somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাবুন, কার হাতে তুলে দিচ্ছেন মটর সাইকেলের চাবি

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি শরীয়তপুরে ঘটে গেলো এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। বেপরোয়া গতিতে মটর সাইকেল চালিয়ে এক যুবক কেড়ে নেয় এক মায়ের দুটি সন্তান। প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন স্থানে ঘটছে দুর্ঘটনা। মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। যারা বেঁচে যাচ্ছে তারা মরার চাইতেও খারাপ অবস্থায় বেঁচে থাকে। হাত হারিয়ে, পা হারিয়ে, কেউ কেউ হাত পা দু’টোই হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে আছে। কারো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি হারিয়ে পুরো পরিবারটি পথে বসে পড়ে। কারো প্রাণের স্বজন হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। আমরা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছি। মাঝে মাঝেই আমাদের বিবেক জাগ্রত হয়ে উঠে। আবার ঝিমিয়ে যায়। কিন্তু কেন এমন হয় তা কি আমরা একবারের জন্যও ভেবে দেখি? ভাবার সময় এখনই।


যে ঘটনাটা না ঘটলে হয়তো আজকের এই লেখাটা লিখার তাগিদ অনুভব করতাম না, সেই ঘটনাটা সংক্ষেপে একটু না বললেই নয়। গত ৫ নভেম্বর সোমবার শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নে মটর সাইকেল চাপায় জুনায়েদ (৫) এবং আব্দুর রহমান (৩) নামের দুই শিশু নিহত হয়। এ ঘটনায় নিহত জুনায়েদ-আব্দুর রহমানের মা রহিমা বেগম (৩২) ও আত্মীয় হাসান বেপারী (১৮) গুরুতর আহত হয়। আহত হাসান বেপারীর ভাষ্যমতে সোমবার দুপুর ১টার দিকে বাবু বেপারীর স্ত্রী রহিমা বেগম তাদের দুই ছেলেকে নিয়ে নয়ন শরীফ সরকার কান্দি বাবার বাড়ি থেকে নৈমুদ্দিন সরকার কান্দি তার শ্বশুর বাড়ির দিকে আসছিল। নিমতলা এলাকায় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে হাসান বেপারীর সাথে কথা বলার সময় মুন্সী কান্দির বাসিন্দা রহমত উল্যাহ সরকারের ছেলে সখিপুর হাবিবউল্যাহ কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র বরকত আলী (১৮) বেপরোয়া গতিতে একটি পালসার মটর সাইকেল নিয়ে তাদের উপর উঠিয়ে দেয়। আহতদের ভেদরগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুনায়েদকে মৃত ঘোষণা করে এবং অন্যান্যদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পর বিকেলে আব্দুর রহমানের মৃত্যু হয়। ঘাতক বরকত আলী ভগ্নিপতির মটর সাইকেলটি নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল।

এবার আসি মূল কথায়। শরীয়তপুর জেলা হচ্ছে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স প্রেরণে অন্যতম একটি জেলা। এখানকার বহু প্রবাসী স্বজনদের দেশে রেখে প্রবাসে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে অর্থ উপার্যন করে দেশে পাঠায়। আর প্রবাসীদের সেই টাকায় যুবক বয়সী ছেলেরা নিত্য নতুন মটর সাইকেল কিনে ফুটানি করে। আর ফুটানির তালিকায় বেশিরভাগই ১৮ বছরের নিচে যাদের কিশোর বলা যায়। তাদের হাতে আমরা মটর সাইকেলের চাবি তুলে দিতে বাধ্য হই অনেক সময়। মটর সাইকেল পাওয়ার পর শুরু হয় বেপরোয়া ছোটাছুটি, মাদক সেবন, ইভটিজিং করা সহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে মটর সাইকেল কিনে না দিলেও বড় ভাই, বাবার মটর সাইকেল আব্দার করলেই তাদের হাতে চাবি তুলে দেই। যেমনটি দিয়েছিলো ঘাতক বরকত আলীর ভগ্নিপতি নিজের মটর সাইকেলটি। আইন প্রয়োগের দুর্বলতার সুযোগে এরা ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চলাচল করতে, হেলমেড ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে এবং অতি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে সাহস ও সুযোগ পায়। আমাদের একটু সচেতনতাই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে। তাই প্রবাসীদের এবং দেশের অভিভাবকদের উচিত একবার হলেও ভেবে দেখা কার হাতে তুলে দিচ্ছেন মটর সাইকেলের চাবি? যার হাতে তুলে দিচ্ছেন সেই প্রিয় স্বজন হারিয়ে যেতে পারে দুর্ঘটনায়, মাদকের মরন থাবায়, অপরাধে জড়িয়ে। আর হারাতে পারে অন্য কারো অমূল্য জীবনও।

দুর্ঘটনায় আমরা শুধু চালককে আর সড়কের বেহাল দশার জন্য সরকারকে দায়ী করি। দায়ী করাটাও অমুলক নয়। তবে তাদেরই কি সব দায়? আমাদেরও কি কোন দায় নেই? আমরা সড়কে চলাচলের সময় সচেতন থাকি না, রাস্তা পারাপারের সময় ডানে বামে খেয়াল করি না, নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হই না, ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহারে আমাদের ব্যাপক অনিহা, চালকদের মত আমরা পথিকরাও ট্রাফিক আইন মানি না, এমন হাজারো উদাহরণ দিতে পারবো। কিন্তু উদাহরণ না টেনে আমাদেরও উচিত একটু সচেতন হওয়া। আমরা সবাই মিলে পারি একটি নিরাপদ জীবন যাপনের পরিবেশ তৈরী করতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×