somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : দুঃসময় ( সম্পূর্ণ গল্প একসাথে )

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



থানা হাজতে আজ আমার দ্বিতীয় দিন সন্দেহজনক ঘোরাফেরার অপরাধে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার হয়ে এখন মাদক মামলায় মোহাম্মদপুর থানা হাজতে আছি । প্রচন্ড গরমে ঘামে ভিজে শরীর চুপচুপে হয়ে একলাই ঠান্ডা হচ্ছে ।হাজতে ফ্যান থাকার কথা কিন্তু এর আগে এক আসামি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় মারের হাত থেকে বাঁচতে সিলিং ফ্যানে ঝুলে পড়েছিল যদিও কিছু কিছু সংবাদপত্রই লিখেছিলো অন্য কিছু এরপর থেকে নাকি ফ্যান খুলে ফেলা হয়েছে ।
যে দারোগা আমাকে ধরে এনেছেন উনার নাম জাকির দারোগা । কোর্ট এ চালানের সময় লিখেছিলেন চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ ও সফলতা হিসেবে আমার পকেটে গাঁজার পুড়িয়ে পাওয়া গেছে, যদিও গাঁজা কেন আমি জীবনে একটা সিগারেট ও টানি নাই তারপরেও দারোগা সাহেব যা লিখেছেন সেটাই সত্য উনার সাথে তো আমার ব্যাক্তিগত শত্রুতা নেই যে আইনের লোক হয়ে মিথ্যা কথা লিখবেন ।
অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে মাদকের উৎস সম্পর্কে জানা যাবে পাঁচ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন এই আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য বিচারক আমার দিকে তাকালেন , উস্কোখুস্কো চুলে আমাকে দেখে মনে হয় উনার একটু মায়া হলো রিমান্ড কমিয়ে দুইদিন করে দিলেন । হাজার হউক মহামতি বিচারক উনার দয়ার শরীর ।
রিমান্ডের শুরুতে জাকির দারোগা একটা বাঁশের লাঠি দিয়ে আমার পায়ে আর পাছায় কয়েকটা বাড়ি দিলেন এরপর আমার মুখোমুখি বসলেন জিজ্ঞাসা করলেন
-তুই কি করিস?
- শরীরের ব্যথায় তুই তোকারি মনে কোনো দাগ ফেললো না বললাম স্যার বেকার, চাকুরী খুঁজছি পাই না তাই রাতে কাওরানবাজারে ট্রাক থেকে মাল নামাই আর দিনে একটা টিউশনি করি ।
-তার মানে কুলির কাজ করিস তো এত দামি ফোন পেলি কোথায় ছিনতাই করা মাল নাকি ?
- আমি মিথ্যা বললাম বললাম স্যার রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি । মিথ্যা বললাম যেন মালিকানা যাচাই করতে আবার লোপাদের বাসা পর্যন্ত আমার এই গাঁজার অপরাধের কথা না যায় ।আসলে ফোনটা আমার ছাত্রী লোপা আমাকে দিয়েছিলো ওর মামা নাকি আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছেন । দারোগা পুলিশ কে মনে হয় সহজে বিভ্রান্ত করা যায় না ,
-জাকির দারোগা মুচকি হাসলেন বললেন শালা তুই তো খুব সুন্দর মিথ্যা কথা বলতে পারিস রে অভিনয় লাইনে গেলে কিছু করতে পারতি। যাক তোর কথাই রইলো ওটা মনে কর তোরকাছ থেকে আবার রাস্তায় হারিয়ে গেছে ।
-আমি বুঝলাম ওটা ওনার পছন্দ হয়েছে আমি আর ফেরত পাবো না । দারোগা সাহেব পকেট থেকে ফোন টা বের করে সিম খুলে আমাকে সিমটা ফেরত দিলেন দয়ার শরীর না দিলেও তো পারতেন ।
- শালা বললেন এইবেপারে কাউকে কিছু বলিস না
-আমি বললাম জীবনেও বলবো না স্যার ।
-উনি বললেন কাল তোকে চালান করে দেব কাউকে ধরে জামিন করে নিস, তোর কোনো পরিচিত উকিল আছে নাকি ? আমি মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলাম ।আমার কাছে দারোগা সাহেব পকেট থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে দিলেন এরপর হাতের লাঠিটা রুমের একপাশে রেখে বের হয়ে গেলেন ।

জাকির দারোগা যে ফোনটা নিয়ে নিলো সেটার একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে ফোনটা লোপাই আমাকে দিয়েছিলো | লোপা আমার ছাত্রী , বেশ সুন্দরী ,হিমু গল্পের রুপার সাথে ওর চেহারার একটা মিল থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু রুপা আর হিমুর মতো আমাদের মধ্যে কোনো রোমান্টিক সম্পর্ক নেই ।পাঠকদের হতাশ করে হলেও সত্য কথাটা লিখলাম ।প্রায়ই লোপাকে পড়াতে যেয়ে বাসায় পেতাম না সেই সমস্যা দূর করতে একদিন লোপাই আমাকে ফোনটি দিয়ে বললো স্যার কল করে আসবেন ।তাছাড়া যতদূর জানি লোপার বাবা বড় ব্যাবসায়ী বাসায় চারিদিকে সিসিটিভি | পড়ার রুমের চার কোনায় চার সি সি ক্যামেরা প্রেম নিবেদন করে টিউশনিটা হারানোর মতো রিস্ক আমি কেন নিবো?,এই টুইশনিটা আমার খুব বেশি দরকার|
-আমার আর কোনো ভাই বোন নেই।মাস শেষে টিউশনির টাকা টা বিকাশ করে মা কে পাঠাই, মা আমার জন্য প্রেমের চেয়ে অনেক বড় তাই ভুলেও এইসব চিন্তা মাথায় আসেনি ।
আমার মা গ্রামে একাই থাকেন আব্বা দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যাওয়ার পর থেকে মানসিক ভাবে একটু এলোমেলো , একা একা কথা বলেন ,সঠিক সময়ে খাবার খান না পাশের বাড়ির মহিলারা দয়া করে দেখাশোনা না করলে মা কে রেখে আমার ঢাকা তে থাকা সম্ভব ছিল না ।মায়ের জন্য আমার খুব খারাপ লাগে, আমি পাশে থাকলে মা একটু ভালো থাকেন আমার সাথে পুরাতন দিনের গল্প করেন
- জানিস খোকা একবার হলো কি তোর বাবা নদী থেকে বিশাল এক বোয়াল মাছ ধরে আনলেন | সেই বোয়ালের পেটে কেটে বের হলো এক সোনার আংটি , সেই আংটি নিয়ে তো এক মহা হৈচৈ , কর্মকার বাড়ির নুতন বৌ দাবি করলো নদীতে গোসল করতে যেয়ে তার আংটি হারিয়ে গিয়েছিলো এটাই সেই আংটি তার স্বামীর নিজের হাতে বানানো । আংটিটা নাকি তার বাম হাতের মাঝ আঙুলে ছিল । সবার সামনে তার দাবির সত্যতা যাচাই করতে আংটি মাঝ আঙুলে পড়াতে যেয়ে দেখাগেলো তার দুইটা আঙ্গুল এক করে আংটির মধ্যে ঢুকানো যায় । সবার সামনে বৌটার সে যে কি লজ্জা , বলেই বসলো তার স্বামীই নাকি তাকে মিথ্যা দাবি করতে বলেছিলো , সেই লজ্জায় ,রাগে বৌটা সেই যে বাপের বাড়ি গেলো আর এলো না ।
এই কথা চারদিকে চাউর হওয়ার তিনদিন পরে পাশের পাড়ার মোটা কুদ্দুস এসে হাজির ,আংটি নাকি সে নদীতে গোসলের সময় খুলে পরিষ্কার করতে যেয়ে হারিয়ে ফেলেছিলো ওখান থেকেই বোয়ালের পেটে। সবাই তার হাতে আংটি পড়াতে কত চেষ্টাই না করলো কোনো লাভ হলো না কলার মতো মোটা আঙুলে আংটি ঢুকলো না । আঙ্গুল ছিলে সে এক রক্তা রক্তি কান্ড ।শেষে এমন এক অবস্থা পাড়ার ছেলেরা আংটি তার আঙুলে ঢোকাবেই আর কুদ্দুস দাবি ছেড়ে পালতে পারলে বাঁচে।
রোজ দুইতিন জন করে দাবিদার বাড়ি আসে , শেষে তোর বাবা রাগ করে সবার সামনে সেই আংটি মাঝনদীতে ফেলে দিলো , স্রোতের নদী কোথায় যে গেলো সেই আংটি আল্লাহই জানেন ।
মার্ এইসব গল্প শুনতে আমারও আমার খুব ভালো লাগে । আমি ভাবি ইশ আব্বা যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে না যেতেন আব্বার সাথে বসে গল্পটা শুনতে আরো ভালো লাগতো । আব্বা তার দ্বিতীয় বৌ নিয়ে বিদেশ থাকেন আমাদের খোঁজখবর নেন না। শুনেছি দ্বিতীয় ঘরে তার কোনো সন্তান নেই , আচ্ছা বাবা কি তার ছেলেকে কোনোদিন একটু দেখতেও আসবেন না ?আব্বার জন্য আমার খুব খারাপ লাগে আসলে আব্বার স্নেহ আমি খুব মিস করি আমার খুব ইচ্ছা করে আব্বার কাছে বসে মায়েরমত তার গল্প শুনতে ।
সন্ধ্যায় হাজতে এক নুতন আসামি এলো বেশ স্মার্ট কোথাও দেখেছি দেখছি কিন্তু মনে করেও ঠিক মনে করতে পারলাম না । তার জন্য বাইরে থেকে ভালো খাবার এলো, দেখেই বোঝা যায় বড়োলোকের ছেলে , যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়, প্রবাদ বাক্য সত্য করে রাত দশটার দিকে ডাকসাইটে গোছের একভদ্র্লোক এলেন উনি নাকি ছেলেটার বাবা ।উনার সাথে লোপার বাবাকে দেখে আমি দ্রুত হাজতের একটু অন্ধকার পাশে যেয়ে ঘুমের ভ্যান করে শুয়ে পড়লাম । উনারা নুতন ছেলেটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন । লোপার বাবা মনে হয় আমাকে চিনতে পারেন নাই । চিনতে পারলে তো মহা লজ্জার ব্যাপার হয়ে যেত । ওই ছেলেটা বাবার সাথে চলে যেতেই আমার খুব বাবার কথা মনে পড়ছে ।আমার বাবা যদি এইভাবে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতেন কি যে ভালো লাগতো ।বাবাকে দেখার জন্যখুব ইচ্ছা করছে ।বুকটা ফেটে কান্না এলো আচ্ছা পৃথিবীতে বাবা নামের মানুষ গুলোর জন্য এত কষ্ট লাগে কেন ? মনে মনে বললাম বাবা তোমাকে আমি খুব মিস করি বিস্বাস করো তোমার জন্য আমার খুব খারাপ লাগে । বাবাকে যদি একটু দেখতে পেতাম আমার সব বেদনা ভুলে অঝোরে কাঁদতাম , অনেক দিনের জমে থাকা কান্না গুলো বেদনার অশ্রূ হয়ে ঝরে পড়তো ।
আমার সাথে আরো বেশ কয়েকজন আসামি হাজতে আছে । একজনের নাম শামীম খান শুনলাম সে নাকি ভয়ঙ্কর ঠান্ডা মাথার খুনি কন্ট্রাক্টে খুন করে ।হাজতে তাকে বেশ উদ্বিগ্নই মনে হলো কিছুক্ষন পরপর সিগারেট ধরায় আর পায়চারি করে । রাত এগারোটার একটু আগে তার সাথে দেখা করতে খুব সুন্দরী একটা মেয়ে এসেছিলো দুইজন ফিশ ফিশ করে কিসব কথা বললো ।মেয়েটা যাবার আগে শামীমের হাতে অনেকগুলো একহাজার টাকার নোট গুঁজে দিয়ে গেলো । আমি কৌতুহল আর ধরে রাখতে পারলাম না মনে ভয় থাকলেও সাহস করে শামীম খান এর কাছে গেলাম ।আমার কাছে যাওয়া দেখে একগাল হেসে বললো
- বুঝলেন ভাই খুনি অইলেও আমার একটা গুন্ আছে আমি অনেক কিছু আগের থাইকা জানবার পারি।
-আমি থতমত খেয়ে বললাম না ভাই আমি এমনি আপনার সাথে কথা বলতে এলাম । শামীম আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো
-আপনি যা ভাবতাছেন হেইডা না এই মাইয়া আমার বৌ বা কুডুম না ।
আসলেই আমি মনে মনে ভাবছিলাম মেয়েটা তার কোনো নিকটাত্মীয় হবে ।
শামীম বললো
-কাছে আহেন কানে কানে কতা কমু । আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তার দিকে মাথা এগিয়ে দিলাম। সে ফিস ফিস করে বললো এই মাইয়ার স্বামীরে মারোনের লাইগা কন্ট্রাক্ট দিছিলো কাম খাম কইরা ফালাইছি । এইডাই আমার শ্যাষ কাম ।অহন ওই মাইয়া ওসির লগে কন্ট্রাক্ট করছে আজ রাইতেই আমারে ক্রসে দিবো ।
-আমি অবাক হয়ে বললাম তাহলে আপনি টাকা নিলেন কেন শামীম আমার কথা শুনে অদ্ভুত ভাবে হাসি দিলো আমাকে অবাক করে বললো আন্নে আমার একডা উপকার কইরেন কড়াইল বস্তিতে আমার মা মরা পোলাডা থাহে ওর নাম আর নম্বর এই কাগজে লেহা আছে এই টাহাগুলান হেরে দিয়েন আর কয়েন হের্ বাপ্ হের্ লগে দেহ না করলে কি অইবো হেরে হের্ বাপে বহুত ভালোবাছে। এই বলেই সে আমার হাতে ১০০০ টাকার নোট গুলো গুঁজে দিলো।আমি শামীমের ছকে পানি দেখে অবাক হয়ে গেলাম , বাবারাও তাহলে তাদের ছেলের জন্য মনে কষ্ট লাগে? শামীম বলেই চলেছে
-হুনেন কাল হকালে আন্নেরে ছাইড়া দিবো আন্নের বাপ্ বিদেশ থেইকা চইলা আইতাছে আর হুনেন মিয়া ,আন্নের বাপও আন্নেরে মিস করে হে আন্নের বহুত মিছ করে।

ভোর চার টার সময় মুখে কালো কাপড় বাধা কিন্তু পুলিশের পোশাক পড়া কিছু লোক এসে শামীম খান কে হাজত থেকে বের করে নিয়ে গেলো ।শামীম দেখলাম মুখ শক্ত করে আছে । একজনের হাতে আমার অতি পরিচিত মোবাইল ফোন টা দেখলাম , মুখ বাধা লোকটাকে ভালো করে লক্ষ্য করতেই বুঝলাম জাকির দারোগা ।

সকাল সাতটায় আমাকে অবাক করে দিয়ে লোপা আর ওর বাবা থানায় এসে আমাকে ছাড়িয়ে নিলেন । লোপা আমার সাথে কোনো কথা বললো না, ওর দুই চোখ বেশ ফোলা ফোলা আর লাল । ওর বাবা আমাকে আর লোপাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলেন বললেন তোমার দেশের বাড়ি যাচ্ছি তোমার বাড়ি মাগুরা জানি কিন্তু কোথায় জানি না। মাগুরা গেলে ড্রাইভার কে দেখিয়ে দিও ।
আমি খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম আমাদের বাড়িতে গেলে আমার দারিদ্রতা উনারা দেখে ফেলবেন এই ভয়ে আমি বললাম না না আমি এখন বাড়ি যাবো না ঢাকায় কিছু কাজ আছে । লোপার বাবা খুব আপন আর মায়াবী একটা হাসি দিলেন, বললেন তোমার বাড়ির আর তোমাদের পারিবারিক অবস্থা আমি জানি ঐসব নিয়ে চিন্তা করো না আমাদের যেতেই হবে অন্য কারণ আছে । তোমার আম্মুকে আনতে যাচ্ছি ।আমি অবাক হলাম আম্মুকে আনতে যাচ্ছি মানে বুঝলাম না তবুও মুখে কিছু বলতে পারলাম না
আমাদের গাড়ি থানার গেট দিয়ে বেরুনোর সময় খুব ভিড় দেখলাম অনেক লোক সাংবাদিক লেখা ক্যামেরা নিয়ে গেটে ভিড় করেছে। ড্রাইভার লোপার আব্বাকে বললো স্যার পাবনার কিলার শামীম কাল রাইতে ক্রসে মরছে, হেরলাইগা সাংবাদিকগো এত্ত ভিড় । চারিদিকে ঝকঝকে রোদ্দুরেও মধ্যেও আমার মনটা কেন যেন বিষন্ন হয়ে গেলো । আনমনে আমার পকেটে হাত চলে গেলো সেখানে হাজার টাকার নোটগুলো ফুলে আছে ।বাড়ি থেকে এসে কড়াইল বস্তিতে যেতে হবে কিলার শামীমের ছেলের খোঁজে ।

পাটুরিয়া ঘাটে ফেরিতে আমাদের গাড়ি পারহচ্ছে ।লোপার বাবা আমাকে বললেন এসো একটু হাঁটা হাঁটি করি , আমি উনার সাথে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।লোপা মাথা নিচু করে গাড়িতেই বসে থাকলো । মৃতপ্রায় শীর্ণ পদ্মা নদী ফেরি খুব ধীরে ধীরে এগুচ্ছে ।লোপার আব্বা স্বস্নেহে আমার কাঁধে হাত রাখলেন,
-বললেন তোমাকে একটা কথা বলি , আমি বললাম
-জি বলুন
-উনি বললেন আমার প্রথম সন্তান লোপার জন্মের সময় ওর মা মারা যান এরপরে আমি আর বিয়ে থাওয়া করি নাই লোপাই আমার জান প্রাণ । ওকে বলেছিলাম বড় হয়ে তুই যাকে পছন্দ করবি তাঁর সাথেই তোকে বিয়ে দেব তবে শর্ত একটাই আমার সাথেই তোদের থাকতে হবে । পাগলী মেয়ে কোনোদিন আমাকে কিছু বলে নাই কাল তোমাকে হাজতে দেখে গেছি তুমি লজ্জা পাবে বলে কথা বলার চেষ্টা করি নাই ।দারোগাকে জিজ্ঞাসা করতেই বললো সন্দেহ করে রিমান্ড এ নিয়েছিল আসলে তুমি নির্দোষ । রাতে বাসায় ফিরে লোপাকে ঘটনা বলতেই হুলস্থূল কান্ড পাগলী চিৎকার কান্নাকাটি করে শেষ ।ওর ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে বাবা হিসাবে আমার কোনো অসুবিধা হয় নি । আমি তখনি সিদ্ধান্ত যা নেয়ার সেটা নিয়ে ফেলেছি তোমার সাথে বিয়েতে লোপার পূর্ণ সম্মতি আছে বলেই সে আমাকে জানিয়েছে ।
আমার বুকফাটা কান্না পেতে লাগলো কেন জানিনা দুইচোখ দিয়ে পানির ধারা নেমে গেলো। লোপার আব্বা রুমাল দিয়ে সস্নেহে আমার চোখের পানি মুছে দিলেন বললেন পাগল ছেলে খুশির খবরে কাঁদতে নেই ।
মাগুরা আমাদের বাড়ি পৌছুলাম বেলা বারোটার দিকে ।লোপা আর ওর বাবা গাড়ি থেকে আমার সাথেই নেমে পড়লো । কিন্তু আমাদের বাড়ির সামনে অনেক লোকের ভিড় দেখে অবাক লাগলো বিষয়টা কি !আমাদের বাড়িতে তো এসময় এত ভিড় থাকার কথা না । আমাদের বাড়িতে একটাই পুরাতন আমলের টিনের ঘর সেখানে অনেক লোকের ভীড় বেশিরভাগই পাড়ার মহিলারা ।
ঘরে ঢুকতেই দেখলাম আব্বা !!! আমি সেই ছোটবেলায় আব্বাকে দেখেছিলাম আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে । বাবা অনেক বদলে গেছেন চুল সাদা হয়েছে তার পরেও মুখে সেই বাবা বাবা ভাব দেখেই চিনতে পারলাম ।আমার খুব রাগ আর অভিমান হচ্ছে মনে হচ্ছে বাবার সাথে আমার আড়ি আড়ি আড়ি । বাবা হাঁসি মুখে আমার দিকে দুইহাত বাড়িয়ে দিলেন । নিজের অজান্তেই আমি বাবার বুকের সাথে মিশে গেলাম । হাউমাউ করে শিশুর মত কাঁদতে লাগলাম ।আমার কানে কোনো কথা বা শব্দ ঢুকছে না চারিদিকে সুখের বৃষ্টির ঝুম ঝুম রিন্ রিন্ শব্দ। আমার মত বাবাও আমাকে জড়িয়ে ধরে শিশুরমতকাঁদতে লাগলেন । লোপা আর ওর বাবার চোখেও পানি । চারিদিকে শূন্যতার পূর্ণতা সুখের কষ্টে কেন জানি আমার খুব মরে যেতে ইচ্ছে করছে ।


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৫১
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×