কিছু লোক শহীদ মিনারে নামাজ পড়ছেন,
তারা কি কোন রাষ্ট্রবিরোধী, সমাজবিরোধী কিংবা অনৈতিক কাজ করছেন, যা কোন উপায়ে কোন মানুষের ন্যুনতম ক্ষতি করতে পারে?
বা তারা কি কোন রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করছে অথবা জংগী হামলার ছক কষছে?
উত্তরঃ অবশ্যাম্ভাবীভাবে "না"।
তাদের হঠাৎ করে শহীদ মিনারে নামাজ পড়তে দেখে আমার কৌতুহলী মনে কিছু প্রশ্ন আসেঃ
ঐ শহীদ মিনারের আশেপাশে কি কোন মসজিদ নেই (তারা বাধ্য হয়ে শহীদ মিনারে নামাজ পড়তে আসছে)?
বাংলাদেশে এমন কোন গ্রাম নেই, যেখানে একাধিক মসজিদ নেই, এমন কোন বন্দর নেই যার ন্যুনতম ১০ মিনিট হাটা দূরত্বে মসজিদ নেই। উক্ত শহীদ মিনারের নিকটবর্তী অবশ্যই মসজিদ আছে; তা হঠাৎ করে মসজিদ রেখে শহীদ মিনারে নামাজ পড়তে হল কেন?
এর উদ্দেশ্য কি নামাজ পড়া নাকি অন্য কিছু?
এই ধর্মীয় মৌলভী গোষ্ঠীই প্রথমে ফতোয়া দিল, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া পূজার শামিল।
সুবিধা করতে পারল না, অর্থাৎ পাবলিক এই তত্ত্ব খেল না।
এর পরে ফতোয়া দিল, শহীদ মিনারে ফুল না দিয়ে শহীদদের জন্য দোয়া করলে তো হয়।
(যেমনটা, পহেলা বৈশাখ আসলেই শুরু হয়, “দিন শুরু হোক দুই রাকাত নফল নামাজ দিয়ে”। নামাজ পড়তে তো কোন বাধা নেই)।
না, এতেও কাজ হল না; তো চল শহীদ মিনারে গিয়ে নামাজ পড়ি।
তাদের যদি নামাজ পড়ারই ইচ্ছে থাকত, তবে তারা মসজিদেই নামাজ পড়তে যেত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল show off করা, তারা এতে ২০০% সফল।
আর তাদের যদি দোয়া করার ইচ্ছাই থাকত, তবে তারা মসজিদে গিয়েই করতে পারত, শহীদ মিনার প্রাংগনে বড়জোর দরূদ পাঠ ও মোনাজাত করতে পারত।
এতে তাদের দুটো লাভ হলঃ
প্রথমত, এতদিন ধরে তারা যে শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে মূর্তি পূজার সাথে তুলনা করে ইমেজের ক্ষতিসাধন করেছিল, সাধারন মানুষের কাছে তা recover করা গেল।
দ্বিতীয়ত, তাদের এতদিনের উদ্দেশ্য, শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করাকে অপ্রয়োজনীয় বলে সাব্যস্ত করাঃ তারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, “আমরাই সঠিক”।
আচ্ছা এই গোষ্ঠির প্রভাতফেরি, ১লা বৈশাখের মংগল শোভাযাত্রা নিয়ে এত আপত্তি কেন?
এই যে তারা শহীদ মিনারে নামাজ পড়ে তাদের নিজস্ব তরিকা অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে এটাই কি মত প্রকাশের স্বাধীনতা?
কই, কেউ তো এদেশে কোন ধর্মীয় আচরণ কিংবা উৎসবের বিরোধীতা করছে না, সকলেই ঐ সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করছে।
অনুরুপভাবে, বইমেলা প্রাঙ্গন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের দূরত্ব খুব বেশী না। পায়ে হাটা পথ। ইচ্ছে থাকলেই বইমেলা থেকে পায়ে হেটে গিয়ে মসজিদে নামাজ পড়া যেত। এমনকি বুক স্টলের কোন কর্মচারি যদি নামাযের জন্য বাইরে যেতে চাইত, তাতেও কোন বাধা আসত না। ওতে তো আর show off হবে না।
আমি জানি, এইবার আপনি আমার বক্তব্যের বিরোধীতা করবেন, ইসলাম বিদ্বেষী বলতে পারেন, নাস্তিক ট্যাগও দিতে পারেন, তবে আপনি নিশ্চয়ই একটি বিষয়ে একমত হবেন, যারা বইমেলা প্রাংগনে নামাজ পড়েন, তারা কুরান সম্বন্ধে জানেন।
Surah Al-Araf, Verse 55:
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি কর সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
যেখানে পবিত্র কোরানে নির্জনে, সংগোপনে প্রার্থনা করার কথা বলা আছে, এবং প্রার্থনা করার মত উপযোগী স্থান আছে, সেখানে বই মেলার মত কোলাহলপূর্ণ স্থানে নামাজ পড়াকে যদি কেউ সন্দেহের চোখে দেখে…
অনেকটা শিবির যেমন বিজয় দিবসে ব্যনার করেছিল, “স্বাধীনতা অর্জন করেছি, স্বাধীনতা রক্ষা করব।“
অনুরুপভাবে, ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে ইসলামিকরণের প্রচেষ্টা চলছে, থাক না এটা বাংগালী স্টাইলে, ২১ শে ফেব্রুয়ারি তো ইসলামের কোন ক্ষতি করছে না, শুধু শুধু এটাকে নিয়ে টানাটানি কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৫১