শিক্ষা, অসাধারন এক আলোকিত চিজ!
ক্ষুদ্র স্বার্থে শিক্ষাকে মোড়াতে চাইলে, আপন শক্তিতেই শিক্ষা পথ বাতলে দেবে আলোকময় যাত্রার...
১৭৫৭ সালে পলাশী বিজয়ের পর ইংরেজরা তাদের শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য দেশীয়দের মধ্যে থেকে ইংরেজী শিক্ষিত একটি অনুগত শ্রেনী তৈরীতে মনোযোগ দেয়। বিশেষত, রাজ্য হারানো ক্ষুব্ধ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি স্পর্শ করা এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮১ সালে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় সংস্কৃত কলেজ।
ইংরেজরা মূলত তাদের শাষন পাকাপোক্ত করার জন্যই এসব উদ্যোগ নেয়। পরবর্তিতে শিক্ষা বিস্তারের এ উদ্যোগকে সফলতার সাথে এগিয়ে নেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং ও লর্ড হার্ডিন্জ।
কিন্তু ইংরেজদের জন্য করুন পরিহাস আর এ অঞ্চলের মানুষের অসাধারন ইতিহাস হলো- অনুগত শ্রেনী তৈরী করে শাসন পাকাপোক্ত করার শিক্ষা উদ্যোগ এ দেশীয় মানুষের মধ্যে ব্যপক প্রভাব ফেলে, তাদের মধ্যে নতুন চেতনার স্ফুরন ঘটতে থাকে। তখন সংবেদনশীল মানুষের নজর যায় সমাজের দিকে, যা পরবর্তিতে উপনিবেশিক শাষনের অবসান ঘটাতে সহায়তা করে।
অর্থ্যাৎ, ইংরেজরা শিক্ষাকে তাদের ক্ষমতা পাকাকরনের ঘুটি করতে চাইলেও, শিক্ষার অপরিসীম শক্তি স্বাধীনতার আলোকিত পথই বাতলে দিয়েছে।
আমি ভাবছিলাম- ক্ষুদ্র স্বার্থে শিক্ষাকে মোড়ানোর প্রচেষ্টা কি উপনিবেশিক সূর্যের মতোই অস্তমিত হয়েছে! নাকি এ ২০১৪-তেও মধ্যগগনে রয়েছে!
আমি দেখছিলাম এবারের এস.এস.সি.'র রেজাল্ট। যাতে গড় পাস করেছে ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন শিক্ষার্থী।
অভাবিত অভিভূতকর এক রেজাল্ট! যেখানে একটি প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষাকে জিপিএ-৫ তৈরী আর পাশের হার বাড়ানোর ফ্যাক্টরী বানানো হয়েছে।
অনেকেই এখন বলতে পারেন- শিক্ষার মান বেড়েছে, তাই এ উৎকর্ষ রেজাল্ট। এখানে প্রশ্ন করার সুযোগ নেই।
কথাটি অনুগত শ্রেনীর মতোই হয়ে গেল! শিক্ষার মান বেড়েছে? কিন্তু এতটাই কি বেড়েছে যে রাজশাহীতে ৯৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ পাশ করেছে! লক্ষ্যনীয়, অবশিষ্ট ৩ দশমিক ৬৬ কিন্তু ফেল করেনি! এরমধ্যে অনুপস্থিত এবং বহিস্কারও রয়েছে। অর্থ্যাৎ পরিক্ষা দেয়া পাসের হার প্রায় ১০০ ভাগ! মান এতই বেড়েছে? নাকি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে?
আসলে বাস্তবতাতো এটাই প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষাকে কলংকিত করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের হিরিক লেগেছিলো এ পরীক্ষা নামক তামাশায়! ফটোকপির দোকানে, ফেসবুকে পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র পাওয়া গিয়েছিলো!
বাস্তবতা এটাই- বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যপক জনসমর্থন হারানো এবং একটি একতরফা ও অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন করে বসা দূর্বল সরকার শিক্ষাকে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার মোড়কে মোড়াতে আত্বতুষ্টি মূলক রেজাল্ট দিয়েছে! যেখানে নিজেদের সফলতা প্রচারের পাশাপাশি বাড়তি লক্ষ্য হলো ক্ষুব্ধ জনগনকে তুষ্ট করা।
কিন্তু এটাই হবে এ সরকারের জন্য নির্মম পরিহাস আর এ দেশের তরুনদের জন্য আলোকিত ইতিহাস।
এবারের পরিক্ষায় বানের পানির মতো জিপিএ-৫ আর পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা আর কিছুদিন পড়েই আঠারো বছরে পা দেবে। ভোটাধিকার প্রাপ্তির বয়সে তাদের নতুন চেতনার স্ফুরন ঘটবে। তখন তাদের জিপিএ-৫ পাওয়া হৃদয় ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন সম্পর্কে সচেতন হবে। যা কিনা এ অগ্রহনযোগ্য শাসনের অবসান ঘটাবে।
এটাই আপন শক্তিতে শিক্ষার আলোকময় যাত্রার।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




