![]()
শরৎ-এর দীর্ঘ রাত, নির্ঘুম কেটেছে দুখুর....
বাহিরে ঝুম বৃষ্টি, বয়েছিলো ভেজা বাতাস। তবুও সে ঘুমাতে পারেনি..
সকালে লাল চোখ ঘুমে জড়াচ্ছিলো ঠিকই, কিন্তু উপায় নেই রুজির তাগিদে যেতে হবে রুটির দোকানে!! ঘুমকে প্রশ্রয় না দিয়ে সে লিখতে বসলো। লিখলো-
♫♪হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা। দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!♫♪
হঠাৎ করে হাঁক শোনা যায়- দুখু মিয়া, বাড়ি আছ নাকি?
কে? কে ডাকে? জবাব দিতে দিতে দরজা খোলে দুখু।
:আমি আজগর মেম্বার, এত বেলা কইরা ঘুমাইলে হবো মিয়া? সকাল বেলার পাখি হইতে হইবো।
জি, সালামালাইকুম মেম্বার সাব।
:অলাইকুম....তা দেশ দুনিয়ার কোন খবর রাখো মিয়া? আজ যে এমপি সাব ইস্কুল মাঠে আসতাসে, সে খবর রাখো?
:জি, শুনছিলাম আরকি।
:শোন, ভোটে হয়নাই বইলাতো নির্বাচনের সময় এমপি সাব আসে নাই। এমপি হইয়া এবারই প্রথম আসতাছে। একটা মানপত্র লেখা লাগে যে বাজান।
:সে তো আমার সৌভাগ্য।
:তা দুপুর নাগাদ লিখা ফালাইয়ো। সাথে জননেত্রী, গনতন্ত্রের মানস কন্যার জন্যও একটা গান লিখো। এমপি সাব খুশি হইলে তোমার টিআরএ'র গম পাক্কা। আর সুপারিশের জন্য আমি তো আছিই....
:আপনার দয়াতেই তো বৌ-বাচ্চা নিয়া বাইচা আছি মেম্বার সাব।
আজগর মেম্বার চলে গেলে মানপত্র লিখতে বসে দুখু। দোকানে আজ আর যাওয়া হবে না। এমপি সাবরে খুশি করা গেলে দোকানে আর যাওয়ার দরকারও পড়বে না!!
(প্রিয় নজরুল,
দুখু মিয়ারা এখন দুখুই রয়ে যায়, নজরুল হতে পারে না!
অসংকোচ প্রকাশের সাহস এদের নেই.....
এরা শুধু তোমার গান গাইতে জানে, কিন্তু বর্তমানের কারার ঐ লৌহ কপার ভাঙ্গার সাহস ও শক্তি এদের নেই! এরা শুধু তোমার মাজারের খাদেম হয়ে তোমার মৃত্যুদিনের ওরশ মোবারকে মোমবাতি জ্বালাবে! কিন্তু তোমার বিদ্রোহের আগুন ধারন করবে না!)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




