতেও ভারতীয়দের আমাদের দেশের অভ্যন্তরে আসা যাওয়া, চলাফেরার পরবর্তী কুফল নিয়ে ভাবিত ছিলাম, রাশিয়ার ব্যাপারে কি ভাবছি। আমরা যদিও পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী, কিন্তু আজকের এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদেরকে নানাকিছুই ভাবতে শেখাচ্ছে, আশংকিত করছে।
আমাদের দেশ থেকে প্রায় শতভাগ এক্স রেটেড অডিও-ভিডিও রাশিয়ান ওয়েবসাইটগুলোতে আপলোড হয়। এতে করে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অনেক পরিবারই ক্ষতিগ্রস্থ, মানসিকভাবে, হয়তো শারীরিকভাবেও। ইউক্রেনে রাশিয়ান আর্মি কর্তৃক নারী ধর্ষণের অভিযোগ উঠছে। আমি ইউক্রেন যুদ্ধ দিয়ে বাংলাদেশের ফেইসবুক পেইজগুলোতে কোন প্রতিবাদ করতে দেখিনি, কোন হ্যাসট্যাগ দেখিনি। আসুন আমরা সবাই মিলে এসব অনাচারের প্রতিবাদ করি। ইউক্রেনে রাশিয়ায় আগ্রাসন বন্ধের দাবী তুলি, যুদ্ধ বন্ধের দাবী তুলি। সম্ভব হলে ইউক্রেনের যে মানবিক বিপর্যয়, সেখানে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।
#save_Eukranian_Women_Children
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২২ বিকাল ৫:০৯