স্বপ্ন মানুষকে জীবনে চলার পথে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। প্রত্যক মানুষের জীবনেই স্বপ্ন থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। এর পরেও অধরা হয়ে থেকে যায় কিছু স্বপ্নরা। আজ এমনই একজন নারীর সম্পর্কে লিখছি যার জীবনের মূলমন্ত্রই হলো স্বপ্ন। যদি চাঁদে যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়া যায়, তাহলে চাঁদে না পৌঁছাতে পারলেও অন্তত কোনো তারার কাছে যেন পৌঁছানো যায়। অন্তত রুশ স্বর্ণকেশী মাশা তাই মনে করেন।
মারিয়া শারাপোভা, টেনিস কোর্টে পা রাখতেই যাকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় মাতামাতি, রূপ আর গুণের অপূর্ব মেলবন্ধনে অনন্য একজন নারী। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে প্রবাদটা যেন তার ক্ষেত্রে বেশ খাটে। চোখের পলক না পড়ার মত তাঁর সুন্দর মুখশ্রী, টেনিসের দুরন্ত সব শট। তার নামটির সাথেই যেন কেমন একটা গ্ল্যামারের গন্ধ মিশে আছে। তাইতো কোর্টের বাইরেও বাজিমাত করেছেন তিনি। এসব নিয়েই মারিয়া শারাপোভা পরিচিত তার অগণিত ভক্তকুলের কাছে।
১৯৮৭ সালের ১৯শে এপ্রিল রাশিয়ার ন্যাগানে জন্ম গ্রহণ করেন এই ডানহাতি টেনিস তারকা মারিয়া ইয়ুরেভনা শারাপোভা যার ডাক নাম মাশা। বাবা উইরি শারাপভ এবং মা ইয়েলিনা শারাপোভা। ৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্র যাবার পর থেকে তিনি ফ্লোরিডার ব্রাডেন্টনে বসবাস করছেন। মাশার উচ্চতা ১.৮৮ মিটার (৬ ফুট ২ ইঞ্চি)। ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত স্লোভেনিয়ান বাস্কেটবল খেলোয়াড় সাশা ভুজাসিচ এর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন।
শখ ফ্যাশন ডিজাইন এবং শৈশব থেকেই তিনি প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে আসছেন।
বেলারুশে ১৯৮৬ সালের চেরনোবিলের বিপর্যয়ে আক্রান্ত শিশুদের পাশে দাঁড়ান অংশ নেন জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিতে।
নিজের ক্যান্ডি ব্র্যান্ড সুগারপোভার প্রচারের জন্য মারিয়া শারাপোভা নামটিও একসময় বদলে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। বৈধভাবে নাম পরিবর্তনের জন্য ফ্লোরিডার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান এই টেনিস তারকা। মারিয়া শারাপোভা থেকে শারাপোভা সরিয়ে সুগারপোভা নাম রাখতে চান তিনি। তবে স্থায়ী ভাবে নয়, মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য নাম পরিবর্তন করেন তিনি।
টেনিসে শট খেলার মাঝে মাঝে যে চিৎকার করা হয় তাকে গ্রান্টিং বলা হয়। শারাপোভা গ্রান্টিং এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে টেনিস বিশ্ব একেবারে নাজেহাল। শারাপোভার গ্রান্টিংয়ের মাত্রা শব্দযন্ত্রে মেপে দাঁড়িয়েছে ১০১ ডেসিবেল।
মাত্র ৪ বছর বয়সে শারাপোভার বাবার বন্ধু একক টেনিসে দুইটি গ্র্যানন্ডস্ল্যাম ও একটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ী সাবেক বিশ্বের ১নং খেলোয়াড় ইয়েভগেনি কাফেলনিকভের বাবা আলেকজান্ডার কাফেলনিকভের কাছ থেকে প্রথম টেনিস খেলার ব্যাট উপহার পান, যা দিয়ে তিনি নিয়মিত তার বাবার সঙ্গে স্থানীয় কোর্টে প্র্যাকটিস করেন। শারাপোভা নামকরা রাশিয়ান প্রশিক্ষক ইউরি ইউতকিনের কাছে প্রথম টেনিস পাঠ গ্রহণ করেন, সে তার খেলা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যান।
৬ বছর বয়সে শারাপোভা মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার চালিত মস্কোর টেনিস ক্লিনিকে উপস্থিত হন যেখান থেকে তারা তাকে নিক বালেত্তেইরি টেনিস একাডেমিতে পাঠানোর সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করেন। উল্লেখ্য এই একাডেমি থেকে বিশ্ব জয় করা খেলোয়ার আন্দ্রে আগাসি, মনিকা সেলেস, আনা কুর্নিকোভার মত খেলোয়াড় বেরিয়ে এসেছিলেন।
চরম অর্থাভাবের কারণে নানাদিক থেকে ধার-কর্জ করে ১৯৯৪ সালে ইউরি তার মেয়েকে নিয়ে ফ্লোরিডার পথে পা বাড়ান। যখন ফ্লোরিডায় পৌঁছেন তার কাছে ছিল মাত্র $৭০০, মেয়ের ট্রেনিং পূর্ণ করার জন্য থালা-ধোওয়ার কাজসহ বিভিন্ন রকম স্বল্পবেতনের কাজ করেন তিনি।
১৩ বছর বয়সে নভেম্বর ২০০০-এ এড্ডি হেরর ইন্টারন্যাশনাল জুনিয়র টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন, যার জন্য ওই বছর সেরা উঠতি তারকা হিসাবে স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড জয় করে নেন। ২০০১ সালে তার জন্মদিনে তিনি প্রথম ডব্লিউটিএ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন।
২০০৪ সালের ১৭ বছর বয়সে উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ প্রথম গ্র্যান্ডস্ল্যাম সিঙ্গেল জয় করেন। ২২ আগস্ট ২০০৫ সালে তিনি প্রথম ওয়ার্ল্ড র্যাং কিং এর ১ নম্বরে আসেন।
এরপর ২০০৬ সালে ইউএস ওপেন, এরপর ২০০৭-এ শোল্ডার ইনজুরিতে পড়েন, যার ফলশ্রুতিতে তাকে সেরা ৫ থেকে ছিটকে যেতে হয়। ইনজুরি থেকে ফিরে এসে ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার পর পুনরায় সেই শোল্ডার ইনজুরিতে পড়েন।
২০০৮-এ শোল্ডার সার্জারি করানোর পর প্রায় এক বছর টেনিস থেকে বিরত থাকেন এবং ২০১০-এ আবার কোর্টে ফিরে আসেন কিন্তু তার পুরনো ফর্ম ফিরে পেতে ব্যর্থ হন, সারাবিশ্ব ভেবেছিল তিনি হয়ত হারিয়ে গেছেন কিন্তু নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে আবার স্বগৌরবে ফিরে আসতে থাকেন, ২০১১ সালে সেরা ১০-এ প্রবেশ করেন এবং ২০১২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন ও অলিম্পিক রুপা জয় করে নেন। শারাপোভা ২৭ বার ডব্লিউটিএ সিঙ্গেল চ্যাম্পিয়ন হন যার মধ্যে চার বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গেলস চ্যাম্পিয়ন ও তিনবার রানার আপ হন।
ডেভিড লেটারম্যানকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকার
Ellen De Generes Show তে দেয়া দুটি সাক্ষাৎকার
আরও একটি সাক্ষাৎকার
মাশা যখন ব্রাজিলের সমর্থক
* অফিসিয়াল টুইটার লিংক - https://twitter.com/MariaSharapova
* অফিসিয়াল ফেসবুক লিংক - https://www.facebook.com/Sharapova
বিভিন্ন পুরস্কার
***২০০৩***
মহিলা টেনিস ফেডারেশন (ডব্লিউটিএ) বছরের সেরা নবাগত খেলোয়াড়
***২০০৪***
ডব্লিউটিএ বর্ষসেরা খেলোয়াড়
ডব্লিউটিএ বর্ষসেরা উন্নত খেলোয়াড়
***২০০৫***
ই এস পি ওয়াই সেরা টেনিস খেলোয়াড়
রাশিয়ার বর্ষসেরা মহিলা টেনিস খেলোয়াড় (রাশিয়ান টেনিস ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত )
রাশিয়ার সেরা খেলোয়াড়
প্রিক্স ডে সাইট্রন রোল্যাঁ গ্যাঁরো
***২০০৬***
রাশিয়ার বর্ষসেরা মহিলা টেনিস খেলোয়াড় (রাশিয়ান টেনিস ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত )
ওয়ার্লপুল বছরের ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় খেলোয়াড়
***২০০৭***
ই এস পি ওয়াই সেরা টেনিস খেলোয়াড়
ই এস পি ওয়াই সেরা আন্তর্জাতিক মহিলা খেলোয়াড়
ইএসপিএন সবচেয়ে আবেদনময়ী মহিলা খেলোয়াড়
***২০০৮***
ই এস পি ওয়াই সেরা টেনিস খেলোয়াড়
***২০১০***
ডব্লিউটিএ ভক্তদের প্রিয় সিঙ্গেলস খেলোয়াড়
ডব্লিউটিএ বছরের লোকহিতকর খেলোয়াড়
ডব্লিউটিএ সবচেয়ে ফ্যাশনেবল খেলোয়াড় (কোর্টে)
ডব্লিউটিএ সবচেয়ে ফ্যাশনেবল খেলোয়াড় (কোর্টের বাইরে)
ডব্লিউটিএ সবচেয়ে নাটকীয় অভিব্যক্তি
উল্ল্যেখ যোগ্য খেলার অংশ বিশেষ
উৎসর্গঃ ব্লগার প্রবাসী পাঠক যার উৎসাহ থেকে মূলত এই পোস্টটি দেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৫