somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশ্লীল যৌনতা: প্রশ্ন যেখানে দৃষ্টিভঙ্গির

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাসেল কবির। তিনি একটি কোয়ার্টারে থাকতেন এবং ছাত্রীদের বাসায় বাসায় গিয়ে টিউশনি করতেন। এ সুবাদে ছাত্রীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। এই ঘনিষ্ঠতা এক পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়। এরপর বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের আপত্তিকর কাজে বাধ্য করতেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, সেসব আপত্তিকর দৃশ্য ভিডিও রেকর্ড করে নিজের ব্যবহৃত ল্যাপটপে সংরক্ষণ করে রাখতেন।- এমনই ঘটনা ঘটেছে রাউজান উপজেলায় অবস্থিত চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্র মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য শাখায়। (খবর: কালের কণ্ঠ, ২৭-০৪-২০১৪)
বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে রাসেল কবির। উত্তেজিত জনতা তাকে আটক করে প্রথমে গণপিটুনি, এরপর গলায় জুতার মালা পরিয়ে ও মাথা ন্যাড়া করে বিদ্যালয় এলাকা ঘোরায়। প্রথমেই বলে রাখি- ঘটনাটি দেশে প্রথম নয়। এমন ঘটনা এখন অহরহই ঘটছে। ঢাকার পরিমল ও কুষ্টিয়ার পান্না মাস্টারের সব অপকর্ম প্রকাশ হয়ে পড়ার পর সারা দেশ নড়ে উঠেছিল। প্রশাসন ও মিডিয়ায় ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে সে সময়। কারণ, সত্যিই তখন বিষয়টি ছিল অবাক করার মতো। কোন শিক্ষক যে এতটা নীচে নামতে পারে তা অনেকেই তখন ভাবতে পারে নি। কিন্তু পরবর্তীতে এমন ঘটনার বেশকিছু পুনরাবৃত্তি আমরা দেখেছি। যেগুলি মিডিয়াই এসেছে শুধুমাত্র সেগুলিই আমরা জানতে পেরেছি কিন্তু আমাদেরই অগোচরে এখনও শত শত পরিমল-পান্না মাস্টার এমন অপকর্মে যে লিপ্ত রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। যার প্রমাণ দিল এই রাসেল কবির।
প্রায় প্রতি দিনই পত্রিকার পাতায় যৌন হয়রানীর ঘটনা চোখে পড়ে আমাদের, যেন এটা আমাদের দেশে অতি সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে। এ খবরগুলি পড়ে কেউ ছি ছি করছে, কেউ সমাজকে দুষছে, কেউবা পৈশাচিক আনন্দ নিচ্ছে। কিন্তু এর কোন প্রতিকার, প্রতিরোধ হচ্ছে না। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। অবশ্য প্রতিকার বা প্রতিরোধের পূর্বে যে প্রশ্নটি আসে তাহলো বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার হওয়া। আমি যদি বুঝি যে, আমার সামনে যে কাজটি হচ্ছে তা অন্যায়-অরুচিকর, তাহলেই তো আসে প্রতিরোধের প্রশ্ন। কিন্তু সত্যই কি আমরা বিষয়টিকে সেভাবে দেখি? এ ঘটনাগুলির জন্য প্রথমত দায়ী অশ্লীল জীবনাচার। অশ্লীলতার যত প্রসার ঘটবে যৌন হয়রানীর ঘটনাগুলির পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে তত বেশি। হ্যাঁ, পত্র-পত্রিকা ও লোকমুখে বিষয়টিকে নিয়ে ছি ছি করতে দেখা যায় মাঝেমধ্যেই। কিন্তু সেই পত্র-পত্রিাকাকেই যখন দেখি অশ্লীলতার বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হতে, বাঙালির চিন্তা চেতনা ও সংস্কৃতি পরিপন্থী কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রশ্ন তুলতে হয়, আমরা যেটাকে অশ্লীলতা বা অপকর্ম বলছি তা কি অন্তর থেকে বলছি নাকি লোকভয়ে বলছি? এ ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার আছে তো?
বিষয়টি বোধহয় আরও একটু পরিষ্কার করা দরকার। যে ধরনের শারীরিক সম্পর্ককে আমরা সাধারণত অবৈধ সম্পর্ক হিসেবে বিবেচনা করছি, পাশ্চাত্যে কিন্তু তা অবৈধ নয়। এসকল কর্মকাণ্ড সেখানকার আইন দ্বারা সিদ্ধ। এতে বাধা দেওয়ার অর্থ হলো সে দেশগুলোর প্রচলিত আইন অমান্য করা, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অর্থাৎ, যে কাজটি আমাদের চোখে ঘৃণিত, ধিকৃত ও অরুচিকর, একই কাজ অন্য এক বিরাট জনগোষ্ঠির কাছে নৈতিক ও আইনগত উভয়ভাবেই বৈধ।
সুতরাং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আগে ঠিক করতে হবে। বুঝতে হবে, সমস্যা কেবল ঐ পরিমল বা রাসেল কবিরদের নয়, সমস্যা হলো দৃষ্টিভঙ্গির। ব্রিটিশ শাসনের আগ পর্যন্ত আমাদের এক ধরনের সংস্কৃতি ছিল, পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমল ও বর্তমান পাশ্চাত্য প্রভাবিত আমলে অন্যরকম সংস্কৃতির হাওয়া বইছে। তখন আমাদের পাশ্চাত্যের পেছনে কোন আকর্ষণ ছিল না, তাদের সকলকিছুই ঠিক- এমন দৃষ্টিভঙ্গি তখন আমাদের কারোরই ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসন ও চক্রান্তের শিকার হয়ে আমরা অনেকটা নিজেদের অজান্তেই পশ্চিমা অনুরাগী হয়ে পড়ি। দিন যতই যায় ততই আমাদের পশ্চিমের প্রতি টান বাড়ে বৈ কমে না। তাদের তৈরি রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, বিচারিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সিস্টেম এখন আমাদের ঘাড়ে। আর যে কোন জাতিরই সংস্কৃতি অনেকাংশেই প্রভাবিত হয় ও পরিবর্তিত হয় সে জাতির রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিস্টেমের দ্বারা। ফলে আমরা আজ শুধু পশ্চিমা জীবনব্যবস্থারই অন্ধ অনুসারী নই, পশ্চিমা সংস্কৃতিরও অনুসারী বটে। আমরা এটা বুঝতে সক্ষম হই নি যে, আমাদের ধ্যান-ধারণা, কৃষ্টি-কালচার আর পশ্চিমাদের কৃষ্টি-কালচার শুধু যে পৃথক তা-ই নয়, একেবারে বিপরীতমুখী। এটা বুঝতে পারি নি বলেই আমরা এতদিন যাবৎ জোর করে পশ্চিমা সংস্কৃতিকে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়ানোর বৃথা চেষ্টা করে চলেছি। ফল হয়েছে এই যে, আমরা না পশ্চিমা হয়েছি, না নিজেদের স্বতন্ত্রতা-স্বকীয়তা বজায় রাখতে পেরেছি। ওদিকে মাঝখান থেকে সৃষ্টি হয়েছে পরিমল, পান্না মাস্টার বা রাসেল কবিরদের মতো হাজার হাজার ব্যক্তিত্ব, যারা জাতে বাঙালি হলেও সংস্কৃতিতে পশ্চিমা। আমরা যেটাকে জঘন্য কর্মকাণ্ড মনে করে ছিঃ ছিঃ করছি সেটা কিন্তু এই রাসেল কবিরদের কাছে জঘন্য নয়। সে জানে- আমরা পশ্চিমাদের অনুসারী, তাদের মতো জীবন গড়ার উদ্দেশ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি, কাজেই শারীরিক প্রয়োজনে পশ্চিমারা যেমন অবলীলায় এসব করে যাচ্ছে সেখানে আমরা করলে অন্যায় হবে কেন? হ্যাঁ, পাশ্চাত্যের অন্ধভক্ত আমাদের মতো প্রাচ্যের অনগ্রসর জাতিগুলো আইনগতভাবে হয়তবা এই কাজকে এখনও বৈধতা দেয় নি, কিন্তু নৈতিকভাবে সেটা বৈধতা পেয়ে গেছে অনেক আগেই।
কাজেই সকলপ্রকার অন্যায় থেকে, অপকর্ম থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। আমাদের ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি হতে হবে স্রষ্টার আদেশ-নিষেধ। অর্থাৎ স্রষ্টা যেটাকে নিষেধ করেছেন সেটা পৃথিবীর সকল মানুষও যদি বৈধতা দেয় তবুও সেটা অবৈধ, অন্যায় আর স্রষ্টা যেটাকে বৈধ বলেছেন সেটা পৃথিবীর সকল মানুষ অবৈধ বললেও প্রকৃতপক্ষে সেটা বৈধ। এই দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা সৃষ্টি করতে পারি তবে যে কোন ধরনের অন্যায় সমাজ থেকে দূর কারার জন্য প্রথম সোপানে আমরা পা রাখলাম।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×