somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল মশার উপদ্রব: কামরাঙ্গীরচরে আ’লীগ নেতার নেতৃত্বে মার্কেটে লুটপাট আগুন

১০ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন সরদারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ছয়টি প্লাস্টিক কারখানাসহ প্রায় ২৫টি দোকান লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। গতকাল সকালে কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজ সংলগ্ন ছাতা মসজিদ এলাকায় শত শত ব্যবসায়ীর সামনে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ—সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি, তলোয়ার ও রামদা নিয়ে হামলা চালায়। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ কয়েক লাখ টাকা এবং মূল্যবান সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যায়। তাদের হামলায় ১০/১২ জন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। ব্যবসায়ীরা আরও অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনেই ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা হামলা, লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দিলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এমনকি হামলার শিকার ব্যবসায়ীরা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলেও তারা ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরে যায়। পুলিশের এই ভূমিকার কারণে সন্ত্রাসীরা দ্বিগুণ উত্সাহে গণহারে লুটপাট ও হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, জমি দখল করতে সরকারি দলের ওই নেতার নেতৃত্বেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল পৌনে ১০টার দিকে পুলিশের সামনেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী মার্কেটে যায়। সশস্ত্র ক্যাডাররা আগ্নেয়াস্ত্র, হকিস্টিক, রামদা, তলোয়ার ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করে লুটপাট চালায়। প্রত্যক্ষদর্শী প্লাস্টিক দানার ফ্যাক্টরির মালিক সুমন মিয়া বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মার্কেটে এসে প্রথমে বিভিন্ন দোকানে লুটপাট চালায়। এতে বাধা দিলে তারা লোকজনের ওপর হামলা চালায়। তারা বিভিন্ন দোকানের ক্যাশবাক্স ভেঙে টাকা ও মূল্যবান মালামাল লুট করে। এসময় ভয়ে অনেকেই মার্কেট থেকে পালিয়ে যায়। কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাদের লাঠি দিয়ে ধাওয়া করে ও তাড়িয়ে দেয়। প্রায় একঘণ্টা ধরে প্রকাশ্যে তারা লুটতরাজ চালায়। ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যক্তি বলেন, যারা হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মী-সমর্থক। তিনি বলেন, কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেনের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। যারা হামলা চালিয়েছে তাদের পরিচয় সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের জানা আছে। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এক ব্যবসায়ী বলেন, ক্ষমতার দাপটে সন্ত্রাসীরা দিনে-দুপুরে এ ধরনের হামলা চালানোর সাহস পেয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা সকাল থেকেই ওই এলাকায় মহড়া দিচ্ছিল। সকাল ৯টায় র্যাবের একটি টহল দল মার্কেটে আসে। র্যাব চলে যাওয়ার পরই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সন্ত্রাসীরা। দোকান মালিক ও কর্মচারীরা জানান, সন্ত্রাসীদের অনেকের হাতেই দেখা গেছে আগ্নেয়াস্ত্র, হকিস্টিক ও দেশি অস্ত্র। তারা লুটপাট শেষে যাওয়ার সময় আগুন লাগিয়ে দেয়। মুদি দোকানি শহীদ বলেন, সন্ত্রাসীরা দোকান ভাংচুর করার পর তাকে মারধর করে এবং চারটি মোবাইল সেটসহ নগদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। হামিদা কালার নামে একটি রঙের দোকানের মালিক আজমল জানান, তার দোকান থেকেও ২ লাখ টাকা লুট হয়েছে। নিউরাজ রাজধানী টিম্বার নামের একটি দোকানের অর্ধেক পুড়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪ লাখ টাকা বলে ওই দোকানের মালিক মোঃ রফিক জানান। ওই এলাকার দোকানিরা সবাই দাবি করছেন, আগুন লাগানোর আগে লুটপাট চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ক্ষতিগ্রস্ত সবুর বলেন, আমার দোকান থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, হামলা চালিয়ে যে যেভাবে পেরেছে লুটপাট চালিয়েছে। এমনকি লুঙ্গি পরা লোকজন টাকা লুঙ্গির কোচায় ঢুকিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। এছাড়াও ৪টি প্লাস্টিকের গোডাউন, জামাল মিয়ার কারখানা, ৪টি কাচের দোকান, ৩টি খাবার হোটেল ভস্মীভূত হয়। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার সময় দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষদর্শী সবুজ বলেন, সন্ত্রাসীরা প্রথমে একটি কাঠের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পর আশপাশের আরও কয়েকটি কাঠের দোকান ও প্লাস্টিকের দোকানে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট প্রায় একঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মার্কেটের জমির মালিক হাজি মাহবুব বলেন, কামরাঙ্গীলচর এলাকায় ১৯৯১ ও ২০০৪ সালে দুটি ব্রিজ নির্মাণ করে সরকার। এই ব্রিজ দুটির রাস্তা তার জমির ওপর দিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ব্রিজ দুটির জন্য আরও কিছু জমি তাকে ছাড়তে বলেন। তিনি ১৫ দিন আগে ১ বিঘা জমি ছেড়েছেন। তার দাবি, ব্রিজের জমির জন্য সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়নি। তারা লুটপাট করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, যারা হামলা চালিয়েছে তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তবে লুটতরাজের পর সকালে হাজি মাহবুব সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন সরদারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ঘটনার পর বিকালে তিনি ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে অভিযুক্ত না করে অন্যকিছু লোককে দায়ী করেন। তার দাবি, ভুল করে সকালে আবুল হোসেনের নাম বলেছিলেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, ঘটনার পর আবুল হোসেনের নাম বলার কারণে তারা হুমকির মুখে আছেন। তার নাম বলার জন্য ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে রক্ষার জন্য একটি মহল তাদের হুমকি দিচ্ছে। তাই লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হলেও ভয়ে তারা এখন ওই নেতার নাম বলতে পারছেন না। মার্কেটের প্লাস্টিক কারখানার মালিক বলেন, একটি সেতুর জন্য মাহবুব মার্কেটের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা তৈরির কথা রয়েছে। মার্কেটের মালিক মাহবুব চাচ্ছেন ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকার জায়গাটি (একোয়ার) নিয়ে নিক। একটি চক্র এটা চাচ্ছে না। তারাই আগুন লাগিয়ে লুটপাট চালিয়েছে। জমির মালিক হাজি মাহবুব বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন সরদারের নাম বাদ দিয়ে ১৮ জনকে আসামি করে এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে পৌনে দুই কোটি টাকা।
র্যাব-১০-এর উপসহকারী পরিচালক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ওই সময় তাদের একটি টহল গাড়ি লোহার পুলের কাছে ছিল। কিন্তু লুটপাটের কোনো ঘটনা তারা দেখেনি। দমকল কর্মকর্তা মুনীর জানান, দুটি স্পিডবোটসহ ১১টি গাড়ি একঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, তা তাত্ক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি। এদিকে অভিযুক্ত কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন দাবি করেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনি জড়িত নন। মার্কেটে আগুন লাগার খবর শুনে তিনি সেখানে যান এবং কিছুক্ষণ পরই পুলিশ আসে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগুন লাগানোর সঙ্গে দলের কেউ জড়িত থাকলে তাদের খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে দেয়া হবে। তবে ঘটনার সময় সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য হাজির ছিল না দাবি করে লালবাগ থানার এডিসি ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, এখান থেকে বেশ কিছু দূরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। সেখানে ৩ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, কারা হামলা চালিয়েছে বা অগ্নিসংযোগ করেছে এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তদন্তের পর আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো। কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম শিকদার বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কেউ গ্রেফতার হয়নি।
(আমার দেশ)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×